somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প- মায়ের কোল

১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাসে গিয়ে দেখি আজকেও স্বাধীন পিছনের বেন্চে বসে ঝিমুচ্ছে। কয়েকবার ডাকলাম। কোনো ভাবান্তর নেই।
নিপুন বললো-স্যার বেত নিয়ে আসবো। ভালো করে বেতিয়ে দিন। তাহলে আর ঝিমুবেনা।
আমি বললাম, যা নিয়ে আয়।
স্বাধীনকে কান ধরে টেনে তুললাম। নিপুন বেত নেয়ে এসেছে। ঝাউ গাছের চিকন বেত।
স্বাধীনের মাথা টেবিলের নীচে গুজা। আমার হাতে ঝাউ গাছের চিকন বেত। ক্লাসের ছাত্ররা খুব খুশী।

নিপুন বললো-স্যার,ওর পিঠে শার্টের ভিতর কিন্তু ভারী কাপড় গুজা। সেদিন হেডস্যার, বাড়ির কাজ না পারায় ওকে খুব মেরেছিলেন বেত দিয়ে পিঠে। এর পর থেকেই ও স্যার, শার্টের ভিতর ভারী কাপড় গুজে আসে।

ক্লাসের বাইরে প্রবল বৃষ্টি বইছে। বৃষ্টি মনে হয় মানুষের মন নরম করে দেয়।আমার মনটাও নরম হলো।
স্বাধীনকে বললাম, স্বাধীন তুমি ক্লাসে বসে ঝিমাও কেন?
সারারাত বাড়িতে কি করো?
স্যার, কয়েকদিন থেকেতো খুব বৃষ্টি হচ্ছে। তাই ক্লাসে এসে ঘুমাই।
বৃষ্টির সাথে ক্লাসে ঘুমানোর সম্পর্ক কি?
স্যার, ঘরের ছাদের ফুটো দিয়ে সারারাত বৃষ্টি পড়ে। একটু ঘুমাই, আবার বৃষ্টির ফোটা গায়ের ওপর পড়লেই ঘুম ভেঙগে যায়।
আচ্ছা, বুঝলাম। যাও সীটে গিয়ে বসো। আর মনে থাকে যেন ক্লাসে ঘুমাবেনা।
স্বাধীন টেবিলের নীচ থেকে মাথা বের করলো। আর আচ্ছা বলে সীটে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে খেয়াল করলাম, স্বাধীন বেন্চিতে ঘুমিয়ে পড়েছে।



আজ স্কুলের বিশেষ একটা দিন। এই দিনটি আমি নিজ থেকেই চালু করেছি। মাসের এইদিনে সব বাচ্চারা পড়ালিখা বাদ দিয়ে যার যার মতো আনন্দ করে। যার যা ইচ্ছা তাই করবে। শুধু আনন্দ আর আনন্দ। এদিন কোনো পড়ালিখা নেই, কোনো বাড়ীর কাজ নেই। কোনো কড়া শাসন নেই। কোনো স্কুল ড্রেস নেই। সবাই সত্যিকারের স্বাধীন।

এরকম একটা খুশীর দিনে আমাকে যে এরকম দুঃখ নিয়ে ঘরে ফিরতে হবে ভাবতেই পারিনি। ৩য় শ্রেণীতে গিয়ে দেখি সবাই যার যার মতো হৈ হুল্লোড় করছে। বাঁধভাঙা আনন্দ বয়ে যাচ্ছে পুরো ক্লাসে। শুধু দেখি স্বাধীন কোথাও নেই। পিছনের বেন্চ, যেখানে স্বাধীন বসে বসে ঝিমায়।সে জায়গাটা আজ খালি।

স্কুল ঘরের পিছনে একটা মাঠ। মাঠের এক কোণে একটা কৃষ্নচূড়া গাছ। স্বাধীনকে মাঝে মাঝে দেখতাম সেই গাছের নীচে একাকী বসে নিজের মনে বালুতে ছবি আঁকতে ।
মনে করলাম হয়তোবা সে আজো ওখানেই বসে আছে।

আমি ধীরপায়ে হেঁটে মাঠের কোণে গাছটার নীচে আসি। না, সে কোথাও নেই। তবে কি আজ ও স্কুলে আসেনি। এরকমতো হওয়ার কথা না।
কিছুক্ষণ এদিক ওদিক খোঁজার পর মাঠের পূর্বদিকে আমার নজর পড়লো। আমি সেখানে হেঁটে যাই। দেখি, স্বাধীন বালুর ওপর ঘুমিয়ে আছে।

আমি বললাম, এই স্বাধীন ওঠো। এখানে বালুর উপর এভাবে একা একা ঘুমিয়ে আছো কেন?
আমার কথায় স্বাধীন ঘুম থেকে ওঠে। দেখি চোখে জলের দাগ।
বুঝা যাচ্ছে বেচারা অনেক কেঁদেছে।
তুমি কি কাঁদছিলে?
স্বাধীন মাথা নাড়ে।
এখানে এই বালুর উপর কি করছিলে?
স্যার, মায়ের কোলে আরাম করে ঘুমাচ্ছিলাম।

আমি বললাম, মায়ের কোলে ঘুমোচ্ছিলে এর মানে কি? এখানে তোমার মা কই?
স্বাধীন বললো, স্যার , গতকাল সবুজের জন্মদিন ছিলো মনে আছে? সবুজের মা সবুজকে কোলে নিয়ে স্কুলে আসলেন। কতো আদর করলেন।

আমি বললাম, তোমার জন্মদিনেও তোমার মা তোমাকে কোলে নিয়ে স্কুলে আসবেন, তোমাকেও অনেক আদর করবেন।
স্বাধীন বলে, না স্যার। আমার মা আমাকে কোনোদিন কোলে নিবেননা। আমিতো স্যার এতিম। আমার যে মা নেই। স্বাধীনতার যুদ্ধে নাকি আমার মা মারা গেছেন। তাই আমার নাম স্বাধীন। আবার কেউ বলে আমার মা ঠিকই আছেন । কীসের লজ্জায় নাকি আমাকে ফেলে গিয়ে চলে গেছেন। আমি এসব কিছুই বুঝিনা স্যার।

তবে স্যার , আমার মা আমাকে কোনোদিন কোলে না নিলেও আমি কিন্তু মন খারাপ হলেই মায়ের কোলে এসে বসে থাকি। আজ স্যার ছিলো আমার জন্মদিন। তাই মা'তো আর আমাকে কোলে নিবেন না । তাই আমিই মা'র কোলে আসলাম।
এ কথা বলে স্বাধীন মাটিতে আঁকা একটা ছবি দেখায়।

দেখি, বড় করে এক মহিলার ছবি আঁকা।

স্বাধীন ছবিটার দিকে কেমন করে যেন চেয়ে থাকে। বলে আমার মা মনে হয় স্যার এরকমই ছিলেন। আপনি স্যার স্কুলে যান। আমি আরো কিছুক্ষণ মা'য়ের কোলে ঘুমাই। ক্লাসেতো স্যার আর এভাবে ঘুমাতে পারিনা।

এরপর আমি দেখি স্বাধীন তার জুতোজোড়া ছবিটার এক পাশে রাখে, তারপর,আবার আগের মতো ছবিটার মাঝে ঘুমিয়ে পড়ে।

(নীচের ছবির ছেলেটির মা নেই। সবাইকে বলে আমার মা কই, আমার মা কই। একজন বলেন তোমার মা মাটির নীচে ঘুমিয়ে আছেন। ছেলেটি অনেক চেষ্টা করে মাটির নীচে যেতে। কিন্তু যেতে পারেনা। একদিন ছেলেটি ঘুমের মাঝে একটা স্বপ্ন দেখলো- মা তাকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। এরপরদিন এতিম ছেলেটি বালুতে নিজের মায়ের ছবি আঁকে। তারপর আকাঁ ছবির মাঝে ঘুমিয়ে পরে। এই অসাধারণ দুঃখময় ছবিটি ইরাকি একজন শিল্পীর তোলা। ছবিটি দেখলে বুকের মাঝে কেমন যেন হাহাকার করে ওঠে। )

৪২টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×