somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

জাতিসত্তার বিকাশে স্বচ্ছতার শক্তি

২২ শে অক্টোবর, ২০১০ সকাল ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতিসত্তার বিকাশে স্বচ্ছতার শক্তি
ফকির ইলিয়াস
========================================
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে ফুলেল অভিনন্দন। ২০১০ সালের মধ্য অক্টোবর আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে সে বিজয়ের কথা। সত্যের পথে বাঙালি জাতি বারবার বিজয়ী হয়েছে। ছিনিয়ে নিয়েছে বিজয়ের লাল সূর্য। নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশ করে সাকিব আল হাসানরা জানান দিয়েছেন, বাঙালিরা পারে। এ প্রজন্মরা পারবে। এই যে প্রত্যয়, এই যে শক্তিমানদের পথচলা- তাই একটি জাতির স্বপ্নসিঁড়ি। এ সিঁড়িই দেখিয়ে যাবে সুদূরপ্রসারী সফলতার দিকচিহ্ন।
ভাগ্যিস, এ ক্রিকেট সিরিজটি বিদেশিদের সঙ্গে ছিল। যদি বাংলাদেশের দুটি দলের মধ্যে হতো তবে হয়তো পরাজিত দলটি প্রশ্ন তুলত, প্রতিপক্ষরা 'কারচুপি' করে জিতেছে। 'সূক্ষ্ম কারচুপি', 'কারিগরি', 'জালিয়াতি', 'পেশি প্রদর্শন', 'দখল' এমন অনেক কথাই শুনতে হতো গোটা দেশবাসীকে।
না, ক্রিকেট ম্যাচে এমনটি হয়নি। বাংলাদেশ জিতেছে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। নিউজিরা এমন কোন প্রশ্ন তোলেনি। তারা বলেনি, বাঙালিরা নিজ দেশে মাঠ দখল করে নিয়েছিল!
তাছাড়া খেলাটি হয়েছে খোলা মাঠে। দেশ-বিদেশের কোটি কোটি দর্শক খেলাটি দেখেছে, সরাসরি অথবা টিভির পর্দায়। তাই এমন অভিযোগ করার কোন সুযোগও ছিল না।
খেলাধুলায় এমন একটি সুবিধা দুনিয়াজোড়া বিদ্যমান। কিন্তু পলিটিক্যাল প্লে-গ্রাউন্ডে এই খোলা মাঠের সুবিধাটি নেই, এমন কথা কেউ কেউ বলতেই পারেন। কিন্তু বিশ্বের গণতন্ত্র, অগ্রগামী সমাজ ব্যবস্থা বলছে, রাজনীতিতেও স্বচ্ছতা রয়েছে। রাজনীতিতেও গণমানুষের জন্য মাঠ অবারিত রাখা যায়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বচ্ছতার প্রশ্নটি বারবার এবং নানাভাবে কলুষিত করা হয়েছে। বিশেষভাবে সামরিক শাসনের যাঁতাকল পিষ্ট করেছে সুস্থ রাজনীতির মেরুদন্ড। আর এই যে অসুস্থ, অবৈধ রাজনীতির মর্মযাতনা, তা এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে গোটা জাতিকে।
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি বিষয়ে খালেদা জিয়ার রিট খারিজ করে দিয়েছেন মহামান্য আদালত। সে সঙ্গে তাকে বাড়ি ছাড়ার জন্য এক মাসের সময় দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মোট কথা, আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকলে বেগম জিয়াকে এ বাড়ি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আদালতে রিট পিটিশনটি বেগম জিয়া নিজেই করেছিলেন। এখন এটি খারিজ হওয়ার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা সুর পাল্টেছেন। বিএনপি নেতা, সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমদ 'আদালত প্রাঙ্গণ উত্তপ্ত' করার হুমকিও দিয়েছেন। অন্যদিকে এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপির বেশ কিছু নেতা এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নামার চেষ্টাও করছেন। তাদের একজন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সাকা নতুন তত্ত্ব বিতরণ করেছেন জাতির উদ্দেশে। তিনি বলেছেন, যেহেতু এ বাড়িটি সেনাবাহিনীর, তাই তারা খালেদা জিয়াকে দেবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত তারাই নিতে পারে। বিএনপির কোন কোন নেতার মতে, এ বিষয়টির নিষ্পত্তি নাকি আদালতের বাইরেই হওয়া উচিত।
এ প্রসঙ্গে বর্তমান আইনমন্ত্রী শফিক আহমদ বলেছেন, এ বিষয়টি নিয়ে বেগম জিয়া নিজেই আদালতে গিয়েছিলেন। এখন তারা আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির কথা বলছেন কেন?
আইনমন্ত্রীর কথাগুলো মোটেই অযৌক্তিক নয়। বিএনপি হলো বাংলাদেশে এমন এক রাজনৈতিক দল, যাদের আচরণ হলো অনেকটা ব্যাঙের মতো। তারা নিজেদের লুকিয়ে রাখে যখন ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকে। আর যখন মওকা পায় তখন গ্যাত গ্যাত করে আকাশ কাঁপাতে চায়! এর কারণ হচ্ছে, তাদের চিত্ত দুর্বল। উর্দি পরা সাহস নিয়ে রাজনীতিতে এলে যেমনটি হয়। বিশ্বের কোথাও উর্দি পরা শাসকগোষ্ঠী বৃহত্তর মানবের কল্যাণে কিছু ভালো করতে পেরেছে এমন নজির নেই বললেই চলে।

দুই.
খালেদা জিয়াকে এ সেনানিবাসের বাড়িটি দেয়া হয়েছিল মাত্র এক টাকা মূল্যে। কথা ছিল খালেদা জিয়ার দুই সন্তান সাবালক হওয়া পর্যন্ত তিনি সে বাড়িতে থাকবেন। রাষ্ট্রপক্ষ গুলশানেও জিয়া পরিবারকে আরেকটি বাড়ি দিয়েছে। সে কথাও রাষ্ট্রের মানুষের ভালো করে জানা। জিয়া পরিবারকে যখন এ সেনানিবাসের বাড়িটি দেয়া হয় তখন বেগম খালেদা ছিলেন গৃহবধূ। রাষ্ট্রের মানুষ জানতো না তিনি রাজনীতিতে আসবেন। তাই বলে আমি বলছি না, কোন গৃহবধূ রাজনৈতিক নেত্রী হতে পারবেন না। পারবেন এবং অবশ্যই পারবেন। কিন্তু রাজনীতিতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই উচিত ছিল এ বাড়িটি ছেড়ে দেয়া। এবং সাধারণ মানুষের কাতারে এসে রাজনীতি করা। খালেদা জিয়া তা করেননি; বরং এই মইনুল রোডের বাড়িতে থেকে প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন। এর কারণ কী? রাষ্ট্রের রাজনীতি সেনানিবাস কেন্দ্রিক হবে কেন? সেনানিবাসে তো অতিরিক্ত নিরাপত্তার প্রশ্নটি জাতীয়ভাবেই জড়িত। সে বিষয়টি আমলে না এনে তিনি এ বাড়িটির প্রতি এত মোহাসক্ত হলেন কেন?

যে রাষ্ট্র সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে জিয়া পরিবারকে এ বাড়িটি দিয়েছিল, সে রাষ্ট্র চাইলে বাড়িটি ফিরিয়ে নিতেই পারে। তাছাড়া গুলশানের বাড়িটি তো তাদের দেয়াই হয়েছে। এসব কোন যুক্তি না মেনে বিএনপি এখন তাদের প্রেস্টিজ ইস্যু বলে জনসমক্ষে প্রচারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
এটি সারা জাতিসত্তার চরম দুর্ভাগ্য রাজনীতিতে ভোগবাদ বাংলাদেশের পাঁজরকে বিপন্ন করেছে বিভিন্ন উপায়ে। দেশের মানুষ বিদেশি অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে রাষ্ট্রটিকে স্বাধীন-সার্বভৌম করলেও দেশীয় লুটেরা শ্রেণীর হাত থেকে রক্ষা পায়নি। বরং শোষক শ্রেণী রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় পেয়ে এতই বলিয়ান হয়ে উঠেছে, যাদের রোখা এখন প্রায় ক্রমেই অসাধ্য হয়ে পড়ছে।
যে কোন জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার বিষয়গুলোকে প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে সে জাতি নৈতিকভাবে বলিষ্ঠ হতে পারে না। সুবিচারের দরজা অবারিত হতে হবে সবার জন্য। এখানে ধনী-দরিদ্র, ক্ষমতাবান-অক্ষম, এমন কোন শ্রেণী বিভেদের প্রশ্ন কখনোই আসা উচিত নয়। অথচ বাংলাদেশে তেমনটিই হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি সেক্টরে বেড়ে ওঠা বেনিয়া শ্রেণী নিয়ন্ত্রণ করছে সাধারণ মানুষের জানমাল। কালোটাকার মালিকরা তাদের ব্যবহার করছে লাঠিয়াল হিসেবে।
একটা কথা আমরা জানি এবং মানি, সুবিধাবাদীরাই আগুন লাগা বাড়ির অবশিষ্টাংশ লুটপাট করে নেয়। সেনা সমর্থিত ইয়াজউদ্দিন সরকারের সময়ও আমরা এমন কিছু নব্য লুটেরা দেখেছি। বর্তমান সময়ও দেশে যখন একাত্তরের আলবদর-রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তখন সেই পরাজিত রাজাকার নেতাদের কেউ কেউ ডাক দিচ্ছে 'দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের'। ভেবে অবাক না হয়ে উপায় নেই। যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করেছিল তারাই এখন মুক্তিযুদ্ধের বিধাতা!
দাবি উঠেছে সাকা চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হোক। তিনি সেনাবাহিনীকে দাঁড় করাতে চেয়েছেন জাতির প্রতিপক্ষ হিসেবে। এমন কিছু গোঁয়ার রাজনীতিকের কারণেই বাঙালি জাতিসত্তা আজ বিপর্যস্ত।
নিউইয়র্ক, ১৯.১০.২০১০
-----------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ / ঢাকা / ২২ অক্টোবর ২০১০ শুক্রবার

ছবি- জি ভারডিওল
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×