somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিউজিল্যান্ডকে বাংলাওয়াশ....আতার আলী খান। পুরোটা পড়ে দেখুন.......।

১৮ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কোরবোর্ডে মাত্র ১৭৪ রান। ফিল্ডিংয়ে তিনটি ক্যাচ পড়ল। তার পরও জয়! দলটা অস্ট্রেলিয়া না তো?
কাদের কথা বলা হচ্ছে সেটা এখন সবাই জানে। দলটার নাম আসলে বাংলাদেশ।
১৭৫ রানের টার্গেট দিয়ে জেতা যাবে, নিউজিল্যান্ড ইনিংসের আগে এ বিশ্বাস কাল বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমেও ছিল না। নিউজিল্যান্ড ইনিংসের ৩০ ওভার পর্যন্তও কি কল্পনা করা গেছে সেটা? ৩০ ওভার শেষে ৫ উইকেটে ১০৬ রান নিউজিল্যান্ডের। অর্থাৎ হাতে ৫ উইকেট নিয়ে বাকি ২০ ওভারে আর মাত্র ৬৯ রান করলেই পাওয়া যেত সান্ত্বনার জয়। এই সহজ কাজটাও করতে না পারা ড্যানিয়েল ভেট্টোরিদের জন্য দেশে ফেরার পথে সান্ত্বনা একটাই—লড়াই করে ম্যাচটা তো শেষ ওভারে নেওয়া গেছে!
ম্যাচ শেষ ওভারে যাওয়াটা আসলে সান্ত্বনা হওয়ার কথা বাংলাদেশের জন্য। ৩-০-তে সিরিজ জিতে যাওয়ার পর একটা ম্যাচ খারাপ হতেই পারে। শেষ ম্যাচে ১৭৪ রানে অলআউট হয়ে সেই খারাপটা যখন চোখের সামনে, নিউজিল্যান্ডের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা জাগানোও তো বড় সাফল্য ছিল! বাংলাদেশ শুধু সম্ভাবনাটাই জাগায়নি, নিউজিল্যান্ডের পিঠটাকে আস্তে আস্তে দেয়ালে ঠেকিয়ে কেড়ে নিয়েছে শেষনিঃশ্বাসটুকু। ৪-০-তে সিরিজ জিতে পূর্ণশক্তির কোনো বড় দলকে প্রথমবারের মতো দিল হোয়াইটওয়াশের ‘স্বাদ’।
সিরিজের আগের তিনটি জয়ের চেয়ে কালকের জয়টা নিয়েই বেশি গর্ব করতে পারে বাংলাদেশ। এই জয়টাই সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরতে পরতে বদলেছে ম্যাচের রং, সেই রংটাকে নিজেদের মতো করে রাঙিয়ে নিতে পারাটাই ছিল সাফল্যের চাবি। সেই চাবি সাকিবের দল সময়মতো ঘোরাতে পেরেছে। এত কম রান করেও জিততে হলে যে রকম শুরু দরকার, বোলাররা সেটা করেছেন। এরপর যখনই কোনো জুটি দাঁড়িয়ে গিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেছে, তখনই দেওয়া গেছে বেমক্কা ধাক্কা।
নিজের প্রথম দুই ওভারে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও জেসি রাইডারকে তুলে নিয়ে শুরুটা করেছিলেন রুবেল হোসেন। দলের ১০ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারানোর পর ২০ রানের মধ্যে ব্রাডলি ওয়াটলিং, কেন উইলিয়ামসন ও রস টেলর ফিরে গেলে ১৭৪ রানও অনেক বড় মনে হচ্ছিল নিউজিল্যান্ডের জন্য। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ও গ্রান্ট এলিয়টের ৮৬ রানের জুটি জয়ের স্বপ্নে ছোঁয়ায় জীয়নকাঠি। ম্যাচ জিতলে ভেট্টোরি হয়তো এর জন্য ধন্যবাদ দিয়ে যেতেন বাংলাদেশের জুনায়েদ সিদ্দিককে। নিউজিল্যান্ডের ৪১ আর ভেট্টোরির ১২ রানের সময় মাহমুদউল্লাহর বলে স্লিপে কিউই অধিনায়ককে নতুন জীবন তো দিয়েছিলেন তিনিই! ক্যাচ পড়েছে আরও দুটি। ভেট্টোরির ক্যাচ ফেলা জুনায়েদই নিতে পারেননি স্কয়ার লেগে নাথান ম্যাককালামের দেওয়া ক্যাচের সুযোগ। এ ছাড়া সাকিবের বলে ডিপ মিড উইকেটে এলিয়টকে জীবন দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ১২ রানে জীবন পেলেও ভেট্টোরিকে শেষ পর্যন্ত বড় হুমকি হতে দেননি সাকিব। দলের ১০৬ রানের সময় শফিউলের দুর্দান্ত এক ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়েছেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে, নিউজিল্যান্ডের জয়ের স্বপ্ন তখনই ভেঙে গেছে অনেকটা।
তিন-তিনটি ক্যাচ মিসে আগের ম্যাচে প্রশংসা পাওয়া ফিল্ডিংটা কাল প্রশ্নবিদ্ধ। তবে বোলাররা সেটাকেও জয়ের পথের বাধা হতে দিলেন না। ৫-১-১৩-৩, দুর্দান্ত প্রথম স্পেলের পর স্লগ ওভারেও দেখা গেল অন্য রুবেলকে। গত বছরের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্লগ ওভারের দুঃস্বপ্নটা কাল শুধু মুছেই দেননি, ম্যান অব দ্য ম্যাচও এই পেসারই। শেষ ৩ ওভারে ২২ রান প্রয়োজন ছিল নিউজিল্যান্ডের। ৪৮তম ওভারে বল করতে এসে রুবেল দিলেন ৫। পরের ওভারে শফিউল ৯ রান দিয়ে দিলে শেষ ওভারে কিউইদের প্রয়োজন দাঁড়ায় মাত্র ৮ রান। রুবেলের প্রথম বলে বাউন্ডারি, পরের বলে কোনো রান নয় এবং তৃতীয় বলেই ভেঙে যায় মিলসের উইকেট। শেষ ম্যাচের তিন বল বাকি থাকতেই নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার আনন্দে নেচে ওঠে গোটা শেরেবাংলা স্টেডিয়াম, বাংলাদেশ।
বোলারদের সৌজন্যে শেষ ম্যাচেও জয় এসেছে, নইলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ব্যাটিং নিয়ে অতৃপ্তি থেকেই গেছে। হারলেও নিউজিল্যান্ড ইনিংসে তবু এলিয়টের ফিফটিটা আছে, বাংলাদেশ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তো সাকিবের ৩৬! সর্বোচ্চ জুটি ষষ্ঠ উইকেটে সাকিব-মুশফিকুর রহিমের ৫৫ রান। সিডন্স এ ম্যাচে যে কয়টা উন্নতি দেখতে চেয়েছিলেন, তার মধ্যে জুনায়েদ-রকিবুলের রান পাওয়াটা ওপরের দিকেই ছিল। কিন্তু প্রিয় দুই ব্যাটসম্যান আবারও হতাশই করেছেন কোচকে। অন্যদের মধ্যে ইমরুল কায়েস, সাকিব আর মুশফিকুর সম্ভাবনা জাগিয়েও খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। দলে এখন পারফর্মারের সংখ্যা বাড়লেও ব্যাটিংটা যেন আগের মতোই রয়ে যাচ্ছে! সাকিব ভালো খেললে বড় ইনিংস হয়, নয়তো নয়।
তবে শেষে জয়ের আনন্দে হারিয়ে গেছে সব অতৃপ্তি। ক্রিকেটের চোখে বাংলাদেশের এই সাফল্যটা নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশের, তবে সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান নাম দিলেন—‘বাংলাওয়াশ’! আপনারাও যাঁর যাঁর মতো করে নাম দিতে পারেন। এই দিনটা তো শুধুই আনন্দে ভেসে যাওয়ার।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×