somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নক্ষত্রের গোধূলি-২০

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মনিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তুমি চিনলে কি ভাবে?
তুমি তো হারিয়ে যাবার ভয়ে আমার সাথে আসতেই চাইছিলে না। এখন বল তোমাকে অযথা হাটিয়েছি?
না।
তাহলে আসতে চাওনি কেন?মনে নেই সেবার কলকাতায় কি করেছিলে?কি ওই দোকান থেকে ভিড়ের জন্য বাইরে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম আর তুমি আমাকে দোকানের ভিতর না দেখে কাঁদতে কাঁদতে বাইরে চলে এসেছিলে।
সেই কথা বলছ?ইস সেদিন যে আমি কি ভয় পেয়েছিলাম!

তুমি ভাবলে কি করে তোমাকে ফেলে আমি চলে যাব?তুমি আমার কি জান না?তাহলে এত ভয় কিসের?
পথে যে স্টেশনেই থেমেছে বিভিন্ন বর্ণের, বিভিন্ন গড়নের, বিভিন্ন ভাষার মানুষ শুধু দৌড়াচ্ছে। কারো এক মুহুর্ত সময় নেই। এই বুঝি কি যেন চলে গেল এমন ভাব। ট্রেনে উঠে সবাই যার যার মত হাতের ব্যাগ থেকে বের করে বই বা পত্রিকা পড়ছে। কারো অন্য দিকে তাকাবার মত সময় বা ইচ্ছা কোনটাই নেই প্রয়োজনও নেই অবাঞ্ছিত কৌতূহলও নেই।

মনিরা জিজ্ঞেস করল ওরা দৌড়াচ্ছে কেন?
ওদের কাজ আর কাজ, একটা মুহুর্ত নষ্ট করার মত এতো সময় ওদের নেই তাই এমন করে দ্রুত হাঁটছে দৌড়াচ্ছে না। আশে পাশে কে কি করছে তা দেখার মত সময় বা ইচ্ছা কোনটাই ওদের নেই সবাই নিজের মাথা ব্যাথা নিয়েই ব্যস্ত। দেখেছ, পুরুষ মহিলার মধ্যে কোন তফাত আছে?সবাই সমান তালে হাঁটছে। বাড়ি থেকে নাশতা করার সুযোগ বা সময় পায়নি তো কি হয়েছে, স্টেশনের দোকান থেকে স্যান্ডুইচ বা অন্য কিছুর সাথে একটা পানীয় কিনে খেতে খেতে হাঁটছে, কোথাও বসে খেতে গেলে সময়ে কুলাবে না। এটাতো আর আমাদের ঢাকা শহর নয়, এটা হচ্ছে লন্ডন মহা নগরী।

বাসার সামনে এসে কলিং বেল বাজাতেই যে মহিলা দরজা খুলে দিলেন সে ওদের দেখেই বলল
ও! আপনারা এসেছেন, আসুন ভিতরে আসুন
বলেই মনিরার দিকে তাকিয়ে যেন চমকে গেল এমন একটা ভাব মনে হলো রাশেদ সাহেবের কাছে। বসার ঘরে নিয়ে বসতে বলেই মনিরার দিকে আবার সেই কেমন একটা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অনেক ক্ষন।
আচ্ছা আপনি কি মনিরা আপা?

হ্যা, আমার নাম মনিরা কিন্তু আপনি আমাকে চিনলেন কি ভাবে?
চিনবো না কেন, আপনারা যেবার স্কুল থেকে বিদায় নিলেন আমি তখন ভর্তি হলাম। যদি না জানতাম যে ভাই মানিকগঞ্জের তাহলে হয়তো একটু সময় লাগতো। কত দিন, মনে হয় পচিশ বৎসর তাই না আপা?
হ্যা তা হবে কিন্তু আপনার নামটা আমার মনে পরছে না।
আমাকে আপনি করে বলছেন কেন, আমার নাম রুবি।
ও হ্যা হ্যা মনে পরেছে।

আপনাদের ফেয়ার ওয়েলের দিন আপনি যে গান গাইলেন সেই সুর এখনো আমার স্পস্ট মনে আছে। কত খুঁজেছি সেই গান কোথাও পাইনি।
মনি এবার একটু হেসে বলল পাবে কি করে সে গানের কি রেকর্ড আছে যে তুমি পাবে।
এবার রাশেদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল কই ভাই আপনি তো আপার কথা কিছু বলেননি। কি করে বলি, আমি কি জানি যে ভাবী এখন আপা হয়ে যাবে?

কথার ফাকে কখন কায়সার বেয়াই পিছনে এসে দাড়িয়েছে কেউ লক্ষ করেনি।
আলাপের ধরন দেখে মনে হচ্ছে ভাবী এখন তার আপাকে পেয়ে আমাদের ভুলে গেছেন।

সে কি ভাই, তাই কি হয়?আসলে আপা স্কুল ছেড়ে যাবার পর আর দেখিনি। শুনেছি কে যেন ছোঁ দিয়ে নিয়ে গেছে। আজ দেখলাম কে নিয়েছে। আজ আপনাকে দেখার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ভাবতে পারিনি যে আবার দেখা হবে।

মনিরা বলল হ্যা মেয়েদের জীবন এমনই। আপার ছেলে মেয়ে?আমার তিন মেয়ে, বড়টা এমকম ফাইনাল দিবে আর ছোটটা স্কুল ফাইনাল দিবে।
ওদের কেউ আসেনি?
না রুবি, আসলে আমরা বেড়াতেও আসিনি আর তোমার দুলাভাই এই বুড়ো বয়সে হানিমুন করার জন্যেও আনেনি। আমরা এসেছি একটা প্রয়োজনে।

এ পর্যন্ত বলে মনিরা আসল কথাটা এড়িয়ে থেমে গেল। রুবির স্বামী বাচ্চাদের আনতে স্কুলে গিয়েছিল, ওরা এলে রুবি একটু উত্তেজিত হয়েই বলল দেখ কে এসেছে!মনিরা আপা। বলে পরিচয় দিয়ে দিল।
আপা কি এখনো গান করেন?একটু করতে হয়, চোখ দিয়ে রাশেদকে দেখিয়ে বলল ওর এই একটা নেশা তাই এখনো ছাড়তে পারেনি।
মেয়েরা কেউ শিখেছে?
হ্যা বড়টা ছায়ানট থেকে পাশ করেছে। মেঝ টা শুরু করেছিল, মাঝে মাঝে দুই একটা ফাংশনে যেত। তার আবার কথা হলো বাবার গান ছাড়া সে গাইবে না। গলাও ছিল বেশ কিন্তু হঠাত্ করেই গান ছেড়ে দিল। ওর মনে কি এলো কে জানে।

মানে?দুলাভাই কি লেখেন নাকি?
না, লিখি তা ঠিক বলা যায় না, তবে সময় কাটাই।
বাহ! বেস মজার তো। তা আপনি দুলা ভাইর গান গান না?
হ্যা রে ভাই ওই তো আমার সব, ওর জন্যই তো এখনো টিকিয়ে রেখেছি। নইলে সংসারের ঘানিতে কোথায় চলে যেত। ওর কথাই হলো তোমার জন্য আমি গান লিখে দিব আর তুমি তা গেয়ে আমাকে শোনাবে।

রুবির স্বামী হঠাত্ বায়না ধরলো আপা একটা গান শোনান। শুধু বায়না করেই ক্ষান্ত হলোনা ভদ্র লোক রিতি মত নাছোড় বান্দা। না আপা গাইতেই হবে, এদেশে এসে এখনো কারো সামনে বসে গান শুনতে পারিনি। মনিরার মন কি আর এখন গানের জন্য তৈরী আছে?মন বিক্ষুব্ধ, অশান্ত, শঙ্কিত। মনিরা অসহায় ভাবে রাশেদ সাহেবের দিকে তাকাল, যেন কোন অসাধ্য সাধন করার জন্য জুলুম করা হচ্ছে। রাশেদ বুঝতে পারল। সেই বা কি করে, সেও অসহায় ভাবে মনির দিকে তাকিয়েই রইলো। কাদেরের পিড়া পিরিতে শেষ পর্যন্ত একটু সাজানো হাসি ফুটিয়ে বলল আচ্ছা তাহলে শুনেন। শুরু করল:

লিখতে বলেছিলে গান
হয়নি লিখা আজো তাই, আকাশ ছেঁয়ে গেছে মেঘে,
বসন্ত আসেনি, বহেনি বাতাস
ওঠেনি চাদ এখনো বসে আছি নিশি জেগে।।

ফিরায়ে দিয়েছিলে তুমি
হয়নি দেখা সেই দিন
সেই থেকে আজো ভরে আছে মোর বীণ
হৃদয়ে আজো তুমি তো আছ জেগে।।

বাতাস ছিলো মৌসুমী
মনে পরে সেই দিন
এসেছিলে তুমি ফাগুন নিয়ে, এসেছিলে সেই দিন
স্বপনে যেন সেই ছোঁয়া আছে লেগে।।
গানের সুর শুনে রুবির ছেলে মেয়েরাও এসে মা বাবার পাশে বসে পরল।

রাশেদ সাহেব লক্ষ করলেন আজকের এই কণ্ঠ আর মনির আসল কণ্ঠের মধ্যে কত তফাত। থামার পর তিন জোড়া হাতে তালি বেজে উঠলো। বাচ্চারাও কিছু বুঝে কিছু না বুঝে বড়দের সাথে হাত তালি দিতেই থাকল।
কাদের বলেই ফেলল আপা এ গান তো আগে শুনিনি কখনো।
রুবি বললো আমি যে গানের কথা তোমাকে বলি এটা সেই গান, যে গান আপার কণ্ঠে আমি আজ থেকে পচিশ বৎসর আগে শুনেছিলাম, তাই না আপা?
আপা প্লিজ আর একটা। না ভাই আর পারবো না, সে শক্তি এখন নেই, আর বলবেন না।
এটা কি দুলা ভাইর লেখা?
হ্যা, এখন আমার এমন হয়েছে যে অন্য গান আর গাইতে পারি না। ওর এই গান গুলি গাইতে গিয়ে আমাকে অনেক সাধনা করতে হয়েছে। সুরও কি দুলাভাই করে না কি আপনি করে নেন?না ভাই আমি ও সব পারি না তবে ওর এক বন্ধু আছে সেই করে দেয়। এখন আবার বড় মেয়েটাও করে।[চলবে]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×