আরবি দর শব্দটিও বাংলায় দাম অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার আরবি দর আর বাংলা দাম মিলে polyglotism হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে দরদাম। এটার অর্থও দাম। অন্যদিকে আরবি দর অর্থ মুদ্রা। আর এ দামই এখন খাঁটি সংস্তৃত 'মূল্য' কে হটিয়ে দিচ্ছে।
ভারতের রাজস্থানে প্রচলিত এক প্রবচন হচ্ছে 'টুটেগা চামড়ী তো নঁহী ছোড়েগা দামড়ী' - চামড়া ছিঁড়ে গেলেও দাম এক পয়সাও কমাব না।
সাধারণত পণ্যের মূল্য বা বিনিময় অর্থে দাম শব্দটি ব্যবহৃত হয় (ভাল দেখে কিনে লয় দিয়ে ভাল দাম - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর)।
বেতন বা মজুরি অর্থেও শব্দটি চালু রয়েছে (নতুন কাজে দাম কেমন পাচ্ছ?)। বেশি মূল্য অর্থেও শব্দটির ব্যবহার আছে (কয় মণ পাট রেখেছিলাম, দামে বেচব - শওকত ওসমান)।
আবার আলঙ্কারিক অর্থে শব্দটি দিয়ে মর্যাদা বোঝায় (কথার দাম রাখতে না পারলে পরে পস্তাবে)।
দাম শব্দের বিশেষণ দামি বা দামী । অর্থ অনেক মূল্য এমন (হারায় কতক যা আছে মোর দামি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।
আবার মর্যাদাবান অর্থে এ দামি শব্দের ব্যবহার রয়েছে আলঙ্কারিক প্রয়োগে (তার দামি কথা ফেলে দিও না)।
আধুনিক অর্থনীতিতে দাম ও মূল্যের মাঝে নীতিগত পার্থক্য রয়েছে।
অথচ মধ্যযুগে বিশেষত বাদশাহী আমলের শুরুর দিকে সম্রাট শেরশাহের আমলে 'দাম' বলতে তামার এক প্রকার মুদ্রা বোঝাতো। সম্রাট আকবরের আমলেও একই অর্থে শব্দটির ব্যাপক প্রচলন ছিল। তখন দামের আরও অনেক ছোট ছোট একক ছিল। যেমন অর্ধাংশ, এক-চতুর্থাংশ ও এক-অষ্টমাংশ। এক-অষ্টমাংশের অন্য নাম ছিল দামড়ি। আর ৩২০ দামড়ি ছিল এক টাকার সমান।
আবার সংস্কৃত 'দো' থেকেও বাংলায় দাম শব্দটি এসেছে। শব্দটির গঠন হচ্ছে দো + মান (মনিন) = দাম। এ দাম অর্থ রশি, গরু-ছাগল ইত্যাদি বাধার জন্য ব্যবহৃত লম্বা দড়ি। সুতা, মালা ও গুচ্ছ অর্থেও এ দাম শব্দটি প্রচলিত (তোমার আকুল অলক দামে -কাজী নজরুল ইসলাম)। এক জাতীয় জলজ তৃণের নামও দাম (পাটা-শেওলার দামে নামিয়া - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়)।