somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমিকম্পে করণীয়

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সিডর, আইলার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই ভয়াবহ ভূমিকম্পের আশংকায় রয়েছে ঢাকা, সিলেট, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। মৃদু ও মাঝারী ধরনের ভূমিকম্প হয় বটে, কিন্তু বড় ধরনের ভূমিকম্প শিগগির আমাদের দেশে হয়নি। বড় ধরনের কোন ঘটনা না ঘটায় সাধারণ মানুষের এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণাও কম। ঢাকার পুরান এলাকার বহু মানুষ এখনও এর গুরুত্ব বুঝছে না বড় ধরনের ভূমিকম্প কি ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনতে পারে। নিমিষে শেষ হতে পারে লাখ লাখ মানুষের জীবন।

ভূতত্ত্ববিদ ড. হুমায়উন আক্তারের মতে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশে ভূমিকম্প হলে হাইতির ধ্বংসযজ্ঞকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। নিউজিল্যান্ডের ভূমিকম্পের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি থাকায় হাইতির মত একই স্কেলে ভূমিকম্প হলেও সেখানে মাত্র তিনজন আহত হয়েছে। ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতনতা থাকতে হবে তা হলেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ১০ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকাসহ সারা দেশে ১০টা ৪২ মিনিটে মৃদু ভূকম্পন দেখা দেয়। ১১টা ২৪ মিনিটে মাঝারী ধরনের ভূকম্পন হয়। যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৮ রিকটার স্কেল। ঈদের দিনেও কয়েকটি স্থানে ৫.২ রিকটার স্কেলে ভূকম্পন হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে স্বল্প মাত্রার ভূকম্পনের পর বড় ধরনের ভূ-কম্পনের আশংকা থাকে।আবার ছোট ছোট ভূ-কম্পনে প্লেটগুলো সমন্বয় হয় এমনো মত আছে।

এ বছর জানুয়ারি মাসে হাইতিতে ৭.২ রিকটার স্কেলের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২০ হাজার। ফেব্রুয়ারিতে ৮.৮ রিকটার স্কেলের ভূমিকম্পে মারা যায় সাত’শর বেশী মানুষ। বাংলাদেশ আর্থকুইক সোসাইটির (বিইএস) এক পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছে ২০টি। চট্টগ্রাম ও সুমাত্রা পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার উত্তর-দক্ষিণে সাবডাকশন জোন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে ভূমিকম্পসহ সুনামীর আশংকা রয়েছে। তিনটি প্লেট বাউন্ডারির সংযোগস্থানে থাকার জন্য বাংলাদেশের ৬০ ভাগ অঞ্চল অত্যধিক ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঘন বসতি ও জরাজীর্ণ ভবনের জন্য ঢাকার বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে লক্ষাধিক ভবন ধসে পড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা হাইতির ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। সবচেয়ে ভীতির কারণ যে ভূমিকম্পের আভাস আগে থেকে দেয়া যায় না। তবে যখন হোক এর জন্য প্রতিটি নাগরিককে আগে থেকেই এর প্রস্তুতি নেয়া দরকার। এ প্রস্তুতির জন্য থাকতে হবে আমাদের পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের প্রথমতঃ তার পাসপোর্ট ভোটার আইডি কার্ড, বীমার কাগজপত্র, গাড়ীর লাইসেন্স, জমির দলিলপত্র, বাচ্চাদের জš§ নিবন্ধন, সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যা আপনার জন্য অতি প্রয়োজনীয় তা আলাদা একটা ব্যাগে রাখুন সহজে আপনি যাতে বহন করে নিয়ে যেতে পারেন। সাথে রাখবেন নগদ টাকা, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংকের চেক বই, জমা বই ইত্যাদি।সাথে রাখবেন, টর্চ লাইট, অতিরিক্ত বেটারী, রেডীও সাথে থাকবে অতিরিক্ত বেটারী, লাইটার, ম্যাচ, মোমবাতী, কলম, প্যাড, ফ্লাশ লাইট, শুকনা খাবার, পানি, ফাস্ট এইড বক্স, গরমের কাপড়, সাধারণ ওষুধপত্র, টয়লেট পেপার, ময়লা ফেলানোর জন্য ব্যাগ, বাচ্চাদের খাবার। প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর সাথে রাখতে হবে। পরিবারের সদস্যদের ছবি সাথে রাখতে ভুলবেন না।

পরিবারের সদস্যদের জন্য আলাদা আলাদা ছোট ব্যাগে সব জিনিসপত্র কাপড় জরুরী কাগজ সার্টিফিকেট গুচিয়ে রাখবেন এমন জায়গায় যেন সবাই সহজে সামনে থেকে ব্যাগগুলো বহন করে ঘর থেকে বের হতে পারে। ভূমিকম্প আশংকা যেহেতু রয়েছে এসময় আপনার ঘরকে আসন্ন দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। যেমন ধরুন আপনার ওয়ালে এমন শোপিস আছে যা ভূমিকম্পের সামান্য ধাক্কায় ছিটে এসে আপনার গায়ে লাগতে পারে এসব জিনিসপত্র নামিয়ে অন্যত্র রাখুন। আলমারির ওপরে রাখা ভারী জিনিষপত্র নামিয়ে রাখুন। কাববোর্ডের দরজা শক্ত করে বেধে রাখুন। কাচের জিনিসপত্র সাবধানে রাখুন। দরজার কাছে ভারী আসবাবপত্র রাখবেন না, সিরির কাছেও ভারী কোন আসবাবপত্র বা কোন ধরনের জিনিসপত্র রাখবেন না আপনার বিপদের সময় বাধার কারণ হতে পারে।

কম্পিউটার ও টেলিভিশন নিরাপদভাবে রাখতে হবে। প্রতিটি জিনিষ ওয়ালের পাশে ও মেঝেতে রাখবেন। ভূমিকম্পের সময় আপনি পাশাপাশি কোন্ পার্ক বা মাঠে আশ্রয় নিবেন তার খোঁজ নিয়ে রাখবেন।

যদি অফিসে থাকেন তার নিরাপদ জায়গা কোনটি তার খোঁজ নিয়ে রাখবেন। ভূমিকম্প হলেই যাতে করে আপনি সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন। বাসায় থাকলে বাসার নিরাপদ ওয়াল ও শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিবেন। মনে রাখবেন কখনও খালি পায়ে থাকবেন না। খালি পায়ে থাকলে আপনার পাঁচের টুকরা বা অন্যকোন শক্ত জিনিষে আহত হতে পারেন। মাথাও খালি রাখবেন না। মাথায় বালিশ দিয়ে রাখবেন। এই বিপদের সময় চিল্লাচিল্লি ও কান্নাকাটি করে অযথা সমস্যার সৃষ্টি করবেন না। ভূমিকম্পের সময় বিদ্যুৎ, গ্যাস, লাইন বন্ধ রাখবেন। এসময় চলন্ত সিড়ি ও লিফট ব্যবহার করবেন না। আপনি লিফটে থাকলে লিফটের সবগুলো সুইজ টিপে রাখবেন যে ফ্লোরে থামে নেমে যাবেন। বাড়ী থেকে যাওয়ার সময় ভূমিকম্প চলতে থাকলে কখনই গাড়ী বা সাইকেল ব্যবহার করবেন না। আবাসিক এলাকায় কোন দেয়ালের পাশে দাঁড়াবেন না। কোন ধরনের মেশিনের কাছে যাবেন না।

এসময় আপনি যদি ট্রেনে থাকেন ট্রেনের ভেতরের শক্ত কিছু ধরে বসবেন। জানালা দিয়ে লাফিয়ে বাইরে পড়ার চেষ্টা করবেন না। যদি গাড়ীতে থাকেন গাড়ী থামিয়ে দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসবেন। রেডিও শুনবেন যাতে করে আপনি খবর জানতে পারেন। বড় ধরনের ভূমিকম্পের পর দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে হলে কখনও সমুদ্র সৈকত ও নদীর তীরে যাবেন না। সমুদ্র থেকে এক কিলোমিটার ভেতরে থাকতে হবে। ঘর ছেড়ে যাওয়ার আগে অবশ্যই পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন বন্ধ করে যাবেন। একটি দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সরঞ্জাম ও উদ্ধারকারী যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, তেমন প্রয়োজন জনসাধারণকে এই দুর্যোগ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়া। মানুষের ধারণা স্পষ্ট থাকলে তার বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। পুরানা শহরে যেসব দালান বসবাসের অযোগ্য যেসব দালানের মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া প্রয়োজন। প্রয়োজনে এসব দালান আগেই ভেঙ্গে ফেলার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। দুর্ঘটনার পর দুুর্বিসহ দেখার চেয়ে মানুষের যানমাল রক্ষার জন্য আগেই এ কাজটি করা যেতে পারে। দুর্ঘটনায় পতিত পরিবারকে সাহায্য করার আগে তাদের মাথা গোঁজার জন্য কিছু করা দরকার। রেডিও, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলো এই মুহূর্তেই আসন্ন ভূমিকম্পের জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিবে তার জন্য প্রোগ্রাম করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করবে। তাদের কর্মসূচি সাধারণ মানুষের জন্য বেশী উপকারে আসবে। ভূমিকম্পের আশংকায় যে সকল কর্মসূচী থাকবে আর তার সাথে যারা জড়িত তাদের নৈতিকতার প্রশ্নে অটল থাকা উচিত। না হলে সে সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রশ্ন থেকে যায়।
শুধু সরকারের উপর নির্ভর না করে নিজের পরিবারকে রক্ষার জন্য নিজেদের সচেতন করে গড়ে তুলুন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×