somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিম বিশ্ব পঁচে গেলে নেতা হয়ে যায় বিন লাদেন/আহমাদিনেজাদ, বাংলাদেশের ইসলামে পঁচন ধরলে নেতা হয়ে ওঠে ফরহাদ মজহার/মাহমুদুর রহমান

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এই লেখাটা- হতে পারে অলস মস্তিষ্কের একটি নিরন্তর প্রচেষ্টা। হতে পারে অনেক অন্যকিছুও। তারপরও, লেখা তো লেখাই। আমি বিশ্বাস করি এবং আমার মতো অনেকেরই বিশ্বাস, লেখা কখনো লগি-বৈঠা হতে পারে না, হাতুরি-কাস্তেও নয়, খাম্বাও হতে পারে না পৃথিবীর কোন লেখা, আজও পারেনি ...। বৈঠা কিংবা খাম্বা, এর কোনোটিই আমার লেখার মূল প্রতিপাদ্য নয়, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মেলবন্ধনও আমার প্রতিপাদ্য নয়, আমি শুধু দেশে এবং বৈশ্বিক সভায় মুসলিম নেতৃত্বের কিছু কুণ্ঠিত-ভুলুণ্ঠিত বিষয় ও বিশ্বাসের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা নেতৃত্ব নিয়ে ক-খ-গ-ঘ ধরনের কিছু কথা উচ্চারণ করতে চাচ্ছি। আমার চাওয়াতে কিছু যায়-আসে না জানি, তবু রাতের, অনেক রাতের কিছুটা সময় ব্লগে কাটিয়ে দিলে মন্দ হবে না, ভাবছি।

আমাদের পাশের দেশ ইন্ডিয়ার একজন প্রয়াত লেখক আলী মিয়া। নদভী নামেই তিনি বেশ খ্যাতিমান। বিশ্বময় তার খ্যাতি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বলেও শুনেছি। আরও শুনেছি, তার নাম-দামের প্রধান কারণ আরবী সাহিত্য। অনারব হয়েও তিনি নাকি আরবদের মতোই আরবী সাহিত্যের দখল নিয়েছেন। এই আলী সাহেবের একটি বই আছে ‌‌'মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো'। বইটি আরবী ভাষায় লেখা। বইটি বাংলায় অনুদিত হয়ে অনেক আগেই বাজারে এসেছে। নাম শুনে বইটি যে বিষয়ের মনে হয়, সে বিষয়গুলো বইতে পাওয়া যায়, কিন্তু একটু উল্টাপাল্টাভাবে। বইটি পড়ে অদ্ভূত অনেকগুলো ব্যাপার আমার গোচরে এসেছে, যার একটি হচ্ছে মুসলমানরা দিনদিন ধর্মবিমুখ হয়ে পড়ছে কিন্তু ইহুদি-খ্রীষ্টানরা ধর্মকে আকড়ে ধরে রেখেছে- এমন একটি অসৌজন্য আক্ষেপ। ব্যাপারটি আমার কাছে অদ্ভূত ঠেকলেও অবাক হইনি। কারণ, ইন্ডিয়ান আলেমদেরকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেকটা এমনই দেখতে পাওয়া যায়।

একটা ব্যাপার কী, পাকিস্তানি-ইন্ডিয়ানদেরকে বকাঝকা করে লাভ নেই, আর এই দুইদেশের আলেম ওলামাদের কিছু বলে লাভ নেই। দেশদুটির ক্রিকেটারদেরও কিছু বলে লাভ হয় না, ওদের পয়সাওয়ালাদেরও কিছু বললে কাজ হয় না, গান-সিনেমাওয়ালারাও সবকথার উর্ধে। ওদের ফাহমিদা মির্জা কিংবা মায়াবতীকে আজও কেউ কোন কথা বোঝাতে পারেনি, অরুন্ধতীকেও কেউ কোন কথা বোঝাতে পারেনি, মমতাকেও না। জাভেদ মিয়াঁদাদ কিংবা আজহারউদ্দিনও আজ পর্যন্ত কোন কথায় কান দেননি। প্রসঙ্গের কারণে কিছু বাজে নামের সাথে মায়াবতীর নাম উল্লেখ করতে হলো, না করে পারিনি। কিন্তু আমার কাছে সত্যিকার অর্থে মায়াবতীর মতো পলিটিক্যাল ফিলোসফার আর একজনও সাউথ এশিয়ায় নেই। একটি কথা, এই একটি কথা দিয়েই সবকিছু জয় করে নিয়েছে মায়াবতী। কথাটি হয়তো অনেকেই শুনেছেন, আমিও শুনেছি কিন্তু অন্য কান দিয়ে বের করে দেইনি। কথাটি হচ্ছে- 'সন্তানকে ভালবাসতে চাইলে এমনিতেই ভালবাসা যায়, মা হতে হয় না'।

ইরান, অতিমাত্রায় পুরাতন দেশ হিশেবে বিশ্বময় খুবই পরিচিত। ইতিহাস কিংবা ঐতিহ্যের দিক থেকেও বেশ সমৃদ্ধমান। সংস্কৃতিক্ষেত্রেও তাদের বেশ মানসম্মান। তবে আসল বিষয় হচ্ছে, ইরানের সাথে আমাদের দেশের এবং গুরুত্বপূর্ণ সব মুসলিম দেশে মূল বৈষম্য হচ্ছে ধর্মের দিক দিয়ে। বিরোধের ব্যাপারটি স্পষ্ট করার জন্য বলছি- আমাদের ইসলামের সাথে কাদিয়ানীদের ইসলামের যতোটা বৈপরীত্য ঠিক ততোটাই বৈপরীত্য শিয়াদের ইসলামের সাথে। ইসলামের মৌলিক যেসব ভিত্তি আমরা মান্য করি বা মানি, তার অনেকগুলোর সাথেই কাদিয়ানী এবং শিয়াদের দ্বিমত আছে। একপ্রকার শিরোনামের মতো করেই ব্যাপারটি বললাম, বিস্তারিত জানার প্রয়োজন হলে বইপত্র ঘেটে দেখে নেয়া যেতে পারে। আহমাদিনেজাদ লোকটা একজন কম্প্লিট শিয়া, অথচ ইউরোপ-আমেরিকার দিকে ছুঁড়ে দেয়া তার প্রতিটি কথাতেই আমরা হাততালি দিয়ে আসছি। ... আমরা আসলে অদ্ভূত এক বন্যপ্রাণী। মুজিবের কথায় হাততালি দিলাম, জিয়ার কথাতেও। মুজিবকেও মারলাম, জিয়াকেও- আর বাঁচিয়ে রাখলাম হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে। ... পৃথিবীতে কতো আহাম্মকই না জন্মায়!

আর লাদেন, ওসামা বিন লাদেন। আধুনিক বিশ্বে ইসলামের সবচে বড়ো যমদূত। ঈশ্বর পৃথিবীতে যে শয়তায় পাঠিয়েছেন, এই লাদেন তারচে বড়ো শয়তান। মাত্র এক দশকে পৃথিবীর ইসলামকে একাই খলনায়কের ভূমিকায় উপনীত করলো। ইসলামকে পেছন থেকে আঘাত করার যে অপকৌশল, এর সবচে উচ্চাঙ্গের কুশলী হচ্ছে এই বিন লাদেন। আর কিছুর দরকার নেই, শুধু একটি হিশাবই করা যেতে পারে- লাদেনের উদ্ভবের পূর্বে পৃথিবীতে ইসলামে অবস্থা কী ছিলো, আর লাদেনের উদ্ভবের পরে পৃথিবীর ইসলামের অবস্থাটা কী?

অপার্থিব চিন্তাধারনার অতিবাস্তব ফলাফলের কারণে আমাদের মৌলভীরা কখনো মূলধারায় আসতে পারেননি। হাফেজ্জী হুজুর আর শামসুল হক ফরীদপুরী, যার নামই বলি না কেন, পার্থিব বাস্তবতার দিকে কোনদিন তারা দৃকপাত করেননি। তাদের পরবর্তীতে যারা এদেশে ধর্মের মূল পতাকা হাতে ঘোরাফেরা শুরু করেছেন, তাদের দিন শুরুই হয়েছে মহামহিম ফাঁপড়ে পড়ে, এই যেমন আজিজুল হক, মুহিউদ্দিন খান, আমিনী ...। এদের জঘন্য রূপটা আমরা বিগত জোট সরকারের পাঁচ বছরে বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছি। এদেশের ইসলাম কখনোই শক্তিশালী রূপ নিতে পারেনি। তবু দুর্বল-ধুকে ধুকে বেশ চলছিল। কিন্তু এই লোকগুলোর অপরাজনীতি আর সামাজিক সমাচার এদেশের ইসলামকে ভালোভাবেই নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে। মসজিদে পুলিশ হত্যা, জমি দখল, যাকাতের টাকা আত্মসাৎত, বর্ডার বিজনেস, ফতোয়াবাজি, ক্যাডারি- হেন কোন কাজ নেই, যেসব তাদের ছত্রছায়ায় হয়নি ...।

টুপিদাড়ির সম্মান চিরতরে এদেশ থেকে মাটি করে দিয়েছে লোকগুলো। হারাম খেতে খেতে হালাল কিছুই আর তাদের ভাল্লাগে না। ইসলামকে তারা দূর থেকে দেখলে চশমা ছাড়া চিনতেই পারে না ঠিকমতো। আর গত ৫ বছরে না পারলেও এখন বেশ দেখাচ্ছেন বোমা মাসুদ আর কাম বিল্লাহ, তাদের চ্যালারাও ঠিক তাদের মতোই। ইসলামের সত্যিকার স্বার্থের দাম তাদের কারো কাছেই নেই। দাড়িটুপি হচ্ছে স্রেফ তাদের অফিসিয়াল পোষাক, কিন্তু টুপিদাড়ির আসল মর্মটা তারা ভুলেই গেছে। ইসলামের কোন প্রয়োজনকে তারা এখন আর নিজেদের প্রয়োজন হিশেবে দেখে না। ইসলামের পক্ষে তারা পার্থিব স্বার্থ ছাড়া কোন কথাই বলে না। আর ঠিক এই সুযোগটাতেই মাঠে নেমেছেন আজন্ম প্রতারক ফরহাদ মজহার আর বেয়াদব মাহমুদুর রহমান। ইসলাম নিয়ে বেশ বিক্রিবাট্টা করে চালাচালি করে চলছেন। আপাতত বিবৃতি আর উদ্বোধন আর অতিথি হিশেবে ভাষণেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু ধরণ দেখে মনে হচ্ছে ভালোভাবেই নেমেছেন এই পথে। অথচ এই যে ফরহাদ মজহার, ইসলামের পক্ষে সাফাই গান, লেখালেখি করেন, ইসলামী বই উদ্বোধন করেন, ভূমিকা লেখেন- এই লোকটা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত একবারও জুমআর নামাজ পড়েছে কিনা, এ ব্যাপারে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। আর তার একান্ত সহযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান। জামাতের ভাড়া করা কলম-জল্লাদ। এই লোকটা ইসলাম নিয়ে সুযোগ পেলেই কথা বলে বসেন। জামাতের কোন নেতা দেখা করতে আসছেন শুনলেই মওদুদীর কিতাবাদি টেবিলে সাজিয়ে বসেন। শিবিরের সাইমুমের ৩০ বছর পূর্তিতে প্রধান অতিথি হিশেবে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা দিয়েছেন (হিশেব মতে এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হতে পারতেন গোলাম আযম, অথচ মাহমুদুর এতোটা পরিপক্ক জামাতি এ গো. আযমকে টেক্কা দিয়ে প্রধান অতিথি হয়ে গেলেন)। পলিটিক্যাল প্রোস্টিটিউট শফিউল আলম প্রধানের কাছ থেকে সংবর্ধনা নিয়েছেন, পেয়েছেন কুরআন শরীফ আর একটি তরবারি। তবে লোকটা সত্যিকার অর্থে নিজকে এদেশের ইসলামের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিশেবেই জাহির করে থাকেন। আর ধান্ধাবাজ ও বিভ্রান্ত হুজুররাও তার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। তার মন্তব্য প্রতিবেদনের সবচে বড়ো পাঠকশ্রেণী হচ্ছে কাঁচা বাজারের দোকানদার আর মাদরাসা-মসজিদের হুজুররা। বাজে সব মন্তব্য প্রতিবেদন লিখে ড্রামে ড্রামে তেল পেয়ে আসছে সাম্প্রতিক সময়ে, আপাতত জেলে আছে। কিন্তু তার আশপাশের পা-চাটা লোকজন ভেবে বসে আছে, বড়ো মানুষদের জেল খাটাটাই স্বাভাবিক। আমার কথা হচ্ছে, চোর-বাটপাররাও জেল খাটে, এই কথাটাও মনে রাইখেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৭:১৫
১৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×