somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এডলফ হিটলারের ফ্রান্স বিজয়- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর সাফল্য- শেষ পর্ব

১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের কাহিনী: ফ্রান্স আক্রমন করার জন্য হিটলার ১২ ই নভেম্বর ১৯৩৯ তারিখে সময় ঠিক করলেন। অথচ জার্মান জেনারেলরা তা চাইছিলেন না। তারা বুঝছিলেন পোল্যান্ড দখলের এত কম গ্যাপের মধ্যে আবার একটা বড় অপারেশন চালানো ঠিক হবেনা। তারা আবারো হিটলারকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু হলনা। হিটলারের উদ্দেশ্য অনেক গভীর ছিল। ফ্রান্স দখল করা মানে বেলজিয়াম, হল্যান্ড সব নিজ আয়ত্বের মধ্যে চলে আসবে! জেনারেল হালডের- চীফ অফ জেনারেল স্টাফ, জেনারেল ব্রাউচটিশ যিনি কমান্ডার ইন চীফ জার্মান আর্মী ছিলেন এইসব বাঘা বাঘা জার্মান জেনারেলরা হিটলারকে বোঝাতে চেস্টা করলেন যেন সময়টা পিছিয়ে দেন, হিটলারের এক কথা।
বিরক্ত জেনারেলরা তখন ভাবলেন সেই ভয়ংকর জিনিসটা-- এই একগুঁয়ে ফুয়েরারকে -- হিটলারকে সরিয়ে দিলে কেমন হয়! কিন্তু পুরো পরিস্হিতি পর্যালোচনা করে দেখলেন জার্মান সেনা বাহিনীতে হাজার হাজার তরুন অফিসার রয়েছে যারা ১৯৩৩ এর পর ভর্তি হয়েছে তারা হিটলারের নাজী আদর্শে পুরো অনুপ্রানিত সেই --স্কুল কলেজ থেকেই। তারা হিটলারের নাজী আদর্শে অন্ধের মত বিশ্বাস করে, নাজী আদর্শে তারা বিমোহিত, মুগ্ধ! তারা কখনোই হিটলারের বিরুদ্ধে কেোন ক্যুতে যোগ দিবেনা। অর্থাৎ ক্যু সফল হবেনা।
সুতরাং ক্যু করবার চিন্তা বাদ। বেঁচে গেলেন হিটলার, আর এরকম অনেকবারই বেঁচে যাবেন ভবিষ্যতে!
জেনারেলদের আর যাই দোষ থাক তাদের দেশপ্রেমের কোন ঘাটতি ছিলনা।



তারা দেখলেন ফ্রান্স আর ব্রটেন দ্রুত পশ্চিম প্রান্তে তাদের শক্তি বাড়াচ্ছে, বিপদ তো! তারাও পোল্যান্ড থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে পশ্চিম দিকে জড়ো করলেন। কিন্তু হিটলারের আক্রমনের ডেডলাইন ১২ ই নভেম্বর ১৯৩৯ কিছুই হলনা, চুড়ান্ত আক্রমনের অর্ডারটা আসলনা! কেন কে জানে। হিটলার আক্রমনটা ৩ দিন পেছালেন আর এভাবেই আরো ১৪ বার পেছানো হল।
হিটলার ও জার্মান আর্মীর সিইনসি জেনারেল ব্রাউচতিশ এর ছবি নীচে:



পৃথিবীর অন্যতম সেরা মিলিটারী কমান্ডার-- জার্মান ফিল্ড মার্শাল আরভিং রোমেল এর ছবি নীচে:


আক্রমনটা কিভাবে হবে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হল বহুরকম প্লান আসলো। অবশেষে একজন তুখোড় জার্মান জেনারেল, জেনারেল ম্যানস্টেইন একটা প্লান দিলেন। সেটা ছিল ফরাসী লাইনের ভিতর দিয়ে মেজিনো লাইন এড়িয়ে (বাই পাশ করে) ট্যাংক বাহিনীকে দিয়ে (পানযার ডিভিশন) ফরাসী ও বৃটিশদের পিছন দিকটা আক্রমন করা। সবাই সেটা পছন্দ করলো।
--পিছন দিয়ে পানযার ডিভিশনের জার্মান ট্যাংক যাচ্ছে লক্ষবস্তুর দিকে, ফরাসীদের দিকে--


যুদ্ধ শুরু হলে জার্মানদের কোন নড়াচড়াই দেখলানা ফরাসীদের ফ্রন্টলাইন সৈন্যরা! ১৯৪০ এর শীতকাল গেল (মা্র্চ এপ্রিল) আর তখন জার্মানরা একটু মার খেল।
অত্যন্ত উন্নতমানের পৃথিবীখ্যাত বৃটিশ নেভী জার্মানদের সমুদ্রপথে সাপ্লাই লাইন বন্ধ করে দিল। অন্যদিকে রাশিয়ার ফিনল্যান্ড আক্রমন করার ফলে জার্মানদের লোহা সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেল।
রেগে মেগে হিটলার রাস্তা খোলার জন্য ৯ই এপ্রিল ১৯৪০ ছোট্ট দেশ নরওয়ে আর ডেনমার্ক দখল করে ফেললেন। নরওয়ের রাজা হাকুন লন্ডনে পালিয়ে বাঁচেন।
এরপর হিটলার ১০ ই মে ১৯৪০ মুল ফ্রান্স আক্রমন করলেন।
১৩৬ টা বৃটিশ ফরাসী আর বেলজিয়ান ডিভিশন প্রতিরক্ষায় ছিল। কিন্তু এসব পাশে রেখে জার্মান জেরারেল গুদেরিয়ান আর জেনারেল আরভিং রোমেল ম্যানস্টেইন প্লান মোতাবেক ফ্রান্সের ভিতরে ঢুকে পড়লেন।
একই সাথে জার্মান বিমান বাহিনী লুফটওয়াফে হল্যান্ডে বোমা ফেলে একেবারে কাবু করে ফেলে, হল্যান্ডের রানী উইলহেলমিয়া তাঁর সরকার নিয়ে লন্ডনে কেটে পড়েন। হিটলারের হল্যান্ড দখল হলো।
২০শে মে ১৯৪০, মিত্রবাহিনী বেলজিয়ামের ডানকার্কের কাছে একেবারে অবরুদ্ধ হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
তখন জার্মানরা থামল। ২৪ শে মে ১৯৪০।
ঠিক তখনই হিটলারের বিমান প্রধান গোয়েরিং বাহাদুরী নেয়ার জন্য বললেন তার বিমান বাহিনী অবরুদ্ধ মিত্রবাহিনীকে ধ্বংশ করতে সক্ষম, জার্মান সেনাদের একটু বিশ্রাম দেয়া হোক!! হিটলার রাজি হলেন, আর এই অদ্ভুত সিদ্ধান্তে জার্মান জেনারেলরা স্তম্ভিত! এ তো জয়ের সুযোগ পুরো নস্ট করার পায়তাড়া!
গোয়েরিং তার বিমান আক্রমন শুরু করলেন। কিন্তু বাজে আবহাওয়ায় তাদের খুব অসুবিধা হচ্ছিল। এছাড়া গোয়েরিংএর পুরোনো ধীর গতির মেসারস্মিট বিমান বৃটিশদের উন্নত মানের স্পিটফায়ার প্লেনের কাছে উড়তেই পারছিলনা!
গোয়েরিংএর চরম ব্যার্থতা দেখে হিটলার ক্ষেপে গিয়ে তার বিখ্যাত পানযার ডিভিশনের ট্যাংক বাহিনীকে আক্রমনে পাঠালেন। জার্মান বাহিনীর হাতে প্রচুর ফরাসী সৈন্য ধরা পড়ে, তবে জার্মানদের এই দেরী হওয়ার জন্য সমুদ্রপথে প্রায় ২,৬০,০০০ ইঙ্গ ফরাসী সৈন্য নৌপথে পালাতে সক্ষম হয়।


ফরাসী যুদ্ধবন্দী

জার্মানী ইতিমধ্যে ডানকার্ক, ফ্রান্সের উত্তর ভাগ, বেলজিয়াম, হল্যান্ড এবং লুক্সেমবার্গ দখল করে নয়। বাকি ফ্রান্স দখল তখন সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র।
অবস্হা বেগতিক দেখে ১০ই জুন ১৯৪০ ফরাসী সরকার ধ্বংশের হাত থেকে প‌্যারিসকে বাঁচাবার জন্য সেটাকে খোলা নগরী বা ওপেন সিটি ঘোষনা করে, আশা যে জার্মানরা বোমা মেরে প‌্যারিস ধ্বংশ করবেনা। ১৪ই জুন ১৯৪০, জার্মানীরা বিনা বাধায় প‌্যারিসে প্রবেশ করে। প্রায় ২২ বছর আগে জার্মানী যেখানে মিত্রবাহিনীর কাছে সারেন্ডার করে ফরাসীরা সেখানেই জার্মানীর কাছে সারেন্ডার করে।

নীচে জার্মান ফিল্ড মার্শাল কাইটেলের কাছে ফরাসীদের সারেন্ডার:



ফরাসীরা সারেন্ডার করলেও হিটলারের পরিচিত ফরাসী মার্শাল হেনরী পেতাঁ ফরাসী সরকার প্রধান হলেন।


উপরে মার্শাল পেতাঁ ও হিটলার

এছাড়া উত্তরাংশ জার্মান দখলে থাকলেও দক্ষিন অংশ স্বাধীনই রইল।
ফ্রান্স হিটলারের দখলে আসার সাথে সাথে অস্ট্রিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ ও হল্যান্ড হিটলারের অধীন হল। স্পেন ও ইতালি হাটলারের সাথে রাজনৈতিক সখ্যতা স্হাপন করলো।
ইউরোপের বড় শক্তির মধ্যে একমাত্র বৃটেন ছাড়া সবই হিটলারের অধীন হলো।

(প্রথম অংশটুকু পড়লে নীচে দেখুন):
Click This Link

৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×