somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়ছে চালের দাম, সেইসাথে বাড়ছে বৈষম্য

১৪ ই অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

রাজনীতিতে আমার হাতেখড়ি পাকিসত্দান যুগে। আমরা যখন স্কুলের ছাত্র সে সময়েই আইয়ুবী সামরিক শাসন জারি হয় (১৯৫৮ সাল) এবং এর কয়েক বছরের মধ্যে তার বিরম্নদ্ধে ছাত্র সমাজের প্রথম প্রতিরোধ সূচিত হয় (১৯৬২ সাল)। অবশ্য তখনও আমি নিজে মিটিং-মিছিলে যাওয়া শুরম্ন করিনি অথবা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে সরাসরি জড়িত হইনি। তবে মনে ও মননে দেশপ্রেম ও বামপন্থী প্রগতিবাদী চিনত্দার স্পষ্ট স্ফূরণ ঘটতে শুরম্ন করেছে সে সময় থেকেই। ম্যাট্রিক পাস করে কলেজে প্রবেশ করার পর (১৯৬৫ সাল) আমার মিটিং-মিছিলে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণসহ সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলনে সামিল থাকার দীর্ঘ ৪৫ বছরের পর্বের সূচনা হয়।

এই ৪৫ বছর ধরে কতোরকম সেস্নাগানই না উচ্চারণ করেছি ও উচ্চারিত হতে শুনেছি। বিগত এই চার যুগে দেশ বদল হয়েছে, সরকার বদল হয়েছে, পরিস্থিতি বদল হয়েছে, তার সাথে সাথে বদল হয়েছে অনেক সেস্নাগান। কিন্তু কিছু কিছু সেস্নাগান আছে যেগুলো ১৯৬৫ সাল থেকে ৪৫ বছর ধরে আমাদেরকে দিয়ে যেতে হচ্ছে। প্রাসঙ্গিকতা না হারানো এসব সেস্নাগানগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো, 'চাল-ডাল-তেলের দাম কমাতে হবে', 'অন্ন-বস্ত্র-শিৰা চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই', 'কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না' ইত্যাদি। ভাত-কাপড়ের দাবিতে আরো কতোদিন যে এ ধরনের সেস্নাগান দিয়ে যেতে হবে, বলতে পারবো না।

আইয়ুব বিরোধী গণঅভু্যত্থানের আগে 'চাল-ডাল-তেলের দাম কমাতে হবে' এই সেস্নাগানটি আরো সুনির্দিষ্ট রূপ ধারণ করে 'বিশ টাকা মণ দরে চাল চাই, দশ টাকা মণ দরে গম চাই' এই আওয়াজ পরিগ্রহ করে। আমরা তখন গলা ফাটিয়ে এই সেস্নাগানে রাজপথকে প্রকম্পিত করতাম। বর্তমানে ২০ টাকায় একমণ তো দূরের কথা এক কেজি চালও পাওয়া যায় না। খোলা বাজারে মোটা চালের দাম এখন কেজি প্রতি ৩১ থেকে ৩৩ টাকা। আর আটার দাম কেজিপ্রতি ৩২/৩৩ টাকা। অর্থাৎ আইয়ুব আমলের তুলনায় বর্তমানে চাল-গমের দাম ৫০/৬০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

যুক্তি দেখানো যেতে পারে যে মানুষের আয়ও তো এসময়কালে অনেক বেড়েছে। একথা ঠিক! তবে কার আয় কতোটা বেড়েছে? দেশের একশ্রেণীর হাতে গোনা কিছু মানুষের আয় কেবল ৫০/৬০ গুণ নয়, তা লৰ-কোটি গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বটে। কিন্তু অধিকাংশ দেশবাসীর আয় কি চাল-গমের মূল্য বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েছে? না বাড়ে নি। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ষাট-এর দশকে একজন অদৰ মাটি কাটার কামলার দৈনিক মজুরি ছিল আড়াই টাকার বেশি (মাসে ৭৫ টাকার বেশি)। সেৰেত্রে বর্তমানে একজন আধা-দৰ গার্মেন্টস শ্রমিকের নূ্যনতম মজুরি সেই তুলনায় মাত্র ৪০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে মাসে ৩০০০ টাকা। চাল-আটার দাম যদি ৫০/৬০ গুণ বেড়ে থাকে, আর আয় বৃদ্ধি পেয়ে থাকে যদি মাত্র ৪০ গুণ, তা হলে এসব সাধারণ মানুষের পৰে চাল-আটা কেনার ৰমতা কি বাড়লো না কমলো? হিসাব বলে দেয় যে তাদের এসব খাদ্যশস্য কেনার ৰমতা গত চার দশকে ২৫% থেকে ৩০% কমেছে।

বাজারে যদি কোনো জিনিসের দাম বাড়ে, তাহলে তাতে আর্থিকভাবে লাভবান হয় বিক্রেতা আর ৰতিগ্রসত্দ হয় ক্রেতা। সাধারণভাবে বাজারে বিক্রেতার সংখ্যা নগণ্য, কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা অগণিত। ফলে পণ্যের বাজারদর বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ দাঁড়ায় অগণিত ক্রেতাসাধারণের ওপর একটি বাড়তি বোঝা ও আর্থিক চাপ সৃষ্টি হওয়া। এটাই সাধারণভাবে সত্য। একটি ৰেত্রে শুধু এর ব্যতিক্রম। শুধু ব্যতিক্রমই নয়, সেৰেত্রে সৃষ্ট ফলাফল হলো সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। এই ব্যতিক্রমধর্মী পণ্যটি হলো মেহনতি মানুষের 'শ্রম-শক্তি'। 'শ্রম-শক্তি'-র বিক্রেতা অগণিত, কিন্তু তার ক্রেতা (অর্থাৎ নিয়োগকর্তা) হলো তুলনামূলকভাবে নগণ্যসংখ্যক। একমাত্র 'শ্রম-শক্তির' দাম বাড়ার মধ্য দিয়েই অধিকাংশ মানুষ উপকৃত হওয়ার সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এদেশের প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এমনই যে, সব সময়ই অধিকাংশ মানুষ যা বিক্রি করে সেই 'শ্রম-শক্তির' দাম যে পরিমাণে বাড়ে তার চেয়ে একধাপ বেশি লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ে সাধারণ মানুষ যা কিনে থাকে সেসব পণ্যের দাম। এটা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার একটি অনত্দর্নিহিত বৈশিষ্ট্য।

বাজারে 'শ্রম-শক্তি' ব্যতীত অগণিত নানা রকম পণ্য আছে। এসব যে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে সাধারণত জনগণের আর্থিক বোঝা কম-বেশি বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর মধ্যে কোন্্ পণ্যের দাম বাড়লে এই আর্থিক বোঝা সবচেয়ে বেশী বৃদ্ধি পায়? স্বাভাবিকভাবে তা হলো সেই পণ্য যার পেছনে অধিকাংশ মানুষের আয়ের বৃহত্তম অংশ ব্যয় হয়। অধিকাংশ মানুষ কোন্্ পণ্য কেনার জন্য তার আয়ের বৃহত্তম অংশ খরচ করে? বাংলাদেশে সে পণ্যটি হলো মানুষের খাদ্যসামগ্রী, বিশেষত: খাদ্যশস্য। অর্থাৎ চাল-আটা। অন্যান্য পণ্যের তুলনায় চাল-আটার মূল্য যতোটা বেশি পরিমাণে বাড়বে, তার বোঝা ততো বেশি পরিমাণে অন্যান্য শ্রেণীর মানুষের তুলনায় সাধারণ মেহনতি জনগণের কাঁধে অর্পিত হবে। এর ফলে যারা দরিদ্র তাদের আপেৰিক দারিদ্র্য আরো বৃদ্ধি পাবে। সমাজে ধন-বৈষম্য, শ্রেণী-বৈষম্য আরো প্রসারিত হবে। এমনটাই বছর বছর ধরে এদেশে ঘটে চলেছে। বর্তমান পরিস্থিতিও তার ব্যতিক্রম নয়।

পরিসংখ্যান বু্যরের জরিপে দেখা যায় যে, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের আয়ের ৬০% থেকে ৬৫% ব্যয় হয়ে যায় চাল কেনায়। মফস্বলের একজন ভ্যান চালক দৈনিক যে ৮০ থেকে ১০০ টাকা আয় করে তা থেকে প্রথমেই তাকে পরিবারের জন্য ২ কেজি চাল কিনে নিতে হয়। বর্তমানে এই ২ কেজি মোটা চালের দাম ৬৫ টাকার ওপরে। অবশিষ্ট ২০/৩০ টাকা দিয়ে তাকে তেল-লবণ-সবজি ইত্যাদি কিনতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়তে হয়। সংসারের অন্যান্য গৃহাস্থালি খরচ, চিকিৎসা-শিৰা ব্যয় ইত্যাদির কথা না হয় বাদই দিলাম। দেশের ৪০ লৰ গার্মেন্টস শ্রমিকের ৰেত্রেও আয়ের ৬০% থেকে ৬৫% চাল-আটার পেছনেই খরচ হয়ে যায়। অথচ যাদের আয় ৫০ হাজার টাকার ওপরে, তারা সবচেয়ে উঁচু মানের চাল কিনে খেলেও সেজন্য তাদের আয়ের ১০%-১৫%-এর বেশি খরচ করতে হয় না (বাসার কাজের লোক, দারোয়ান প্রমুখের জন্য চাল কেনার খরচসহ)। ফলে চালের মূল্যবৃদ্ধির চাপ অবস্থাপন্নদের তুলনায় জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, দরিদ্র ও হতদরিদ্রদের ওপর ৪/৫ গুণ বেশি চেপে বসে। এই চাপ পরিহার করার কোন উপায় তাদের নেই। কারণ বেঁচে থাকার জন্য আগে খাদ্যের ব্যবস্থা করে নিয়ে তার পরে অন্য খরচের কথা আসে। আর বাঙালির কাছে প্রধান খাদ্যসামগ্রী হলো চাল। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত বাঙালির ভাল-মন্দ এখনো তাই চালের দামের ওপর একানত্দভাবে নির্ভর করে।

এ প্রসঙ্গে বহুদিন আগের, আশির দশকের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমি তখন ৰেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক। আশ্বিন-কার্তিকের মঙ্গার কারণে বাজারে চাল তখন দুমর্ূল্য। ৰুধার্ত মানুষের জন্য টেস্ট রিলিফ, ওয়ার্কস প্রোগ্রাম, কাবিখা প্রভৃতি প্রকল্পের কাজ বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি করার দাবি নিয়ে আমরা তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটিশন নিয়ে গিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ও আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে আমি মন্ত্রীকে বললাম, 'মানুষের পেটে এখন ভাত নেই। অনাহারে থাকতে হচ্ছে। কচু-ঘেচু খেয়ে তাদেরকে দিন কাটাতে হচ্ছে।ঃ'। কচু-ঘেচু বলার সাথে সাথে সচিব মহোদয় বলে উঠলেন, 'এটা তো ভাল কথা! কচু তো ভাল জিনিস, তাতে প্রচুর আয়রণ আছে।' কিংবা সেই বিখ্যাত ঘটনার কথাটিই মনে করম্নন না কেন, যখন ফরাসি বিপস্নবের আগে রাজপ্রাসাদের জানালা থেকে প্যারিসের রাজপথে ৰুধার্ত মানুষের ক্রোধান্বিত বিশাল মিছিল দেখে রানী প্রশ্ন করেছিলেন, 'এরা চিৎকার করে কি চাচ্ছে?' তার অনুচরেরা জবাব দিয়েছিল, 'এদের রম্নটি নেই, তাই এরা রম্নটির জন্য চিৎকার করছে।' রানী সরল মনে পাল্টা উক্তি করেছিলেন, 'রম্নটি নেই তাতে তারা ক্রদ্ধ কেন? রম্নটি যদি ওরা না পায় তাহলে ওরা কেক খেলেই তো পারে'। তাই, কচু-ঘেচু অথবা কেক, সচিব মহোদয় বা রানীর এসব উক্তিতে যতো নির্মম রসিকতাই থাকুক না কেন,বড় সত্য হলো এই যে, বাঙালির চাই ভাত। দিন আনি-দিন খাই ধরনের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশবাসীর জন্য চালের দামের সাথে তাদের বেঁচে থাকার প্রশ্ন প্রত্যৰভাবে জড়িত হয়ে আছে।

বিভিন্ন হিসেব থেকে দেখা যায় যে, গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৫০%। গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর মোটা চালের দাম ছিল ২১-২৩ টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৩১-৩৪ টাকা। বৃদ্ধির হার ৫০%। গত বছর মুদ্রাস্ফীতির হার যেখানে ছিল ৭.৩% সেখানে শুধু চালের মূল্যবৃদ্ধি এককভাবেই ৫০% হওয়ার ঘটনায় একথা প্রমাণিত হয় যে, মুদ্রাস্ফীতির প্রধান চাপ পতিত হয়েছে দরিদ্র-মধ্যবিত্ত মানুষের ওপরে। চাল ব্যতীত অন্যান্য বেশিরভাগ পণ্যর দাম, বিশেষত বিত্তবানরা যেসব জিনিসপত্র কেনার পেছনে তাদের আয়ের সিংহভাগ খরচ করে, তার দাম বেড়েছে নিশ্চয়ই ৭.৩%-এর অনেক কম। বাজার দর বৃদ্ধির এই বিভাজিত (ফরভভবৎবহঃরধঃবফ) হারের কারণে সমাজে গত এক বছরে ধন-বৈষম্য শ্রেণী-বৈষম্য আরো বেড়ে গেছে। যে ব্যবস্থায় দেশের অর্থনীতি পরিচালিত হচ্ছে তাতে এভাবেও গরিব আরো গরিব হওয়া আর ধনী আরো ধনী হওয়ার প্রক্রিয়া চলতে থাকাটাই স্বাভাবিক।

সাধারণভাবে চালের দামের হ্রাস-বৃদ্ধি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর ওপর কি প্রভাব ফেলবে, সে সম্পর্কে উলিস্নখিত বিশেস্নষণকে যুক্তিগ্রাহ্য ও সঠিক বলে ধরে নেয়া যায়।

কিন্তু কথা আরো আছে। বাজারে বিভিন্ন মানের চাল পাওয়া যায়। একেক মানের চালের দাম একেক রকম। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, গরিব মানুষরা যেসব নিম্নমানের মোটা চাল খায় সেসবের মূল্য বৃদ্ধির তুলনায় উচ্চবিত্তরা যেসব উন্নতমানের চাল খায় সেসবের দাম বৃদ্ধির পরিমাণ অনেকটাই কম। যদিও চালের মূল্যবৃদ্ধির চাপ 'হজম' করার ৰমতা উচ্চবিত্তদের ৰেত্রে অনেক বেশি, তথাপি তাদের জন্যই 'বাজারের' এহেন উদার 'কনসেশন'। এরই নাম পুঁজিবাদ! এটাই হলো পুঁজিবাদের 'অসম বিকাশ তত্ত্বের' মূর্ত একটি দৃষ্টানত্দ।

টিসিবি'র হিসাব থেকে দেখা যায় যে, গত এক বছরে মোটা চালের দাম ২১-২৩ টাকা থেকে বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৩১-৩৪ টাকায়। মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ ৫০%। এই সময়কালে পাইজাম, লতা ইত্যাদি মাঝারি মানের চালের দাম ২৪-২৭ টাকা থেকে বেড়ে এখন হয়েছে ৩৪-৩৮ টাকা। বৃদ্ধির পরিমাণ ৪১%। আর নাজিরশাইল, মিনিকেট প্রভৃতি উন্নতমানের সরম্ন চালের দাম ৩২-৩৪ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে হয়েছে ৪০-৪৮ টাকা। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ২৫%।

কিছুদিন আগে প্রস্তুত করা কনজুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর ৫ বছরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, ২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যনত্দ পর্যায়ক্রমে বছর বছর চালের মূল্যবৃদ্ধির হার হলো যথাক্রমে নাজিরশাইলের ৰেত্রে ১%, ৩৩%, ২২%, (-)৪.৫% এবং ৭%। এৰেত্রে পাঁচ বছরে মূল্যবৃদ্ধির হার হলো ৬৭% কিংবা গড়ে বছরে ১৩.৫%। পাইজাম চালের ৰেত্রে বছর বছর মূল্য বৃদ্ধির হার ০%, ৮.৫%, ৪৮%, (-)২৪%, এবং ২৮.৫%। পাঁচ বছরের পাইজাম চালের দাম বেড়েছে ৫৬.৫%, অর্থাৎ গড়ে বছরের ১১.৩%। বিআর-১১ ও ৮ চালের ৰেত্রে বছর বছর মূল্য বৃদ্ধির হার হলো ৫.৫%, ২১%, ৩৯%, (-)২৫% এবং ৩৫%। পাঁচ বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৮০.৫%, অর্থাৎ গড় বাৎসরিক মূল্যবৃদ্ধি হলো ১৬%। এভাবে বাৎসরিক গড় মুল্যবৃদ্ধির হার হিসাব করলে দেখা যায় যে গরিব মানুষ যে মোটা চাল খায় তার ৰেত্রে তা ১৬%, মাঝারি মানের চালের ৰেত্রে তা ১১.৩% এবং উন্নতমানের সরম্ন চালের ৰেত্রে তা ১৩.৫%। গত এক বছরে এই বিপরীতমুখী বৈষম্য যে আরো বেড়েছে তা টিসিবি প্রদত্ত এই হিসাব থেকে স্পষ্ট হয়।

বাড়ছে চাল-আটার দাম। সরকার অজুহাত দিচ্ছে অনেক, কথা বলছে তারচেয়েও বেশি। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু চাল-আটার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাওয়া থামছে না কোনোভাবেই। সরকার আসে যায়, কিন্তু সাধারণ গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষের ভাত কিনে খাওয়ার সামর্থ্য প্রতিনিয়তই কমতির পথে। সবকিছুই 'বাজারের কাজ' বলে দায় চাপিয়ে সরকার ও কর্তব্যক্তিরা দায়িত্ব সারছেন। এভাবেই কি চলতে থাকবে চিরদিন? উদ্ধার পাওয়ার পথ কি নেই কোন?

আমি মনে করি পথ আছে। করা যেতে পারে অনেক কিছু। তার মধ্যে প্রধান কাজ হলো সারা দেশে শক্তিশালী দৰ দুর্নীতিমুক্ত 'গণবণ্টন ব্যবস্থা' চালু করা, গরিব নাগরিকদের জন্য স্থায়ী রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তন, টিসিবিকে প্রকৃতই সচল ও শক্তিশালী করা, কসকোর চালু-এর দোকান করা, ক্রেতা সমবায় ও তাদের বিপণন কার্যক্রম গড়ে তোলা, ন্যায্যমূল্যের সরকারি দোকান খোলা, সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর বাফার স্টক গড়ে তোলা ইত্যাদি। এসব পদৰেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে চাল-আটাসহ নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কিন্তু তা করার জন্য 'পুঁজিবাদী অবাধ বাজার অর্থনীতি'র ভ্রানত্দ ও ৰতিকর পথ পরিত্যাগ করতে হবে। মোশতাক-জিয়া-এরশাদের আর্থ-সামাজিক নীতি ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারা ও রাষ্ট্রীয় চার নীতির পথে দেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সমাজতন্ত্র অভিমুখীন অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করতে হবে। '৭২-এর সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনা সম্পর্কে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পরেও এ নিয়ে সরকারের দ্বিধা কেন?

[লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি]
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×