somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডোন্টমাইন্ড ফ্যামিলি

০৩ রা অক্টোবর, ২০১০ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাইজগাঁও(ফেঞ্চুগঞ্জ) সেতুর উপর দিয়ে যাওয়া ট্রেনটার দিকে আঙ্গুল তুললেন মোসাদ্দেক ভাই। ট্রেন যখন মাঝ সেতুতে, তখন তিনি আঙ্গুলের ট্রিগার টেনে দিলেন। হিসেবমত ব্রীজটা তখন বিকট শব্দে হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ার কথা, কিন্তু তার বদলে গগনবিদারী অট্টহাসি শোনা গেল। বিরক্ত চোখে তাকালেন মোসাদ্দেক ভাই;
-'দিলি তো টার্গেট নষ্ট কইরা!'
এই বলে আঙ্গুলে ফুঁ দিয়ে ধোয়া সরালেন। হাতটা কেতাবী ভঙ্গিতে পকেটে ঢুকিয়ে উদাস হয়ে গেলেন। পেছনের হাসির রোল তখনো থামেনি। কুশিয়ারা নদীর উপর ভাসতে থাকা বাঁশের এই ভেলাটার উপর বসে সাত তরুণ যেন মিশে গিয়েছিল ঢেউয়ের সাথে। পলাশ, তুহিন, সজীব, সাইফুল, খালেদ (ভাই), মোসাদ্দেক (ভাই), বাশার (ভাই)। সদ্য নদী থেকে স্নান করে ওঠা এদের কয়েকজনকে দেখে বোঝাই যাচ্ছেনা গত রাতের ক্লান্তির কথা। ওদের এখানে আসার ইতিহাসটা মোটামুটি ঘটনাবহুল। তাই পাঠকের সুবিধার্থে, কয়েক ঘন্টা পেছন থেকে শুরু করছি।

অগাস্ট ২০০১।
৮.১০ এর বাস থেকে নামতেই খালেদ ভাইয়ের হুঙ্কার, ১০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নে। রাতের ট্রেনে ফেঞ্চুগঞ্জ যাব। 'মিল' অফ, সুতরাং 'ইষ্টিকুটুম'-এ খেতে হবে। ড্রেস চেঞ্জ করার সুযোগ পেলাম না। বইগুলো রেখে ব্যাগের ভেতর একটা লুঙ্গি আর একটা তোয়ালে নিয়ে ছুটলাম 'আম্বরখানা'-র দিকে। ইষ্টিকুটুমে পৌঁছে দেখি বাকিরা সবাই এসে পড়েছে। খেয়ে দেয়ে সোজা রেলস্টেশনে। মাত্র ঘন্টাখানেকের রাস্তা, টিকেট করিনি। করিনি বলাটা ঠিক নয়, সময় পাইনি। কারণ, আমরা স্টেশনে ঢোকামাত্রই দেখি ট্রেন নড়াচড়া শুরু করে দিয়েছে। সুতরাং ননস্টপ দৌড়। ট্রেনে টিটি একবার এসেছিল। টিকেট চাইতেই মোসাদ্দেক ভাইয়ের মহান বাণীঃ -'মামা, দেখবেন, একদিন আমরাই এই ট্রেনের ভি.আই.পি কেবিনে যাচ্ছি, আর আপনি আমাদের ফুলের শুভেচ্ছা দিচ্ছেন। মামা, আপনি চাননা আমরা অনেক বড় হই! এখন সামান্য ক'টি টাকার জন্য যদি আপনি আমাদের ধরেন, তাহলে বড় হব কি করে? আমাদের মন ভেঙ্গে যাবেনা? মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা সমান। মামা, আপনি জেনে শুনে মসজিদ ভাঙ্গবেন?
মামা কি বুঝলো কে জানে? শুধু বললেন, 'কেন যে আপনারা এরকম করেন!'
টিটি চলে গেল। আমরা ততক্ষণে খালি সিট দখল করে নিয়ে যে যার মত করে বসে পড়েছি।
"ছুটছে রাতের ট্রেন, নীরবতা ভেঙ্গে দিয়ে"

মাইজগাঁও স্টেশনে নামলাম রাত সাড়ে এগারোটায়। ভাগ্য ভালো স্টেশন গেটে কেউ আটকায়নি। এই স্টেশনটা বেশিরভাগ সময়ই দেখি নির্জন থাকে। আর এখন তো মধ্যরাত। স্টেশনে বাইরে এসে দাঁড়ালাম সবাই। আমরা একটু পেছনে ছিলাম, গিয়ে দেখি খালেদ ভাই তার পকেট হাতড়াচ্ছে।
-'কি হয়েছে? পকেট মার'?
-'না'। বোম ফাটালেন মোসাদ্দেক ভাই। 'খালেদ ঠিকানা লিখা কাগজটা আনতে ভুলে গেছে'।
-'এখন উপায়'?
-'দেখি কি করা যায়'!
-খালেদ ভাইকে উলটে পালটে খোঁজা হল। নেই।
বাশার ভাই বললেন, 'নাম বললে চিনবেনা লোকে'?
মুখ ঝামটা দিয়ে উঠলেন খালেদ ভাই। 'ও তো এখানে বড় হয়নি, বড় হয়েছে ঢাকায়। ওকে চিনবে কিভাবে? তবে ওর বাবাকে একনামে চিনে সবাই। কাগজটাতে উনার নাম আর ঠিকানা লিখা ছিল।
-'গোলাপি রঙের কাগজ'? জিগ্যেস করলেন মোসাদ্দেক ভাই।
আমরা সবাই ঝট করে তাকালাম উনার দিকে। চোখে আশার আলো।
-'তুই জানলি কিভাবে'?
-'আরে ঐটা দলা করেই তো ট্রেনে বসে কান চুলকালাম আমি! এখন হয়তো ট্রেন লাইন ধরে খুঁজলে পাওয়া যাবে'।
-'দেশে আর কাগজ ছিলনা'! খালেদ ভাই রাগে দিশেহারা।
এখন উপায়? ট্রেন তো আসবে ভোর ছয়টায়! আর এখন বাজে সবে রাত পৌণে বারোটা। আর আমাদের সবার বারোটা বেজে, সে ঘড়ি বন্ধ হয়ে গেছে কখন! সারারাত স্টেশনে বসে থাকতে হবে সেই সম্ভব অথচ বিরক্তিকর কাজের কথা মনে হতেই সবার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।

(এর ফাঁকে বলে রাখি, আমরা আসলে এসেছি খালেদ ভাইয়ের এক লতানো আত্মীয়ের বাড়িতে। তখন মোবাইলের এতো ছড়াছড়ি ছিলনা, তাই আসার আগে যোগাযোগ করা যায়নি কারো সাথে। আর আমরা তখন ডোন্ট মাইন্ড ফ্যামিলির ছাত্র। না সাধিলেই যেইখানে খাই, সেইখানে একবার সাধা মানে, অধিকার করিয়া লওয়া। সেই অধিকার ফলানোর জন্যই এখানে আসা এবং অতঃপর এই ঠিকানা বিভ্রাট!)

-'চল এক কাজ করি'।
উপায় বাতলালেন মোসাদ্দেক ভাইই।

আগামী পর্বে সমাপ্য...

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ রাত ২:০৭
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×