somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্যঃ কাব্যচর্চা, কাঁঠাল এবং ঈশ্বরের কাতুকুতু

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
যদি বলি পৃথিবীর যেকোন বিষয় নিয়েই কবিতা লেখা যায়, আশ্চর্য হবার কিছু নেই।


আমাদের ভার্সিটির চেহারা বড়ই মনোরম। আদর করে এরে আমরা "Red Hell" বা লাল দোযখ কয়ে ডাকি। কারণ রাস্তাঘাট, বিল্ডিং সবই লাল ইঁটের তৈরী। মেক্যানিকাল ডিপার্টমেন্টের ল্যাবগুলো ক্যাম্পাসের এককোণে। দু-সারি একতলা বিল্ডিং, ভেতরে কলকব্জা বোঝাই...

ইম্পরট্যান্ট ব্যাপার হল যে, দুপাশে বেশ কিছু কাঁঠাল গাছ আছে। স্বভাবতই সঠিক সিজনে ষ্টুডেন্টরা গভীর রাইতে খিদা নিবারণ করতে কাঁঠাল হান্টিং এ বাইর হয়। আমাদের ব্যাচের পোলাপাইনও ব্যাতক্রম ছিল না। সেবার বাইর হলাম রাত চারটায়, ভার্সিটির হিসাবে তখন বিকেলবেলা বলতে পারেন।

সকালে দেখে যাওয়া হয়েছিল কোন গাছে পুষ্ট কাঁঠাল আছে; সেইটাতেই আমাদের সবচায়ে হালকা পাতলা দোস্ত আসিফরে উঠানো হল(অবশ্যই ছদ্মনাম) । সে গাছে উঠে অন্ধকারের আড়ালে হারায়ে যাবার পরপরই চেঁচায়ে উঠল,
"আরে! আমার কাঁঠাল কই গ্যালো?"
"কই গ্যালো মানে...?!"
"মানে বড় কাঁঠালটা গায়েব।"

অতঃপর আমাদের গ্রুপে এক বুদ্ধিমান কইল,
"How thw jackfruit went missing- ব্যাপক থ্রিলার দোস্ত!"
"ঠিকই বলেছেন স্পিলবার্গ।"
"ওই খাড়া, মনে হয় সেকেণ্ড ইয়ারের মেকানিক্যালের পোলাপাইন পাইড়া নিয়া গ্যাসে।"
"ঠিকমত rag যদি দেয়া হইত ফার্ষ্ট ইয়ারে তাইলে এইটা আর ঘটতো না।"
"কত্তবড় সাহস, সিনিয়র গো কাঁঠাল খায়! "


একটু পরেই গছে অনেক পাতা ডালের খসখসানি আর তারপরেই আসিফের উল্লাস,
"পাইছি! পাইছি!"
তারপরই,
"উফ! ধুরু হালা..."
তারপরই আমার পাশে ধুপ করে ছ'কেজি একটা কাঁঠাল সশব্দে ভূপাতিত হল। আমি দাঁতমুখ খোঁচায়ে চিল্লায়ে উঠলাম,
"আবে ওই সুমুন্দির পুত, শালার @ঁ৳@*%(@৳)........X((.@ঁ৳@......_X((@&_(সেন্সরড) "

উপর থেকে কাতর গলায় আওয়াজ,
"কি করুম, পিপড়ায় কামড় দিছে!"
"এট্টুক পিপড়ার কামড় খায়া তুমি কাইত!?" :-*
"আরে, জায়গামতো কামড় দিছে...!" :D


মিনিট পনেরো পরে আমরা সবাই সন্তুষ্টচিত্তে ঘাড়ে বেশ কিছু কাঁঠাল নিয়া হলে ফিরতেছি। আসিফ খুব পিকিউলিয়ার ষ্টাইলে পা ফেলে ফেলে হাঁটতেছে, আমরা দেখে হাসতেও পারতেছিনা। ওইসময় একজন কইল...
"ওই রিজ, একটা কবিতা লিখে ফ্যাল।"
"হুঁ!?"
"নাম দে 'ভূপাতিত কাঁঠাল এবং নিহত @@'"
"তাই বইলা @@ নিয়া কবিতা লিখুম!"
"শোকার্ত @@- ক্যামন শোনায় দোস্ত!?" , আরেকজন নিরীহমুখে জিজ্ঞেস করল।
"কিংবা ব্যথিত @@"- ব্যাপক ইনপিরেশন!

আসিফ হঠাৎ দাঁড়ায়ে পড়ল। গম্ভীরমুখে কয়,
"নাম দে,
ভূপাতিত কাঁঠাল ও নিহত @@"





-----------------------------------------------------------------------
-----------------------------------------------------------------------

এবার একটু পেছনে ফেরা যাক। তখন কলেজে পড়ি, ওইসময় পোলাপাইনের কবিতা লেখার বয়স। যারা একটু আবাল গোছের তারা "প্রিয়ার চুল" বা "আহা মরি মরি" জাতীয় বিষয় নিয়া কবিতা ল্যাখে। দেশপ্রেমিকেরা তাদের অধিকাংশ কবিতাই শুরু করে "তোমাকে দেখে আফসোস হয় হে মাতৃভূমি" বা "হায়েনার নখর..." এইসব দিয়া। আমি আবার শুরু করেছিলাম পিওর গদ্যকবিতা দিয়া, অল্পবয়সেই শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী ইনাদের কবিতা পড়ার কুফল আমার বয়ঃসন্ধিকালের প্রথম কাব্যেই ছাপ রাখে...

"ওটা ছিল ভয়ানক গরমের রাত;
অনবরত লোডশেডিং আগুনের হলকা থামাতে ব্যর্থ হল যখন;
আমি বেরিয়ে পড়লাম শীতল বাতাসে অন্বেষণে..."

এইটুকুই মনে আছে। আর মনে আছে যখন কলেজ ম্যাগাজিনের জন্য সাবমিট করেছিলাম, এক স্যার ম্যানুস্ক্রিপ্টে সিলেক্টেড লেখার মধ্যে দেখে বলেছিলেন,
"ইটা ক্যাম্নে কবিতা হয়, ছন্দ কই!?"

আফসোস!

তবে যারা বিশুদ্ধ কবি ছিল তাদের উচ্চমার্গের চতুর্মাত্রিক কবিতা আমাদের কিশোর মস্তকের খালি উপর দিয়াই যাইতো না, গিট্টু লাগাইয়া পঞ্চ ইন্দ্রিয় ছেড়াভেড়া কইরা দিতো। ওইসব পইড়া আমরা গালে হাত দিয়া একরামুল হক স্যারের অমোঘ বাণী নিয়ত উপলব্ধি করতাম,
"আধুনিক কবিতা! সেটা লেখা ত বেশ সহজ। প্রথমে এক পৃষ্ঠা 'গরু' রচনা লিখবি। এরপর দুপাশ থেকে দেড় ইঞ্চি কাগজ কেটে ফ্যাল। উত্তরাধুনিক লেখা বের হয়ে আসবে..."

আবারও আফসোস! রচনা লেখায় আমি বরাবরই ভীষণ দুব্বল!

তবে একবার আমাদের এক প্রতিষ্ঠিত কবি একটা ব্লান্ডার ঘটায়ে ফেললো। ঈশ্বরবিষয়ক একটা উচ্চমার্গের কাব্য লিখে সেটা ক্লাসের সবচায়ে ফাজিল পোলাটারে পড়তে দিল। ফাজিল পুরাটা পড়া শ্যাষ করলে কবির প্রশ্ন,
"ভালো হয়েছে তো? আমি আবার কবিতাটার নাম খুঁজে পাইতেছি না! কি দেয়া যায় বল তো?"
ফাজিল গম্ভীর মুখে সবাইরে শোনায়ে কইলো,
"ঈশ্বরের কাতুকুতু!"

ঈশ্বর আছেন নাকি জানিনা, থাকলেও উনার কাতুকুতু ক্যাম্নে থাকবে সেটাও জানি না। তবে কবির এই কাতুকুতুমার্কা ঐতিহাসিক প্রচেষ্টায় আমরা ব্যাপক সুড়সুড়ি টের পাইছিলাম এবং প্যাট ফাটায়ে হাসছিলাম।

আফসোস আর আফসোস! কবি রাগে দুঃখে নাকি কয়মাস কাব্যচর্চা বন্ধ রাখছিলেন শোনা যায়।



(শেষ)
লেখকের কথাঃ ১ম অংশটা কারো কাছে বেশি স্থূল হিউমার মনে হলে আমি দুঃখিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:০৬
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×