একটাই তো
প্লাবন ইমদাদ
স্যান্ডেলের তলা ক্ষয়ে যাচ্ছে, তবু জীবনের উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়েনি বিন্দুমাত্র। বাবা রোজ বলে, 'আঠাশ বছর তো ঘাড়ে চড়ে খেলি, আর কত? এবার বাপেরটা ছেড়ে নিজে হোটেল খুলে দেখ, জীবনের হিসাব মেলানো কত কঠিন।'
জাহিদ নির্বিকার। জীবনের হিসাবটা যাতে বাবার মতো মেলানো কঠিন না হয় সে জন্যই বাবাকে তার সোজা উত্তর, 'আঠাশ বছর যখন টেনেছ, আর কয়টা দিনে তেমন কষ্ট হবে না। ফার্স্বক্লাস পেয়ে যা-তা কাজ তো আর করা যায় না। অনেক ভালো কিছু করতে হবে_জীবন তো একটাই।'
কিছুদিনের মধ্যেই একটা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানির উঁচুদরের পোস্টের জন্য জাহিদ হাজির হলো গুলশানের এক ঝকমকে অফিসে। বড়কর্তার প্রশ্ন_'চাকরি করার অভিজ্ঞতা আছে কতদিনের?' জাহিদ ঢোক গিলে উত্তর দিল_'একদিনেরও না।' বড়কর্তা বিনয়ের সঙ্গে জানালেন_'আমরা আসলে অভিজ্ঞ কাউকে চাচ্ছিলাম। আমাদের এ পোস্ট একটাই তো!'
স্বপ্নের উচ্চতাকে নামিয়ে আনতে বাধ্য হলো জাহিদ। কোনো রকম একটা চাকরি বেছে নিল সে। এবার সংসার পেতে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নতুন হোটেল খুলতে হবে। পাত্রী চাই। অসংখ্য পাত্রী দেখা হলো। মায়ের ধমক_'এত দেখাদেখির কী আছে?' জাহিদের উত্তর_'একটু দেখেশুনেই করি, জীবনে বিয়ে একটাই তো।'
বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে মনের মতো একজনের দেখা মিলল। কিন্তু সেই পাত্রী জাহিদকে এক সন্ধ্যায় অভিজাত রেস্টুরেন্টে ডেকে আনায়। তারপর জানাল, 'আমি একজনকে খুব ভালোবাসি। দয়া করে এ বিয়েতে আপনি রাজি হবেন না। জীবনে ভালোবাসা একটাই তো।'
হাল ছাড়ল না জাহিদ। আরো দেখেশুনে মোটামুটি একজনকে ঘরে তুলল। বিয়ের দ্বিতীয় মাসে চাকরির বেতন পেয়ে সাধ জাগল শপিংয়ের। বউকে নানা রঙে সাজিয়ে নিয়ে গেল মার্কেটে। বউয়ের চাহিদা মেটাতে পকেট গড়ের মাঠ হওয়ার জোগাড়। এবার নিজের জন্য শার্ট কেনা চাই। ঘণ্টাদুয়েক এ দোকান সে দোকান ঘোরাঘুরি। হঠাৎ বউ গেল খেপে_'এত দেখাদেখির কী আছে? তাড়াতাড়ি বাসায় চলো।' করুণ চাহনিতে জাহিদের উত্তর_'আবার কবে কেনা হবে ঠিক নেই, এবার একটাই তো।'
হঠাৎ পছন্দ হয়ে গেল একটা শার্ট। সঙ্গে সঙ্গে দোকানদারকে প্যাকেট করতে বলে পকেট থেকে জাহিদ ৫০০ টাকার নোট বাড়িয়ে দিল। টাকাটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দোকানদার বলল_'এই টাকা কচ্টেপ মারা। বদলায়া দ্যান।' জাহিদের করুণ উত্তর_'আমার কাছে নোট এই একটাই তো!'