somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শব্দের পোস্টমর্টেম-১৪০ (ভদ্র)

২১ শে অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সংস্কৃত ভদ্র ((ভন্দ্ + র, ন লোপ) শব্দের মূলে ভন্দ্ ধাতু রয়েছে। ভন্দ্ মানে কল্যাণ। সংস্কৃতে বিশেষণ হিসেবে ভদ্র অর্থ কল্যাণকর, শ্রেষ্ঠ, নিপুণ, প্রশস্ত, সাধু, মনোজ্ঞ, কান্ত।

সম্বোধনে প্রিয়, সাধু ও মিত্রভাবাপন্ন। আবার পুংলিঙ্গে শিব (ভদ্রকাব্য মানে শিবের কাব্য) খঞ্জন, বৃষভ, করি জাতিবিশেষ, যে গোপনে পাপ করে ও বাইরে সদাকারে তা প্রচ্ছন্ন রেখে পরদ্রব্যগ্রহণ করে, কদম্ব, স্নুহী বৃক্ষ, চন্দন, দেবদারু, সুমেরু, জিনবিশেষ।

অন্যদিকে সংস্কৃতে ক্লীবলিঙ্গে ভদ্র মানে মঙ্গল, শুভ, বিপ্রবাক্য, শুভকর বিষয়, হিত, ভদ্রমুথা, কাঞ্চন।

আবার জ্যোতিষশাস্ত্রে ভদ্র হচ্ছে সপ্তম করণ।

কিন্তু বাংলায় ভদ্র মানে এসব কিছু নয়। বাংলায় ভদ্র মানে সদ্বংশজাত ব্যক্তি।

ভদ্র শব্দটির অর্থ সব সময় একই জায়গায় স্থির থাকে নি। শ্রেষ্ঠ, উত্তম, ভাল, মঙ্গল অর্থে ভদ্র শব্দটি এক সময় ব্যবহৃত হতো। এককালে গ্রামের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বা গ্রামবাসীর নির্বাচিত ব্যক্তিই 'ভদ্র' ছিলেন। বর্তমানে ভদ্র মানে সভ্য, সংস্কৃতিমনা, রুচিশীল।

বৈদিক যুগে নিরুক্ত বা শব্দশাস্ত্রে ভদ্র শব্দটি দিয়ে গৃহ, প্রজা, পশু, বিত্ত ইত্যাদি নির্দেশিত হতো। মধ্যযুগেও নানা অর্থে ভদ্র শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

বর্তমানে মহাদেব, বলরাম, রামের অনুচর, দিগগজ, খঞ্জন পাখি, শ্রীকৃষষ্ণর লীলাকানন, ষাঁড়, সাধু, সৌভাগ্য, শুভ, ক্ষৌর (ভদ্র কর, ছাড় এ মলিন বসন - চৈতন্যচরিতামৃত), দেউল, সাধু, ইতর, প্রধান অর্থে শব্দটির প্রয়োগ আর নেই।

আবার ভদ্র মানে কল্যাণ। মানবজীবনে সাধারণত কল্যাণ চারটি - ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ।

পঞ্চভদ্র বলতে বোঝায় পাঁচটি শুভচিহ্নকে। যে অশ্বের মুখ, পিঠ, বুক ও দুইপার্শ্ব - এ পাঁচ জায়গায় নে শুভ লক্ষণসূচক আবর্ত আছে তা পঞ্চভদ্র নামে অভিহিত। কথিত হয়। এরূপ অশ্ব দেখে যাত্রা করলে নাকি মনোবাসনা পূর্ণ হয়।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ১১টি উপাদানকে ভদ্র বলা হয়। যেমন স্বর্ণ, লোহা, নীলপদ্ম, চন্দন, কদম, স্নুহী গাছ, মুস্তক, নাগরমুখা, ইন্দ্রযব, দেবদারু ও সরল দেবদারু।

ভদ্রের স্ত্রীলিঙ্গ ভদ্রা। ভদ্রা শব্দটি দিয়ে সুশীলা বা মার্জিত রুচির নারী বোঝালেও শব্দটি এক সময় অভিমন্যুর জননী সুভদ্রা, সূর্য্যকন্যা, উত্তর কুরুবর্ষে প্রবাহিত গঙ্গাস্রোত, আকাশগঙ্গা, মিষ্টি, অবশিষ্ট তিন দণ্ড, দ্বিতীয়া সপ্তমী ও দ্বাদশী তিথি অর্থে ব্যবহৃত হতো।

আবার আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ১৪টি উপাদান ভদ্রা নামে পরিচিত। যেমন অনন্তা, জীবন্তী, কাকডুমুর, শমী, কটফল, গাম্ভারী, নালী, অপরাজিতা, হরিদ্রা, সুতা, রাস্না, বচ, শ্বেত দুর্বা ও দন্তী।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামীলীগে শুধুমাত্র একটি পদ আছে, উহা সভাপতি পদ!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৪ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১


বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মানুষ এই দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। ৭০ এর নির্বাচনে এই দলটিকে নিরঙ্কুশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারের মৃত্যু এবং মানুষের উষ্মা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৯


সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর আনোয়ারুল আজীম আনার নামে একজন বাংলাদেশি এমপি নিখোঁজ এবং পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহের হাড়-মাংস আলাদা করে হাপিত্যেশ করে দেওয়া হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

দোয়া ও ক্রিকেট

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৪


দোয়া যদি আমরাই করি
তোমরা তাইলে করবা কি?
বোর্ডের চেয়ারম্যান, নির্বাচকের
দুইপায়েতে মাখাও ঘি।

খেলা হচ্ছে খেলার জায়গা
দোয়ায় যদি হইত কাম।
সৌদিআরব সব খেলাতে
জিতে দেখাইত তাদের নাম।

শাহাবুদ্দিন শুভ ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!!

লিখেছেন অন্তর্জাল পরিব্রাজক, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:২১



দয়া করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!! X( এরা ছাগলের দলই ছিল, তাই আছে, তাই থাকবে :-B !! এরা যেমন ধারার খেলা খেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বকুল ফুল

লিখেছেন নীল মনি, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৪

বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকে আমার এই ঘর। আমি মাটির ঘরে থাকি। এই ঘরের পেছন দিকটায় মা'য়ের হাতে লাগানো বকুল ফুলের গাছ৷ কী অদ্ভুত স্নিগ্ধতা এই ফুলকে ঘিরে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×