somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট থাকতে কত কাহিনী শুনছি।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার দাদী এতদিনেও পীর বা অলী টাইপ কিছু একটা হলনা কেন তা জানি না ! উনাকে দেখি সারাদিন রাত নামায পড়তে। উনার কোন অবসর নাই, কুরয়ান সামনে নিয়ে গুণগুণ করে পড়েন সারাদিন। একবার অর্থসহ আরেকবার অর্থ ছাড়া। শুধু যে বৃদ্ধ হয়েছেন বলেই এমন, ব্যাপারটা তা না। উনি অনেক আগে থেকেই এইরকম। সারারাত ঘুমান না। তাহাজ্জুদের নামায এরপরে ফযরের নামায। দুপুরে কিছুটা ঘুমান, তাও উঠেই নামাযের ফাঁকে ফাঁকে কুরয়ান পড়েন।

এরপরেও উনি এখনও পীর বা অলি টাইপ কিছু হন নাই। পীর বা অলি হইতে আর কী কী করা লাগবে তার,সে সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই নাই। উনি এখনও বাংলার পীরদের মত ভবিষ্যৎ দেখতে পারেন না, এখনও উনার কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলে না। এখনও উনি রাগ করলে বাড়ি ঘর কাঁপে না। এখনও আমার জন্য দুয়া করলেই তার জোরে আমি পরীক্ষায় পাশ করি না।
তাই উনারে নিয়া কোন কাহিনী নাই। উনি এখনও পীরের মর্যাদা পান নাই।

কিন্তু মজা হল, দাদীর আপন ছোট বোন মানে খুশি দাদী কিন্তু গ্রামে খুবই দাম পান। মানে, উনাকে নিয়ে মোটামুটি সত্য মিথ্যা অনেক অলৌকিক কাহিনী প্রচলিত। কতটুকু সত্য বা কতটুকু মিথ্যা সেই হিসেবে না যেয়ে যেসব ঘটনা মানুষ সরাসরি দেখেছে বলে জানা যায়, সেসবই আমি কিছু কিছু বলার চেষ্টা করছি।

কাহিনীর প্রধান চরিত্র যদি নারী হয়, ভূতের কাহিনীর শুরুতেই যেমনটা বলা থাকে, সে মেয়েটা ছিল একেবারে আগুনের মত সুন্দর। এখন খুশি দাদীর কাহিনীতেও একই কথা বলা যাবে কী না সন্দেহ, কারও দাদীর অনেক বয়স হওয়াতে আমি ঠিক বুঝি নি যে উনি আগে কেমন ছিলেন!

যেটাই হোক, একরাতে উনি ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ খুব শীত লাগায় উনি ঘুম থেকে উঠে পড়েন। আর উঠেই প্রচণ্ড চিৎকার। তখন রাত প্রায় ৩ টা হবে। উনার প্রচণ্ড চিৎকারে আশেপাশের মানুষ এসে জড়ো হল। দেখা গেল উনি খুব উঁচু একটা গাছের উপর শুয়ে আছেন আর উনার গলাতে একটা মালা। মালাটা টাকার !

উনার কাহিনী মোটামুটি শুরু হয় এভাবেই। মানে, আমি যতজনের মুখে উনার কাহিনী শুনেছি, সবাই এই ঘটনা দিয়ে শুরু করে। ঘটনা কিন্তু এখানেই থেমে থাকে নি। মাঝে মাঝেই ঘুম থেকে উঠে তার গলায় তিনি টাকার মালা ঝুলানো আবিষ্কার করতেন। এত কিছু থাকতে টাকার মালা কেন সেটা তখন কেউ বোঝেনি। কিন্তু সেটা বুঝা গেছে পরে।
উনার যখন বিয়ে হয়, ব্যাপারটা বুঝা যায় তখন। উনি রাতে ভয়াবহ স্বপ্ন দেখে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। সেখানে একটা বিভৎস প্রাণী (গ্রামের মানুষের ধারণা , ‘জিন’) তাকে হুমকি দিচ্ছে, ভুলেও যেন সে তার স্বামীর সাথে না শোয়। যদি শোয় তাহলে তাদের বাচ্চাকে সে প্রাণে মেরে ফেলবে।
ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে শুধু কন্যাপক্ষের মধ্যেই থাকে। বিয়ের পর উনার স্বামীকে উনি একদিন বললেও মন মত পাত্তা না পেয়ে কাহিনী চেপে যান।
টাকার মালা পাওয়া কিন্তু এত দিনে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মাঝে মাঝে উনি শুকনো পাতার মালা পান। একেবারেই শুকনো। একটু ঘসা খেলেই ভেঙ্গে চুরচুর হয়া যাবে অথবা পাশে আগুন জ্বললেই হয়ত আগুন ধরে যাবে। এরপরে উনার স্বামী বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন।

উনাদের একটা বাচ্চা হয়। তার কয়েক রাত পরে উনি স্বপ্নে ভয়াবহ রকমের শক পান। সেই জিন তাঁর বাচ্চাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। বেশকিছুদিন ভয়েই অজ্ঞান থাকেন। এরপর থেকে এই ধরণের উটকো সিম্পটম একদম বন্ধ।
দেড় বছর পরে আরেকটা বাচ্চা হলেই হঠাৎ করে আবার পুরোনো ব্যাপার শুরু হয়। শুকনো পাতার মালা আর ক্রমাগত দুঃস্বপ্ন। আর এবারের প্রত্যেকটাই তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি। উনি সারাদিনই কান্নাকাটি করেন। উনি আর উনার স্বামী সবসময় এক সাথে থাকেন। যখন উনার স্বামী থাকতে পারে না, তখন উনার শ্বাশুড়ি থাকেন।

কয়েকদিন পরে উনার দুই ছেলেকে এক ধান ক্ষেতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। একেবারে বাচ্চা দুটো ছেলে, একেবারেই বাচ্চা। এটা নিয়ে পুলিশ কেইস থেকে শুরু করে কাহিনী অনেক দূর আগায়, কিন্তু কোন সুরাহা হয় নি।
এবার উনি স্বপ্নে আরও হুমকি পেতে থাকেন যে, এবার উনার স্বামীকেও মেরে ফেলতে পারে। এতদিনে উনি সাবধান হয়ে গেছেন, উনি আর উনার স্বামী এখন আলাদা ঘুমান। এত বছর পরেও।
উনার মাঝে পরে অন্যরকম কিছু ক্ষমতা দেখা দেয়। হারিয়ে যাওয়া জিনিস কোথায় পাওয়া যাবে মাঝে মাঝেই তা মানুষকে বলে দিতে পারেন।
আমার আব্বুর একটা আংটি হারিয়ে গিয়েছিল রাস্তায়। আব্বু খুশি দাদীর কাছে গেল, কোন যদি সুরাহা করতে পারেন। নাহ, কোন উপকারে আসেন নাই। বলছিলেন একটা গরীব লোকের কাছে গেছে। আব্বু যেন এমনি এমনি খুশি থাকে।
আব্বুর মেজাজ খারাপ হয়ে গেছিল। এমনি এমনি খুশি থাকার কোন কারণ নাই। আমার ধারণা, আমরাও গরীব মানুষ।

[এগুলা আমি সত্যি সত্যি শুনছি। এক দুই জন না, অনেক জনের কাছ থেকে। তবে, কাহিনীর সত্যি মিথ্যা ভেরিফাই করতে পারব না।
অনেক দিন পরে লিখতে বসে লেখা অগোছালো হয়ে গেছে। পাবলিককে বিরক্ত করার জন্য স্যরি।]
১৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×