somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতিসংঘে আহমেদিনিযাদের বক্তব্য ও আমাদের কথা!

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সম্প্রতি জাতি সংঘের সাধারণ সভায় ইরানের রাষ্ট্রপতি আহমেদিনিযাদের বক্তব্যটি বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আমেরিকাকে ৯/১১এর জন্য দায়ী বলে ইঙ্গিত করে তাঁর বক্তব্যের অংশটি অনেকে লুফে নিয়েছে এবং তা নিয়ে উচ্ছাস সমালোচনা অব্যহত।


মজার ব্যাপার হলো, আহমেদিনিযাদের প্রায় ৩৩ মিনিটের বক্তব্যের মাঝে মাত্র তিন চার মিনিট মতো সময় ছিলো এই বিষয়টি.. বাকি ৩০ মিনিট তিনি যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেন আমাদের উল্লাস ধ্বনির মাঝে তা চাপা পড়ে যায়।

তাঁর বক্তব্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশটি ছিলো জাতিসংঘের রিফরমেশন সম্পর্কিত প্রাস্তাবনা। বিশেষ কয়েকটি দেশের ভেটো দেবার অধিকার রোধ করার দাবী জানিয়ে তিনি বলেন বিশ্বের সকল দেশের অধিকার হবে সমান। সাধারণ সভা হবে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহনের স্থান এবং মহাসচিব হবেন একক ক্ষমতার অধিকারী। কোন শক্তি এমনকি যে দেশে তাঁদের সদর দপ্তর, সেসব দেশের দ্বারা কোন ভাবে যেন তিনি প্রভাবান্বিত না হন।

আহমেদিনিযাদের বক্তব্যের বড় একটি অংশ জুড়ে ছিলো সৃষ্টি কর্তার একাত্ববাদের বন্দনা, ইসলাম এবং ধমর্মত নির্বিশেষে সকলের প্রতি শান্তির আহ্বান।

তিনি ইরাক এবং আফগানিস্থানের যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ও লক্ষাধিক মানুষের আহত হবার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ফিলিস্তিন দখল করে তাঁদেরকেই সন্ত্রাসী নামে অভিহিত করার প্রতিবাদ। হতভাগ্য ফিলিস্তিনীদের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে তাঁদের মাটিতে ফিরিয়ে দেবার দাবী জানান।

আহমেদিনিযাদ পুঁজিবাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আজকের বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা তা পুঁজিবাদের কুফল এবং এক ভয়ংকর পরাজয়। এক সময় বিশ্ব জুড়ে ভীষণ প্রতাপশালী কলোনিয়ালিজমেরপতন ঘটেছে, সাম্রাজ্যবাদ আর পুঁজিবাদের পতন ঘটবে অচিরেই।

যে অংশটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে তা হলো আনবিক শক্তি ও পারমানবকি অস্ত্র সম্পর্কিত দাবী। তিনি বলেন আনবিক শক্তি বিশ্বের জন্য আশির্বাদ স্বরূপ আর পারমানবিক অস্ত্র ভয়ংকর অভিশাপ। তিনি পারমানবিক চুক্তির(নন প্রলিফারেশন ট্রিটির) কঠোর সমালোচনা করে বলেন, পৃথিবীর নির্দিষ্ট কিছু দেশ তাদের ইচ্ছে মতো যখন খুশি, যতো খুশী এই ভয়ংকর মরণাস্ত্র উৎপাদনের অধিকার কুক্ষিগত করে রাখে, যা সমগ্র বিশ্বের জন্য হুমকী স্বরূপ! বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর অব্যহত ভাবে পারমানবিক অস্ত্রের পরিমান বৃদ্ধি করার ব্যাপারে আশংকা করেন। জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য যারা এসব পারমানবিক অস্ত্র এবং আনবিক শক্তি কে অভিন্ন বিবেচনা করে বিশ্বের অন্যান্য দেশে নিষেধাজ্ঞা জারীর সমালোচনা করেন। সারা বিশ্বে আনবিক শক্তির প্রসার ঘটানোর সাথে সাথে ২০১১ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে পারমানবিক অস্ত্র সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করার দাবী জানান।

সাম্রাজ্যবাদ এবং আগ্রাসনবাদ তীব্র সমালোচনা করে এর অবসানের দাবী জানান।

জাতি সংঘে ৯/১১ সংক্রান্ত তাঁর বক্তব্য.. যে বল্তব্য শুনে আমাদের মাঝে অনেকেই বাহাবা দিয়ে উচ্ছসিত হয়ে বলেছেন; “বাঘের বাচ্চা। আমেরিকার মাটিতে বসে তাদের মুখের উপর এমন কথা বলে এসেছে”। এর শিহরন আর উচ্ছাস নিয়ে এখন আর্শিতে নিজেদের দেখে নেই একবার... ভীনদেশে গিয়ে নয় নিজ দেশের মাটিতে বসে আমরা কি আমাদের বাকস্বাধীনতা পেয়েছি? আমাদের দেশে সংসদে বিরোধী দল কিছু বললে মাইক বন্ধ করে দেয়া হয়! শুধু তাই নয়, এই কিছুকাল পূর্বেও বিরোধী এক সাংসদের বক্তব্য শুনে মারমুখী হয়ে ছুটে এসেছিলো সরকার দলীয় সাংসদরা। মজার কথা হলো, তিনি কোন কন্সপিরসেসী থিওরী বা অনুমান নির্ভর বক্তব্য প্রদান করে আক্রমণের মুখে পড়েননি, বরং ইতিহাস থেকে ছোট্ট একটি উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন মাত্র.. আমাদের গণধন্ত্রের ধারক বাহক তাঁর সেই অধিকার রোধ করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ঝান্ডাধারীরা একজন সাংসগের বাক স্বাধীনতা হরণ করে অত্যন্ত নির্লজ্জ ও ন্যাক্কারজনক ভাবে। গণমাধ্যমে বিরুদ্ধমত প্রকাশিত হলে, নিজেদের কুকর্মের সমালোচনা হলে আমাদের সরকার নিমেষেই বন্ধ করে দেয় সেসব টিভি চ্যানেল বা সংবাদ পত্র, শুধু তাই নয় অন্যায় ভাবে গ্রেফ্তার ও নির্যাতন করা হয় সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের।
অথচ, এই বাঘের বাচ্চার বক্তৃতার সময় ক্ষমতাধর অভিযুক্ত রাষ্ট্রটি তাঁর মাইক বন্ধ করে দেয়নি, মারমুখী হয় আক্রমণদ্যত হয়নি। তারা শান্তপিূর্ণ ভাবে ওয়াক আউট করে নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়েছে।

আমাদের প্রতিনিধি শতশত অকাল কুষ্মান্ডের বহর নিয়ে তা অবলোকন করেছে, শিক্ষা গ্রহন করেনি কিছুই এটা হলফ করেই বলা যায়। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে আত্মীয় বন্ধু পরিজনদের প্রমোদ ভ্রমনে লজ্জা বা আত্মগ্লানি নেই আমাদের রাষ্ট্রপ্রধানদের, নিজের দেশের মানুষকে বন্চিত করে তাদেরই অর্থে অন্যায় বিনোদন যেন এসব স্বৈরাচারদের নিয়মিত ব্যাপার।
এদেরকে আমরা গণতান্ত্রিক সরকার বলার মূর্খতা করি। আমরা এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জানিনা, নিজের ক্ষমতা আর আয়ত্বে থাকা সত্ত্বেও এদের সংশোধনের দাবীতে এগিয়ে যাইনা.....

একজন আহমেদিনজিাদের পরাশক্তির বিরুদ্ধে সাহসী বক্তব্যে আমরা আমোদিত হতে পারি তবে নিজের ঘরের বিভীষণের বিরুদ্ধে আমরা নিরব, ক্ষেত্র বিশেষে তাদের নির্লজ্জ তোষামোদীতে আমরা মেতে উঠি।

বাঘের বাচ্চা আমাদের দেশে আমাদের মাঝেও আছেন। আমরা তাঁদের খাঁচা বন্দী করে নখ, দাঁত ভেঙ্গে দেই। তাঁদের হাত পা বেঁধে রাখি।

পরিশেষে আহমেদিযাদের ভাষাতেই বলতে হয়, “ সত্যকে ধ্বংস করা যায়না। সৃষ্টি কর্তা এবং সত্য অবিনশ্বর”।।


৪৩টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×