শৈশবের স্মৃতিগাঁথা সবাইকেই কমবেশি আচ্ছন্ন করে থাকে।আমিও ব্যাতিক্রম নই, যদিও প্রকাশ কিছুটা ভিন্ন।আমার কখনই হারানো শৈশব ফিরে পেতে ইচ্ছা করে না,বরং তৃতীয় কোন ব্যক্তি হিসেবে দেখতে ইচ্ছে করে আমি কেমন ছিলাম।শিশুকাল নিয়ে কয়েকটা কথা লিখার ইচ্ছা ছিল বহুদিন ধরে।কিন্তু পরিসর এতই বিস্তৃত যে কোনটা রেখে কোনটা লিখি এ ভাবনায় কেঁটে গেছে বহুদিন।অবশেষে সামহোয়্যার ইন ব্লগকেই আমার শৈশবের সাথী বানাতে সচেষ্ট হলাম।
১.ভূঁইয়া
আমার বয়স তখন পাঁচ।গ্রামে বাড়ি,কোন কেজি স্কুল ছিল না।প্রাইমারী স্কুলই ছিল সম্বল।আমার মা তুলনামূলকভাবে শিক্ষিতা মহিলা ছিলেন,সুতরাং স্কুলে ভর্তির আগেই আমাকে শিশুশ্রেণী এবং প্রথমশ্রেণীর সিলেবাস তোতাপাখির মত ঠোঁটস্থ করিয়ে ফেললেন।ফলে যে ব্যাপারটা দাঁড়ালো,আমার সহপাঠীরা যখন স্বরে অ,স্বরে আ করছে,আমি তখন স্বচ্ছন্দে বাংলা পেপার পরতে পারি।যা হোক আমাকে স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে গেল আমার বড় বোন।ও তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে।স্কুলের হেডস্যার আপুকে চিন্তেন,আমাদের খুব আদরযত্ন করে তাঁর রুমে বসালেন।আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন,"বাবু,তোমার খাতার নাম কি?"আমি বললাম,"ভূঁইয়া।"তিনি আবার বল্লেন,"কি বললা?"আমি আবার বললাম,"ভূঁইয়া।"উনি খুব অবাক হয়ে আমার বোনের দিকে তাকিয়ে রইলেন।আমার বোনও অবাক।যে ছেলে পেপার পরতে পারে,সে নিজের নাম বলতে পারছে না,ব্যাপার কি?হঠাৎ করে ও হো হো করে করে হেসে উঠল।
আসল ব্যাপার হল,ওই সময় আমাদের এলাকায় হলুদ রঙের একটা রোল করা খাতা পাওয়া যেত,যেটার নাম ছিল ভূঁইয়া।আমি বাড়িতে বসে ওই খাতায়ই এতদিন লিখে এসেছি।স্যার বুঝাতে চেয়েছিলেন,আমার খাতাবন্দী নামটা কি হবে।আর আমি বুঝেছি স্যার বোধ হয় জানতে চেয়েছেন আমার খাতাটার নাম কি।
অতি বিদ্যা আসলেই ভয়ঙ্করী।