somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুর্গা পূজা বিষয়ক লেখা

১৮ ই অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিন গুণে শারদীয় দুর্গাপূজা

অনুজ কান্তি দাশ
দুর্গা মহাশক্তি মহামায়া। সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মান্ড যিনি ধারণ করে রেখেছেন, যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনিই সবকিছু পালন করছেন আবার প্রলয়কালে তিনিই তা সংহার করছেন। সৃষ্টিতে তিনি সৃষ্টিস্বরূপা, পালনে তিনি স্থিতিস্বরূপা আর প্রলয়ে তিনি সংহারস্বরূপা। সুরদের লালন আর অসুরদের দমন করে সংসারজীবনে আসেন সকল অমঙ্গল আর অশান্তি দূর করে শান্তি আর মঙ্গলবার্তা নিয়ে। তাই দেবী আরাধনায় সকল অশুভ চিন্তা দূর করে শুভবুদ্ধি ও সৎগুণের অধিকারী হতে হয়। আদিকাল থেকেই নানা ভাবে ও নানা গুণে দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হয়ে আসছে বলে জানা যায়। তবে শ্রীশ্রী চন্ডীতে মানুষের তিন রকমের গুণের কথা উল্লেখ রয়েছে। সত্ত্বঃ, রজঃ ও তমোঃ - এই তিন গুণের তারতম্যে মানুষের স্বভাবের পার্থক্য হয়ে থাকে।

সত্ত্বঃ গুণের অধিকারী যারা, তাঁরা সাধারণত শান্ত ও ধীরস্থিরভাবে চলাফেরা করেন। তাদের চলনে, বচনে ও কর্মে সর্বদা সততা ও সজীবতা ফেঁটে ওঠে। লোভ, মোহ, কাম, ক্রোধ, মদ ও মাৎসর্য - এদেরকে একত্রে বলা হয় ষড়রিপু। এই ষড়রিপু সত্ত্বঃ গুণে গুণান্বিত মানুষদের আক্রান্ত করতে পারে না। প্রেম-প্রীতি, স্নেহ-ভালবাসা, শ্রদ্ধায় আর ভক্তিতে তাদের হৃদয় মন সদা জাগ্রত। এগুণের মানুষরা পূজার বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠানে বিশ্বাসী নয়। এরা সাত্ত্বিক পূজায় বিশ্বাস করে বলে এরা দেব গুণে গুণান্বিত। আত্মার মুক্তির জন্য তাঁরা কামনা বাসনা ত্যাগ করে দেবী আরাধনায় বিভোর হয়ে উঠেন।

রজঃ গুণের অধিকারীরা হন কর্মঠ। তাদের চিন্তা ও চেতনায় সর্বময় উচ্চাকাঙ্খা ও আভিজাত্যের অহংকার পরিলক্ষিত হয়। তারা আসুরিক চরিত্র ধারণ করে। ষড়রিপু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এরা একে অপরের মধ্যে বিবেধ তৈরী করে। এরা বিবেক বুদ্ধি শূণ্যতায় আচ্ছন্ন হয়ে তাদের প্রতিদন্দ্বীকে পরাভূত করে কেবল নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার আকাঙ্খা ব্যক্ত করে। এ গুণের মানুষরা পূজায় জাকজামক্যের বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তারা রাজস্বিক পূজায় বিশ্বাস করেন। পূজায় তাদের মধ্যে প্রতিযোগীতামূলক ভাব জেগে ওঠে। নিজস্ব ক্ষমতা ও শক্তির বলে এরা নিজেদের জাহির করতে চায়। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছা তাদের সবসময় ধাবিত করে। তাদের অশুভ চিন্তা চেতনায় সমাজে হিংসা, বিদ্বেষ, কলহ ও বিভিন্ন অপশক্তির সৃষ্টি করে।

তমোঃ গুণের মানুষেরা কু-বুদ্ধি ও ক-ুপ্রবৃত্তির হয়ে থাকে। তাদের মনে সব সময় হীনমন্যতা ও নীচুতা কাজ করে। জড়তা, আলস্য, কাপুরুষতা, কু-রুচি, কু-প্রবৃত্তি ইত্যাদি এদের লক্ষণ। এরা যেভাবে পূজা করে, তাকে বলা হয় তামসিক পূজা। তামাশার ছলে এই শ্রেণীর মানুষরা পূজায় নানা রং-ঢং এর আয়োজন করে। তাদের চাল-চলন, কথাবার্তা ও আচার অনুষ্ঠানে সর্বত্রই অপরিচ্ছন্নতা, অ-ধর্ম ও কু-কর্ম পরিলক্ষিত হয়।

একমাত্র সাত্ত্বিক পূজা ছাড়া রাজস্বিক ও তামসিক পূজা সমাজের কাছে কেবল লোক দেখানো পূজা বলা যেতে পারে। এ কথা নিশ্চিত যে, সাত্ত্বিক পূজায় সু-ফল পাওয়ার আশা থাকে। কিন্তু রাজস্বিক ও তামসিক পূজায় সু-ফল লাভের আশা থাকে না। মানুষের ভক্তি বা গুণ অনুযায়ি কর্মফল ভিন্ন হয়ে থাকে। তথাপী যে যেভাবে দেবীকে আরাধনা করে সে সেভাবেই দেবীর আশীর্বাদ পেয়ে থাকে। সত্ত্বঃ, রজঃ ও তমোঃ এই তিন গুণের তারতম্যে ধরাতলে দেবীর নানারুপের প্রকাশ পেয়েছে। প্রকৃতিগতভাবে দেবী ধরাতলের সমগ্র জীবসমূহের মধ্যে চলাচল করছেন। তিনি ব্রহ্মার লয়কারিণী কালরাত্রি, জগতের লয়কারিণী মহারাত্রি এবং মানুষের লয়কারিণী ভয়ঙ্করী মোহরাত্রী। দেবী বিশ্বেশ্বরী, তাই সমগ্র বিশ্বকে রক্ষা করছেন। তিনি জগৎরূপা, তাই সমগ্র জগৎকে ধারণ করছেন। দেবী ব্রহ্মা, ইন্দ্র প্রভৃতি দেবগণের আরাধ্য। তাঁতে যে যেভাবে, যে গুণেই ভক্তিভাব প্রদর্শন করে তারা সেভাবেই তাঁর আশ্রয় হয়ে থাকেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×