somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার ও জাতিসঙ্ঘের চেতনা এবং বাংলাদেশের কাছে তালেবানের প্রত্যাশা

০২ রা অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[link|[email protected]
এমনিইতেই তো পারমাণবিক বেআদবিতে ইরানের প্রতি গোস্যা আমেরিকা তার উপর নতুন করে সেই গোস্যায় তেল ঢাললেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ড. আহমাদি নেযাদ। তার একটি বক্তব্য সাঙ্ঘাতিক রকমের ক্ষুব্ধ করেছে ‘সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী’ তকমার রাষ্ট্র Ñ আমেরিকাকে। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইরানের প্রেসিডেন্ট বর্তমান বিশ্বের নরক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে যেয়ে বলেছেন, ৯/১১ এর পর আমেরিকা এককভাবে পুরো বিশ্বের সাথে যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে তার আদৌ নৈতিক কোনো ভিত্তি আছে কি না। তিনি ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ বিশ্বব্যাপী এই যুদ্ধের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। বলছেনে, এটি যুদ্ধ না বাণিজ্য। যে বাণিজ্যের পণ্য নিরপরাধ মানুষের রক্ত। এই রক্ত শোষে তারা নিজেদের চরকায় তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়। প্রতিষ্ঠিত করতে চায় নিজেদের রাজত্ব।
টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে বিমান হামলার পর কোনো রকমের তদন্ত ছাড়াই এর জন্যে আল-কায়দা নির্মূলের ব্রত নিয়ে ‘সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে বুশের যুদ্ধ শুরুকে শান্তিপ্রিয় মানুষ কখনোই মেনে নিতে পারেনি। তাদের মধ্যে এতে করে এই হামলার নেপথ্যশক্তি ও কাহিনী নিয়ে গুঞ্জন হয়েছে শুরুর সময়েই। সেই গুঞ্জন এখন প্রতিষ্ঠিত সত্যের মতোই উচ্চারিত। এখন অনেকেই স্পষ্ট করে বলছেন, আমেরিকা তার বাণিজ্যের ধ্বস ঠেকাতে ও মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদি ইসরাইল রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে ৯/১১ নাটকের জন্ম দিয়েছে। এইসব বিষয়ই জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তুলে ধরেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। তিনি যা বলেছেন, এমন না যে এটি তিনি একাই বললেন বা প্রথম বলেছেন। এসব তো এখন সবারই মুখেমুখে। কিন্তু এতেও যে ক্ষ্যাপেছে আমেরিকা ও তার মিত্রশক্তি Ñ এর কারণ পরিষ্কার। কারণ বিষয়টি আর সবখানে উচ্চারণ হলেও কখনো জাতিসঙ্ঘে এমনভাবে কথাও হয়নি। তাও সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে। ফলত যেটি হলো, তার এই বক্তব্য চলাকালেই অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাকে অনুসরণ করে জানি দোস্তরা। আর তার বক্তব্য চলা অবস্থাতেই যুক্তরাষ্ট্র একে ‘ঘৃণ্য’ আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে তারা বলেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট যে বক্তব্য রেখেছেন, তা খুবই ঘৃণ্য এবং আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার ও জাতিসঙ্ঘের চেতনা পরিপন্থী। বড় দাগে এইই তাদের বিবৃতির ফোকাস। শুরুতেই তাদের এই বিবৃতি নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করবো।
ইরানের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে যে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সেটি পুরোপুরি যারা পড়েছেন Ñ স্বীকার করবেন, এর কোথাও বলা হয়নি, আহমাদি নেযাদ যা বলেছেন, মিথ্যে বলেছেন। তারা যেটি করলো, তার বক্তব্যকে নীতির কাঁথা ও ঐতিহ্য দিয়ে ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করলো। নীতিটি হলো ‘আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার’ আর ঐতিহ্য হলো ‘জাতিসঙ্ঘের চেতনা’। আমরা ‘তৃতিয় বিশ্বের’ নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রভু টাইপের একটি রাষ্ট্র ‘আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার’ বলতে কী বোঝে বা কী বোঝাতে চাইবে তা ধরতে পারার কথা নয়। একইভাবে ধরা সম্ভব নয় ‘জাতিসঙ্ঘের চেতনাটি’ও। তার চেও বড় কথা, ‘আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার’ আর জাতিসঙ্ঘের চেতনা বলতেও যে কিছু আছে সেটিও জানা হলো কেবল ইরানের প্রেসিডেন্টের বেআদবির কারণেই। তার এই ‘বেআদবি’কে তাই একটি সালাম না করে পারছি না!
শিষ্টাচারের প্রসঙ্গ যখন তখন একটা কথা বলতেই হবে, নিরপরাধ মানুষ খুনকে, অন্য দেশ জবরদখলকে শিষ্টাচার বলেই গণ্য করে আমেরিকা। আর এ কারণেই ঘোষণা দিয়ে পৃথিবীটাকে তারা দুভাগে ভাগ করে নিয়েছে। হয় ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ তাদের সহচর না হয় এই যুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি। পক্ষ এই দুটাই। হয় মারো। নয় মরো। জিন্দেগি বলতে এখানে কিছু নেই। পৃথিবীকে এই গোরস্থান বানানোর কর্মসূচি শুরু হয় আফগানিস্তানে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ জোটের সম্মিলিতি আক্রমণের মাধ্যমে। সে নয় বছর আগের কথা। এখনো এই মারো আর মরো’র খেলাই সেখানে চলছে। এতোই বিভীষিকা এখন সেখানে যে, যাকে তারা ক্ষমতাই বসিয়েছে সেই কারজাই-ই এখন চোখের জলে হারিয়ে যাচ্ছেন। নিজের সাক্ষাৎ মৃত্যু তাকে দিগ-ভ্রান্ত করে তোলেছে। দিব্য চোখে দেখছেন তার ছোট্ট সন্তানটির মৃত্যুও। তবুও এই মৃত্যু থামাতে গা করছে না আমেরিকা। বরঞ্চ মৃত্যুর দিনকে আরো প্রলম্বিত করতেই তৎপর সে।
টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজারের মতন মানুষ। এই হামলা নাটক হোক বা কোনো গোষ্ঠির আক্রোশে হোক Ñ নিরপরাধ যে মানুষগুলো প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য আমাদের মমতায় কোনো সীমা নেই। কিন্তু একে অজুহাত করে আমেরিকা পৃথিবীকে গোরস্থান করার যে ব্রত নিয়েছে তাকে আমাদের নিরন্তর ধিক্কার। আমরা কোনোভাবেই নিরপরাধ মানুষ হত্যাকে সমর্থন করতে পারি না। এটি যদি আমেরিকার ‘শিষ্টাচার’ হয় তবুও না। কিন্তু এই বিষয়টিই প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষ্যভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে, সব জাতি রাষ্ট্রের সংস্থা Ñ জাতিসঙ্ঘ। সে তার সদস্য রাষ্ট্রকে থামায়নি আফগানে, ইরাকে নিরপরাধ মানুষ হত্যা থেকে। এটি জাতিসঙ্ঘের কোন চেতনাবলে সম্ভব হয়েছে Ñ আমাদের জানা নেই।
০ দুই ০
২০০১ এর সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ার আক্রান্ত হবার পর মাত্র দুমাসের মাথায় আমেরিকা সম্মিলিত আক্রমণ করে আফগানে। তখন দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় তালেবান। হামলার পর ধারণার চেয়ে কম সময়ে তালেবানের কাছ থেকে রাষ্ট্রটি ‘দখল’ করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। খুব প্রতিরোধের মুখেও তাদের পড়তে হয়নি। এইভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা তালেবান থেকে সহজে নিয়ে নেয়ায় অনেকেই ভেবেছিলেন তালেবান কাগুজে ভাগ। বস্তুত এদের কোনো গণভিত্তি নেই। প্রতিরোধের সামর্থ নেই। কিন্তু ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া যে তালেবানের কার্যকর যুদ্ধ কৌশল ছিলো এটি বুঝতে অনেকেরই সময় লেগেছে। এর পর নয় বছর চলছে দখল করা দেশটিতে এক মুহূর্তও স্বস্তি মেলেনি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রবাহিনীর। প্রতিনিয়ত ‘কাগুজে’ বাঘকেই এখন মোকাবেলা করতে হচ্ছে দখলদার বাহিনীকে। কিন্তু ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বল হচ্ছে তাদের মোকাবেলা শক্তি। বিপরীতে তালেবান নিজেদের শক্তির প্রকাশ ঘটাচ্ছে অব্যাহতভাবে। যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ধারণাই করেনি দুর্বল হওয়ার পরিবর্তে দিনেদিনে তালেবান এতোটা শক্তিমান হয়ে ওঠবে। অনেকে এখন খোলাখুলিই বলতে শুরু করেছেন, তালেবান আবারো স্বরূপে ফিরে আসছে। আর আমেরিকা ও আফগানে যুদ্ধরত বাহিনীর তালেবানের সাথে ‘মিটমাটের’ ইচ্ছাটাও তেমনটারই ইঙ্গিত বলে তাদের মন্তব্য। এতে করে এখন আমেরিকার নাগরিকরাই হতাশ। তারা বলছে, পুরোপুরি অনর্থক একটি যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের রাষ্ট্র ও সরকার। যে যুদ্ধের ক্ষতি ছাড়া কোনো প্রাপ্তি নেই। কী পরিমাণের শুধু আর্থিক ক্ষতিই হয়েছে এই ন বছরে আফগানে তা আমাদের মতো অনেকের ভাবনায়ও কুলোবে না। আর দখলদারবাহিনীর সেনাদের লাশের হিশেব তো আরো ভয়ানক। যুদ্ধকৌশল হিসেবে নিজেদের ক্ষতি সবসময়ই গোপন রাখে তারা। এরপরও যেগুলো প্রকাশ করে তার হিসেবেই তালেবানের হাতে প্রাণ হারিয়েছে চার হাজারেরও বেশি সেনা। আর শুধু এই বছরই নাকি সেখানে সেনাদের মৃত্যু হয়েছে এক হাজারের মতো। তবে তারা স্বীকার করেছে, সেনা মৃত্যুর হারটা এই বছরই বেশি! আর এই মৃত্যু দিনেদিনে বাড়ছেই। সেনাদের গণহারে মৃত্যু আর আর্থিক ক্ষতি সব মিলে আফগান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন চরম দুর্দিনে। এই দুর্দিনে তার সহায়তার খুব দরকার। কিন্তু যাদের নিয়ে সে যুদ্ধ শুরু করেছিলো, একেএকে সকলই এখন যুদ্ধক্লান্ত। আমেরিকাকে যদ্ধসহায়তা দিতে কোনোভাবেই আর রাজি নয় তারা। বরঞ্চ তাদের যে সেনারা ময়দানে এখনো প্রাণ নিয়ে টিকে আছে তাদের ফিরেয়ে নিতেই মরিয়া। অথচ আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাপ্রধান প্রেটাউস জানিয়েছে তালেবানকে মোকাবেলা করতে অন্তত চার লাখ সেনা দরকার। বর্তমানে আছে কত, সম্মিলিতবাহিনীর সেনসংখ্যা একলাখের মতো। বাকি তিন লাখ সেনার ঘাটতি মিত্র দেশগুলো থেকে পোষানো যে যাবে না আমেরিকা এখন সেটি ভালো করেই বুঝে। মিত্ররা সব দিতে রাজি থাকলেও আফগানে আর নিজেদের সেনা পাঠাতে রাজি নয়। এমন দুর্দিনে সে তার সাহায্যপুষ্ট ‘বন্ধু’দের শরনাপন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। আমেরিকার এমন বন্ধুদের তালিকায় স¤প্রতি খুব উজ্জ্বল হয়েছে বাংলাদেশের নাম। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক বিশেষ দূত রিচার্ড সি হলব্র“ক ‘উজ্জ্বল হয়ে উঠা’ এই বন্ধুদেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মণিকে বলেছেন, আফগানে তার দেশ থেকে কিছু সৈন্য পাঠাতে। খবরে প্রকাশ, এক কথয়ায় হ্যাঁ না কোনোটাই বলেননি দিপু। কারণ যুক্তরাষ্ট্রকে না করে দেয়ার মতো সাহস খুব কম রাষ্ট্রেরই আছে। বাংলাদেশ এই কম রাষ্ট্রের তালিকায় নেই। এ ছাড়া না জবাব শুনবে এমনটা ভেবে কিন্তু সেনা চায়নি যুক্তরাষ্ট্র। ‘সন্ত্রাসি রাষ্ট্র’ বলে তার পরিচয় প্রতিষ্ঠা হলেও প্রেস্টিজও যে তার নেই এমনটা তো বলা যাবে না। বাংলাদেশ যদি ‘না’ করে দেয় তবে সাঙ্ঘাতিক রকমেরই যে প্রেস্টিজে ধরবে যুক্তরাষ্ট্রের সে যে কারো বুঝার কথা। আমার মনে হয়, তাদের প্রেস্টিজ পাংচার হবার আশঙ্কা থাকলে এই প্রস্তাব তারা দিতো না। কাজেই এই প্রস্তাব যে অনেক কিছু ঠিকটাক করেই হয়েছে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তাই আফগানে যদি বাংলাদেশের সেনারা যুদ্ধ করতে যায় তবে বিষয়টিকে খুব স্বাভাবিকই ধরতে হবে। স্বাভাবিক এ কারণে যে, আমেরিকার মতো রাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের এমন চিত্রটাই তাদের কাম্য।
০ তিন ০
আফগানে যে মার্কিন ও দখলদার বাহিনীর গোরস্থান সেটি এখন এদেশে থেকেই বোঝা যায়। মার্কিন সরকার ও সেনাদের কঠোর সেন্সর আর নজরদারি এড়িয়ে যে সামান্য বিভীষিকা আর মৃত্যুর সংবাদ আমেরিকা পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে তাতেই ওই দেশের নাগরিকদের মুর্ছা যাবার অবস্থা। এখান থেকে সসম্মানে পলায়ন এখন তাদের খুব জরুরি। আর পলায়ন সময়ে নিজেদের সেনাদের প্রাণ রক্ষাটাও বড় একটি বিষয় আমেরিকার। কারণ চাইলেই যে এক মুহূর্তে দেশটি থেকে বেরিয়ে আসা যাবে পরিস্থিতি মোটেই সেরকম নয়। পলায়নও যে খুব কঠিন তা সেনাদের আর্তচিৎকরেই বোঝা যায়। তাই অন্য দেশের সেনাকে মাঠযুদ্ধে ব্যস্ত রাখার কৌশল আমেরিকা নিয়ে থাকতেই পারে। সেনা পাঠাতে হলে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীকে এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
এখনো পর্যন্ত সেনা পাঠানোর বিষয়ে স্পষ্ট কোনো কিছু ঘোষণা করেনি সরকার। তারা পুরো পরিস্থিতি বুঝার অপেক্ষায় আছেন। তবে এভাবে যে সময় কাটানো যাবে না তা সত্য। একটা কিছু বলতেই হবে বাংলাদেশকে। সুপারপাওয়ারের এই গরিব বন্ধুটি কী উত্তর করবে আমাদের জানা নেই। সেনা চাওয়ার পরই তালেবানদের নামে একটি হুশিয়ারি/সর্তকতা বিবৃতি খুব গুরত্বসহ আলোচনায় এসেছে। একটি ওয়েব সাইটে আরবি ও পশতু ভাষায় সেটি প্রকাশ করা হয়েছে। তালেবানদের নামে বললাম কারণ এটি তালেবানদের কোনো সাইট কি না, সেটি আমাদের জানা নেই। তবে বিষয়টির সত্যতা অনেকেই নিশ্চিত করেছেন। সত্য যদি হয়ে থাকে তবে ওই বিবৃতির ভাষাটি আমাদের বিবেচনা করা দরকার। তালেবান সংক্ষেপে এই বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছে, একটি মুসলিম দেশে সেনা পাঠানোর মতো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ইসলামি জ্ঞান ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিক এদেশের আছেন বলেই তারা মনে করে। বিবেচনার কথা এ কারণে বললাম, কারণ আফগানে এখন দখলদার বাহিনীর যে অবস্থা সেখানে আমাদের সেনাবাহিনীকে মরতে পাঠানোকে ইসলাম কোনো ভাবেই সমর্থন করবে না। আর এটা রাজনৈতিক দূরদর্শিতারও প্রমাণ বহন করবে না। সিদ্ধান্তটি যে শেষ বিচারে ভুল হবে তা পাকিস্তানের দিকে চোখ ফেললেই বোঝা যাবে। আফগানে শুধু তুর্কিবাহিনী ছাড়া কোনো মুসলিম সেনারা নেই। ২০০১ এ যুদ্ধ শুরুর সময় অনেক মুসলিম দেশের নীরব সমর্থন থাকলেও সেখানেও এখন আগের পরিস্থিতি নেই। যে মুসলিম রাষ্ট্রটি আফগান যুদ্ধে আমেরিকাকে সহায়তা দিয়েছিলো সবচে বেশি সেই পাকিস্তানই এখন আক্রমণের শিকার। আমেরিকার আফগান যুদ্ধ সীমানা অতিক্রম করে ‘শত্র“’ তাড়া করে পাকিস্তানে ঢুকে পড়েছে। হত্যা করছে পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের। এই হত্যা আর সীমানা অতিক্রমের ঘটনা সমানে আরো বাড়বে।
০ চার ০
বাংলাদেশের সেনাকে আফগানে দখলদার বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করতে পাঠানোতে দেশের কারো সায় নেই। এর বড় একটি কারণ হিসেবে দুদেশের ভূপরিস্থিতির ভিন্নতাটি সামনে আসছে। বিশ্লেষকরা স্পষ্ট করেই বলছেন, আফগানের জমিনে সব দিক থেকে সমৃদ্ধবাহিনী যেখানে পেরে উঠছেনা, সেখানে আমাদের সেনাদের অপরিচিত মাঠি ও পাহাড়েরর ভেতরে মরতে পাঠানোর কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। তাদের মতে, আমাদের সেনাবাহিনী কোনোভাবেই আফগানের মাঠিতে যুদ্ধ করার উপযুক্ত নয়। বিদেশে আমাদের সেনাবাহিনীর শান্তিমিশনের সাফল্যকেও তারা এক করে দেখতে রাজি নন। কারণ শান্তিমিশন আর যুদ্ধ এক কথা নয়। এই যে একটা তর্কযুদ্ধ এখন দেশে এর পরিণতি কোনোভাবেই ভালো পরিসমাপ্তির দিকে যাবে না। বাংলাদেশের আসলে এখন আমেরিকার চেয়ে কঠিন অবস্থা। শ্যাম রাখবে না কুল রাখবে সিদ্ধান্ত নেয়া খুব কঠিন।
আফগানে আমাদের সেনা পাঠালেও বিপদ না পাঠালেও বিপদ। আমেরিকার নিশান থেকে আমাদের মুক্তি আপাতত অসম্ভব। আমেরিকাকে সহায়তা করতে গেলেই ‘শত্র“’ তাড়া করে তার যুদ্ধ যে বাংলাদেশের সীমানাও অতিক্রম করবে না এর কেনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ তখন যুক্তিও ভালো থাকবে, আফগানে সেনারা যুদ্ধ করতে যাওয়ার প্রতিশোধ নিতে তালেবান, আল-কায়েদা বাংলাদেশে ঢুকেছে। তাই এদের নির্মূল করতে আমেরিকার এখানে অভিযান চালানোকে আপনি কোনোভাবেই নাজায়েয বলতে পারবে না। তার বিমান এদেশের আকাশে বোমা ফেলবে। আমেরিকান সেনারা রক্ত ঝরাবে সবুজ মাণচিত্রের গায়ে। আর যদি সেনা না পাঠায় তখন তো আরো বড় বিপদ, আমরা তালেবানের পক্ষ। কাজ করবে বুশের সেই ঐতিহাসিক যুক্তি। পক্ষ দুটাই। হয় মারো নয়, নয় মরো। সেনা চাওয়ার মশকারা করে আমাদের এই বিপদটাই কি চেয়েছে আমেরিকা। কী করবে বাংলাদেশ?


নোমান বিন আরমান


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৩:২৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×