somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্মল হাসি আনন্দের দিন

১৬ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় দেড় মাস পর মুখের দাঁড়ি কামালাম গত মঙ্গলবার। সাভারে আসার পর যে সেলুনটায় এর আগে কয়েকবার দাঁড়ি কামিয়েছি এবারও সেটাতোই গেলাম। সেলুনের মামা আমার মুখ চেনা। কিন্তু সেদিন প্রথমে সে আমাকে চিনতে পারেনি।
দাঁড়ি কাটা শেষ হলে মুখ যখন পরিস্কার তখন দেখে বলল 'ও, মামা আপনে?' আমি বললাম 'হ'।
এরকম মুখভর্তি দাঁড়ি, ছেড়া প্যান্ট, ফাটা লুঙ্গি, নষ্ট মোবাইল দিয়েই আজকাল আমার দিন চলছে। এমন নয় যে এসব প্রয়োজন মেটাবার পয়সা আমার নেই। বাপ যতদিন আছে টাকা পয়সার সমস্যা হওয়ার কখা না। বাপের কাছে চাইলেই টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু ইদানীং আমি নিজেকে এসব প্রয়োজনের উর্ধ্বে রাখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করছি। কিন্তু কেন? তার উত্তর সহজ ভাষায় বলা যায় 'নির্মল হাসি আনন্দের দিন' আর নেই।

ঈদে বাড়িতে গেলাম। বাড়িতে থাকলে আমার এক চাচাতো ভাই আমাকে সারাক্ষণ সঙ্গ দেয়। আমার হাত ফরমাইশের যত কাজ খুশি মনে সেই করে। আমি তাকে মাঝে মধ্যে দু চার পয়সা করে টাকা দেই। কিন্তু ইদানীং আর দিচ্ছি না। সে আমাকে বলে 'বিপ্পুল ভাই, খবর কী?' আমি বলি 'খবর নাই। এখন যা, পরে আসিস।'

চিন্তা করলাম। এক সময় মনে ভাল লাগা ছিল, বুকে সাহস ছিল, নির্ঝঞ্চাট ভাবনা ছিল, নির্মল হাসি আনন্দের দিন ছিল। কিন্তু এখন আর নেই।

ভাবলাম। কি করে এসব হল ? এর থেকে কি আর বের হতে পারব না ? নির্মল হাসি আনন্দের দিন কি আর আসবে না?

ভেবে ঠিক করলাম, আসবে। এমন সময় আর সবসময়ই থাকবে না। দিন আসবে। আসতেই হবে।

আর যখন দিন আসবে আমি আর এমনটি থাকব না। আবার পাল্টে যাব......

তখন আমার নতুন মোবাইল ফোন থাকবে, সে ফোনে থাকবে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স। চার জোড়া নতুন জুতা থাকবে, দুই জোড়া ফিতাওয়ালা দুই জোড়া ফিতা ছাড়া। চশমার নতুন ফ্রেম কিনব, বসুন্ধরা সিটি থেকেই। দুই হাতের পুরাতন তিনটি আংটি বদলে নতুন তিনটি পাথরের আংটি কিনব। আলমারী ভর্তি জামাকাপড় থাকবে। দুইটা দামি হাতঘড়ি কিনব, একটা ফর্মাল ড্রেসের সাথে, আরেকটা জিন্স টি শার্টের সাথে। নতুন একটা ক্যামেরা কিনব, অজস্র ছবি তুলব আর ফেইসবুকে আপলোড দেব, সেগুলোতে হাজার হাজার লাইক পরবে। পকেটে বুজকা বুজকা টাকা থাকবে, ভাড়া নিয়ে রিক্সাওয়ালা বা বাসের কন্ট্রাক্টরের সাথে আর ক্যাচ ক্যাচ খ্যাচ খ্যাচ করব না। পথে ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইলে আর বলবনা 'মাফ করেন'।

ভাইগ্নার জন্য নতুন আরেকটা খেলনা হেলিকপ্টার কিনব, এর আগে একটা কিনে দিয়েছিলাম ১৭০০ টাকা দিয়ে কিন্তু বাজার থেকে কিনে বাসায় নিয়ে গিয়ে যখন ওটা ওর হাতে দিলাম তখন দেখি ওটা আর ঊড়ে না, আমার পিচ্চি ভাইগ্না কচি মনে খুব কষ্ট পেয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকদিন আগে আবার ওদের বাড়ির পাশে খেলার মাঠে সেনাবাহিনীর একটা হেলিকপ্টার ল্যান্ড করেছিল, বাড়ির ছাদ থেকে সে এটা দেখেছে। তারপর থেকে তার হেলিকপ্টার ভাবনাটা আরও প্রবল। পরদিন আমাকে ফোন করে বলে ‘মামা, আমি একটা ইয়া বড় হিলিকপ্টার দেখছি, মাটিতে নামছিল’।

রেস্টুরেন্টে যাব। মেনুতে খাবারের নামের পাশে কত দাম সেটা ইচ্ছে করেই আর দেখবনা। ওয়েটারকে বলব 'যাও, আস্ত একটা গ্রীল মুরগী নিয়া আস।' সেই মুরগী গাপ গাপ করে কুমীর যেভাবে খায় সেভাবে দুই হাতে ধরে খাব। খাওয়া শেষে ওয়েটারকে দেব মোটা অংকের বকশিস।

পাড়া প্রতিবেশীদের থেকে আর নিজেকে আড়াল করে রাখবনা। ঘরে ঘরে যেয়ে তাদের খোঁজ খবর নেব। বাজারে যাব। চায়ের দোকানে বসব আর পরিচিত কেঊ আসলে চায়ের দোকানীকে বলব 'ফারুক ভাই, রহীম চাচাকে দুধ চিনি বাড়াইয়া এক কাপ চা দ্যাও'

চাচাতো ভাইয়ের আবদার মেটাব। পিচ্চি খালাতো যে বোনটা আছে, যে এই বয়সেই সবসময় সাজুগুজু করতে পছন্দ করে তাকে আড়ং থেকে একটা বিশাল বড় সাইজের মেকাপ বক্স কিনে দেব।

পিতামাতার দুঃচিন্তা দূর করব। মায়ের বাতের ভাল চিকিৎসা হবে, বাপের হবে চোখে ছানি পরার উপযুক্ত অপারেশন। তাদের মনে দুঃখ রাখবনা, তাদের পছন্দের মেয়েকেই করব বিয়ে।

মন প্রফুল্ল থাকবে। হাসি থাকবে, আনন্দ আহ্লাদ থাকবে।

মনের সুখে গান শুনব...

"অঙ্কের খাতা ভরা থাকত আকাঁয়
তার ছবি তার নাম পাতায় পাতায়
হাজার অনুষ্ঠান, প্রভাতফেরীর গান
মন দিন গুনে এই দিনের আশায়
রাত জেগে নাটকের মহরায় চঞ্চল
মন শুধু সে ক্ষণের প্রতীক্ষায়
রাত্রির আঙ্গীনায়, যদি খোলা জানালায়
একবার, একবার যদি সে দাঁড়ায়!

বুঝে নি অবুঝ মন, নীলাঞ্জনা তখন
নিজেতে ছিল মাগন, নি প্রাণপন
হো... হাজার কবিতা বেকার সবিতা
তার কথা কেউ বলে না
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা!"

আরও শুনব...

“মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ
হাতে আছে অচেনা এক শহরের ম্যাপ
ব্যাগ ঝুলিয়েছি কাঁধে, নামব রাজপথে
চারিদিকে ঝলমলে রোদ
কেটে যাবে আধারেরই ছায়া অবরোধ
চারিদিকে কী আনন্দ
অতি তুচ্ছ পতঙ্গেরও অপূর্ব জীবন
হয়ত শিশির কণারও আছে
শুধু তার একান্ত একা আনন্দেরই ক্ষণ”


শুধু ঐ 'নির্মল হাসি আনন্দের দিন' এর অপেক্ষা !
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহর সাহায্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪০



দুই মেয়ের পরীক্ষা বিধায় আমার স্ত্রীকে লক্ষ্মীপুর রেখে আসতে গিয়েছিলাম। বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট রুটে আমার স্ত্রী যাবে না বলে বেঁকে বসলো। বাধ্য হয়ে চাঁদপুর রুটে যাত্রা ঠিক করলাম। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডয়েজ ভেলে'র প্রকাশিত এই প্রামাণ্যচিত্রটি বেশ উদ্বেগজনক

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন বাহিনী থেকে প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ডে যুক্ত সৈনিকদের ইউ.এন. এর পিস কিপিং মিশনে পাঠানোর বিষয়ে ইউ.এন. এর কর্মকর্তাগণ বেশ উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে ডয়েচ ভেলে ক'দিন আগেই একটি প্রামাণ্যচিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুলের চিন্তার কাবা প্রাচ্য নাকি পাশ্চাত্য?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:০৫


কাজী নজরুলের বড় বিপত্তি তিনি, না গোঁড়া ধর্মীয় লোকের কবি আর অতিমাত্রায় বামের কবি, না হোদাই প্রগতিশীলের কবি। তিনি সরাসরি মধ্যপন্থীর। অনেককেই দেখি নজরুলের কিছু কথা উল্লেখ করে বলেন কাফের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×