ষাটের দশকের চলচ্চিত্র জগতে সাড়া জাগানো অভিনেত্রী ছিলেন জরিনা। ওই সময়ে অন্যান্য নায়ক নায়িকাদের সঙ্গে জরিনা ওরফে জরিনা সুন্দরীর অভিনয় মাতিয়ে তুলতো সারাদেশ। জরিনাকে দর্শকশ্রোতা এক নামে চিনতো। চলচ্চিত্র ও নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি। স্বামী, সন্তান ও আত্মীয় পরিজন নিয়ে ছিল তার সুখের সংসার। দর্শক শ্রোতাদের মত আপনজনরাও ওই সময় জরিনাকে কাছে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকতো। তিনি ভাবতে পারেননি তার জীবনটাই ছিল আসলে একটা অভিনয়। যৌবনে স্বামী, সংসার, সন্তান ও আপনজনের কাছে কতই না মমতা আর সম্মান পেয়েছিলেন। কিন্তু আজ বৃদ্ধা বয়সে আপনজনের সেই মায়া মমতা ও সম্মান সবই যেন গুঁড়ে বালি । বৃদ্ধ বয়সে আপনজনার নির্যাতন আর মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তাদের ছেড়ে জরিনা ঠাঁই নিলেন বৃদ্ধাশ্রমে। এটাই তার নিয়তি বলে জরিনা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
গাজীপুর মনিপুর বিশিয়া বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ২ শতাধিক বৃদ্ধ বৃদ্ধার সঙ্গে জরিনা সুন্দরীও একজন বাসিন্দা। জরিনা বলেন, অতি ভালবাসা, অতি ধন সম্পদ ও অতি বিলাসিতা অন্তিম সময়ে মানুষকে বড় কষ্ট দেয়। তার জীবনের অনেক না বলা কথা জরিনা সুন্দরী জানান। কথা বলতে বলতে তিনি কবি কালীদাস রায়ের কবিতার দুটি লাইন উচ্চারণ করে বলেন, অবাল্য অবিশ্রান্ত দুরন্ত সংগ্রাম, জরাই শিবিরে শুধু দিনান্ত বিশ্রাম জরাই প্রায়শ্চিত্ত জরা অনুতাপ, ধুয়ে মুছে ধৌত করে আঁখিজলে পূঞ্জীভুত পাপ।
জরিনা জানান, ষাটের দশকে তিনি সাত ভাই চম্পা, গুনাই, রূপবান, জরিনা সুন্দরী, সাগর ভাসা, আপন দুলাল ও বেহুলা ছবিতে অভিনয় করেছেন। এছাড়া আরও অনেক ছবিতে অভিনয় করেন। এক পর্যায়ে স্বামী আনোয়ার হোসেন ভুঁইয়া, এক ছেলে ও এক মেয়ে মারা যাওয়ার পর তিনি অসহায় হয়ে পড়েন। ছেলের ঘরে তার ৪ নাতনী ও এক নাতী রয়েছে। আরও নামিদামি স্বজনরাও রয়েছেন। কিন্তু অন্তিম সময়ে এসে জরিনা এ সব আপনজনদের কাছে লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার শিকার হন। এক আপনজন তাকে ভারতে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তার কপালে সুখ সয়নি। ফেরত আসেন বাংলাদেশে। পরবর্তীতে স্বজনদের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে চলে আসেন এই বৃদ্ধাশ্রমে। বৃদ্ধাশ্রমে মনোরম পরিবেশে অন্যান্য বৃদ্ধাদের সঙ্গে জরিনার দিন রাত ভালই কেটে যায়। অতীত স্মৃতি তিনি এখন মন থেকে মুছে ফেলেছেন। বৃদ্ধাশ্রমের কর্মীদের ব্যবহারেও তিনি মুগ্ধ। তাদের নিকট তিনি কত যে আপন, তা তিনি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবেন না বলে জানান।
বি.দ্র: ঈষৎ কাটাছেড়া, সৌজন্যে ইত্তফাক; অনুমিতবিহীন, প্রচারের জন্য।