somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই দিনে টেস্টিমনি অব সিক্সটি

২১ শে অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২১ অক্টোবর একটি বিশেষ দিন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই দিনটির অন্য রকম অর্থ আছে। যাঁরা ইতিহাস নিয়ে নাড়াচাড়া করেন, তাঁরা জানেন, এই দিনটিতে মাদার তেরেসা, সিনেটর এডোয়ার্ড কেনেডিসহ বিশ্বখ্যাত ৬০ জন মানুষের লেখা নিয়ে বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধের আবেদন জানিয়ে টেস্টিমনি অব সিক্সটি নামে একটি সংকলন প্রকাশ করেছিল অক্সফাম। সংকলনটি এই দিনেই একযোগে বিশ্বের সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। বলার অবকাশ রাখে না, বাংলাদেশের পক্ষে, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে সংকলনটি রেখেছিল বিশেষ সহায়ক ভূমিকা।
অক্সফামের তৎকালীন সংগঠক জুলিয়ান ফ্রান্সিস বিষয়টির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘একাত্তরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের সাহায্যে আমরা এগিয়ে এসেছিলাম। আমরা তখনো জানতাম না, এই সংকট কত দিন চলবে এবং আদৌ এই সংকটের কোনো রাজনৈতিক সমাধান হবে কি না। অক্সফাম তখন প্রায় পাঁচ লাখ উদ্বাস্তুর জন্য কাজ করে চলেছিল। আমি এক মাস আগে থেকেই পরবর্তী মাসের জন্য পরিকল্পনা করে রাখছিলাম। জানা ছিল, সামনে আসছে শীত, তখন সীমান্ত এলাকার কিছু কিছু স্থানে সংকটটি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে। আরও অনেক টাকার প্রয়োজন ছিল তখন। কোনো মানবিক সংকটের খবর যখন পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় চলে আসে, তখন মানুষের কাছ থেকেই টাকা তুলে অক্সফাম হতবিল গঠন করতে পারে, কিন্তু সংকটটি কত দিন চলবে, সে সম্পর্কে যদি কোনো ধারণাই না থাকে, তাহলে মানুষকে সে বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা খুবই কঠিন।’
এরপর তাঁরা ভাবতে থাকেন, কী করে বাংলাদেশের উদ্বাস্তু সমস্যাটি মানুষের দরবারে হাজির করা যায়। তখনই একটি ভাবনা তাঁদের মাথায় আসে। যাঁরা সরাসরি এই হূদয়বিদারক দৃশ্য দেখেছেন, তাঁদেরই যুক্ত করা হলো এই প্রচারণায়। উদ্বাস্তু সমস্যা কতটা অসহনীয় হয়ে উঠেছে, তা তাঁরা লিখলেন টেস্টিমনি অব সিক্সটি সংকলনে। জুলিয়ান নিজেই উদ্বাস্তুদের সঙ্গে যাঁরা কাজ করছিলেন, তাঁদের সাক্ষ্য নিয়েছেন কলকাতা থেকে। অক্সফামের প্রধান কার্যালয় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে এডোয়ার্ড কেনেডিসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এখানে বসেই সুবিখ্যাত সাংবাদিক জন পিলজারসহ অনেকের লেখা নেওয়া হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রথম অধিবেশনেই সংকলনটি প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সারা পৃথিবীর রাষ্ট্রনায়কদের কাছেও এই দিনেই তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
কী ছিল সেই সংকলনে? অনেকেরই নিশ্চয়ই সে ব্যাপারে জানার আগ্রহ আছে।
বাংলাদেশের মৃক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশ্বজনমত সৃষ্টির জন্য যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের কয়েকটি লেখা থেকে নেওয়া কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক। অনেকে নিশ্চয়ই এরই মধ্যে জেনে গেছেন, গত বছর আমাদের বিজয় দিবসে প্রথম আলো পত্রিকা সেই টেস্টিমনি অব সিক্সটির অনুসরণে তার বাংলা পাঠ প্রকাশ করেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ষাটজনের ভাষ্য। এডোয়ার্ড কেনেডি উদ্বাস্তুশিবির পরিদর্শন শেষে লিখেছিলেন, ‘শিশুদের দিকে দেখুন, তাদের ছোট্ট হাড় থেকে আলগা হয়ে ভাঁজে ভাঁজে ঝুলে থাকা ত্বক, এমনকি তাদের মাথা তোলার শক্তিও নেই। শিশুদের পায়ের দিকে দেখুন, পা ও পায়ের পাতায় পানি নেমে ও অপুষ্টিতে ফুলে আছে।...ক্যাম্পের পর ক্যাম্পের গল্প একই। এমনিতেই ঠাঁই হয় না, এমন হাসপাতালে অবিরাম বাড়তে থাকা বেসামরিক মৃত্যু পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।...পূর্ব বাংলার ট্র্যাজেডি কেবল পাকিস্তানের জন্য ট্র্যাজেডি নয়, এটা কেবল ভারতের জন্য ট্র্যাজেডি নয়, এটা সমগ্র বিশ্বসম্পদের জন্য ট্র্যাজেডি এবং একই সংকট নিরসনের জন্য একত্রে কাজ করা এই সম্প্রদায়েরই দায়িত্ব। সাধারণ মানবতার দাবি, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ সত্যকে কবুল করে নিক যে এই বিশাল বোঝা বহন করতে হবে সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, কেবল ভারতকে নয়।’
মাদার তেরেসা বলছেন, ‘আসুন, আমরা স্মরণ রাখি: পাকিস্তানের মানুষ, ভারতের মানুষ, ভিয়েতনামের মানুষ, যেখানকারই হোক, সব মানুষই স্রষ্টার সন্তান, সবাই তৈরি হয়েছে একই হাতে। এ সমস্যা কেবল ভারতের নয়, গোটা পৃথিবীর। এ বোঝা পৃথিবীরই বহন করা উচিত।’
ডেইলি মিরর-এর জন পিলজার লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের ধাপ্পা ধরে ফেলেছে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ—যারা ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ—গণতন্ত্রের জন্য ভোট দিয়েছিল, পরিচালিত হতে চেয়েছিল মধ্যপন্থী পাশ্চাত্য ধাঁচের মধ্যবিত্ত রাজনীতিবিদদের হাতে। সম্ভবত বোকার মতোই তারা তাদের মুক্তির অনুসন্ধান করেছিল, যদিও তাদের যেসব সমস্যা, সে রকম কিছুই আমাদের কখনো মোকাবিলা করতে হয়নি। কেবল এ কারণেই তাদের হত্যা করা হচ্ছে, এমনভাবে দাসত্ববন্ধনে আবদ্ধ করা হচ্ছে, যা এডলফ হিটলারের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়, যার জন্য গোটা পৃথিবীকে যুদ্ধে নামতে হয়েছিল।’
আমরা সানডে টাইমস-এর আলোচচিত্রী পিটার ডানের কথাও স্মরণ করতে পারি, যিনি বলছিলেন, ‘আমি মুহ্যমান। এই আমি, বহু বছর ধরে পৃথিবীর সব দুর্যোগকবলিত এলাকা সরজমিনে দেখে আসছি, এখানে আমি একেবারে মুহ্যমান। নিজের তোলা ছবি যত ভয়ঙ্করই হোক, একজন আলোকচিত্রী সাধারণত নিজেকে বলে থাকে, ভালো কিছু পেয়েছি। কিন্তু বাংলায় এই প্রবোধের মহৌষধ আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি সম্পূর্ণভাবে, চূড়ান্তরূপে অসম্পূর্ণ বোধ করতে শুরু করেছি। আসলে যখনই আমার সময় হতো, ক্যামেরা পেলে আমি ওয়ার অন ওয়ান্ট দলের সঙ্গে বেরিয়ে মানুষকে কলেরার প্রতিষেধক ইনজেকশন দিতে সাহায্য করতাম।’
আজ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এই দিনটিকে স্মরণ করা হবে। বিকেল চারটায় সেখানে মূল আলোচনায় অংশ নেবেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস। তিনি বলবেন সেই দিনগুলোর কথা। টেস্টিমনি অব সিক্সটি নিয়ে যাঁদের আগ্রহ আছে, তাঁরা চলে আসতে পারেন বিকেল চারটায়। টেস্টিমনি অব সিক্সটি থেকে পাঠও থাকবে অনুষ্ঠানে। সূত্র
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×