somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসে

০৬ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখানে সৌরভের মন ঠিকছে না মোটেও। সারাদিন কেমন যেন অস্থির হয়ে থাকে মনটা। বুকের কোথায় যেন শূন্য হয়ে থাকে। চা'টা খেয়ে ক্যাফটেরিয়া ছাড়ল সৌরভ। একটা উঁচু ভবনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বিয়াল্লিশ তলা পর্যন্ত গুণে ক্ষান্তি দিল সে। তারপর উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। এখানে আসার পর এ এক বিচিত্র অভ্যাস হয়েছে তার। বড্ড ছিমছাম সবকিছু এখানে। সবে মাত্র সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের শুরু। জ্বলে উঠেছে শহরের সব আলো। আলোর ছড়াছড়ি সবখানে। এত লম্বা ভবনগুলোর ফাঁক দিয়ে আকাশের চাঁদ কিংবা তারা কিছুই দেখার সাধ্য নেই। তবে দুবাই শহরের চাঁদ সত্যিই সুন্দর। পয়তাল্লিশ তলার উপর থেকে এ শহরের চাঁদ দেখে নিজেকে পৃথিবীর সবচে সুখী মানুষ মনে হয়েছিল তার। সামনের রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া আছে কিন্তু কোলাহল নেই। দুএকজন মানুষ দ্রুত পদপাতে হাঁটছে ফুটপাত ধরে। আশেপাশের কোথা থেকে যেন হালকা গানের আওয়াজ ভেসে আসছে। সৌরভ এখনো উঁচু ভবনটির সামনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশের সবকিছু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। দৃশ্যগুলো মনে ধরছে না তার। ঠিক কোথায় যেন একটা শূন্যতা রয়ে গেছে। এ সময় আচমকা তার চোখের সামনে ভাসে তার বাড়ির সামনের গলিটির চেহারা। সন্ধ্যার পরের এ সময়টুকুতে গলিটি ব্যস্ত হয়ে উঠে শ্রমিক আর কর্মমুখর মানুষদের বাড়ি ফেরায়। মানুষের হাঁটাচলা আর কথাবার্তায় মৃদু রব উঠে। রিকশার হালকা টুংটাং আওয়াজ শুনা যায় অবিরত। সারি সারি দোকানের হালকা পাওয়ারের বাল্বগুলো গলিটাকে আলোকিত করে। আবছা আলোয় গলিটাকে হিরন্ময় মনে হয়। ইলেকট্রিক থাম আর তার আলুথালু তারগুলো, উঁচুনিচু দোকান আর মানুষের পদধ্বনি মিলে একটা হিরন্ময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
সৌরভ ফের হাঁটা শুরু করল। একা হাঁটতে তার ভাল লাগে। নিজের চিন্তা ভাবনাগুলোকে নিয়ে আপনমনে খেলায় মেতে উঠে সে তখন। হাঁটতে হাঁটতে একসময় সে আবিস্কার করল অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। রাত নটার পরে বাসায় ফিরল সে। বাসা মানে একটি মাত্র কামরা। এখানেই রাত কাটিয়েছে সে গত পঁচিশ দিনের দুবাই জীবনে। পাঁচতলায় থাকে সে। দশ বাই বারো ফুটের ঐ কামরাটাতে তারা মোট ছয়জন মানুষ থাকে। দুজন নেপালী, একজন ভারতীয় আর তারা তিনজন বাংলাদেশী। খাটগুলো দুতলা। তার সীট উপরের বাঙ্কে। ফ্লোর থেকে বেশ উপরে। প্রথম যেদিন এই খাটে শুয়েছিল অস্বস্তিতে তার ঘুমই আসছিল না। এত উপরে শোয়ার অভ্যাস নেই। তার উপর তার ঘুমের মাঝে গড়াগড়ির অভ্যাস আছে। সারাদিনের বিমান আর বাস ভ্রমন এর মধ্য দিয়ে সবে দেশ থেকে দুবাইযে পা রেখেছিল সেদিন। শরীর জুড়ে রাজ্যের ক্লান্তি। অথচ দুতলা খাটে ভয়ে ঘুম আসছিল না তার। নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল। এখন অবশ্য অভ্যাস হয়ে গেছে। আর ভয় করে না । রাতের খাবারটা প্রতিদিন একসাথেই খায় তারা। পালা ভাগ কেও রান্না করে। খাওয়ার সময় হালকা গল্প-গুজব হয়। সুখ দুঃখের গল্প। এরপর বিছানায় খাত হয়ে কম্বলমুড়ি দেয় সবায়। এই তাদের জীবন। খাওয়া দাওয়া, কাজ আর ঘুম এর মাঝে শেষ হয় প্রতিটি দিন। সারাদিন খাটুনির পর ফুলস্পিডে এয়ার-কন্ডিশন ছেড়ে ঘুম। এক একটি দিনের মত কেটে যায় আরেকটি দিন। কোন ব্যতিক্রম নেই। পূবের সূর্য পশ্চিমে অস্ত যায় একই রকমভাবে। বিচিত্র জীবন এক।
প্রতিদিনকার মত আলো নিভিয়ে সকলে শুয়ে পড়েছে। এ সময় হালকা খুনসুটি হয়। আজ সৌরভের মোটেও ঘুম আসছে না্‌। বেশ অস্থির হয়ে আছে মনটা। সে তার নিচের বাঙ্কের শহীদকে ডাকল। শহীদ প্রায় তার সমবয়সী । সে ও জেগে আছে। মৃদু গলায় সৌরভ তাকে বলল, কেমন লাগে এখানে তোর?
শহীদ জবাব দিল, প্রথম প্রথম ভাল লাগত না। এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। ভালও লাগে না খারাপও লাগে না।
সৌরভ ফের প্রশ্ন করল, এখন খারাপ লাগে না? দেশের জন্য মন কেমন করে না?
সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিল, খারাপ তো লাগেই। হৃদয়টা শূন্য হয়ে থাকে সবসময়। মনটা মাঝে মধ্যে বিদ্রোহ করে উঠে। তবুও জানিস, মাস শেষে যখন হাতে বেতন পাই তখন সব দুঃখ জল হয়ে যায়।
সৌরভ আর কথা বাড়াল না। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল বুকের ভেতর থেকে নিজের অজান্তে। কেন জানি মনে হয়, ছোট ছোট পিঁপড়েরাও মানুষের চেয়ে অনেক স্বাধীন, অনেক সুখী। তাদের তো মানুষের মত শৃঙ্খল নেই। সব সংগ্রামের মাঝেও তাদেও একটা বেঁচে থাকা আছে। মানুষের তাও নেই। ধারে ধীরে ঘুম নেমে আসে তার চোখে। ক্ষণিক ভাসছে চোখের সামনে দুবাই শহরের বহুতল ভবন, সড়কের উপর সড়ক, বড় বড় শপিং মল আর যান্ত্রিক নগর। ক্ষণিক চোখের সামনে ভাসছে বাড়ির সামনের সেই গলি, বাবা-মা, পুকুর পাড় ।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×