somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার লেখা গল্প- বালিশ

১৪ ই অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাত ১২.১০ মিনিট। রাহিক ও সিনি তার দাদুর বাড়ি যাবে ট্রেনে। তারা এখন প্লাটফর্মে দাড়িয়ে ট্রেনের অপেক্ষায়। সাথে তাদের আম্মু ও ছোট চাচু।
হাঠাৎ ৭ বছরের সিনি বলল- দাদু দেখ মানুষ গুলো কেমন মেঝেতে চট গায়ে দিয়ে বালিশ ছাড়া শুয়ে আছে।
দাদুঃ ওরা গরিব ওদের ঘর বাড়ি নেই।
সিনিঃ তাহলে এরা এখানেই ঘুমায়।
দাদুঃ হ্যাঁ।
সিনিঃ দেখ দাদু বুড়ো মানুষটি শীতে কেমন কাঁপছে।
সিনির আম্মুঃ সিনি এতো কথা বলো না।
দাদুঃ বৌমা ওদের জানতে ও বলতে দাও। অসহায় মানুষের প্রতি ওদের ভালোবাসা সৃষ্টি হোক।
রাহিক‍ঃ দেখ দাদু কারো মাথার নিচে পুটলি আর কারো মাথার নিচে ইট আবার কারো মাথার নিচে কিছুই নাই। এভাবে কি ঘুমানো যায়?
দাদুঃ তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। তাছাড়া কি করবে বিছানা বালিশ জোগার করার টাকা ওদের নেই। ওরা অসহায়। এর মধ্যে ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠলো তখন সবাই গল্প থামিয়ে ট্রেনে উঠার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। তাদের একটি কেবিন ভাড়া করা ছিল। কেবিনে বসতেই ট্রেন ছেড়ে দিল। রাহিক জানালা দিয়ে কালো অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন সিনি দাদুকে বলল- দাদু একটা গল্প বলনা? সেই রাজ-রানীর গল্পটা যাদের একটিও সন্তান হয় না।
আম্মুঃ সিনি চুপ করে থাকো। অনেক দুরে যেতে হবে। একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো।
সিনিঃ আম্মু ঘুম আসছে না। বলনা দাদু গল্পটা।
রাহিকঃ দাদু আজ আমি একটা গল্প বলবো।
দাদুঃ বাহ্! সুন্দর কথা। আমার দাদুা গল্প বলবে। তোমার গল্প শোনার লোভ সামলাতে পারছিনা। তারাতারি শুরু করো।

রাহিক তখন গল্প বলা শুরু করলো-
এক দেশে ছিল এক কদম আলী। তার খুবই ইচ্ছা সে রাজা হবে। তার অনেক ধন-সম্পদ থাকবে। হীরা, মনি, মুক্তায় প্রসাদ পরিপূর্ণ থাকবে। সে আরামে বসবাস করবে। নিজের ইচ্ছা মত সব কিছু করবে। কিন্তু কিভাবে রাজা হবে সেই পথ খুঁজে পাচ্ছিলো না। সে পড়ালেখা জানতো। হাঠাৎ সে একটি সুজোগ পেল। সে বন বিভাগে একটি চাকুরী পেয়ে গেল। চাকুরী পাবার পর তার মানের বাসনা পুরনের পথ খুঁজে পেল। সে এক সময় উপরওয়ালাদের ঘুষ দিয়ে বনের রাজা হয়ে গেল। এখন তাকে আর ঠেকায় কে? সে ইচ্ছা মতো গাছ কাটে বিক্রি করে। হরিন, ময়ুর এরকম মনোহর প্রাণী বিক্রি করে সৌন্দর্য প্রেমীদের কাছে। এতে করে এক সময় সে অনেক সম্পদের মালিক হয়ে গেল। তার স্ত্রী ইচ্ছা মতো নিত্য নতুন গাড়িতে চড়ে বেড়ায়। ঘন্টায় ঘন্টায় অলংকার বদলায়। তার বেশ কয়েকটি প্রমদ কুঞ্জ। সম্পূর্ন বাসাতেই এসি এমন কি বাথরুমেও। বন উজার করে সে নিজের সম্পদের পাহাড় গড়ে তুললো। আসলেই সে রাজার মতো জীবন যাপন করতে লাগলো। হঠাৎ তার খেয়াল হলো সে একটা কিছু তৈরী করে পৃথিবীকে চমক দেখাবে। তাই সে চিন্ত করতে লাগলো কি করা যায়? তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সে তুলার পরিবর্তে টাকা দিয়ে তোষক ও বালিশ তৈরী করবে।

সিনিঃ ভাইয়া তুমি কি আজে বাজে বলছো। টাকা দিয়ে কি কেউ আবার বালিশ তৈরী করে? রাজারাতো তৈরী করে সুন্দর সুন্দর প্রাসাদ।
রাহিকঃ হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক সকল রাজা-বাদশারাই সাধারণ মানুষের রক্তচোষা টাকা দিয়ে প্রাসাদ তৈরী করে। কিন্তু কদম আলী রাজা ভাবলো এই টাকা দিয়েই সুন্দর সুন্দর প্রাসাদ তৈরী হয়। সব কিছু হয় টাকা দিয়ে। অতএব এই টাকাই সব। তাই এই টাকা দিয়ে তোষক ও বালিশ বানিয়ে আমি আরামে শুয়ে থাকতে চাই। তহলে আমি হব পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ। সে টাকার তোষক ও বালিশ তৈরী করে আরামে ঘুমাতে লাগলো এবং স্বপ্ন দেখতে লাগলো কিভাবে বন উজাড় করে দেশের সম্পদ বিক্রি করে নিজের সম্পদের পাহাড় গড়া যায়।

তার এই কু-কৃর্তীর কথা প্রজারা কেউ জানতো না। জানলোও কিছু বলার কেউ ছিলো না। হঠাৎ একদিন বিপর্যয় দেখা দিলো। কদম আলী যে সকল উপরওয়ালাদের খুশি করে রাজত্ব করতো একদিন তাদের পতন হলো। তখন কদম আলী রাজার কু-কৃর্তী সবার কাছে ফাঁস হয়ে গেল। তাকে কয়েদ করা হলো। তার সকল সম্পদ জব্দ করা হলো। ফাঁস হলো তার টাকার বালিশের কথা।

আর জানো দাদু এটা মিথ্য গল্প না। এটা একেবারে বাস্তব ঘটনা। বলতে পার দাদু কেন এই পার্থক্য- একদিকে টাকার বালিশ আর অপর দিকে একটু ঘুমাবার জন্য মাথার নিচে কিছু দেবার নেই?

দাদু ১৪ বছরের একটি কিশোরের মুখে এ গল্প শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। আজীবন শিক্ষকতা করে এই সকল আন্যায় ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে সকলকে সচ্চার করার চেষ্টাই তিনি করতেন। তিনি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আন্ধকার হাতরে নাতির প্রশ্নের জাবাব খুঁজতে লাগলেন।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×