somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অশান্ত পাহাড় : কেনো এই আগুন কেনো এই রক্তাক্ত বিদ্ধেষ

০৭ ই অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নোমান বিন আরমান : ১৯৯৭ সালের ১২ ডিসেম্বর পার্বত্য এলাকার সন্ত্রাসীদের সাথে সরকার শান্তিচুক্তি সম্পাদন। তারপর থেকে এই একযুগেও অরণ্যঘেরা পাহাড়ে শান্তি সোনার হরিণই থেকে গেছে। শান্তি আসেনি। শান্তি আসেনি চুক্তি সম্পাদনকারী আওয়ামীলীগ সরকারের সময়েও। অশান্তই থেকে গেছে পাহাড়। আগের মতোই সবুজের বুক চিড়ে বয়ে চলেছে বিদ্ধেষ, বয়ে চলেছে রক্ত। সবুজের গায়ে এখন শ্যামল সৌন্দর্য নেই। আছে কেবল হিংস্রতা। আছে শুধু ছোপ ছোপ বিদ্ধেষ। কিন্তু কেনো এই অশান্তি, কেনো এই রক্তাক্ত বিদ্ধেষ।
এ নিয়ে সুবজঘেরা দেশের এক দশমাংশ ভূমি পাহাড়ে যা-ই হোক Ñ রঙিন দুনিয়ায়, ঢাকায়; নিশ্চক্ষু রাজনীতি হচ্ছে। এই রাজনীতি স্পষ্টতই দেশরিরোধী, সার্বভৌমত্ব বিরোধী। দেশ ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী এই এজেন্ডাই বিপুল আয়োজন ও উৎসাহে পালন করছে বিশেষ মহল, পত্রিকা ও গোষ্ঠি। দেশ নিয়ে ভিন্ন রকমের একটি খেলার কথা এখন সজোরে উচ্চারিত। কিন্তু এসবে যার কান দেয়ার কথা, সে আশ্চর্য রকমের বধির। দেশবিরোধী তৎপরতায় যার তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেয়া সাংবিধানিক দায়িত্ব, সে কেমন যেনো কবরঘুমে নিশ্চল।
পাহাড় অশন্ত দীর্ঘসময় থেকে। বাংলাদেশ জন্মের আগ থেকেও। পহাড়ের জনগোষ্ঠি বাংলাদেশ জন্মেরও বিরোধী ছিলো। এ কারণে শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় বসার পর পাহাড়িদের ‘বাঙালী’ হতে বলেছিলেন। এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে তখন। বাতাস উপযোগী হলে এখনো কেউ কেউ তর্ক করেন। কিন্তু শেখ মুজিবের ‘বাঙালী’ হওয়ার নির্দেশের দূরদর্শিতার দিকে তারা চোখ দেন না। মুজিব পাহাড়িদের বাঙালী হওয়ার নির্দেশ যতার্থই দিয়ে ছিলেন। এই নির্দেশ শাব্দিক অর্থে নেয়া ঠিক হবে না। একে অন্যভাবে দেখতে হবে। অবশ্যই। যুদ্ধ করে সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশের নেতা ঠিকই বুঝে ছিলেন যে, দেশের যে অংশটি স্বাধীনতাবিরোধী ছিলো, তারা সহজে দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারবে না। সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের প্রতি মমত্ববোধ রাখবে না। ফলে দেশবিরোধী যেকোনো চক্র এদের ব্যবহার করবে। সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এরা ব্যবহৃত হবে। এই শঙ্কায়ই শেখ মুজিব এদের ‘বাঙালী’ হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর অর্থ এই ছিলো না, পাহাড়িরা নিজেদের সংস্কৃতি ও আদর্শ ছেড়ে ‘ঢাকাইয়্যা’ নাগরিক হয়ে যাক। দুর্ভাগ্য, শেখ মুজিবের এই অন্তরদৃষ্টিটি উপলব্দি করতে ব্যর্থ হয়েছে তার নিজের দলও।
পাহাড় নিয়ে বিদেশী সংস্থা ও এনজিওরা যে অন্য কিছু ভাবছে Ñ এ আর এখন শুধু শঙ্কা নয়। শেখ মুজিবের শঙ্কা যে মিথ্যে ছিলো না এ দিনদিন প্রগাঢ়ভাবে স্পষ্ট হচ্ছে। এরা যে সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে কোনো সময় নড়বড়ে করে দিতে পারে দেশের অখণ্ডতা এ বুঝেন না, দেশের কর্তাব্যক্তিরা Ñ তা বলি কেমন করে।
পাহাড়িরা যে বাংলাদেশকে অন্তর থেকে গ্রহণ করতে পারিনি তার জন্য আর কি প্রমাণ চাই যে, এরা পাহাড়ে নিজেদের ছাড়া আর কাউকে সহ্য করে না। এরা মানতে চায় না, বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে পাহাড়ে বসবাসের, ব্যবসা-বণিজ্যের। কারণ, দেশের একদশমাংশ এই ভূখণ্ড বাংলাদেশের। কাজে যেকোনো নাগরিকই সেখানে বসবাস করার অধিকার রাখেন। বাংলাদেশের জন্ম হবার পরও বড় একটা সময় পাহাড়ে পাহাড়িরা ছাড়া আর কারো বসবাস ছিলো না। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসার পর বিশেষ প্রেক্ষাপটে পাহাড়ের সমতলে বাঙালিদের পাঠান বসবাসের জন্য। সেই থেকে শুরু অশান্তি। সেই থেকে বিদ্ধেষের, পাহাড়িদের স্বরূপের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। তারা দাবী করে বসে, পাহাড় কেবল তাদেরই। এখানে তারাই শুধু বসবাস করবে। বাঙালিদের পাহাড় থেকে সরিয়ে নিতে হবে। কেনো নিতে হবে, পাহাড় কি বাংলাদেশের ভূখণ্ড নয়, বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক কি সেখানে বসবাসের অধিকার রাখেন না Ñ এমন সব প্রশ্নের উত্তর তারা দেয় না। এর স্পষ্ট উত্তর দেয়া হয়নি এখনো। তবে নিজেদের দাবিতে আগের চেয়েও অটুট ও কঠোর। তাদের এই অটুট ও কঠোরতার খুঁটি কোথায়? কার জোরে তারা দেশের নাগরিককে নিজ দেশে সহ্য করে না। এসব প্রশ্নের উত্তর কে খুঁজবে?
সর্বশেষ বাঘাইছড়ির বসতবাড়িতে আগুন নিয়ে যা হয়ে গেলো এই সবকে মোটেই সহজভাবে নেয়া যায় না। একে রাজনৈতিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেও উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, এবারের ঘটনায় যা ঘটেছে তা অবশ্যই কারো পরিকল্পিত। সরকারকে বেকায়দায় ফেলে একটা কিছুর করার জন্যেই পাহাড়ে আগুন জ্বালানো হয়েছে। এই আগুন যারা দিয়েছে এরা ক্ষমতার আশপাশে থাকে কিনা, কিংবা ক্ষমতার পরিচিত কিনা সেটিও গুরত্বসহ বিবেচনায় নিতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, এরা প্রয়োজনে আগুন জ্বালায়, নেভায় না। সুতরাং এদের চিহ্নিত করা, এদের ঘাড়ের খোঁজ নেয়া এখনই জরুরি। দেশরাষ্ট্র, সংবিধান আর সার্বভৌমত্বের জন্যেই জরুরি।
বাঘাইছড়ির আগুন নিয়ে ঢাকার সংবাদপত্র মিশ্র ও পক্ষপাতমূলক সংবাদই প্রচার করেছে। খবর নিয়ে রাজনীতি করা হয়েছে। সত্য বিষয়টি আড়াল করে বা ভুলে থেকে নিজের মতো করে খবর প্রকাশ হয়েছে। কোনো কোনো পত্রিকা আগুনের জন্য দায়ী করেছে সরাসরি বাঙালীদের। এবং এর সাথে জড়িত করেছে পাহাড়ে অবস্থানরত সেনাবাহিনীকেও। তারা এটা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে যে, সেনাবাহিনীর ঈঙ্গিত ও সহযোগিতায়ই পাহাড়িদের কুড়েঘরে আগুন দিয়েছে বাঙালীরা। কোনো কোনো পত্রিকা সৎোসাহে এও প্রচার করেছে, সাধারণদের সাথে মিশে সেনাবাহিনীও নাকি পাহাড়ি নিধনে শামিল হয়েছিলো। এই যখন ঢাকার পত্রিকার সংবাদ তখন সরকারের কোনো প্রশাসন একবারের জন্যে ওইসব পত্রিকাকে জিজ্ঞেস করার দরকার মনে করেনি যে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী সাংবিধানিক বাহিনী Ñ সেনাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তারা কীসের ভিত্তিতে ও কী উদ্দেশ্যে প্রচার করছে। ঢাকার ডাকসাইটের পত্রিকা যখন এমন খবর নিয়ে মত্ত তখন, ভারতের একটি পত্রিকার সূত্রে খবর বেরিয়েছে, পাহাড়িদের জন্য অতিদরদী এক বিশেষ ব্যক্তি পাহাড়িদের জন্য জাতিসংঘের ‘হস্তক্ষেপ’ কামনা করে চিঠি লিখেছেন! এই সংবাদ যদি সত্য হয়ে তাকে তবে দেশে যে আগামিতে একটি বিষফোড়ার জন্ম হচ্ছে সেটি নিশ্চিত হয়ে থাকলো।
এই বিষফোড়াকে লালন করতেই অতি দরদী অনেকে এখন মাঠে সক্রিয়। সেবার নামে, উন্নয়নের নামে পাহাড়ে বিশেষ মিশন নিয়ে তৎপর। এই মিশনারিরাই পাহাড়ের উপজাতিদের বিষিয়ে তুলছেন। বিভিন্ন শক্তি দেখিয়ে তাদের প্ররোচিত করছেন ‘স্বাধিকার’ অর্জনে বিদ্রেহী হতে। তাদের এই প্ররোচনায়ই যে পাহাড়ে বাঙালীদের অবস্থান বিপন্ন হয়ে পড়েছে, তা আর এখন খুলে বলার দরকার পড়ে না।
একটা বিষয় পরিষ্কার থাকা ভালো যে, পাহাড় বাংলাদেশের ভূখণ্ড। এই ভূমি নিয়ে যদি কেউ পূর্বতিমুরের মতো কিছু ভাবেন তবে ভুল করবেন। মহা ভুল। একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকের লেখায় পড়লাম, পাহাড় সমস্যার সমাধান করতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন বিশেষ কিছু করতে। এই বিশেষ কিছু কী তা তিনি না বলে লিখেছেন, কী করতে হবে প্রধানমন্ত্রী তা জানেন। জাতি জানতে চায়, বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডটি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী কোন বিষয়টি একাই শুধু জানেন। জাতি জানতে চায়, তিনি কেনো সেই সমাধান দিচ্ছেন না।

এই লখোটি আমার সাইটে সংরক্ষণরে জন্যই মূলত পোস্ট করা হয়ছে। চাইলে আপনি পড়তে পারনে।}
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×