বিষাক্ত/ভেজাল খাদ্য ও ঔষধ নিয়ন্ত্রণে
‘খাদ্য ও ঔষধ এডমিনিস্ট্রেশন’ গঠন করা হোক
বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল ও বিষাক্ততা যেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে তাতে ভেজাল ঠেকানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময়ে ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনায় সামান্য কিছু অর্থ জরিমানা করা হচ্ছে তাতে কাঙ্খীত ফলাফল আসছেনা। বরং ভেজাল বিক্রেতা ও প্রস্তুতকারীরা নব উদ্যোমে নিরব গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার, খাদ্য উৎপাদক-বিক্রেতা এবং খাদ্যের ক্রেতা এই তিনটি পক্ষকেই একযোগে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরণের খাদ্য ও পরিবেশ সংক্রান্ত কিছু প্রতিষ্ঠান থাকলেও ভেজাল খাদ্য ও ঔষধের মান নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্টভাবে কোন প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে নকল-ভেজাল রোধে কোন যথার্থ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। ভেজাল খাদ্য আমাদের জীবন-মরণের সমস্যা বিবেচনা করে বিষাক্ত/ভেজাল খাদ্য ও ঔষধ নিয়ন্ত্রণে একটি স্বতন্ত্র এডমিনিস্ট্রেশন গঠন করা জরুরী। আজ ২ সেপ্টেম্বর ২০১০ শনিবার, সকাল ১১:০০ টায় ঢাকা পাবলিক লাইব্রেরীর সেমিনার রুমে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বাংলাদেশ স্কাউটস, ঢাকা জেলা রোভার এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত “বিষাক্ত/ভেজাল খাদ্য ও ঔষধ নিয়ন্ত্রণে ‘খাদ্য ও ঔষধ এডমিনিস্ট্রেশন’ এর প্রয়োজনীয়তা ও রূপরেখা” শীর্ষক সেমিনারে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, বিএমএ এর সাবেক সভাপতি ড. রশীদ-ই-মাহবুব, পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বাংলাদেশ স্কাউটস, ঢাকা জেলা রোভার এর সহ; সম্পাদক শামীম আহমেদ এবং সভাপতিত্ব করেন- পবা’র স্বাস্থ্য বিষয়ক টিমের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন-শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তপন কুমার নাথ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভীদ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো: নুরুল আলম, সৈয়দ আ স ম আশারাফুজ্জামান আফরোজ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, খাদ্যে যে কত জঘন্য ধরণের ভেজাল মেশানো হয় তা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে দেশবাসী অনেকটা ধারণা পেয়েছে এবং পাচ্ছে। তাই খাদ্য, ঔষধ, প্রসাধন ও অন্যান্য রাসায়নিকের মান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এ দেশেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ-এর আদলে “নিরাপদ খাদ্য ও ওষধ সিশ্চিতকরণ কমিটি” নামে একটি কমিটি এখনই গঠন করা প্রয়োজন। ১৯৫৯ সালে যখন বিশুদ্ধ খাদ্য আইনটি করা হয় তখন খাদ্যে ভেজাল মিশানোর শাস্তি ছিল তখনকার প্রেক্ষিতে বেশ কড়া। কিন্তু কালক্রমে টাকার মূল্যমান এবং মানুষের মূল্যবোধ উভয়ই অব্যাহতভাবে নেমে আসার কারণে এই শাস্তির বিধানগুলোর ধার কমে আসতে থাকে। ফলে মানুষ আর আগের মতো শাস্তিতে ভয় পায় না। সেই সাথে সরকারি কর্মকর্তা যাদের তদারকি করার কথা তাদের ব্যর্থতা এক্ষেত্রে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটায় । ফলে যতই দিন যাচ্ছে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রকৃতি ও মাত্রা ততই বাড়ছে।
সৎ খাদ্য উৎপাদক-বিক্রেতাও খাদ্যের ক্রেতারা এই সমস্যার নিরসন চান, এখন শুধু সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কেননা এভাবে নকল-ভেজাল চলতে থাকলে স্বাস্থ্যহানির ভয়ে আমাদের দেশের উৎপাদকদের খাদ্য থেকে মানুষ একসময় মুখ ফিরিয়ে নিবে। তখন বিদেশী খাদ্য সামগ্রী এসে আমাদের এই বিশাল বাজার দখল করবে। ফলে দেশীয় খাদ্য-শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হবে, এই পরিস্থিতি কখনো কাম্য হতে পারে না কারণ এতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
বিশ্বের অনেক দেশেই নকল-ভেজালকে কঠোর হাতে দমন করা সম্ভব হয়েছে। আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভেজাল রোধে কেন্দ্রীয়ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে স্বায়ত্বশাসন, আর রয়েছে কাজ করার স্বাধীনতা ও অপরাধীদের শাস্তি প্রদানের সুপারিশের ক্ষমতা। এসব প্রতিষ্ঠান কোথাও কোথাও শুধু খাদ্য সামগ্রী আবার কোন কোন দেশে খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ, প্রসাধনী, গার্হস্থ্য রাসায়নিক ইত্যাদি সবই নিযন্ত্রণ করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রতিষ্ঠানের নাম ফেড়ারেল ফুড় এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ), কানাডায় ফেডারেল রেগুলেটরী কমিশন এবং কানাডিয়ান ফুড ইন্সপেকশন এজন্সী, ইংল্যান্ডে ফুড সেফটি কমিটি, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ফুড স্টান্ডার্ডস অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, নরওয়েতে নরওয়েজিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি, আয়ারল্যান্ডে ফুড সেফটি অথরিটি অব আয়ারল্যান্ড, সুইডেনে ন্যাশনাল ফুড এডমিনিস্ট্রেশন, থাইল্যান্ডে এফডিএ থাইল্যান্ড ইত্যাদি।
তাই বাংলাদেশেও ভেজাল রোধ অবশ্যই সম্ভব এবং এই কাজে সরকারী ভূমিকা অত্যন্ত জরুরী। এফডিএ এর আদলে একটি রেগুলেটরী সংস্থা গঠন করলে আমাদের দেশের কৃষিজাত বিভিন্ন পণ্যের বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের গায়ে রেগুলেটরী বডির পক্ষ থেকে মান নিশ্চিতকারী সিল দেওয়া যাবে। এটি ছাড়া আজকের বিশ্বে পণ্য বিশেষ করে কৃষিজ, খাদ্য, ওষুধ ও প্রসাধন সামগ্রী রপ্তানি বাড়ানোর চিন্তা বাতুলতা মাত্র। ফলে রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা সুবিধাটুকু নিতে পারবো।
বিষাক্ত/ভেজাল খাদ্য ও ঔষধ নিয়ন্ত্রণে ‘খাদ্য ও ঔষধ এডমিনিস্ট্রেশন’ গঠন করা হোক
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?
ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প
বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন
একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ
(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাড়ির কাছে আরশিনগর
বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।
কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি ভালো আছি
প্রিয় ব্লগার,
আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন