somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ নিয়ে আমরা সবাই সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল বন্ধুর সাথে স্থানীয় এক দোকানে গেলাম ইগলুর কোন আইসক্রিম ক্রনেলি প্রিমিয়াম খেতে। দুইটা নিয়ে দাম জানতে চাইলে বলে ২ টা ৭০ টাকা অর্থাৎ প্রতিটি ৩৫ টাকা করে। এদিকে লক্ষ্য করলাম গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩২ টাকা। আমি বললাম, গায়ে লেখা তো ৩২ করে ৩৫ রাখছেন কেন? দোকানদার বলে, এখন ৩৫ করেই। দাম বেড়েছে। আমার বন্ধু বলল যে সে গত পরশু ৩২ টাকা দিয়ে কিনেছে। তখন আরেক দোকানী বলে যে, কেউ ৩২ এ বেচে, কেউ বেচে ৩৫ এ। আমি বললাম, ইচ্ছামত দামে বেচলে তো হবে না। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যেই বেচতে হবে। সে ঘাড় নাড়তে নাড়তে জোরে জোরে বলে, "না না"। যাই হোক, ৩৫ টাকা দিয়েই কিনলাম। তবে না কিনলেই বোধহয় ভাল হত।

এভাবে প্রায় প্রতিনিয়ত আমাদের মত ভোক্তাদের বিক্রেতারা ঠকিয়ে যাচ্ছে। আমরা অনেকেই জিনিস কেনার সময়ে গায়ে লেখা দাম পর্যন্ত দেখি না। অনেক কিছু কিনে দোকানদারের বলা মোট দাম শোধ করে বাসায় চলে আসি। দাম বেশি চাইলেও উচ্চবাচ্য না করে কিনে ফেলি। এভাবে বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও বিক্রেতা মহল ফায়দা লুটে নিচ্ছে। সুরম্য সুপারশপ থেকে মোড়ের চিপা দোকান বা নিলক্ষেত-নিউমার্কেটের বইয়ের দোকানদার থেকে শুরু করে ফুটপাতের হকার পর্যন্ত সবাই। সুপারশপ আগোরা, পিকিউএস, মীনা বাজারসহ সব জায়গায় মোট মূল্য ভগ্নাংশে আসলে পরবর্তী পূর্ণ সংখ্যায় মূল্য রাখা হয়। অথচ ইলেকট্রনিক রসিদে চেঞ্জের জায়গায় লেখা থাকে যে ক্রেতা অত টাকা অত পয়সা ফেরত পেয়েছে। এভাবে দিন শেষে হাজার হাজার ক্রেতার কতগুলো অতিরিক্ত টাকা তাদের ক্যাশবাক্সে জমা হয়? এ টাকাগুলো সম্পূর্ণ হিসেবের বাইরের টাকা। সিএনজি স্টেশনে তো এই কাজ করেই সাথে অতিরিক্ত যা করে তা হল দাম সামথিং ৩৭, ৮৭ বা ৫৭ টাকা হলে যথাক্রমে ৪০, ৯০ বা ৬০ টাকা রেখে দেয়। অর্থাৎ অত টাকা তত পয়সা হলে পরবর্তী পূর্ণ সংখ্যার সমান টাকা তো নেয়ই সেই সাথে ২-৩ টাকা অতিরিক্ত আয় করে। দিন শেষে কত টাকা ক্যাশিয়ারের পকেটে যায়? যা বলছিলাম তা হল বিক্রেতা চাইবেই সর্বোচ্চ মুনাফা করতে। ক্রেতা বা ভোক্তাকেও সর্বনিম্ন মূল্যে পণ্য বা সেবা কেনার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির একটি কারণ কিন্তু ভোক্তাগোষ্ঠীর অসচেতনতা ও ঐক্যবদ্ধ না থাকা। এমতাবস্থায় আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ সমস্যা বা ষড়যন্ত্র যাই বলুন তার মোকাবিলা করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন পাস হয়। তবে সেটি প্রকাশ্যে ধূমপান করার বিধি-নিষেধ আরোপের আইনের মত একটি অকার্যকর আইন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের, ২০০৯ চতুর্থ অধ্যায়ে দেখা যায় যে, বিক্রেতা নির্ধারিত মূল্যের অধিক দাম নিলে বা ওজনে কারচুপি করলে তার সাজা অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়া। আর মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করলে তার সাজা অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড অথবা অনধিক ২ লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়া। আর জ্ঞাতসারে ভেজালমিশ্রিত পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করলে বা করার প্রস্তাব করলে তার সাজা অনূর্ধ্ব ৩ বছরের কারাদণ্ড অথবা অনধিক ২ লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়া। অন্যদিকে কোন ব্যক্তি কোন ব্যবসায়ী, বিক্রেতা বা সেবা প্রদানকারীকে জনসম্মুখে হেয় প্রতিপন্ন করা বা তার ব্যবসায়িক ক্ষতি সাধনের জন্য মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করলে তার সাজা হবে অনূর্ধ্ব তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়া। এ আইন কার্যকর করতে পারলে ভালই হত যদিও এ আইনে বেশ কিছু দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন- এ আইনের বলে সৃষ্ট জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে আমলাদের আধিক্য বিদ্যমান। আধিক্য নয়, বেশিরভাগ সদস্যই আমলা। তারা বহু কমিটি, সংঘ বা সংস্থার সদস্য হওয়ায় এই ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা হ্রাস পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। এই পরিষদে এফবিসিসিআই ও ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতিও সদস্য হিসেবে থাকবেন। মানে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের নেতারাই এই পরিষদে আছেন। এতে এই পরিষদের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। তবে আশার কথা এই যে, কনজুমারস এসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশের সভাপতিও এই পরিষদের সদস্য। এছাড়া সরকার মনোনীত সুশীল সমাজের ৩ জন প্রতিনিধি এই পরিষদের সদস্য হবেন। সদস্যদের সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে এখানে যান।

কনজুমারস এসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোয় নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান। এ সংস্থাটি যদি শক্তিশালী হত তবে ভোক্তা অধিকার বহুলাংশে সংরক্ষণ করা সম্ভব হত। এ সংস্থাটি ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের মত আমজনতা ও ভোক্তাদের এ বিষয়ে উদাসীনতা ও অসচেতনতা সংস্থাটিকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারছে না। সংঘবদ্ধ হয়ে যদি ভোক্তারা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা (যারা এখন নিরঙ্কুশভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ) ইচ্ছেমত দ্রব্য বা সেবামূল্য বৃদ্ধি, মিথ্যা বিজ্ঞাপণ, পণ্য বা সেবায় ভেজাল মেশানো, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, সিন্ডিকেশন প্রভৃতি ন্যাক্কারজনক কাজ এত সহজে করতে পারত না। তাই এখনই সময় বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন গড়ে তোলা। উল্লেখ্য, কোলকাতায় এখনও নাকি হঠাৎ করে কোন দ্রব্যের দাম বেড়ে গেলে জনতা "বন্ধ" ঘোষণা করে এবং সবাই একযোগে সেই পণ্য বা সেবা বর্জন করে। এতে বিক্রেতা মহল ইচ্ছেমত দাম বাড়াতে পারে না কেননা দাম বাড়ালে সকলে যদি পণ্য বর্জন করে তাহলে ব্যবসায় লাল-বাতি জ্বলে যাবে। মনে রাখা প্রয়োজন, ব্যবসায়ী বা বিক্রেতা হাসি মুখে ভোক্তাকে মাগনা কোন পণ্য বা সেবা দিচ্ছে না। ভোক্তার সম্পূর্ণ অধিকার আছে পণ্য যাচাই করে গায়ে লেখা নির্ধারিত মূল্য দেখে সেই পণ্য কেনার। অতিরিক্ত দাম চাইলে তর্ক করতে করার। এক দাম বলে কিছু নেই। লজ্জ্বা বা অতিরিক্ত ভদ্রতার বালাই এখানে নেই। ভদ্রতার করতে গিয়ে ঠকে যাওয়ার কোন মানে হয় না। আর কিছু না বলে বলে বিক্রেতামহলকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা ভেজাল মেশানো জাতীয় কাজে পরোক্ষভাবে উৎসাহী করা হয়। এজন্য দেশের বিশাল ভোক্তাগোষ্ঠী আর্থিক ও স্বাস্থ্যগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×