somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্তর্নিহিত নাট্যমর্ম ও হুশ ফিরে পাওয়া একজন নাট্যকার

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তরুন প্রজন্মের সফল নাট্যকার শাহেদ জামান, এই বয়সে অন্য কারও নামের আগে “সফল নাট্যকার” কথাটি কেউ বলতে পেরেছিল কিনা তা তার জানা নেই, খুজলেও কেউ পাবে কিনা তা নিয়ে আছে বিস্তর সন্দেহ। এত অল্প বয়সে সাফল্যের শিখরে পৌছানো কজনের কপালে জোটে? কিন্তু আজ তার এ কি হল, পান্ডুলিপির সফেদ পাতায় তার কলম আজ হঠাৎ করেই কেন যেন আর চলছে না। গতরাতে যে নাটকটি তিনি লিখতে বাকী রেখেছিলেন আজ শেষ করবেন বলে, সেই নাটকের জন্য তিনি আর কলম টানতে পারছেন না। কতগুলো প্রশ্ন, কতগুলো চিন্তা তার মনের ভিতর যেন কালবৈশাখির ঝড় তুলে চলেছে। তার ভাবনা গুলো যেন কিছুতেই সামনে এগুতে পারছে না। শত চেষ্টা করেও ঐ মনের ভেতর অনবরত বাজতে থাকা প্রশ্ন গুলো তিনি দূরে ঠেলে দিতে পারছেন না। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার। কিন্তু কিসের উপর এই প্রচন্ড রাগ তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না।

শখের বশে বা নিছক কৌতুহলের কারনে তিনি এই অঙ্গনে আসেন নি। ছোট বেলা থেকেই তার সরল সহজ মন টিভির পর্দার নাটক নাটিকায় সমাজের অসঙ্গতি গুলোকে ফুটে উঠতে দেখেছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তিনি নিজেও দেখতে পেতেন সমাজের শত অসঙ্গতি যেগুলো ওই সময়ের নাট্যকাররা তুলে আনার সুযোগ পাচ্ছেন না। তাই তখন থেকেই তার ভিতরে তীল তীল করে বেড়ে উঠে একটি স্বপ্ন। তিনি তার দেখা সকল অসঙ্গতি গুলো কে মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। তখন থেকেই নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করে তোলেন। দেখতে দেখতে তিনি নিজেকে একজন পুর্নাঙ্গ নাট্যকারে পরিনত করেন।

বাস্তব জীবনে যখন তিনি কাজে নামলেন তখন দেখলেন তারুন্যের স্পৃহা তার সামনে নিয়ে এল আরেকটি চাহিদা, আর সেটা হল খ্যাতি অর্জনের চাহিদা। থামার মত ব্যক্তিত্ব তিনি মোটেই নন। তাই সমাজের অসঙ্গতিকে তুলে ধরার পাশাপাশি খ্যাতি অর্জনের পেছনেও ছুটলেন সমান গতীতে। একের পর এক সফল নাটক শুধু লিখেই যান নি, করেছেন পরিচালনা ও প্রযোজনাও। সাড়া জাগিয়েছেন দেশের জোয়ান বুড়ো সকলের মাঝে। কিন্তু আজ তিনি কোথায় যেন হিসেব মিলাতে পারছেন না। কেন যেন আজ নিজেকে একটি নরকের কীট বলে মনে হচ্ছে। এখন তিনি এতটুকু আবিষ্কার করতে সক্ষম হলেন যে তিনি আজ নিজের উপরেই প্রচন্ড রাগান্বিত।

গতকাল তিনি তরুন সমাজের জন্য সচেতনতা মুলক একটি সেমিনারে গিয়েছিলেন একজন সম্মানিত অতিথী হয়ে। সেখানে তিনি নিজে তরুন হয়ে তরুন সমাজের উদ্দেশ্যে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত বক্তব্য রেখেছিলেন। বলেছিলেন অনেক কিছু। পেয়েছিলেন মুহুর্মুহু করতালি। দেশের বিদগ্ধ বুদ্ধিজীবিরা তাকে জানিয়েছিলেন উষ্ণ সম্ভাষন। এটা যেন তার জীবনের এক অন্যরকম প্রাপ্তি ছিল। সেই যে উৎসাহ পেলেন সেখানথেকেই শুরু করেছিলেন এই অসমাপ্ত নাটকটি। কিন্তু আজ কিছুতেই তিনি ওটা শেষ করতে পারছেন না।

খ্যাতি অর্জনের নিমিত্তে মানুষের চাহিদা আর বিনোদন প্রাপ্তির মানষিকতা কে প্রাধান্য দিতে হয়েছিল তাকে। সেজন্য রচনা করে গেছেন সব দম ফাটানো হাসির নাটক। একটা পর্যায়ে এসে দেখলেন যে সমাজের জন্য তিনি নাটক লিখছেন সেই সমাজের চিরাচরিত জীবনের সাথে সামঞ্জস্যশীল কোন গল্প আর অবশিষ্ট নেই। সকল দিক নিয়েই ইতিমিধ্যে রচিত হয়ে গেছে সহস্র নাটক ও সিনেমা। মানুষ এখন ভিন্নতা চায়। মানুষের সামনে এই ভিন্নতাকে এনেদিতে এবং খ্যাতি অর্জনের জন্য তিনি ছুটে গেলেন পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে। সেখান থেকে তুলে আনলেন “পরকিয়া” নিয়ে আসলেন ভোগ বিলাস, তুলে আনলেন বহুভুজী প্রেমের গল্প, আরও আনলেন লিভটুগেদারের গল্প, সংলাপে আনলেন চটকদার আঠারো প্লাসের জোরালো আঁচ। দর্শকের কাছে এগুলো নিয়ে এল এক ভিন্ন স্বাদ। হুড় হুড় করে জনপ্রিয়তা বেড়ে চল্ল তার।

কাজের সীমাহিন ব্যস্ততা তাকে তার চারপাশের সমাজের দিকে তাকাবার ফুসরত মোটেও দেয়নি।কিন্তু কাল যখন তরুন সমাজের উদ্দেশ্যে তাকে কিছু বলতে হবে বলে জানলেন, তখন সকল কাজ ফেলে, ব্যস্ততাকে দূরে ঠেলে তাকালেন চার পাশে। দেখলেন এক অন্য জগত। অবাক হলেন মাত্র কদিনেই পাল্টেগেল তার চারিপাশ!! পশ্চিমা সমাজের যে কালচার গুলো তিনি তার নাটকে তুলে ধরেছিলেন সেগুলো আজ বাস্তবেই মঞ্চায়িত হচ্ছে এখানে সেখানে। এ যেন এক রাতেই পালতে গেল দৃশ্যপট!!
তিনি দেখতে লাগলেন এক এক করে, উন্মাদের মত এযুগের তরুনেরা ছুটে চলেছে জৈবনেশা মেটাবার জন্যে। ওরা প্রচন্ড ভাবে মাতাল হয়ে পড়েছে। ওদের চিন্তা ভাবনা, কাজ কর্ম, চলাফেরা সব ঐ একটা জিনিস কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে আর সেটা হল বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গ পাবার নেশা।

সব কিছু দেখে শুনে তিনি নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করেন, কেন এমন হল? এবার দৃশ্যপটে হাজির হয় বিবেক। এক এক করে ভেষে আসে তার কাজের প্রতিফলন কিভাবে এই সমাজকে ধধংশ করে দিচ্ছে। তিনি এখন বুঝতে পারছেন এদেশের যুবক যুবতীরা কখনই এমন ছিলনা। পাগলকে তিনিই সাকো নাড়াবার কথা স্বরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনিই তার নাটক গুলোর মাধ্যমে ওদের পথ দেখিয়েছেন যে কিভাবে নেশার অন্য এক জগতে আস্বাদ লুটে নিতে হয়। ভিতর থেকে কে যেন ঘৃনাভরে বলে উঠে “হাসাতে হাসাতে একটি ধধংশলীলার সুচনা করে দিলে শাহেদ!! যে লীলা থামাবার সাধ্যি এ সমাজে কারও নাই”

আজ তিনি ফিরে গেলেন অতীতের সেই নাটক গুলোতে যেগুলো তাকে এমন নাট্যকারে পরিনত করেছে। আবার নতুনকরে বুঝতে চাইলেন, দেখতে চাইলেন এবং পরখ করতে চাইলেন। এক এক করে তিনি পরখ করছেন আর অন্য এক ইঙ্গিতের সন্ধান পাচ্ছেন। বয়সের অপরিপক্কতার কারনে তখনকার যে নাটক ও সিনেমা গুলোকে ঘুমন্ত সমাজে অসঙ্গতিকে তুলেধরার অন্যতম উপায় বলে মনে করেছিলেন আজ সেই একই নাটক ও সিনামের মাঝে দেখতে পারছেন স্রেফ অন্য কিছু। বিনোদন আর সমাজের অসঙ্গতি তুলেধরার আড়ালে সেখানে রয়েছে মগজ ধোলাই আর নৈতিকতা ধধংশের বীজ গুলো থরে থরে সাজানো।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×