somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইনজীবীদের অভিমত ঃ খালেদার বাড়ি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির সুযোগ নেই

১৭ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইনজীবীদের অভিমত
খালেদার বাড়ি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির সুযোগ নেই


এস এম আববাস

বিশিষ্ট আইনজীবীরা বলেছেন, ১৩ অক্টোবর আদালতের রায়ের পর খালেদা জিয়ার বাড়ি ছাড়ার ব্যাপারে আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির কোন সুযোগ নেই। তারা বলেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহাবুব হোসেনের ভূমিকা আদালত অবমাননার শামিল, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার চেতনার বিরোধীও। আইনজীবীরা বলেন, খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়ার ব্যাপারে সরকার নয়, বেগম খালেদা জিয়াই আদালতে গেছেন। তিনি সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস অধিদপ্তরের দেয়া নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছেন।
খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়ার ব্যাপারে আদালতের রায়ের পর এক সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহাবুব হোসেন বিষয়টি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার আদালতের ঘাড়ে বন্ধুক রেখে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন, আদালতের বাইরে খালেদা জিয়ার বাড়িসহ স্পর্শকাতর বিষয় নিষ্পত্তি না করা হলে আদালত অঙ্গন উত্তপ্ত হবে। আর এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে এমন বক্তব্য দেয়ায় বিশিষ্ট আইনজীবীরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ এবং খন্দকার মাহাবুব হোসেনের সমালোচনা করে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সকল আইনজীবীর সংগঠন। সমিতির ব্যানারে এ ধরনের বক্তব্য দেয়া অবাঞ্ছনীয় এবং প্রছন্ন হুমকি। কোন ব্যক্তির সম্পত্তি নিয়ে রাজনীতি করলে সমিতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
আদালতের রায় এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহাবুব হোসেনের বক্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবীরা এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার বাড়ি ছাড়তে সময় বেঁধে দিয়ে রায় দেয়ার পর বাড়ি ঠেকাতে মরিয়া হয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহাবুব হোসেন ওই বাড়ি ঠেকাতে আদালতের বাইরে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বিষয়টি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি না হলে আদালত অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. এম জহির সংবাদ'কে বলেন, মামলা এবং রায়ের আগে বাড়ির বিষয়টি নিষ্পত্তির হয়তো সুযোগ থাকত; কিন্তু রায় ঘোষণার পর সে সুযোগ আর নেই। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি তথা জনগণের সম্পত্তি এখন আর ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দিতে আপস করার সুযোগ নেই।
ড. এম জহির আরও বলেন, খালেদা জিয়ার বাড়ি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির বিষয়টি দলীয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সকল আইনজীবীর সংগঠন। আইনজীবী সমিতির ব্যানারে এ ধরনের বক্তব্য দেয়া অবাঞ্ছনীয় এবং প্রছন্ন হুমকি। আইনজীবী সমিতির কাজ আইনের শাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। কোন ব্যক্তির সম্পত্তি নিয়ে রাজনীতি করলে সমিতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
ড. শাহদীন মালিক সংবাদ'কে বলেন, খালেদা জিয়ার বাড়ির বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, বেআইনিভাবে বাড়িটি দেয়া হয়েছিল। এ রায়ের পর আদালত অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার কোন বিষয় থাকতে পারে না। এছাড়া আপিল বিভাগে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আদালতকে পাশ কাটাতেই এ ধরনের বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।
আইনজীবী সমিতির বক্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আইনজীবী সমিতিতে যে যখন ক্ষমতায় থাকেন তিনি তখন তার দলের হয়ে কথা বলেন। এখন দলীয় বিবেচনায় কথা বলা হচ্ছে। এ রকম এর আগেও হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এএফএম মেজবাহউদ্দিন বলেন, বেগম খালেদা জিয়াই রিট আবেদন করতে আদালতে গেছেন। তার পক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, আইনের শাসনে তারা বিশ্বাস করেন। তাহলে তারা আপিল বিভাগেও যাবেন। এক্ষেত্রে আদালত উত্তপ্ত করার তো প্রয়োজন পড়ে না। হাইকোর্টের রায়ের পর এখন আদালতের বাইরে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হবে_ এমন যুক্তি স্ববিরোধী। অসৎ উদ্দেশ্যে আদাতের রায় উপেক্ষা করা শুধু আদালতকে অবজ্ঞা করাই নয়, প্রকারান্তরে আদালত অবমাননা। তাদের এ স্ববিরোধী বক্তব্য এবং আদালতের রায়কে পাশ কাটানো আদালত অবমাননার শামিল।
ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক বলেন, আইনের শাসনে বিশ্বাস করলে উচ্চ আদালতের রায় সবাইকেই মেনে নিতে হবে। খালেদা জিয়ার বাড়ির বিষয়টি আদালতে আইনগতভাবেই হয়েছে। এখন আদালতের রায় না মেনে রাজনৈতিকভাবে নিষ্পত্তির কথা বলার অর্থ আদালতকে ছোট করা। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল বিভাগে যেতে পারেন। সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দেবে আইনের শাসনে বিশ্বাসী সবাইকেই তা মেনে নিতে হবে। খালেদা জিয়ার বাড়ির বিষয়টি আইনসিদ্ধ, তা পাশ কাটানো আদালতকে অবজ্ঞা করা।
খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাড়িটি গত ১৩ অক্টোবর আদালত ৩০ দিনের মধ্যে খালি করার নির্দেশ দেয়। এর আগে গত বছর ২০ এপ্রিল সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস অধিদপ্তর খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের লিজ নেয়া বাড়ি ১৫ দিনের মধ্যে ছেড়ে দেয়ার জন্য নোটিশ দেয়। পরে ওই বছর ৭ ও ২৪ মে আরও দুই দফায় খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়তে নোটিশ দেয়া হলেও খালেদা জিয়া বাড়ি ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার পক্ষে সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস অধিদপ্তর থেকে দেয়া নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে গত বছর ৩ মে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়।
খালেদা জিয়ার ওই রিট আবেদনের শুনানির জন্য বারবার সময় চেয়ে দীর্ঘ সময় পার করা হয়। আদালত এক পর্যায়ে সময় দিতে না চাইলে আদালতের প্রতি খালেদা জিয়ার পক্ষে অনাস্থা আনা হয়। বারবার সময় চাওয়ায় শুনানিতে হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চ বিব্রত ও একটি বেঞ্চ শুনানি করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সর্বশেষ প্রধান বিচারপতির নির্দেশে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। গত ১৩ অক্টোবর বুধবার আদালত সেনানিবাসের বাড়ি সংক্রান্ত রিট আবেদন খারিজ করে ৩০ দিনের মধ্যে খালেদা জিয়াকে বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেয়। এরপর খালেদা জিয়ার বাড়ি ঠেকাতে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা মতবিনিময় সভা করেন। গত শনিবার বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে প্রেস ব্রিফিং করে সভাপতি খন্দকার মাহাবুব হোসেন আদালতের বাইরে বাড়িসহ স্পর্শকাতর বিষয়ে নিষ্পত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি হ্বান জানান।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×