চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়-
আমি এখনও প্রস্তুত হতে পারি নি, আমার অনবরত
দেরি হয়ে যাচ্ছে
আমি এখনও সুড়ঙ্গের মধ্যে আধো-আলো ছায়ার দিকে রয়ে গেছি,
আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে.
সুনীল এর কবিতা, আসলেই খুব দেরী হয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে যিনি বিপ্লবের এক অমোঘ চেতনা আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, আমরা তার কতটুকু আমাদের অন্তরে ধারণ করতে পেরেছি।
" চে " এর আজ মৃত্যুদিন। ১৯৬৭ এর এই দিনে বিশ্ব-মোড়ল আমেরিকার সহযোগীতায় বলিভিয়ার সৈন্যরা তাকে হত্যা করে।
১৯২৮ সালের ১৪ই জুন আর্জেন্টিনার একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে চে গুয়েভারা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল এরনেস্তো গুয়েভারা দে লা সের্না। বাবা গুয়েভারা লিঞ্চ। মা মেরিলা মেনা। এরনেস্তো চে গুয়েভারা ছিলেন একই সঙ্গে একজন কমিউনিস্ট, বিপ্লবী, চিকিৎসক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা। আর্জেন্টিনার একটি মেডিকেল কলেজে তার ডাক্তারি পড়াশোনা। পড়াশুনা শেষে রক্ত বিশেষজ্ঞ হন। কিন্তু এই ডাক্তারের রক্তে এবং চেতনায় ঢুকে যায় স্মাজবাদ। যার চিন্তা-চেতনায় অহর্নিশ গোত্তা খেতে থাকে শোষিত মানুষের হাহাকার। তাই ছুটে যান নিরন্ন-অনাহারী মানুষের কাছে। দিনের পর দিন। মাসের পর মাস। এভাবে পার হয়ে যায় বছর। শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য বিপ্লবের নেশায় পাগল হয়ে ওঠেন তিনি। বন্ধু চিচিনার দেয়া ১৫ ডলার ও বন্ধু আলবার্তোকে সঙ্গে নিয়ে জরাজীর্ণ মোটর সাইকেলে চড়ে আর্জেন্টিনার ক্ষুদ্র গণ্ডি পেরিয়ে ঘুরে বেড়ান ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। উদ্দেশ্য একটাই_ বিপ্লব। প্রত্যক্ষ করেন সেখানকার বাস্তবতা। ঘুরে বেড়ান পেরু, ভেনিজুয়েলা, পানামা, ইকুয়েডর, মেক্সিকো, কঙ্গো, উগান্ডা, কেনিয়া, তাঞ্জানিয়া ও কিউবাসহ আরো অনেক দেশে। এসব দেশে তিনি বিপ্লবী তৈরী ও বিপ্লব সংগঠিত করার জন্য বিপ্লবী কর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দেন।
আর এভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন পুজিবাদী আমেরিকার শত্রু। ১৯৫৬ সালে আরেক বিপ্লবী কাস্ত্রো এর সাথে তার যোগাযোগ হয়। সেখানে তিনি ২৬শে জুলাই নামে একটি সংগঠনে যোগ দেন। মুলত এখানেই তার সাংগঠনিক দক্ষতা আর বিপ্লবের জ্ঞানটা প্রকাশিত হতে থাকে। এরপর তিনি সেখান থেকে বলিভিয়া যান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে। আর সেখানে CIA এর সহযোগীতায় বলিভিয়ার সৈন্যরা তাকে আজ এই দিনে হত্যা করে।
" চে " - তোমায় সালাম। হাজার সালাম।
আবার সুনিলের সাথে বলি -
শৈশব থেকে মধ্য যৌবন পর্যন্ত দীর্ঘ দৃষ্টিপাত
আমারও কথা ছিল হাতিয়ার নিয়ে তোমার পাশে দাঁড়াবার
আমারও কথা ছিল জঙ্গলে কাদায় পাথরের গুহায়
লুকিয়ে থেকে
সংগ্রামের চরম মুহূর্তটির জন্য প্রস্তুত হওয়ার
আমারও কথা ছিল রাইফেলের কুঁদো বুকে চেপে প্রবল হুঙ্কারে
ছুটে যাওয়ার
আমারও কথা ছিল হাতিয়ার নিয়ে তোমার পাশে দাঁড়াবার - " চে " তোমায় সালাম ...
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা
এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম
জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়
ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন
পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?
বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন