somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোথায় মানবতাঃ ৩০ টাকা বেতন! আর ১ কেজি চাল ৩৫ টাকা!!

১৬ ই অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



৯ অক্টোব‍ঃ বিশ্ব ডাক দিবস
দৈনিক মজুরী সর্বনিম্ন ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৪ টাকা
২৪ হাজার ইডি কর্মচারীর মানবেতর জীবনযাপন


আব্দুর রহীম। বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার রয়না গ্রামে। প্রথম যখন ডাক বিভাগে শাখা পোষ্টমাষ্টার হিসাবে কাজ শুরু করেন তখন তার মাসিক সম্মানী ভাতা ছিল ২২ টাকা। সে পাকিস্তান আমলের কথা। তার পরে গত ৪০ বছরে ১২ দফায় বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তিনি সম্মানী ভাতা পান ১০১০ টাকা। বর্তমানে তার প্রতিদিনের গড় মজুরী পড়ে ৩৩ টাকা। এতে তার সংসারের প্রাত্যহিক ব্যয় মেটানোই দুরুহ হয়ে পড়ে। শুধু আব্দুর রহীমই নয়, নাম মাত্র ভাতায় কর্মরত দেশের প্রায় ২৪ হাজার ইডি কর্মচারী বর্তমান দুর্মুল্যের বাজারে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপণ করছেন।
ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকে দেশে দু-ধরনের ডাক কর্মচারী রয়েছে। একটি জাতীয় বেতন স্কেলভূক্ত, অপরটি অবিভাগীয় (ইডি) বা সম্মানী ভাতায় কর্মরত। সারা দেশে এমন অবিভাগীয় কর্মচারী বা এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল এজেন্ট (ইডিএ) রয়েছেন প্রায় ২৪ হাজার। এদের মধ্যে রয়েছে সাব পোষ্ট মাষ্টার, শাখা পোষ্টমাষ্টার, চিঠি বিলিকারী, ডাক বহনকারী ও চৌকিদার। এসব কর্মচারীরা সরকারী তহবিল থেকে সম্মানী পেলেও তারা সরকারী কর্মচারী নন। এরা প্রতিদিন চার ঘন্টা ডিউটি করেন। বিনিময়ে সর্বনিম্ন ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৪ টাকা ভাতা পান। শাখা পোষ্ট অফিসের সাব পোষ্টমাষ্টারদের মাসিক সম্মানী ভাতা ১৩২০ টাকা। এছাড়া মাসিক ১০১০ টাকা সম্মানীতে শাখা পোষ্টমাষ্টার হিসাবে ৮ হাজার ১১৩ জন কর্মরত আছেন। সারা দেশে ৮ হাজার ২৪৬ জন চিঠি বিলিকারী মাসিক ৯৯০ টাকা ও ৫ হাজার ৯২৫ জন ডাক বহনকারী ৯৫০ টাকা হারে সম্মানী ভাতা পান। এছাড়া ১ হাজার ৪৩২ জন চৌকিদার, ঝাড়–দার ও অন্যান্য ইডি কর্মচারী মাসিক সম্মানী পান ৯১০ টাকা। ঈদ বা পূজায় তারা কোন উৎসব ভাতা পান না। বৃদ্ধ বয়সে অবসরে যাবার সময় খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয় তাদের। অথচ পোষ্ট অফিসে চিঠি গ্রহণ থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি এসব চিঠি, মানি-অর্ডার, ইন্টারভিউ কার্ডসহ যাবতীয় কাগজপত্র সঠিক সময়ে বিলি করার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন তারা। সারাদিনে ৪ ঘন্টা ডিউটি করলেও মূলত দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়েই অফিস করায় এরা চাকুরীর পাশাপাশি অন্য কোন কাজও করতে পারেন না। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪৪ টাকা হারে সম্মানী পেয়ে বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ-পোষণ করানোই তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারগুলো বিভিন্ন সময় ইডি কর্মচারীদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির আশ্বাস দিলেও তা কার্যকর হয়নি। ইডি কর্মচারীদের ভাতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৩ সালে ডাক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভারত ও পাকিস্তানে ইডি সিস্টেম সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০০৬ সালে ডাক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে উৎসব ভাতা প্রদান ও সম্মানী ভাতা ২০ ভাগ বৃদ্ধি করার প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও অদ্যাবধি তা আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ডাক বিভাগকে এ প্রস্তাবনার নথিপত্র প্রেরণের জন্য চিঠি দেয়। যার প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারী এ প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তা ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের নেয়া উদ্যোগ বাস্তবায়িত না হওয়ায় বর্তমানে এসব ইডি কর্মচারীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
এ ব্যাপারে ডাক কর্মচারী সালাউদ্দিন বলেন, রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপক্ষো করে আমরা বাড়ি বাড়ি চিঠিপত্র বিলি করি। অন্যের বেতনের মানি-অর্ডার নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দেই। কিন্তু মাস শেষে নিজের ভাতাটা হাতে নিলেই মুখটা মলিন হয়ে আসে। বর্তমানে একজন দিনমজুর যে মজুরী পায়, আমাদের দৈনিক সম্মানী তার এক-তৃতীয়াংশেরও কম। সারা বছরতো নয়ই, ঈদ-পার্বণেও স্ত্রী-সন্তানদের একটা ভালো কাপড় দিতে পারি না। অথচ সরকারের একটু সুদৃষ্টি পড়লেই আমাদের জীবনটা পাল্টে যেতে পারে।
বাংলাদেশ পোষ্টাল ইডি কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আবু হানিফ মিয়া বলেন, ইডি কর্মচারীদেরকে সারা মাসের সম্মানী ভাতা হিসাবে যে টাকা দেয়া হয়, তা দিয়ে একটি পরিবারের এক সপ্তাহের ব্যয়ও মেটে না। অথচ এ ব্যাপারে সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নেই। এটি অমানবিক। তাই আমরা বাধ্য হয়ে ভাতা বৃদ্ধি ও ঈদ বোনাসের দাবীতে আগামী কাল ১০ অক্টোবর থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি।


সূত্র-
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১:৩১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×