আকিদুল ইসলাম:
আমাদের সময়ে জাহেদ সরওয়ার আমার লেখার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তার লেখাটি পড়ে প্রথমেই মনে পড়েছে বহুল প্রচলিত একটি বাংলা প্রবাদ, ‘ক্রোধ বুদ্ধি নাশ করে।’ তিনি সম্ভবত লেখার আগেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আমাকে কষে কয়েকটি গালি দেবেন। দিয়েছেনও। তাই যুক্তি আর তর্কের ধারে কাছেও যাননি। যেতে চাননি। পুরো লেখা জুড়ে দিয়েছেন কিছু সস্তা স্লোগান। যা দৈনিক কাগজের পাতায় নয় খোলা ময়দানেই শোভা পায়। কিন্তু আমাদের সময়ের সম্পাদক যেহেতু নাঈমুল ইসলাম খান নামের এক প্রথা ভাঙা মানুষ তাই জাহেদ সরওয়ারের লেখাটি প্রথম পাতায় জ্বলজ্বল করছে।
তিনি লিখেছেন, নিয়ত তাকে আত্মহত্যা করতে বলছে মিডিয়া নাুি দানব পুরুষ। ক্রমশ তাকে অনৈতিক প্রেমিকা বানিয়ে দোররা মারছে আকিদুলরূপী পুরুষতন্ত্রের পুরুতরা।’ জাহেদ যখন আমার লেখার জবাব লিখতে বসেছেন তখন নিশ্চয়ই ভুলে গিয়েছিলেন, প্রভা কোনো সাধারণ কন্যা নন। তিনি তারকা কন্যা। পাবলিক ফিগার। জনপ্রিয় টিভি নায়িকা হিসেবে সব সময়ই তিনি আলোচিত ছিলেন। দেশে-বিদেশে তার অসংখ্য ভক্ত। অনুরাগী। প্রভা কি খেতে পছন্দ করেন, কোন লেখক তার প্রিয়, কোন সময় ঘুমাতে যান, কোন ফুল ভালবাসেন, কোন সহশিল্পীর সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ইত্যাকার বিষয় জানার জন্য তার ভক্তরা সব সময় উদগ্রীব থেকেছেন। মিডিয়া তা জানিয়েছে। সেই প্রভার বিশ্বজোড়া আলোচিত ও বিতর্কিত একটি ভিডিও ফুটেজ নিয়ে মিডিয়া কোনো কথা বলতে পারবে না? এ কেমন নাবালক প্রত্যাশা জাহেদের?
মিডিয়া আজ যা করছে তা যতটা না আজকের প্রভার জন্য তারচেয়ে বেশি ভবিষ্যতের প্রভাদের জন্য। আর কোনো প্রভা যেন এমন ‘ভুল’ না করেন সেই দায়িত্বই এখন পালন করছে মিডিয়া। এটা স্বীকার করতেই হবে, প্রভা শুধু নিজেরই সর্বনাশ করেননি গোটা ভিজুয়াল মিডিয়াকে খুন করেছেন। প্রভার ভিডিওটি দেখবার পর কোনো øিগ্ধ মস্তিষ্কের মা-বাবা তার মেয়েকে এ মিডিয়াতে যেতে দেবেন? এ জগতের অধিকাংশ অভিনেত্রীর দিকেই তো এখন সন্দেহের আঙুল উঠছে, দেখতে পাচ্ছি। আর বাংলাদেশে এখনো যেহেতু টেলিভিশনই একমাত্র পারিবারিক বিনোদন মাধ্যম তাই সন্তানের সঙ্গে অনুষ্ঠান দেখতে বসে পর্দায় এমন কারো উপস্থিতি বাবা-মা কামনা করবেন না যাকে দেখে সন্তানের কাছে তাকে বিব্রতবোধ করতে হয় কিংবা সন্তান অস্বস্তিবোধ করেন।
একজন মানুষ যখন পাবলিক ফিগার হয়ে ওঠেন তখন তার যাপিত জীবনের খুব কম বিষয়ই ব্যক্তিগত থাকে। ক্লিনটন-মনিকার বিষয়টিকে ‘ব্যক্তিগত বিষয়’ বলে কি কেউ ছাড় দিয়েছেন? জর্জ বুশ প্লেন থেকে নামার সময় সামান্য একটু থুথু ফেলেছিলেন রানওয়েতে। তাই নিয়ে কত হই চই মিডিয়াজুড়ে। বিশ্বজুড়ে। বুশের থুতু ফেলানোর ভিডিও ফুটেজ বিক্রি হয়েছিল কয়েক মিলিয়ন ডলারে! ওভাবে যেখানে-সেখানে তিনি থুতু ফেলতে পারেন কিনা তাই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলেছে পণ্ডিতদের মধ্যে। প্রিন্স চার্লস-কামিলার প্রেমপর্বের সময় তাদের ৬ মিনিটের ফোনালাপ ধারণ করেছিল একটি মিডিয়া। যেখানে প্রিন্স চার্লস কামিলার অন্তর্বাস হবার আশা ব্যক্ত করেছিলেন। সেই ফোনালাপ কি ব্যক্তিগত ছিল না? কেন এসেছিল মিডিয়ায়? কারণ তিনি ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের তারকা। এমন আরো অজস্র উদাহরণ দেয়া যায়। দিতে পারি। আমাদের প্রিয় প্রভা জনপ্রিয় তারকা না হলে বিষয়টি আলোচনাতেই আসত না। জনপ্রিয়দের অসঙ্গতি কেউ মেনে নিতে পারে না। আমি শুধু এটাই বলার চেষ্টা করেছি, আরো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া উচিত ছিল প্রভার। আরো বিচক্ষণতার সঙ্গে রাজীব পর্বটির সমাপ্তি টানা উচিত ছিল।
ইন্টারনেটেই আছে প্রভার চেয়েও বাংলাদেশে বেশি জনপ্রিয় কয়েকজন টিভি তারকার আপত্তিকর ভিডিও। এমনকি একজন টিভি স্বত্বাধিকারীর স্ত্রীর নিষিদ্ধ ভিডিও ফুটেজও ইন্টারনেটে দেখা যায়। অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু এগুলো নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা নেই। প্রভা কেন এতটা আলোচনায় এলেন? এটা কি জাহেদরা ভেবে দেখেছেন? মূলত বাগদানের পবিত্রতাকে অস্বীকার করাটাকে বাঙালি আবেগ মেনে নিতে পারেনি।
জাহেদ সরওয়ার আমার লেখা সম্পর্কে বলেছেন, ‘লেখাটির সার কথাই হলো রাজীবের গুণগানঃ’। কোথায় আমি রাজীবের গুণগান গেয়েছি? আমি রাজীবের বুকের গহিনের রক্তজবার মতো ক্ষত চিহ্নটিকে শুধু ছুঁয়ে দেখেছি। জাহেদ বলেছেন, রাজীব ‘চরিত্রহীন’। ভিডিওটি প্রচারে আসার পর রাজীবের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তার মধ্যে প্রধানটি হলো, তিনি যদি সত্যিকার অর্থে প্রভাকে ভালবাসতেন তাহলে এটি ছাড়তে পারতেন না। বিষয়টিকে আমি ব্যাখ্যা করতে চাই অন্যভাবে। রাজীব যদি সত্যিকার অর্থে লম্পট, প্রতারক ও চরিত্রহীন হতেন তাহলে তিনি মনে করতেন, ‘যা পাবার তাতো প্রভার কাছ থেকে আমি পেয়েছি এখন সে যাকে খুশি বিয়ে করুক। আমার জীবনে আসবে আরেক প্রভা।’
একটি কথা মনে রাখতে হবে, রাজীব কিন্তু তার প্রেমের সম্পর্কটিকে বাগদান পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাগদানের মালা ছিঁড়েছেন প্রভা। দীর্ঘদিন প্রেম করার পর আরেকটি ছেলের গলায় মালা দেবে এটি সত্যিকার প্রেমিক কখনো মেনে নিতে পারে? রাজীব সত্যিকার প্রেমিক ছিলেন বলেই প্রভার বিয়ের খবরে তিনি বিপর্যস্ত হয়েছেন। বিধ্বস্ত হয়েছেন। লম্পট হলে প্রভার বিয়ের রাতে উৎসবে মাততেন। রাজীবের ক্রন্দন ধ্বনি আমরা কেউ শোনার চেষ্টা করছি না। ব্যথিত পুরুষ কীভাবে কাঁদে তা কি সবাই বুঝতে পারে? ৬৭০
সরোদ বাজাতে জানলে বুঝতেন পুরুষকে কীভাবে কাঁদায় নারী
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১০টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।
আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার
মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের
আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান
উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!
এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন