somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিতৃত্ব

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-মামা তুমি কাল সত্যি চলে যাবে?
মামা দুই হাত পকেটে রেখে আমার উল্টো দিকে তাকিয়ে ছিলেন, সে ভাবেই বললেন-হ্যারে, অনেক দিনতো দেশে থাকলাম।
আমি বললাম- মামা, তুমিতো অনেক টাকা পয়সা উপার্জন করলে, এখন না হয় দেশে ফিরে কিছু একটা কর, দেখ আমি তো ভালোভাবেই স্যাটেলড্ হয়ে গেছি, আমেরিকায় যখন ছিলাম তখন এরচেয়ে বেশী উপার্জন ছিল ঠিক, কিন্তু এখানে যা উপার্জন করছি তাতে ভালোভবেই চলে যাচ্ছে। মামা তুমিও এবার দেশে ফিরে আসো, আমিতো রয়েছি।
মামা ছোট করে বললেন- তুই ঠিকই বলেছিস , তবুও...
-বিনীতা ঠিকই বলেছে, তোমাকে বিয়ে করালেই তুমি দেশে ফিরে আসবে।
মামা এবার হাসতে হাসতে ঘুরে দাড়ালেন, তারপর বেঞ্চটাতে আমার পাশে বসে বললেন-তোরা পাগলহয়েছিস, তাই পঞ্চাশ বছরের বুড়োটাকে এখন বিয়ে দিতে চাস। মামা গা দুলিয়ে হাসতে লাগলেন।
-মামা তোমার বয়স পঞ্চাশ হতে পারে, কিন্তু তুমি বুড়ো হয়ে যাও নি...
-আচ্ছা মানছি আমি এখনও যুবক, কিন্তু আমাকে দেশে রাখতে বিয়ে করাতে হবে এটা তোদের ভুল ধারনা। আসলে হয়েছে কি জানিস, বলে মামা একটু থামলেন, তারপর পার্কের দূরের একটি গাছের দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক ভাবে বলতে লাগলেন –আমদের দেশ যদি একেবারে দরিদ্র হতো, প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি থাকতো, মেধার অভাব থকতো, দু মুঠো ভাতের জন্য হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হতো, তাহলেও আমেরিকার বিলাস বহুল জীবন ছেড়ে বাংলাদেশেই কিছু করার চেষ্টা করতাম, অথচ জানিসইতো অসৎরাজনীতিবিদ ও তাদের পরিচালিত মুষ্টিমেয় ধনীদের ব্যক্তিস্বার্থের জন্য আজ আমাদের এই দুরবস্থা, কৃত্রিম দুরাবস্থা, ঐ পিশাচেরা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে, শুধু তাইনা এখন মানুষের জীবনও ঐসব লোকদের খেলার গুটি হয়ে গিয়েছে, কতজন মানুষ মরবে, বাঁচবে সব তারাই ঠিক করে দেয়।
-মামা তাই বলে কি দেশে মানুষ বসবাস করেনা, এখানে মুক্ত বুদ্ধির কোন মানুষ নেই, কেউ কি দেশের মঙ্গল চায়না?
মামা খানিকটা ম্লান হেঁসে বললেন - তা হবেনা কেন, এখনো দেশে অনেক নি:স্বার্থ মানুষ আছে, যারা অন্যের জন্য ভাবে, অনেকে আছেন যারা বিদেশ গিয়ে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে ঐ দেশের ভোগ বিলাসের কাছে মাথা বিক্রি করেননি, দেশে ফিরে এসেছেন। কিন্তু আমিতো অত বড় কেউ না, দুর্বল মানুষ দেশের জন্য কিছু করার মতাও নেই, তাই দূরে দূরে থাকি, কাজ করি আর দেশের জন্য, তোদের জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করি। দু’জনই কিছুণ চুপচাপ বেঞ্চটায় পাশাপাশি বসে রইলাম, মামা কি যেন ভাবছেন। পার্কে অনেক মানুষ তবে তেমন কোলাহল নেই, কেউ হাঁটছেন, কেউ দৌড়াচ্ছেন, কেউ একাবসে আছেন কেউ কেউ আড্ডা দিচ্ছেন। আমি চারদিকে চোখ বুলিয়ে পরি বা বিনীতাকে দেখলাম না, হয়তো কাছেই কোথাও আছে, চোখে পড়ছেনা। এক বাদাম বিক্রেতা এসে বলল- স্যার বাদাম দিমু?
সামাকে জিজ্ঞেস করলাম- মামা বাদাম খাবে?
-নাহ্ ইচ্ছে করছেনা, তুই খেলে নিতে পারিস।
বাদামওয়ালাকে বিদায় করে মামাকে জিজ্ঞেস করলাম - মামা তোমার কি কিছু হয়েছে, তুমি কি কিছু ভাবছো?
মামা যেন ধরা পড়ে গেছেন এমন ভাবে বললেন- কই নাতো।
তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে বললেন- বিনীতা, পরি গেল কোথায়?
-কাছেই আছে হয়তো ।
মামা বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে আগের মতো দাড়ালেন, গলা অনেকটা খাঁদে নামিয়ে বললেন- হাসান, আমেরিকায় তোর একবার রোড এক্সিডেন্ট হয়েছিল, মনে আছে?
-বাহ্, মনে থাকবেনা কেন? দুইমাস হাসপাতালে ছিলাম, অবশ্য প্রধম একমাসের কোন স্মৃতিই আমার মনে পড়েনা।
-হ্যা, একমাস তোর জ্ঞান ছিলনা, কি ভয়ঙ্কর দুশ্চিন্তায় যে সেই দিন গুলো কেটেছে।
-তাইতো সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে এলাম, মা তখনও বেঁচে আছেন, ভাবলাম মরতে হলে মার কোলে শুয়েই মরি।
-আচ্ছ তোর মেয়েটার বয়স কতরে?
Ñপরির পাঁচ বছর, জানো মামা, পরি এখন আমার জীবনের সব, মাতো ওকে দেখে যেতে পারলোনা, তাই কষ্ট লাগে ও যদি আরো কিছু আগে আসতো। মাঝে মাঝে মনে হয় পরি যদি না আসতো তাহলে আমার জীবনে পূর্ণতাই আসতো না, আসলে মামা তোমাকে আমি বোঝাতে পারবোনা এতটুকু একটা মেয়ে আমাকে কী মায়ায় বেঁধে রেখেছে।
-হাসান এক্সিডেন্টটা হবার পর থেকে তোর কোন অসূবিধা হয়?
-নাতো মামা!
-অবশ্য কোন অসূবিধা হবার কথাও নয়, তবে জানিস একটি কথা তোকে বলা হয়নি...
-কি কথা মামা?
এমন সময় দেখলাম পরি তার মায়ের হাত ধরে গুটি গুটি পায়ে আমাদের দিকে আসছে।
-অবশ্য কথাটা এখন বলা আমার ঠিক হবে কিনা জানিনা, আমাকে তুই মা করিস, আমেরিকা হসপিটালে তোকে যখন মারাতœক ইনজুরিড অবস্থায় ভর্তি করেছি তুইতো জানিসনা কিভাবে কেটেছিল আমার সেই দিনগুলো, তোর যদি কিছু হয়ে যায় তবে তোর মাকেই বা কি ভাবে মুখ দেখাবো, যাই হোক ডাক্তারাও তোর যথাসাধ্য ট্রিটমেন্ট নিয়েছিল কিন্তু একটি রিপোর্ট আসলে আমি কি ভাবে বলবো, বুঝতে পারছিনা, সব কথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
আমি বললাম - মামা তুমি বলো আমি বুঝতে পারবো।
দূর থেকে পরির ডাক একটু একটু ভেসে আসছে- আব্বু, আব্বু।
মামা আবার বলতে লাগলেন - ডাক্তার আমাকে একটি রিপোর্ট দেখিয়ে বললো যে, তুই সুস্থ হয়ে উঠলে তোর কোন সমস্যা থাকবেনা, কিন্তু...কিন্তু তোর স্পার্ম গুলো মারা গেছে, সেগুলো আর জীবিত করা যাবেনা অর্থাৎ তুই কখনো বাবা হতে পারবিনা। মামা এবার আমার দিকে ঘুরে বললেন - বিশ্বাস কর হাসান তোর সিমেন্স আমি অন্যান্য ল্যাবে নিয়ে পরীা করিয়েছি কিন্তু সব জায়গায় একই রিপোর্ট, তুই কখনো বাবা হতে পারবিনা, কখনো না।
আমি আর সহ্য করতে পারলাম না, আমার কান দিয়ে কে যেন গরম সীসা ঢেলে দিয়েছে, পৃথিবীটা দোলনার মতো দুলতে লাগলো, মাথার মগজ গরম কড়াইতে কেউ যেন ভাঁজছে। তবে কি পরি আমার... বিনীতা দ্বি...কে তাহলে... আমি বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে মামার দুই কাঁধ খামচে ধরে বললাম - আমি মানিনা, তুমি মিথ্যে বলছো, সব ভুল, পরি আমার সন্তান।
মামা আমার গায়ে হাত রেখে বললো - হাসান শান্ত হ, তুই বিশ্বাস না করলে আমি আমেরিকা গিয়ে রিপোর্ট গুলো পাঠিয়ে দেবো, তুই এখানেও না হয় টেস্ট করিয়ে নিস।
আমার চিরচেনা পৃথিবী আমূল বদলে গেছে, এই পার্কটাকে মনে হচ্ছে হাবিয়া দোযখ, হা ঈশ্বর আট বছর আগে এক্সিডেন্টে তুমি কেন আমাকে মেরে ফেললেনা, কেন বাঁচিয়ে রাখলে, কেন, কেন? বহুদূর থেকে আসা একটি ডাক ক্রমশ নিকটতর হচ্ছে- আব্বু, আব্বু।
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিজে বাঁচো— আমাদেরও বাঁচাও ।

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২০



ষোলকোটি মানুষের জন্য
যারা যোগাড় করে অন্ন
তাদের কথা ভাবি
তাদেরও যে আছে দাবি
ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য ।
উজানে আন্তনদী সংযোগে
ও নিত্য নতুন বাঁধ বিনির্মাণে
বদলে যায় নদী প্রবাহ— বাড়ে যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বেনজিরের হালচাল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:০৫

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।




স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে অঢেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালী মেয়েরা বোরখা পড়ছে আল্লাহর ভয়ে নাকি পুরুষের এটেনশান পেতে?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২০


সকলে লক্ষ্য করেছেন যে,বেশ কিছু বছর যাবৎ বাঙালী মেয়েরা বোরখা হিজাব ইত্যাদি বেশি পড়ছে। কেউ জোর করে চাপিয়ে না দিলে অর্থাৎ মেয়েরা যদি নিজ নিজ ইচ্ছায় বোরখা পড়ে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×