somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমস্যাপূর্ণ ভারতীয় লোকোমোটি।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নামেই হেডলাইট। আলো একেবারে কম। রাতে সামনে ১০ গজও দেখা যায় না। উইন্ড উইপার বিকল। বৃষ্টি হলে সামনের গ্লাসে পানি জমে থাকে। ইঞ্জিনের বিকট শব্দে কানেও কিছু শোনা যায় না। চালকের কেবিনেট আসন থেকে বেশ দূরে। এজন্য অনেকটা কাত হয়ে অপারেট করতে হয়। গতির সাথে ভাইব্রেশন বেড়ে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।



ভারত থেকে আমদানীকৃত নতুন ডিজেল ইলেকট্রনিক লোকোমোটিভের (ইঞ্জিন) আরও কতো সমস্যা। একজন চালক (লোকোমাস্টার) বলেন, ট্রেন চালাতে গেলে পূর্ণ একজন মানুষের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। ভারতীয় ইঞ্জিনে সেখানে ‘হাফ’ সহযোগিতা পাওয়া যায়। কারন সহকারী চালকের (এএলএম) আসন এমনভাবে প্রতিস্থাপন করা যাতে সে সামনের দিকে তাকালে হাত রাখতে হয় পেছনে। এতে করে সে সোজা হয়ে বসতে পারে না। আড়াআড়িভাবে বসে অস্বস্তির মধ্যে তাকে চলতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। এতে করে পূর্ণ একজন মানুষের কাছে থেকে যে পরিমাণ সহযোগিতা পাওয়ার কথা তা পাওয়া যায় না। এসব অসুবিধার কথা লিখিতভাবে জানিয়েছেন ট্রেন চালকরা। কিন্তু কোন সমাধান মেলে নি। ভারত থেকে সদ্য আমদানীকৃত ডিজেল ইলেকট্রনিক লোকোমোটিভের (ইঞ্জিন) নিয়ে অনেকটাই বিপাকে রেল কর্তৃপক্ষ। চালু হতে না হতেই ইঞ্জিনগুলোতে নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। ১০ টি ইঞ্জিনের মধ্যে একটি বিকল হয়ে ‘বসে’ গেছে। প্রায় ২শ’ ৯ কোটি টাকায় এসব ইঞ্জিন ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অথচ এ বাবদ ভারতকে ঋণচুক্তির শর্ত ছাড়াই ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে ৩০ শতাংশ টাকা অগ্রিম দিতে হয়েছে। ভারতকে ঋণশর্ত বহির্ভূত এ অর্থ প্রদান নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত যে দামে বাংলাদেশ রেলওয়েকে ১০টি বিজি ইলেকট্রনিক লোকোমোটিভ সরবরাহ করেছে তার দাম বিশ্ববাজার অনুযায়ী অনেক বেশি ধরা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১০ সালে প্রায় ২শ’ ৯ কোটি টাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ১০টি বিজি ডিজেল ইলেকট্রনিক লোকোমোটিভ কেনার একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এসব রেল ইঞ্জিন কিনতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ ধরা হয় প্রায় ১৪৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ বিষয়ে ভারতীয় ঋণের আওতায় লোকোমোটিভ কেনার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে শুধু ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানই দরপত্র কেনে এবং দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। যদিও ভারতীয় রেল লোকোমোটিভ প্রস্তুতকারী ও সরবরহকারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। সেজন্য দরপত্র দলিলে সমঝোতার ব্যাপারে কোনো শর্ত রাখা হয়নি। এতে ভারত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ছাড়া দরপত্রে আর কোনো লোকোমোটিভ সরবরাহকারী ছিল না। দরপত্র দলিলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অগ্রিম টাকা দেয়ার বিষয়ে কোনো শর্ত ছিল না। তারপরও দরদাতা প্রতিষ্ঠান লোকোমোটিভ সরবরাহে ৩০ শতাংশ অগ্রিম দেয়ার শর্ত আরোপ করে। বাংলাদেশ রেল কর্তৃপক্ষ ওই কোম্পানির কাছে অগ্রিম টাকা প্রদানের হার কমানোর অনুরোধ জানালেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তার অবস্থানে অনড় ছিল। এক্ষেত্রে তারা সাফ জানিয়ে দেয়, লোকোমোটিভ জাতীয় মালামাল কেনার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ অগ্রিম টাকা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জানা গেছে, রেল কর্তৃপক্ষ লোকোমোটিভ সরবরাহের বিষয়ে ৩টি বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। কিন্তু দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি রেল কর্তৃপক্ষের কথা শোনে নি। বরং কমিটির পক্ষ থেকে রেল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল, বিশ্ববাজারে কপার ও লৌহজাত মালামালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তাছাড়া মুদ্রা বিনিময় হার ও অন্যান্য ঝুঁকিও রয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করেই দরপত্র কমিটি ভারত থেকে লোকোমোটিভ কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে। তবে মূল্যায়ন কমিটির দাবি, লোকোমোটিভ কেনার প্রক্রিয়ায় কৃচ্ছতা সাধণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের (তখনও রেল মন্ত্রণালয় হয় নি) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, রেলওয়ে লোকোমোটিভ অন্য সাধারণ পণ্যের মতো সচরাচর পাওয়া যায় না। সরবরাহকারী সরবরাহের আদেশ পাওয়ার পর তা তৈরি করে। এজন্য এ পণ্যের বাজারমূল্য নির্ণয় করা কঠিন।
এদিকে, চালু হতে না হতেই ভারত থেকে আমদানী করা লোকোমোটিভগুলোতে নানান সমস্যা দেখা দেয়ায় রেল কর্তৃপক্ষ অনেকটাই বিব্রত। বিশেষ করে রেলওয়ের ম্যাকানিক্যাল বিভাগ থেকে একের পর এক অভিযোগ আসায় কর্তৃপক্ষ অনেকটাই বেসামাল হয়ে পড়েছে। আর এ নি¤œমানের ইঞ্জিন নিয়ে সবচে বিপাকে আছেন ট্রেন চালক ও সহকারী চালকরা। তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৩১শ’ অশ্বশক্তির এসব ইঞ্জিন সহজে ১শ’ কিলোমিটার গতিবেগে চলতে পারে। কিন্তু এর সামনের ‘হেডলাইট’ এতোটাই নি¤œমানের যে সামনে ১০গজও দেখা যায় না। অথচ নিয়ম অনুযায়ী একজন চালককে সামনের দিকে কমপক্ষে ৪শ মিটার দুরত্বে সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে। ১০ গজ দুরে দেখা না গেলে ট্রেন চালান কিভাবে? এ প্রশ্নের জবাবে একজন চালক বলেন, ‘আল্লাহর ওয়াস্তে চালাই।’ চালকরা জানান, ইঞ্জিনগুলোর ফিটিংস এতো নি¤œমানের যে, দু’চারদিন চলার পরে এগুলোর উইন্ড উইপার বিকল হয়ে গেছে। এতে করে সামান্য বৃষ্টি হলে সামনের গ্লাসে পানি জমে গেলে জানালা দিয়ে মাথা বের করে সামনের দিকে দেখতে হয়। ইঞ্জিনের কেবিনেট চালকের আসন থেকে অনেকটা দুরে প্রতিস্থাপন করা। এতে করে সোজা হয়ে বসে অপারেট করা যায় না। চালকের আসন থেকে সহকারী চালকের আসনও বেশ দুরে। ইঞ্জিনের বিকট শব্দে সহকারীর সাথে কথা বলারও সুযোগ নেই। সহকারী চালককে (এএলএম) সামনে পেছনে দু’দিকেই নজর রাখতে হয়। ক্রমাগত হর্ণ বাজাতে হয়। সিগন্যাল দেখতে হয়। কিন্তু তার আসনটি এমনভাবে বসানো যে হর্ণ বাজাতে গেলে তাকে পেছনে তাকাতে হয়। আবার পেছনে তাকাতে গেলে ঘুরে বসতে হবে। এসব অসুবিধার কারনে সহকারীর পূর্ণ সহযোগীতা পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন একাধিক চালক। এ ছাড়া গতি বাড়ালে ইঞ্জিনের ভাইব্রেশন এতোটাই বাড়ে যে স্বস্তি নিয়ে বসে থাকা যায় না। একজন চালক বলেন, আমরা বহুদিন ধরে পুরাতন ইঞ্জিন চালিয়ে আসছি। সে ক্ষেত্রে নতুন ইঞ্জিন নিয়ে সবারই প্রবল আগ্রহ ছিল। সে আগ্রহ একেবারে গুঁড়েবালি। এখন ভারতীয় ইঞ্জিনে ডিউটি পড়লে অনেকের গায়ে ‘জ্বর’ আসে। বিশেষ করে সহকারী চালকরা অস্বস্তিবোধ করে। তাদের কেউই স্বস্তিতে কাজ করতে পারে না। জানা গেছে, ৬৫০৫ সিরিয়ালের ইঞ্জিনটি একেবারে বিকল হয়ে পড়ে আসে। ভারতের ভারানাসি ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (ডিএলডাব্লিউ) এর ওয়ারেন্টির আওতায় ইঞ্জিনটি মেরামত করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। বাকী ৯টি ইঞ্জিনের মধ্যে চারটিতে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী জানান, সমস্যাগুলো চিহ্নিত হওয়ার পরেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেগুলো আমলে নিচ্ছে না। আমলে নিলে এ মাসের শেষ দিকে আরও ৬টি ইঞ্জিন আসার কথা রয়েছে সেগুলো আপগ্রেড থাকে তা নিশ্চিত করা যেতো।

সূত্র
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×