somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমায় করে গেলে ঋণী ! ! !

১৭ ই অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূজার দাওয়াতে গিয়েছি অনেক । কিন্তু পূজার মন্ডপে যাওয়ার তেমন সুযোগ হয়ে ওঠেনি কখনও । এবারের মহা-সপ্তমীতে এক ফ্রেন্ডের কাছে পূজার মন্ডপ ভ্রমণের নিমন্ত্রন পেলাম । সুযোগটা হাতছাড়া করি কীভাবে ? 'পূজা দেখা' প্রধান কারণ হলেও মূল আকর্ষণ অবশ্য অন্য দিকে - বন্ধুদের সাথে আড্ডা , মন্ডপের বাইরের হাওয়াই মিঠাই-বাতাসা আর নাগরদোলা তো আছেই ।

তথাপি, গেলাম পূজা দেখতে ।

বেশ ঘোরাঘুরি করে মন্ডপের বাইরে একটু খোলা জায়গায় বন্ধুরা সবাই গোল করে বসে জটিল আড্ডা চলছে , আর হাতের ক্যামেরাটায় ননস্টপ চলছে - ক্লিক ! ক্লিক ! এরই মাঝে হঠাৎ হঠাৎ রাস্তার দু' একটা বাচ্চা এসে হাত পাতছে আর আমরা যথারীতি তাড়িয়ে দিচ্ছি । তাদের মধ্যেই একজন - পড়নে হলুদ জামা আর হাতে কতোগুলো হলুদ গাদা ফুলের মালা নিয়ে ছুটে এলো । এক এক করে আমার বন্ধুদের সবার কাছে গিয়ে বৃথা অনুনয়-বিনয় করে অবশেষে এলো আমার কাছে । এতো জটিল আলোচনা চলছে আর তার মাঝে এসে এই পিচকি জালাচ্ছে, বিরক্ত হয়ে - আমি প্রথমে চোখ রাঙ্গালাম , কিন্তু লাভ হলো না; এরপর কর্কশ সুরে চলে যেতে বললাম । তাতেও খুব একটা কাজ হলো বলে মনে হলো না ! আমার রাগ করা দেখে ও যে কি মজা পেলো বুঝে উঠতে পারলাম না । আমি যতই রাগ দেখাচ্ছি , ও ততই হো-হো করে হেসে উঠছে । খুবই অদ্ভুত! মেয়েটা এমনভাবে হাসছে যেন কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখছে ! আশ্চর্য! তবে কি আমাকেই কার্টুনের মতো দেখাচ্ছে ?

ধুর ! এইসব কি ভাবছি ? এই মেয়েটা কি জীবনে কখনও কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখেছে ? ও কি করে বুঝবে যে কার্টুন দেখতে কেমন হয়? ও হয়তো এমনি হাসছে ! আর আমি শুধু শুধু ওর হাসি দেখে উদ্বিগ্ন হচ্ছি ।

তবে হাসি মনে হয় সত্যি একটা সংক্রামক ব্যাধি , নইলে অযৌক্তিক কারণে ওর হাসি দেখে আমি কেন হেসে ফেললাম !?!

ভেবে দেখলাম - এ তো দারুণ চীজ ! রাগান্বিত আমাকেও এভাবে হাসালো ? এর একটা ছবি তো তুলে রাখতেই হবে । রাগ ভাঙ্গানোর উপায় পেয়ে গেলাম- একটা হাসি! এই ট্রিক্ আম্মুর বেলায় কাজে লাগাতে হবে ।

যখন ওকে বললাম - 'মালা কিনবো না । তবে, তোমার একটা ছবি তুলবো!'

সেও মোবাইল ফোনের এ্যাডের মতো শর্ত প্রযোজ্য করে দিল , ' তাইলে একটা মালা কিনতে অইবো ! '

' কতো করে তোমার মালা ?'

' মাত্র দশ টাকা আপা । '

'আচ্ছা ! আগে ছবি তুলি এরপর ভেবে দেখবো কিনবো কি না !'

অতঃপর - ক্লিক !
কিন্তু দশ টাকাটা বের করার আগেই ওর ডাক পড়লো ! - 'এই মালা !' আর সেও দশ টাকাটা না নিয়েই ছুট দিল ( হয়তো ভেবেছিল টাকাটা আমি আসলে ওকে দিবো না! আর আমি ভাবলাম ও ফিরে এলে দিয়ে দেব)।
কিন্তু সে আর ফিরলো না !ওর কি আর আড্ডাবাজির সময় আছে ? মালা বিক্রি না করলে খাবে কি ?

পাশে বসা ফ্রেন্ডকে বললাম , ' দেখ, ওর নামটা কি সুন্দর! না ? মালা ! কাজের সাথে নামের কত্ত মিল !'

সে টিটকারি মেরে জবাব দিল , ' আরে গাধি ! ওর নাম আসলে মালা না ।'
'তুই কি করে জানলি?'

'আমরা যে ডাকি না ?- এই রিকশা ! কিংবা এই ঝালমুড়ি! অনেকটা এই টাইপ ! '

'এই যাহ্ ! মেয়েটার নামটাই তো তাহলে জানা হলো না ।'

যার কাছ থেকে শিখলাম - কর্কশ কথা কিংবা রাগান্বিত চোখ না , একটা হাসিই পারে যেকোনো সমস্যার সহজ সমাধান হতে , একটা হাসিই পারে মন-দুয়ারের মরিচা পড়া তালাটা খুলতে ; তাকে তার প্রাপ্য দশ টাকা কিংবা সামান্য ধন্যবাদটাও দেয়া হলো না । সেই তো শেখালো - Even a smile can be a charity and peace begins with just a smile on your face. You don't need any joyous reason to smile; though sometimes joy is the source of your smile, but sometimes your smile can be the source of joy.

এতো সুন্দর একটা শিক্ষা যার কাছে পেলাম তার এই ঋণ কি করে শোধ করি? নাম না জানা মেয়েটা তো হারিয়েই গেল মেলার ভীড়ে, আমায় জড়িয়ে গেল ঋণে !
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×