somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই প্রতিবেশীর ঘায়ে দুই প্রতিবেশী কুপোকাত !

০৬ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল ক্রিকেট জগতের দুই প্রতিবেশীর অবিশ্বাস্য জয়ে অপর দুই প্রতিবেশী বেদনাময় পরাজয়ের তেতোস্বাদে কাতর হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশের কাছে নিউ জিল্যান্ড আর প্রতিবেশী ভারতের কাছে ওদের প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া হেরে গেছে। একটা সিরিজের প্রথম ওডিআই আরেকটা প্রথম টেস্ট।

টসে জিতে প্রত্যাশিত ব্যাটিং নিলেও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ২২৮ রান তুলতে সক্ষম হয়। ২২৯ রান আজকাল ডিফেন্ড করার মতো বড়ো কোন পুঁজি নয়। দলটা সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া হলেও একই কথা খাটতো। ভেট্টোরীরাও এ নিয়ে উল্লসিতই ছিলো। প্রথম ওভারে মাশরাফির ৭ রান দেয়া, নিজের দ্বিতীয় আর দলের তৃতীয় ওভারে মাশরাফির আহত হয়ে মাঠ ছাড়া, কিউই ওপেনারদের দুরন্ত সূচনা এই সব মিলে বাংলাদেশ দলের কাহিল অবস্থা। মনে হচ্ছিলো আমরা বুঝি আরেকটা করুন পরাজয়ের সামনে দাঁড়িয়ে।

আস্তে আস্তে বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরতে শুরু করে। এক সময় সাকিবের জোড়া আঘাতে কিউইরা যখন কেঁপে গেলো তখন নামলো বৃষ্টি। মনে হলো একটা সম্ভাবনা বুঝি ধুয়ে ভেসে গেলো। প্রায় ১ ঘন্টা পর যখন খেলা শুরু হলো তখন ক্রিকেটের সাথে মাঠে নামলেন ডাকওয়ার্থ লইসও। টার্গেটটা একটু কঠিন হয়ে গেলো। তারপরও তেমন ভয়াবহ কিছু না। তারপর সাকিব, নাঈম, রাজ্জাক, নাজমুলরা ধীরে ধীরে ভেট্টোরীদের কোনঠাসা করে ফেলেন। ভেট্টোরী আউট হয়ে গিয়েছিলেন। সাদাদের পক্ষে সদাতৎপর আম্পায়াররা জানালেন এটা নো বল অর্থাৎ ভেট্টোরী নট আউট। আম্পায়ারিং নিখুঁত। আমরা শুধু চাইবো আমাদের বিরুদ্ধেও যেন ওরা এরকম নিখুঁত আম্পায়ারিং করার কথাটি মনে রাখেন।

যাই হোক, শেষ দিকে এসে টেনশনে সবার হার্টবিট বাড়তে শুরু করে। ম্যাচ একবার ভেট্টোরীর দিকে হেলে তো আরেকবার সাকিবদের দিকে চেয়ে মুচকি হাসে। শেষ দিকে রাজ্জাক, নাঈম, নাজমুল আর ম্যান অব দা ম্যাচ সাকিবের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের ফলে আমাদের নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। চাপের মুখে আমাদের ব্যাঘ্রশাবকরা মাথা ঠান্ডা রেখে খেলেছে। এটাই এই জয়ের প্রধান কারণ।

শেষ পর্যন্ত জয় পেলাম আমরা। এটি আমাদের দ্বিতীয় অক্টোবর বিপ্লব। দুই বছর আগে ৯ অক্টোবর আর এবার ৫ অক্টোবর এই মাঠে আমরা কিউইদের কুপোকাত করলাম। ম্যাচের আগে ভেট্টোরী বারবার সাকিবের নাম জপ করছিলেন। কাউন্টি মাতিয়ে ঘরে ফেরা সদ্য ঘোষিত তালিকায় এককভাবে বিশ্বের ১নং অলরাউন্ডারের তকমাটি ফিরে পাওয়া সাকিবকেই ভয় পাচ্ছিলেন তিনি। সাকিবের ব্যাট বলের জাদুর কাছেই হারলেন। ভেট্টোরীর ভয়ই সত্য হলো। এটা অবশ্য এক অর্থে ভেট্টোরীর জয়ও। তিনি নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার প্রমান দিলেন- তিনি প্রকৃত শত্রু নিখুঁতভাবে চিহ্ণিত করতে পারেন।

অন্যদিকে মোহালীতে প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচ জিতে নিলো ভারত। জাহির খান প্রথম ইনিংসে ৫ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেট নিয়ে জয়ের যে ভিত্তি তৈরী করে দিয়েছেন ( জয়ের জন্য অল্প রানের টার্গেট) সেটাই হাত ছাড়া হতে চলেছিলো। ( ম্যাচ জেতায় ম্যান অব দা ম্যাচের পুরস্কারটি অবশ্য জাহিরের কপালেই জুটেছে) কারণ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। ওরা ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে আসায় ফিনিক্স পাখিদেরও হার মানাতে ওস্তাদ। এ রকম দুর্দান্ত প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ম্যাচ বের করা আনা প্রায় অসাধ্য এক কাজ। বিশেষ করে এক প্রান্তে যখন আসা যাওয়ার মিছিল।

কিন্তু অন্য প্রান্তে যে অবিচল ভেঙ্কটসাই লক্ষণ। যে লক্ষণ ইডেনে ২৮০ রানের আরেক মহাভারতসম মহাকাব্যিক ইনিংস খেলে স্টিভ ওয়াহদের অবিশ্বাস্য পরাজয় উপহার দিয়ে অমরত্ব অর্জন করেছিলেন। তিনি আবারো লড়ে গেলেন দুর্দমনীয় দৃঢ়তায়। আবারো অসিরা বধ হলো লক্ষ্ণণের শক্তি শেলে। দুই অসাধারণ দলের মহাকাব্যিক লড়াই মুগ্ধ চোখে দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। বহু দিন সবাই এই অনন্য লড়াইয়ের সুখস্মৃতি রোমন্থন করবেন।

দুই প্রতিবেশী ক্রিকেট শক্তির কাছে আরেক দুই প্রতিবেশীর কুপোকাত হওয়ার আর কোন অতীত রেকর্ড আছে কিনা আমার জানা নেই। এই বিরল যুগল অর্জনে একটি নাম যে বাংলাদেশ এটাই আমাদের জন্য গৌরবের।

পুনশ্চ: আশরাফুল দলে নেই। নানাভাবে আশরাফুল ভক্তরা জানান দেন। বারবার মনে করান আশরাফুল খেললে বাংলাদেশ জেতে। পরশু জাতীয় ক্রিকেটে আশরাফুলের সেঞ্চুরীর পর কাগজে কাগজে দেখি নির্বাচকদের মৃদু সমালোচনা। এটা নির্বাচকদের প্রতি আশরাফুলীয় জবাব। সামুতেও দেখলাম কে যেন পোস্ট দিয়েছেন। কিন্তু অনেক দিন হয়ে গেলো আশরাফুলের জোরে আমাদের জয়ের ঘটনা। সেই কবে ঘি দিয়ে ভাত খাবার পর এখনো যাদের হাতে তুড়ি বাজে না এটা তাদের মামলা। আমরা এখন আশরাফুল ছাড়াও জিতছি। এমনকি দারুন ফর্মে থাকা তামিম বা সব মূল পেসারের ইনজুরিও এখন আমাদের জয় রথে কোন বাধা নয়। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকলে বলা যাবে দল হিসাবে আমরা সাবালক হচ্ছি।

অভিনন্দন টাইগার্স !!!!!!!!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১১:৩৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×