somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ বেঁচে থাকে মানুষের মধ্যেই এবং মানুষই মানুষের ভবিষ্যৎ।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমরা কতোগুলি নীতিকথাকে স্বয়ংসিদ্ধ বলে জ্ঞান করে থাকি। সকল মানুষই সমান। সকলকে সমান করে সৃষ্টি করেছেন আমাদের সর্বময় সৃষ্টিকর্তা। তার আছে কতোগুলি অসামান্য অধিকার- এর মধ্যে তার জীবনটাই প্রধান। তারপর স্বাধীনতা। শান্তি ও সুখের সন্ধান। এই সব অধিকার অস্বীকার করার মতো নয়। তবু সব সমাজেই, এর ব্যত্যয়ও ঘটে থাকে, প্রায়শই। সব মানুষের অর্থাৎ সকল নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা ও সংরক্ষণের জন্যেই তো মানুষের প্রশাসন ব্যবস্থার সৃষ্টি।
William Blake তাঁর 'The Divine Image'-- কবিতায় লিখেছেন:
"For all must love the human form,/ In Heathen, Turk or jew;/ Where mercy, peace and pity dwell, There God is dwelling too."

অর্থাৎ (মানুষের রূপকে সকলেরই ভালোবাসা উচিত, সে পৌত্তলিকই হোক, তুর্কীই হোক বা ইহুদীই হোক; যেখানে করুণা ও অনুকম্পা আছে সেখানে সৃষ্টিকর্তাও আছেন।)

মানুষের দুটি বিষয়ে বিশেষ মোহ বা আকর্ষণ আছে। এক. আপন মুক্তি। দুই. স্বাধীনতা। সে মুক্তি কিসের? আর স্বাধীনতা-ই কি? সর্বপল্লী ড. রাধাকৃষ্ণন মনে করেন, "মানুষের আসল উদ্দেশ্য হলো দায়িত্বযুক্ত স্বাধীনতা লাভ।" মানবজীবন পরিসর যেমন সংক্ষিপ্ত আবার বিশাল ও ব্যাপ্ত। জীবনের সীমানা ছাড়া আর কোনো সীমানা তো নেই। সেই সীমাটা অবলোকন করতে হয় সম্যক দৃষ্টিতে। আপন সীমার একটা ছক কেটে নিতে হয় জীবনের সূচনা মুহূর্ত থেকে। প্রথমে নিজের মধ্যে, পরে অন্যের মধ্যে পৌঁছে যেতে হয়- মনুষ্যত্বের সিঁড়ি ধরে ধরে। এই ধাপগুলো পেরোনোর মধ্যে জীবনের সীমা অতিক্রম করে যেতে হয়। ব্যক্তি কেবল নিজের সীমা বা গন্ডির ভেতর অবস্থান করতে পারে না। তাকে তার সীমা পার হয়েই যেতে হয়। সীমানা লংঘন করে নয়- সীমানা যথাযথ অতিক্রম করে। মানুষের জীবনের প্রধান লক্ষ্য তো সমাজের ভেতরে প্রবেশ করা। সমাজের সকলের স্বার্থ ও কল্যাণকে- নিজ স্বার্থ, নিজকল্যাণ হেতু জ্ঞান করা। মানুষকে বড়ো করে দেখা মনুষ্যতের খাতিরেই।

সমাজে প্রত্যেকের সমান অংশের অধিকার আছে- এ কথাটা আমরা মুখে বলি মাত্র- কিন্তু সেটা অন্তরে স্বীকার করে নিতে পারি না। তাহলে মানুষ মাত্রই সমান কোন্ অর্থে? কোন্ অভিধায়? কোন্ কূট ব্যাখ্যায়? সব মানুষই যখন পরম মূল্যের আধার। সকলকেই আত্মোপম ভাবা উচিত। এই "আত্মৌপম্য জ্ঞান" জীবন মূল্যের আধার। আত্মোৎকর্ষ ছাড়া আত্মার জাগরণ ঘটে না কখনো। আবার আত্মার জাগরণ ছাড়া ছাড়া "আত্মৌপম্য জ্ঞান" ও অর্জন করা সম্ভব নয়। আজকাল ভদ্র সমাজের রীতি-নীতি, আদব-কায়দার ভেতর মনুষ্যত্বের জাগরণের চিহ্নরেখা কম চোখে পড়ে। তবে এমনটা কেন ঘটে? সমাজ-বিশ্লেষণ হবে কীভাবে। সমাজের ওপর তলার কার্নিশে বসে সমাজটাকে কেবল বিসম শ্রেণীতে পরিণত করতে যারা অভ্যস্ত- তাদের কর্ণকুহরে এসব কথা প্রবেশ করবে না। আমাদের পৃথিবীটাই তো যাবতীয় বস্তুর আধার। আমাদের আশ্রয়, স্থান পাত্র প্রদান করে থাকে।

আমরা আমাদের সমাজে যার যার স্থান যার যার মতো করে নির্ধারণ করে নিতে পারি কিংবা পারি না। তখনই পারি- যখন আমরা নৈতিক ও মানবিক মূল্য সুষম মাত্রায় আরোপ করতে পারবো। মানুষের সাম্য- মানবিক সমতার ওপরই নির্ভর করে। যন্ত্র দিয়ে মাপা যায় না মানুষকে- মানুষের মনুষ্যত্বকে। এটা তো কোনো ধাতব বিদ্যাও নয়। সমাজের কাউকে, কারুর অধিকারকে অবদমিত করে সমাজের স্বাভাবিক বিকাশ বিঘ্নিত করা চলে। তবে লোক দেখানো, গণশাসনে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশ তেমন একটা ঘটে না। কারুর মতামত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বাধা ও ব্যত্যয় ঘটলে গণতন্ত্র স্বেচ্ছাচারের রূপ পরিগ্রহণ করে।

পেরিক্রিস্ খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩১ অব্দে তাঁর "অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সংক্রান্ত ভাষণে" গণতন্ত্র সম্বন্ধে তাঁর ধারণার ব্যাখ্যা দিয়েছেন: "আমাদের গণতন্ত্র বলা হয় এই জন্য যে আমাদের প্রশাসনের ভিত্তি বহুর উপর, অল্প সংখ্যকের উপর নয়। ঘরোয়া ঝগড়ায় সকল লোকই আইনের চোখে সমান, আর গণমতের কাছে কেউ তার পদমর্যাদার জন্যে আদৃত হয় না; হয় তার গুণের জন্যে।"

সকল মানুষেরই স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার অধিকার আছে। সমান সুযোগ ভোগ করার অংশ আছে। সুযোগের সাম্য ও সমতা মানেই জগৎ-সংসারের সম্পদের অধিকার। বর্তমান বিশ্বসভ্যতায় এই সাম্য ও সমতাই আমাদের কাম্য।

মানুষ বেঁচে থাকে মানুষের মধ্যেই এবং মানুষই মানুষের ভবিষ্যৎ। তার আত্ম-বিশ্বাস, আত্ম-জিজ্ঞাসা, আত্ম-নির্মাণ, আত্ম-নিয়ন্ত্রণ, নৈতিক বুনিয়াদ এবং মনুষ্যত্বময় ভূমিকায় ভবিষ্যতের পৃথিবী জীবিত থাকবে, এটাই আমাদের বিশ্বাস

কৃতজ্ঞতায়
আল মুজাহিদী
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×