somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলবায়ু পরিবর্তন হয়নি, পরিবর্তন করেছি

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জলবায়ু নিয়ে আলোচনার আগে জলবায়ু বিষয়টি কি তা ভেবে দেখা উচিত। আবহাওয়ার বয়স বেড়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের শিক্ষা দীক্ষা নিতান্ত কম ছিল বলে আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে এদেশে জনগণের জ্ঞান খুবই কম। যারা শিক্ষিত তারা বড়জোর এমন জানে কোন এলাকার ৩০/৩৫ বছরের গড় আবহাওয়াকে জলবায়ু বলে, আর কোন এলাকার দৈনন্দিন প্রকৃতি পরিবেশ হচ্ছে আবহাওয়া। ব্যাস এটুকুই যথেষ্ট।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় যে গন্ডীই আমরা পার হইনা কেন বিশেষ বিষয়ে বিশেষ ব্যক্তি ছাড়া এইসব বিষয় কেবলই নিরস অধ্যায়। তাই আমাদের এরচেয়ে বেশি আর দরকার নাই অন্তত আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে। সচেতন জনগণ যারা মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেকে নবায়ন করে প্রতিনিয়ত তারা এবং সাধারণ জনগণ খুব কম লোক আবহাওয়ার সংবাদের খোঁজ নেয়। এমনকি রেডিও টেলিভিশনে যারা খবর দেখে ও শুনে তারা অনেকেই আবহাওয়ার খবরের সময় রেডিও টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়। তবে আমাদের দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে অবস্থান করায় কখনো কখনো আবহাওয়ার খবর প্রধান খবরে পরিণত হয়। এবং বাধ্য হয়ে জনগণ সেই খবর রাখতে চেষ্টা করে। বিশেষ বিশেষ সময়েও আবহাওয়ার খবর রাখতে হয়। যেমনটি আমাদের দেশের কৃষক চৈত্র মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানার চেষ্টা করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা তাও জানতে হয়। আবহাওয়া কিংবা জলবায়ু নয় এখনো এদেশে এমন অনেক জনগণ আছে যারা আজকে কত তারিখ এমনকি এখন কোন মাস চলছে তাও জানেনা। গ্রামে আবার কিছু বুদ্ধিমান লোক মাস দিন তারিখের হিসাব রাখে, তাদের কাছে ওইটুকুই জলবায়ু। প্রশ্ন উঠতে পারে, জলবায়ুর সাথে ক্যালেন্ডারের সম্পর্ক কি? এখানেই সমস্যার সমাধান। আবহাওয়া দেখে যদি কেউ পরিবেশ আন্দাজ করতে না পারে তাহলে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের অবস্থা নিতান্ত অসহায় বৈকি। একটি ছোট গপ্পো দিয়ে আবহাওয়ার বিষয়টি বুঝাতে চেষ্টা করছি। গ্রামের এক প্রবীণ কৃষক মোটামুটি চালাক হিসাব কিতাব রাখে তার কাছেই গ্রামের অন্য কৃষকেরা নানান কিছু জেনে নেয়। বিশেষ করে মাস দিন তারিখ ইত্যাদি। বেচারা মাসের হিসাব রাখে মাঠির কলসিতে ভাংগা কলসির টুকরা দৈনিক জমিয়ে রেখে। কেউ জিজ্ঞাসা করলে টুকরা গুনে বলে দেয় মাসের আজ কত তারিখ। এভাবে ভালই চলছিল হিসাব কিতাব কিন্তু বাগড়া বাধিঁয়ে দেয় বেচারার নাতি। দাদার মতো নাতিও ওই কলসিতে দৈনিক একটা করে ভাংগা টুকরা জমাতে থাকে। একদিন এক কৃষক জানতে চাইল মাসের আজ কত তারিখ? বেচারা যথারীতি কলসি ঢেলে গুনতে গিয়ে দেখে যে পরিমান টুকরা তাতে হিসাব কিতাব মোটেও ঠিক নাই। তাই ২/৩ মুঠি আন্দাজ করে ফেলে দিয়ে বাকিগুলি গুনে দেখল তাতেও টুকরার পরিমাণ ৪২টি। কৃষককে বলল এই মাসে তো তারিখ অনেক বেড়ে গেছে আজ ৪২ তারিখ। কৃষক বলে বসল কি বলেন হিসাব কিতাব রাখি না তাই বলে কি মাসে ৪২ তারিখও হয়? বেচারা তখন সোজাসুজি বলল যেখানে হিসাব রাখি সেখান থেকে ২/৩ মুঠি ফেলে দিয়েছি তারপরও ৪২ সব রাখলে কি হতো? পাঠক মাত্র ইশারায় বুঝবেন বলে আশা রাখি। আমাদের আবহাওয়া ও জলবায়ুর জ্ঞান ৪২ তারিখের মতো।
সম্প্রতি গ্রামের মানুষ থেকে জাতিসংঘ পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর কথা হচ্ছে, কারণ যেটুকু তা কেবল মিডিয়ার মাধ্যমে জেনে শুনে সম্ভাব্য বিপদের নমুনা থেকে। আমাদের নেতা নেত্রীরাও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন দেশ বিদেশের বিভিন্ন সভা সেমিনারে আবেগঘন বক্তব্য প্রদানের মধ্য দিয়ে। জলবায়ুর সংজ্ঞা থেকেই আন্দাজ করা সম্ভব ৩০/৩৫ বছরে জলবায়ু পরিবর্তন হওয়ার কথা, হয়েছেও তাই, তবে তা কেবলই বিপরীত। জলবায়ু , পরিবেশ নিয়ে নিশ্চয়ই অনেক বিষয় সংবাদ মাধ্যমে পাঠকরা জেনে থাকবে তাই আমি অন্তত তাত্ত্বিক আলোচনা না করে সাধারণ আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যে হৈ চৈ পৃথিবীতে পড়েছে তা কি প্রকৃতগত না মনুষ্যসৃষ্ট?
খুব সোজা উত্তর মানুষ নিজেই তাদের বসুধা বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। জলবায়ু আপনি পরিবর্তন হয়নি, জলবায়ু পরিবর্তন করেছি। গ্রামের মানুষ থেকে শহুরে আধুনিক সভ্যতার মানুষ সকলেই প্রকৃতি, পরিবেশ ধবংস করে বুঝে অথবা না বুঝে। গ্রামে, শহুরে বস্তিতে নদী, খাল, বিল, পুকুরে ঝুলন্ত কাঁচা পায়খানা। আবার শিল্প কারখানায় বর্জ নির্গমন, যানবাহনে কালো ধুয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ন, সমুদ্রে পারমানবিক পরীক্ষা, আকাশে ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষাসহ এমন কোন জায়গা নাই যেখানে মানুষ মানুষের ক্ষতি করে না। যা শেষতক পরিবেশের ওপর বর্তায়, আর তারই পরিণাম জলবায়ু পরিবর্তন।
অনকে ক্ষতি হবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমন অনেক আশংকা করা হচ্ছে সেই আশংকা আবার কতটুকু সঠিক বুঝা মস্কিল হচ্ছে এই ভেবে বুদ্ধি বিক্রি করে জীবিকা অর্জনকারি বুদ্ধিজীবিরা আসলে এই মওকা তুলে আবার না কোন বাণিজ্য লুটিয়ে নেয়। তবে এ কথা সত্য পৃথিবীতে নতুন এক শ্রেণীর আবির্ভাব হবে পানীয় উদ্বাস্তু (ওয়াটার রিফিউজি) নামে। তাদের নিয়ে শুরু হবে আরও অনেক নাটকীয় কায়দা কানুন যাতে হয়তো আরও জলবায়ু দূষণ জনিত কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হবে কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা উপকৃত হতে পারবে না। জাতিসংঘ (রাষ্ট্রসংঘ) যে প্রতিষ্ঠান মানুষের কল্যাণে আজও কিছু করতে পারেনি ক্ষমতাধরদের স্বার্থসিদ্ধি ছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্য যারাই যত জোরে বাকবাকুম পারছে সবাই নিধিরাম সর্দার তাতে কো সন্দেহ নাই। তাহলে কি করতে হবে? নিজের জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিজেকে সংগ্রাম করতে হবে সচেতনভাবে যেন আর পরিবেশ দূষণ না হয় কোন মানুষ দ্বারা অন্ত প্রাণীকূলের অন্য কেউ পরিবেশ দূষণ করবে না, জলবায়ু পরিবর্তনের এজেন্ডা নিয়ে। কারণ, প্রাণীকূলে শ্রেণীভিত্তিক প্রাণীদের সমাজ আছে তবে কোন ইউনিয়ন নাই এবং তারা বেঁচে থাকে তাদের ওপর নির্ভর করে।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:১৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×