২. বুল আর শাড়ি
শিশুশ্রেণীতে ভর্তি হবার কিছু দিন পর ক্লাস শুরু হল।ক্লাস এ ছাত্রসংখ্যা ৩২।আমার রোল নাম্বার ২৮।যাহোক প্রথম দিন ক্লাস এ গিয়ে দুজন ছেলের সাথে পরিচয় হল।ওদের নাম মাহবুব এবং শাহরিয়ার।মাহবুবকে সবাই মহাবুল আর শাহরিয়ারকে সবাই শাড়ি বলে ডাকতো।কিসুক্ষণের মধ্যেই বুঝে গেলাম ওরা দুজন মোটামুটি ক্যাডার কিসিমের।ওরা দুজন আমাকে আমাদের ক্লাস টিচার শফি স্যার সম্পর্কে বিরাট ভয় দেখাতে শুরু করল।স্যার নাকি পড়া পারলেও পেটান,না পারলেও পেটান।আমার অন্তরাত্মা শুঁকিয়ে পলিথিন ব্যাগের মত হয়ে গেল।
যথাসময়ে স্যার ক্লাস এ ঢুকলেন।স্যারের ডান হাতে চক-ডাস্টার,বাম হাতে বেত।প্রথমেই রোলকলের পালা।খেয়াল করলাম,সবাই দাড়িয়ে বলছে,"পেজেন,স্যার।"কিন্তু মাহাবুল আর শাড়ি কিছুই বলল না।এসব চিন্তা করতে করতে হঠাৎ খেয়াল করলাম,সবাই আমার দিকে তাকিয়ে কেন জানি হাসছে আর স্যার বারবার "২৮ কে?২৮ কে??" বলে তারস্বরে চেঁচাচ্ছেন।আমি ভয় পেয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।
পরবর্তী দুইদিন আমি স্কুলে গেলাম না।পুত্রের পড়াশোনা বুঝি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এই ভেবে আমার মা এক অভিনব সিদ্ধান্ত নিলেন।আমাদের বাড়িতে ঝর্ণা খালা নামে এক বুড়ি মহিলা কাজ করতেন।মা ঝর্ণা খালা সহযোগে আমাকে স্কুলে প্রেরণ করলেন।পরিবর্তী একমাস ঝর্ণা খালা আমার পাশে বসে শিশুশ্রেণীর ক্লাস করেছিলেন।
আস্তে আস্তে বুল আর শাড়ির রোল নাম্বারের ব্যাপারটাও পরিষ্কার হল।ওরা প্রায় তিন মাস পর ক্লাসের খাতায় নাম উঠাল এবং ওদের রোল নাম্বার হল যথাক্রমে ৫৭ ও ৫৮।
আমৃত্যু শৈশব চাই ১