লাইসেন্স ছাড়া এমএলএম ব্যবসা করলে জেল জরিমানার বিধান রেখে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
Published : 19 Aug 2013, 01:41 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের জানান, আপাতত সংসদ কার্যকর না থাকায় অধ্যাদেশ আকারে আইনটি জারি করা হবে।
এ আইনের ফলে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং করতে হলে কোম্পানি গঠন করে লাইসেন্স নিতে হবে।
লাইসেন্সের মেয়াদ হবে এক বছর, যা পরে নবায়ন করা যাবে। এই লাইসেন্স কোনোভাবেই হস্তান্তর করা যাবে না।
লাইসেন্সের শর্ত বা আইন ভাঙলে লাইসেন্স স্থগিতের পাশাপাশি জেল জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে বলেও সচিব জানান।
তিনি বলেন, যারা এখন এমএলএম ব্যবসা করছে তাদের অধ্যাদেশ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স নিতে হবে।
লাইসেন্স ছাড়া এমএলএম ব্যবসা করলে সর্বনিম্ন পাঁচ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে আইনের খসড়ায়।
আর এখন যারা এমএলএম ব্যবসা করছে তারা যদি লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যায়, তাহলে ৬ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
লাইসেন্স হস্তান্তর করলে সর্বনিম্ন এক বছর এবং সর্বোচ্চ ২ বছর সাজার পাশাপাশি ৫ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।
নিম্নমানের পণ্য বিক্রির জন্য খসড়ায় ২ বছর থেকে ৫ বছর কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা রয়েছে।
জোর করে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করলে ৬ মাস থেকে এক বছর কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকার জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়।
নির্ধারিত কাযক্রমের বাইরে প্রচার চালালে তিন বছর কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। আর আইনে যেসব অপরাধের উল্লেখ নেই সেসব ক্ষেত্রে ২ বছর থেকে ৫ বছর জেল এবং ২ লাখ টাকার জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে শাস্তির মেয়াদ বেড়ে দ্বিগুণ হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।
তিনি বলেন, এ আইনে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যাবে; প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যক্তিও এর আওতায় আসবে।
“এ আইন বা অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন, কোনো কোম্পানি প্রতারণা করলে বা আইন ভাঙলে সরকার গেজেট জারি করে পরিচালনা পর্ষদ রহিত করতে পারবে এবং ওই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে সেখানে এক বা একাধিক প্রশাসক নিয়োগের এখতিয়ার রাখবে।”
কোনো কোম্পানি ব্যবসার নামে প্রতারণা চালালে, কোম্পানির গঠন বা ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টরা প্রতারণা বা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে, কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারদের পাওনা আদায়ে স্বার্থ সুরক্ষার প্রয়োজন হলে কিংবা জনস্বার্থ নিশ্চিত করার প্রয়োজনে সরকার একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিতে পারবে বলে আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
“সাম্প্রতিককালে দেশে এমএলএম ব্যবসা বাড়লেও আইনি কাঠামো নেই। এ কারণে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা থেকে রক্ষা করতেই আইন করা হচ্ছে।”
এ আইনের ফলে এমএলএম ব্যবসা এখন সরকারের নজরদারিতে থাকবে এবং কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ কমে আসবে বলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।
এমএলএম প্রতারণা নিয়ে যেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা চলছে, নতুন করে লাইসেন্স নিলে সে মামলা চলবে কিনা বা তাতে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।”