somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুর সিদ্ধান্ত কে নেবে- এ নিয়ে কানাডায় আইনি লড়াই

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ ভোর ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৃত্যুর সিদ্ধান্ত কে নেবে- এ নিয়ে কানাডায় আইনি লড়াই
নতুনদেশ ডটকম

একজন মূমুর্ষরোগীর বেঁচে থাকা না থাকা কার ইচ্ছের উপর নির্ভরশীল ? রোগীর আকাংখা,স্বজনদের ইচ্ছা না কী চিকিৎসকদের একক সিদ্ধান্ত? এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর ইস্যূ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে কানাডার চিকিৎসা জগতে।বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। চিকিৎসক, নীতিবিজ্ঞানীসহ সংশ্লিষ্ট বিষেষজ্ঞরাও এ ব্যাপারে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী কানাডীয়ান নাগরিক ডগলাস ডিগুয়েরে মুমূর্ষ অবস্থায় ভর্তি হন টরন্টোর সানিব্রুক হেলথ এণ্ড সায়েন্স সেন্টারে। সেখানে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা হয় লাইফ সাপোর্ট দিয়ে। কিন্তু চিকিৎসার এক পর্যায়ে তাঁর লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নিয়ে তাঁকে মরে যেতে দেওয়া হয়। ডগলাসের কন্যা জয় ওয়ারজিনিয়াক এতে ক্ষুব্দ হন। তিনি হাসপাতাল এবং কর্তব্যরত দুইজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতে ১ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা ঠুকে দেন। জয়ের ভাষ্য, তাঁর এবং তাঁর বাবার উপুর্যুপুরি অনুরোধ সত্ত্বেও কর্তব্য চিকিৎসক ডগলাসের লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নিয়েছেন। মামলার আর্জিতে দাবি করা হয়, লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়ার আগে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগী বা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে সম্মতি নেননি, কোনো ধরনের আলোচনাও করেন নি।

জয় ওয়ারজিনিয়াকের এই মামলাটি কানাডার ‘এণ্ড অব লাইফ প্রোটোকল’ প্রশ্নে দীর্ঘ অমিমাংসিত আইনি ও নৈতিক বিতর্কটি নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠলো বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। জয়ের অভিযোগটি অবশ্য এখনো আদালতে প্রমানিত হয়নি ।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এণ্ড অব লাইফ’ ইস্যূ নিয়ে পড়ান জীব নীতিবিজ্ঞানী ড, কেরি বাউম্যান। তিনি টরন্টো স্টারকে বলেছেন, জয়ের অভিযোগ এবং মামলাটির কেন্দ্রজুড়ে রয়েছে মিলিয়ন ডলারের একটি প্রশ্ন, সেটি হচ্ছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানী তথা কর্তব্যরত চিকিৎসক আর পরিবার বা রোগী – কার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত । কানাডায় আইনি বা নৈতিকতার বিচারে এই প্রশ্নটি এখনো অমিমাংসিত ইস্যূ। তবে একটি ঐকমত্য গড়ে উঠেছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি পরিবার স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই নিতে হবে।তিনি বলেন,পরিবারের সদস্যদের অজ্ঞাতে এককভাবে এই ধরনের স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেটি হবে বিপদজনক।
কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. মাইকেল গরডন বলছেন, পরিবারের সদস্যদের সম্মত করা না গেলেও একজন চিকিৎসককে দায়িত্বশীল পেশাদার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেটি না নিলে পেশার প্রতি অবিচার করা হবে। তিনি বলেন, চিকিৎসক যদি নিশ্চিতই হন, রোগীকে আর বাঁচিয়ে রাখার কোনো উপায় নেই তাহলে সাময়িক ওষুধ বা লাইফ সাপোর্ট দিয়ে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করাটা অমানবিক। এটি এক ধরনের লাঞ্ছনাও বটে।
সানিব্রুক হাসপাতালের এথিকস বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. ফিলিপ হেবার্ট সুনির্দিষ্টভাবে এই ইস্যূতে কোনো মন্তব্য করতে সম্মত হননি। তবে কখন রোগীর লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া সমীচীন - সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্তব্য করেন, রোগীর স্বজনদের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছা না গেলে চিকিৎসককে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিয়েই রেখেছেন। তবে সেই সিদ্ধান্তটি অবশ্যই যথাযথভাবে রোগী বা তাঁর স্বজনদের অবহিত করতে হবে।
তিনি বলেন, সানিব্রুক হাসপাতালের নিয়ম হচ্ছে, কর্তব্যরত চিকিৎসক একতরফাভাবে কোনো রোগীর লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও রোগী বা তার স্বজনদের অবহিত না করে সেটি কার্যকর করা হয় না। অবশ্য কেউ যদি মধ্যরাতে আর কারো সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ আলোচনা বা পরামর্শ ছাড়া এককভাবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে সেটি আমাকে উদ্বিগ্ন করবে।

জয় বলছেন, চোখের সামনে কর্তব্যরত চিকিৎসক যখন তার বাবার লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেয়, তার বাবা যখন ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি একহাতে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার ব্যাগটি বাবার নাকের কাছে ঠেসে ধরে চেপে চেপে শ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন,অন্য হাতে জরুরী সহায়তা চেয়ে হাসপাতালের অপারেটরের কাছে বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করছিলেন। জয় অভিযোগ করেছেন, কর্তব্যরত দুইজন চিকিৎসকের একজন তখন কেবিনের দরোজায় দাড়িয়ে ছিলেন এবং নিস্পৃহ কণ্ঠে বলেছেন, কেউই আসবে না। আসলেই কেউই তাকে সহায়তা করতে আসে নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর ৮৮ বছরের বাবা দুটো পা খানিকটা নড়িয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। জয় বলেন, তার বাবা বাঁচতে চেয়েছিলেন।
জয়ের আইনজীবী বেরি সোয়াডরন বলেছেন, এই মামলাটি কানাডায় একটি নজির স্থাপন করবে। ‘কে বেঁচে থাকবে আর কে মরে যাবে’ এমন একটি সিদ্ধান্ত এককভাবে চিকিৎসককেই দেওয়া হবে কী না- এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মীমাংসা হবে এই মামলায়।

তবে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ ল এর প্রফেসর এমিরেটাস বারনার্ড ডিকেন্স বলেছেন, রোগীকে যদি অর্থবহভাবে বাঁচিয়ে রাখা না যায়, এবং চিকিৎসকের হস্তক্ষেপের ফলে অন্যরোগীদের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে একজন চিকিৎসক ক্রিনিক্যাল জাজমেন্টের ভিত্তিতে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে পারেন। ক্লিনিক্যাল জাজমেন্ট রোগী বা স্বজনদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে হয় না।
কিন্তু জয় বলছেন, তিনি বুঝেন তার বাবার বয়েস হয়ে গিয়েছিলো, তিনিও চিরদিন বেঁচে থাকতেন না। যুক্তিসঙ্গ পদক্ষেপ নেওয়া হলে তিনি তার প্রতিবাদ করতেন না। কিন্তু আমার বাবা দূর্বল হয়ে পড়েছিলেন এবং শ্বাস প্রশ্বাসে তার সাহায্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো কেবল এই কারনে তার লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হলো। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমার চোখের সামনে বাবা মরে যাচ্ছেন আর ডাক্তার নিষ্ক্রিয়ভাবে সেখানে দাড়িয়ে আছে।
http://www.notundesh.com/shirshokhobor.html
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×