somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানি মানগার বিশ্ববিস্তার

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাপানি মানগার বিশ্ববিস্তার

প্রবীর বিকাশ সরকার

মানগা শব্দটি এখন বিশ্বব্যাপী বহুশ্রুত, বহু আলোচিত একটি শব্দ। মানগা জাপানি শব্দ। ইংরেজিতে যার অর্থ: কমিক্স, ক্যারিকেচার বা কার্টুন। বাংলায় এর যথার্থ নাম নেই তবে অভিধান অনুযায়ী বলা যায়: হাস্যরসাত্মকচিত্র। পৃথিবীর সব দেশেই এই ধরনের চিত্রকর্ম বিদ্যমান। যেমন বাংলা শিশুসাহিত্যে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী, সুকুমার রায় কিংবা সত্যজিৎ রায়ের ছড়া/কবিতা/গল্প/নাটক ইত্যাদির সঙ্গে যে ব্যাঙ্গচিত্র আঁকা হয়েছে সেগুলোকে মনে করা যেতে পারে।
মানগা শব্দটির মূল অর্থ হলো: মনের ইচ্ছেনুয়ায়ী আঁকাবুকি করা। তবে এই ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। মানগার ইতিহাসও সুস্পষ্ট নয়। অবশ্য ১২ শতকের দিকে এর একটি সূত্রচিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়। সোজো তোবা (১০৫৩-১১৪০) নামক জনৈক চিত্রশিল্পী ও বৌদ্ধ পুরোহিত কর্তৃক ‘চোওজুউজিগা’ বা ‘পশুপাখির ছবি’ অঙ্কিত স্ক্রল পেইন্টিং (পাকানো দীর্ঘ চিত্রমালা) থেকে মানগা আঁকার ধারণা জন্ম নিয়েছে বলে অনেক গবেষকই মনে করেন। ক্রমান্বয়ে এদো যুগে (১৬০৩-১৮৬৮) এসে আরও বিস্তৃতাকারে সামাজিক জীবনাচারকে উপজীব্য করে করে মানগা আঁকার প্রবণতা দেখা দেয়। ১৭৯৮ সালে প্রকাশিত ‘শিকি নো ইউকি কাই’ নামক একটি হস্তাঙ্কিত সাদাকালো চিত্রগ্রন্থ আবিষ্কৃত হয় যার রচয়িতা সানতোও কিয়োদেন মূল নাম ইওয়াসেই সামুরু। তিনি রাজধানী এদো শহর তথা বর্তমান টোকিওর ফুকাগাওয়া উপশহরে ১৫-৮-১৭৬১ সালে এক পণ্য-বন্ধকী কারবারির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। উক্ত গ্রন্থের বিষয় ছিল চার ঋতুর পরিবর্তনজনিত দৃশ্য ও পারিপার্শ্বিকতা। ১৯৭৯ সালে এই গ্রন্থটি আধুনিকরূপে প্রকাশিত হয়। কোন কোন গবেষক একে এদো তথা মধ্যযুগের ফ্যাশন ম্যাগাজিন বলেও আখ্যায়িত করেছেন। পরবর্তীকালে তিনি ‘কিবিয়োশি মানগা’ গ্রন্থ বা ‘ইয়েলো বুক’ এর চিত্রগল্পকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। উল্লেখ্য যে, যখন সামাজিক অনাচার, যৌনাচার এবং রাজনৈতিক সমালোচনা হাস্যকর, বিদ্রুপাত্মকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে কিবিয়োশিগুলোতে তখন এদো শাসক এক পর্যায়ে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেন।
চিত্রশিল্পী কিয়োদেন মানগার ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। শৈশব থেকেই সংস্কৃতিমনা কিয়োদেন ঐতিহ্যবাহী তিন তারবিশিষ্ট বাদ্যযন্ত্র সামিছেন বাজানো শিখেছিলেন। ১৫ বছর বয়সে খ্যাতিমান কাঠখোদাই চিত্রকলা বা ছাপচিত্র ‘উকিইয়োএ’ এর মাস্টার কিতাও শিগেমাসা’র (১৭৩৯-১৮২০) বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং মেধাবী কাজের জন্য কিতাও মাসানোবু নাম ধারণ করেন। ১৮ বছর বয়সে তাঁর প্রতিভার আত্মপ্রকাশ ঘটে জনপ্রিয় কিবিয়োশি সিরিজের প্রচ্ছদ আঁকিয়ে হিসেবে। চারদিকে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। ২০ বছর বয়সে তিনি শুধুমাত্র উকিইয়োএ-শি বা উকিয়োএ মাস্টার হিসেবেই সমাজে স্বীকৃতি লাভ করেননি, গল্পচিত্র অঙ্কন করার জন্যও প্রশংসিত হন। এই সময়ে তিনি সানতোও কিয়োদেন নাম গ্রহণ করেন। এই নামে এখনো তিনি মধ্যযুগীয় চিত্রকলার ইতিহাসে স্মরণীয়। তাঁর রয়েছে বহু গল্পচিত্র, পোস্টার, বিজ্ঞাপন ও গ্রন্থ। ১৮১৬ সালে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। পরবর্তীকালে তাঁর জীবন ও চিত্রকর্ম নিয়ে একাধিক গ্রন্থ লিখিত হয়েছে।
কিয়োদেন অঙ্কিত চিত্র থেকেই ধীরে ধীরে মানগা কথাটি চালু হতে থাকে। একে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় ১৮১৪ সালের দিকে প্রথম সারির উকিইয়োএ মাস্টার কাৎসুশিকা হোকুসাই এর (১৭৬০-১৮৪৯) রেখাচিত্র ‘হোকুসাই মানগা’। কথিত আছে তিনি ৪,০০০ চিত্র এঁকেছিলেন। ১৮৩০ সালের দিকে তাঁর চিত্রাঙ্কন ফ্রান্সের ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পীদের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। ‘হোকুসাই মানগা’র কাঠামো আজও মানগা জগতের রীতি। কাজেই মানগা শব্দটি এদোযুগেই জন্ম নিয়েছিল বলা যায়।
বিংশ শতকের দিকে এসে মানগার বৈচিত্র্যময় বিবর্তন ঘটতে দেখা যায় পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে যখন মেইজি যুগ শুরু হয়েছে মাত্র (১৮৬৮-১৯১২)। মেইজির প্রাক্কালে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের নাবিক কমোডর ম্যাথু কলব্রেইথ পেরি (১৭৯৪-১৮৫৮) জাপানকে তার স্বআরোপিত দু’শ বছরের জন্য নিষিদ্ধ দরজা উন্মুক্ত করার জন্য ১৮৫৩ সালে প্রবল শক্তি প্রয়োগ করেন। এই ধারাবাহিকতা ধরে মেইজি সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তরের ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ রাষ্ট্রক্ষমতা সামুরাই যোদ্ধাদের হাত থেকে সম্রাটের হাতে চলে যায়। এই ঘটনাবহুল পরিস্থিতির উপরও অনেক ক্যারিকেচার এঁকেছিলেন ছাপশিল্পীরা। এর পর যখন দ্রুত পাশ্চাত্যের আদলে সমাজব্যবস্থা পরিবর্তিত হতে থাকে এবং আমেরিকা ও ইউরোপের নাগরিকরা এদেশে আগমন করেন নানা কাজে ও উদ্দেশ্যে তখন ইংরেজি ভাষারও প্রভাব পড়তে শুরু করে। বিদেশী গ্রন্থ, পত্রপত্রিকা ও সাময়িকী আসা আবার এদেশেও ইংরেজি সংবাদপত্রাদির প্রকাশ শুরু হয়। স্বাভাবিকভাবেই দেশী-বিদেশী চিন্তা, চেতনা ও ভাবের আদান-প্রদান ঘটতে থাকে। দেশীয় মানগার ওপরও বিদেশী প্রভাব পড়ে। ইংরেজি পত্রপত্রিকার ক্যারিকেচার, কার্টুন অনুযায়ী মানগারও লক্ষ্য, চরিত্র ও আঙ্গিকের পরিবর্তন ঘটে। এক্ষেত্রে দুজন বিদেশীর অবদান স্বীকার করতেই হয়। একজন ইংলিশ সাংবাদিক ও চিত্রশিল্পী চার্লস য়ুআর্গম্যান (১৮৩৩-৯১), তিনি আসেন ১৮৫৭ সালে লন্ডনের দি ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ পত্রিকা থেকে আর একজন ফরাসি নাগরিক জর্জেস বিগোট (১৮৬০-১৯২৭), তিনি তখন জাপানি রাজকীয় সেনাবাহিনীর দপ্তরে শিল্পকলা শিক্ষা দিতেন। য়ুআর্গম্যান ‘জাপান পাঞ্চ’ নামে একটি মাসিক কাগজ প্রকাশ করেছিলেন। আর বিগোট ‘তোবাএ’ নামে একটি ম্যাগাজিন। দুজনই এই দুটি কাগজে তৎকালীন এদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা এবং বিদেশীদের আচার-আচরণ সবই ক্যারিকেচারের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন। তাঁদের তত্ত্বাবধানে থেকে জাপানি তরুণ চিত্রশিল্পীরাও আধুনিক অঙ্কনশৈলী শিক্ষা লাভ করে জাপান ও পাশ্চাত্যের সামাজিক-রাজনৈতিক হাস্যরসাত্মক, উপহাসধর্মী ক্যারিকেচার বা কার্টুন আঁকেন। এঁদের মধ্যে কার্টুনিস্ট, ইলাস্ট্রেটর-জাপানি ভাষায় যাদেরকে বলা হয় ‘মানগাকা’-উল্লেখযোগ্য হলেন ইমাইজুমি ইপ্পিও (১৮৬৬-১৯০৪), যিনি ‘মানগা’কে ইংরেজি ‘ক্যারিকেচার’ শব্দ হিসেবে ব্যবহার করেন। তাঁর পর আসেন কিতাজাওয়া রাকুতেন (১৮৭৬-১৯৫৫), ওকামোতো ইপ্পেই (১৮৮৬-১৯৪৮)। মেইজি যুগের শেষভাগ থেকে তাইশো যুগ (১৯১২-২৬) পর্যন্ত উদার রাজনৈতিক পরিবেশ এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা তাঁদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে প্রভূত সহায়ক হয়। বিশেষ করে এই দু’যুগে মানগার প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জনের ক্ষেত্রে কিতাজাওয়ার অবদান এক কথায় ব্যাপক। তিনি আমেরিকার সাপ্তাহিক সাময়িকী ‘বক্স ফর কিউরিওস’-এ কার্টুন আঁকার সুবাদে নতুন কলাকৌশল অর্জন করেন এবং কাজে লাগান স্থানীয় ইংরেজি ‘জিজি শিনপো’ পত্রিকার রবিবারের ‘জিজি মানগা’ শীর্ষক বর্ধিত পৃষ্ঠায়। এরপর তিনি নিজেই একটি মানগা ম্যাগাজিন ‘টোকিও পাক্’ ১৯০৫ সালে প্রকাশ করেন। তখন রুশ-জাপান মহাযুদ্ধ চলছে। তার মধ্যেও রঙিন এই কার্টুন সাময়িকীটি ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে প্রচার সংখ্যা এক লক্ষ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়-নিঃসন্দেহে এমন ঘটনা এশিয়া মহাদেশে প্রথম। এই সাফল্যের কারণে তিনি আরও একটি সাময়িকী ‘মানগা’ নামে প্রকাশ করেন শিক্ষানবিশদের জন্য। এই ঘটনাতেই বোঝা যায় একশ বছর আগেই জাপান আজকের মানগা ইন্ডাস্ট্রি বা কার্টুন বাণিজ্যশিল্পের বীজ বপন করেছিল। তাঁরই উত্তরসূরি ওকামোতো অসাধারণ কাজ করেছেন দৈনিক আসাহিশিম্বুন পত্রিকায় সাংবাদিকতার পাশাপাশি অনেক ক্যারিকেচার এঁকে। তৎকালীন খ্যাতিমান লেখক ও ঔপন্যাসিক নাৎসুমে সোসেকি (১৮৬৭-১৯১৬) তাঁর কার্টুনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অপ্রত্যাশিত এই প্রশংসায় অনুপ্রাণিত হয়ে ওকামোতো ধারাবাহিক বর্ণনামূলক মানগা আঁকতে প্রবৃত্ত হন তাইশো যুগের শেষ দিকে। তাঁকে অনুসরণ করে আরেকজন মানগাকা আসাও ইউতাকা (১৮৯৮-১৯৬১) দৈনিক হোওচিশিম্বুন পত্রিকার সম্পাদকের অনুরোধে অনুরূপ সিরিয়াল কার্টুন আঁকেন ১৯২৪ সালে ‘নোনকি না অতোওসান’ বা ‘সহজেই সন্তুষ্ট বাবা’ নামে। এটা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এর ফলে ধারাবাহিক গল্পভিত্তিক মানগা বা সিরিয়াল নভেল কার্টুন লেখার সূচনা হয় ১৯২১ সালে আসাহিশিম্বুন পত্রিকার মাধ্যমে। ইতিমধ্যে ১৯২৩ সালে শিশু-কিশোরদের জন্যও মানগা চালু হয়ে গেছে মেইজি যুগে প্রকাশিত শিশুসাময়িকীগুলোতে। এই ঘটনা কিশোর সমাজে নতুন যুগের সূচনা যেমন করে তেমনি নতুন এক ব্যবসারও সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই কোদোমো নো মানগা বা শিশুকার্টুন কিংবা সচিত্র শিশুসাহিত্যের ভিত্তি স্থাপিত হয় আজ থেকে প্রায় নব্বুই বছর আগে। এই শিশুমানগার চাহিদা তৎকালে রাষ্ট্রীয়ভাবে নতুন এক শিক্ষা আন্দোলনেরও জন্ম দেয়। তাইশো যুগে মানগার উৎকর্ষতার পরিচয় পাওয়া যায় কিশোরসাহিত্য সাময়িকীগুলোতে ইতিহাস বিষয়ক এবং ঐতিহাসিক চরিত্রসমূহের ধারাবাহিক মানগাগল্পের মধ্যে। যে কারণে কিশোরপ্রজন্মের মধ্যে আলাদা একটা পাঠ্যাগ্রহ ও ইতিহাস জানার কৌতূহল জাগ্রত হয়। কিন্তু মানগার এই দীর্ঘ ধারাবাহিক আনন্দঘন অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে ১৯৩১ সালের পর থেকে।
জাপানে তাইশো যুগ ছিল সামাজিক শান্তি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং রোম্যান্টিক একটি সময়। ১৯২৬ সালে শোওয়া যুগ শুরু হলে পরে মানগার বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হয় সরকারি হস্তক্ষেপে। কমিক্স ও কার্টুনের বদলে শক্তিশালী সমরবাদ, সাহসী সৈনিক হওয়ার গল্প, যুদ্ধ বিষয়ক আলোকচিত্র, হাতিয়ার তৈরির কারিগরি ইত্যাদি প্রকাশিত হতে থাকে। সে সময় যেসব মানগা আঁকা হত সবই ছিল যুদ্ধবিষয়ক কারণ ইতিমধ্যে চীনের সঙ্গে জাপানের এক দফা যুদ্ধ হয়ে গেছে। এবং এর রেশ ধরে ১৯৩৭ সালে চীন-জাপান যুদ্ধ পূর্ণাঙ্গ রূপ পরিগ্রহ করে। পাশ্চাত্যকে অনুসরণ করে ১৯১৫ এবং ১৯২৩ সালে যে দুটি জনপ্রিয় কিশোর-মানগা ম্যাগাজিন ‘শোওনেন (বালক) ক্লাব’ এবং ‘শোওজো (বালিকা) ক্লাব’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩১ সালের পর থেকে তাদের বিষয়বস্তু বদলে গিয়ে হয়ে উঠল সৈনিকদের নানাবিধ বীরত্বের কাহিনীভিত্তিক। উল্লেখ্য যে, চীন-জাপান যুদ্ধের সূত্র ধরে জাপান দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জড়িয়ে যায়। যে কারণে প্রায় ১৭ বছর মানগার স্বতঃস্ফূর্ত সজীব জগৎটি ছিল মরুভূমিপ্রায়। যুদ্ধের সময় সরকার পেশাদার মানগাকাদের জোরপূর্বক ‘শিন নিপ্পন মানগাকা কিয়োকাই’ বা ‘নতুন কার্টুনিস্ট সমিতি’ গঠন করে সেখানে নিযুক্ত করে এবং প্রকাশ করে ‘মানগা ম্যাগাজিন’ নামে একটি সাময়িকী। তখনকার উল্লেখযোগ্য মানগাকা সুইহোও তাগাওয়া মূল নাম নাকাতারো তাকামিজাওয়া (১৮৮৯-১৯৮৯) প্রকাশ করেন ‘নোরাকুরো’ মানগাগল্প। ইয়োকোয়ামা রিউইচি (১৯০৯-২০০১) ‘ফুকুচান’ সিরিয়াল মানগাচিত্র ১৯৩৮ সালে শুরু করে একটানা ১৯৭১ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান। যা সত্যি এক অবিশ্বাস্য ঘটনা!
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ১৯১৭ সালেই জাপানে অ্যানিমেশনের জন্ম হয়। প্রথম অ্যানিমেশনটি ছিল সামুরাই প্রশিক্ষণের ওপর দুই মিনিটের একটি দৃশ্য (ক্লিপ)। ১৯৩৩ সালে প্রথম টকি অ্যানিমেশন তৈরি হয় ‘চিকারা তো ওননা নো ইয়ো নো নাকা’ অর্থাৎ ‘ক্ষমতা ও নারীর পৃথিবী’ নামে। এবং যুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সালে নির্মিত হয় পূর্ণদৈর্ঘ্য অ্যানিমে-চলচ্চিত্র ‘মোমোতারো: উমি নো শিনপেই’ বা ‘মোমোতারো: সমুদ্রের দেবসেনা’। বলাই বাহুল্য, অ্যানিমেশন প্রযুক্তি এদেশে প্রায় একশ বছর পূর্বেই আত্মপ্রকাশ করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব ও পরবর্তীতে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া প্রভৃতি দেশে গিয়ে একাধিক আগ্রহী ব্যক্তি এই প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষাগ্রহণ করেন। যুদ্ধের পর দারিদ্রের কারণে প্রথম দিকে আমেরিকার সাহায্য নিলেও আশির দশকে জাপান অভূতপূর্ব সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয় টিভি ও সিনে অ্যানিমেশন শিল্পখাতে। স্মরণকালের মধ্যে ১৯৯৭ সালে জাপান অ্যাকাডেমি পুরস্কার এবং আমেরিকান অ্যাকাডেমি পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান মানগাকা এবং অ্যানিমেটর মিয়াজাকির হাওয়াও’র ‘মোনোনোকে হিমে’ বা ‘প্রিন্সেস মানোনোকে’ আমেরিকাসহ বহির্বিশ্বে অসামান্য ব্যবসা করে। তাঁর প্রতিটি অ্যানিমেশনই প্রচন্ড জনপ্রিয়। মানগাকাদের মধ্যে প্রথম জাপানি হিসেবে আমেরিকাতে পুরস্কৃত হয়েছিলেন ইয়াশিমা তারো (১৯০৮-৯৪)। তিনি চীন-জাপান যুদ্ধের বিরোধিতা করে আমেরিকা পালিয়ে যান সস্ত্রীক এবং জাপানের বিরুদ্ধেও সেখানে গিয়ে কার্টুন আঁকেন। যুদ্ধের পর আমেরিকাতে শিশুদের জন্য একাধিক কার্টুনবুক রচনা করে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেন এবং পুরস্কৃত হন।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হলে পরে ১৯৪৭ সালে মানগার পুনরাবির্ভাব ঘটে, লুকিয়ে থাকা মানগাকাররা ফিরে আসেন। লাগাতার যুদ্ধের কারণে তখন একেবারেই বিধ্বস্ত, দরিদ্র এবং বিশৃঙ্খলায় পর্যবশিত জাপান। এই অবস্থায় ধুমকেতুর মতো মানগাসমাজে যাঁর আগমন ঘটে তিনি পুরনো কোন মানগাকা নন- মাত্র ১৮ বছর বয়স্ক এক টগবগে তরুণ অসামু তেজুকা (১৯২৮-৮৯)। ১৯৪৭ সালেই তিনি ২০০০ মানগা এঁকে ফেলে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। যখন অভাবক্লিষ্ট জনসাধারণের অন্ন জোটে না, আনন্দলাভের কোন সুযোগ-সুবিধা নেই, শিশুপ্রজন্মের সামনে ধ্বংসস্তুপ আর ধ্বংসস্তুপ। যুদ্ধপূর্ব সময়ে বিদ্যালয়ের আশেপাশে বা বাজারে যে সকল ‘কাশিয়া-বোন’ বা ‘বই ভাড়ার দোকান’ ছিল সবই মার্কিনী বোমার আঘাতে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে নগর গ্রন্থাগারসমূহ। সেই অবস্থায় তেজুকার মানগা ভগ্নমনস্ক মানুষের মনে ব্যাপক আনন্দের খোড়াক জোগায়। বিশেষ করে শিশু-কিশোর প্রজন্ম শক্তিশালী চেতনায় বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে দিকনির্দেশক ছিল তাঁর মানগাগুলো। বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ব্যতিরেকে, অতিসাধারণ সস্তা কাগজে অস্পষ্ট লালকালিতে মুদ্রিত ‘আকাবোন’ বা ‘লালবই’ হিসেবে তাঁর প্রথম মানগাগ্রন্থ ‘শিন তাকারাজিমা’ বা ‘নতুন রতœদ্বীপ’ প্রকাশিত হবার পর বোমা বিস্ফোরণের মতোই ব্যাপক সাড়া ফেলে! মাত্র ২০০ পৃষ্ঠাবিশিষ্ট বইটি প্রকাশের পরপরই ৪০০০০০ কপি নিঃশেষ হয়ে যায়! এই পর্যন্ত যুদ্ধপূর্ব খ্যাতিমান কার্টুনিস্টদেরকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ‘মানগার জনক’ হয়ে যান তেজুকা।
আরও ভালো কাজ করার লক্ষ্যে ধনী পরিবারের সন্তান তেজুকা শিল্পকলা, সাহিত্য, আধুনিক মানগা এবং চলচ্চিত্র শিক্ষাগ্রহণে প্রবিষ্ট হন- ছেলেদের জন্য সদ্য প্রকাশিত ম্যাগাজিনগুলোতে মানগা আঁকার পাশাপাশি। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তাঁর মানগাগুলো নতুন গতি ও আঙ্গিকবিশিষ্ট ছিল বিধায় তরুণ প্রজন্মকে দ্রুত আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে তাঁর সিনেমাটিক নাটকীয়তা এবং গতিসম্পন্ন মানগাগুলোর প্রধান আকর্ষণের মূল ভিত্তি ছিল প্রবল কল্পনাশক্তি। এ ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে জাপানি অ্যাকশন চলচ্চিত্রের জনক কুরোসাওয়া আকিরার (১৯১০-৯৮) যথেষ্ট মিল আছে বলে প্রতীয়মান হয়। তেজুকার মানগা শুধু তরুণ প্রজন্মকে উদ্বেলিতই করেনি, অনেক নতুন মানগকাও সৃষ্টি হয়েছিল তাঁর মানগাকে অনুসরণ করে। যেমন পরবর্তীকালে অভাবনীয় জনপ্রিয়তা অর্জনকারী সফল মানগাকাদ্বয় ফুজিমোতো হিরোশি (১৯৩৩-৯৬) এবং মোতোও আবিকো (১৯৩৪-)। ব্যক্তিজীবনে তাঁরা দুজন সহপাঠী এবং ফুজিকো-ফুজিও নামে অজেয় মানগা সিরিয়াল ‘দোরায়েমোন’ এবং ‘ওবাকে নো কিউতারোও’ বা ‘অশরীরী কিউতারোও’ সৃষ্টি করেন। মর্যাদাসম্পন্ন ‘শোগাকুকান মানগা পুরস্কার’ এবং ‘ওসামু তেজুকা কালচার অ্যাওয়ার্ড’প্রাপ্ত ‘দোরায়েমোন’ আজও লক্ষকোটি ছেলেমেয়েকে সমানে আনন্দ দিয়ে চলেছে। দুটোই আবার টিভি অ্যানিমেশনেও রূপান্তরিত হয়। তাঁদের পেছনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তেজুকা যে কারণে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে জাপান ছাড়িয়ে তাঁর প্রতিভার সংবাদ আমেরিকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। আমেরিকায় তখন ১৯৩৪ সাল থেকেই শিশুচিত্রশিল্পী ওয়ার্ল্ট ডিজনি (১৯০১-৬৬) কার্টুনফিল্ম বা অ্যানিমেশনের জন্য বিখ্যাত। তাঁর কানেও গিয়ে পৌঁছুল তেজুকার ‘তেৎসুওয়ান আতমু’ বা ‘অ্যাস্ট্রোবয়’ মানগা-গল্পের সংবাদ। দূর ভবিষ্যতের ২১০৮ সালে শক্তিশালী বাহুবিশিষ্ট রোবটিক একটি ছাত্র কিভাবে তাদের শহরকে দূষিত পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে সরিয়ে নেবে সেই কল্পবিজ্ঞান কাহিনীই হচ্ছে অ্যাস্ট্রোবয়, বিপুল সাড়া জাগিয়েছিল জাপানব্যাপী! ১৯৬৩ সালে জাপানের প্রথম সিরিয়াল টিভি অ্যানিমেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ডিজনির সহযোগিতায়। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী পুনরায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ২০০৯ সালে ডিভিডি-ফিল্ম হিসেবে তৈরি হওয়ার পর। বলা হয়ে থাকে যে, যুদ্ধপরবর্তী জাপানের অত্যাধুনিক মানগার জগতে তাঁর অভূতপূর্ব দূরদর্শী এবং মানসিক শক্তিসঞ্চারী কার্টুন/কমিক্স বা মানগা পরাজিত জাতিকে উঠে দাঁড়াতে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিল। যে কারণে আজকে তিনি এক কিংবদন্তি আধুনিক জাপানি মানগার জগতে।
১৯৫৩ সালে জাপানে টেলিভিশন সম্প্রচার চালু হয়। অ্যাস্ট্রোবয় অ্যানিমেশন পরবর্তীকালে ৮০/৯০ দশকে এদেশে আধুনিক টিভি ও চলচ্চিত্র অ্যানিমেশন তৈরির ভিত্তি স্থাপন করে। এখন সারা বিশ্বব্যাপী জাপানি অ্যানিমেশনের জয়জয়কার এবং এটা ক্রমবর্ধমান এক লাভজনক শিল্প।
অবশ্য অ্যানিমেশন বুম হওয়ার আগে ১৯৫০ সাল থেকেই মানগার বুম দেখা দেয়। ২০০৫-৬ সাল পর্যন্ত মানগার একটানা ঊর্ধ্বগতি একটি বিশেষ ঘটনা সমকালীন জনপ্রিয়-সংস্কৃতির (পপুলার কালচার) ইতিহাসে। ১৯৬০ সালের পর থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত অসংখ্য মানগা ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে পুরুষদের জন্য যৌন সুড়–সুড়িমূলকই বেশি। নারী মানগা গুটিকয় মাত্র। এই সময় জাপানকে বিদেশী গণমাধ্যম ‘মানগা সোসাইটি’ বলে অভিহিত করেছিল। ঘরে, ট্রেনে, বাসে, গাড়িতে, বিমানে, জাহাজে সর্বত্র ছাত্র-ছাত্রী, গৃহিণী, স্যালারিম্যানদের হাতে দেখা যেত মানগা সিরিজভুক্ত গ্রন্থ না হয় ম্যাগাজিন। এখানে সেখানে গড়ে উঠতে থাকে অসংখ্য ‘মানগা-কিস্সা’ বা ‘মানগা রেস্তরাঁ’ যেখানে হাজার হাজার মানগাগ্রন্থ ও ম্যাগাজিন রয়েছে দৈহিক, মানসিক চাপ ও ক্লান্তি দূর করার জন্য। এসব দোকানে চা বা কফি পানের ছুতোয় মানগা পড়া যায় দীর্ঘসময়। তাছাড়া হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কফিশপ, নাপিতের দোকান, ফ্যাশন পার্লার, ডাক্তারখানা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানেও মানগা রাখা হয় কাস্টমারদের ক্ষণিক আনন্দের জন্য। মানগা-বুমের কারণে কাগজ, প্রিপ্রেস, ছাপাখানা, মুদ্রণ সামগ্রী, রং, বুকবাঁধাইয়ের ব্যবসা ছিল দারুণ রমরমা। বিলিয়ন বিলিয়ন ইয়েনের ব্যবসা হয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন মানগা ম্যাগাজিন ও পেপারব্যাক বিক্রির মধ্য দিয়ে। দেনৎসু কমিউনিকেশন্স ইনস্টিটিউটের জরিপে দেখা যাচ্ছে ২০০৪ সালে জাপানি মানগা মার্কেট ৫৮৬.৪ বিলিয়ন ইয়েনে উঠেছিল। যদিওবা এখন কাগজে মুদ্রিত মানগার চেয়ে ডিজিটাল মাধ্যম যথাক্রমে কম্পিউটার, সিডি, ডিভিডি, মোবাইল ফোনে মানগার চাহিদা আকাশচুম্বী। কাজেই মানগা এখন নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। তথাপি এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় তিনটি ২০০/৩০০ পৃষ্ঠার সাপ্তাহিক মানগা ম্যাগাজিন যথাক্রমে ‘শোওনেন জাম্পু’ (বালক জাম্প), ‘শোওনেন মাগাজিন’, ‘শোওনেন সানডে’র মধ্যে ‘শোওনেন জাম্পু’র মুদ্রিত প্রচার সংখ্যা ১৯৯৫ সালে ৬.৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছিল, বর্তমানে ৩ মিলিয়নে চলে এসেছে। জাপানের অন্যতম প্রধান প্রকাশনা সংস্থা শুয়েইশা কোম্পানি থেকে প্রকাশিত ‘শোওনেন জাম্পু’র রয়েছে আরও একাধিক অতিরিক্ত সংস্করণ। যেমন মাসিক মানগা ‘জাম্পু এসকিউ’ প্রচার সংখ্যা ৫০০০০০। ইতিমধ্যে ইংরেজিতে আমেরিকা সংস্করণ মাসিক ‘শোওনেন জাম্প’ প্রকাশিত হয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মূলত এগুলো তরুণ প্রজন্মের বিনোদনমূলক মানগা। মানগার অভাবনীয় সাফল্য থেকে এ পর্যন্ত ৩০০০ পেশাদার মানগাকা বা মানগা আঁকিয়ের জন্ম হয়েছে! তাদের মধ্যে একটি বৃহৎ অংশ আবার বিখ্যাত মানগাকাদের স্টুডিও বা প্রোডাকশনে সহযোগী হিসেবে নিযুক্ত। তবে প্রত্যেক মানগাকা’র একটি করে হলেও মানগাগ্রন্থ রয়েছে। বিশ্বের আর কোন সমাজে এত প্রচুর সংখ্যক চিত্রশিল্পী একটি খাতে জড়িত আছেন বলে জানা নেই। তাঁদের মধ্যে আছেন নতুন প্রজন্মের অনেক মানগাকা যারা জাপানি ও ইংরেজি ভাষাতেও সমান পারদর্শী। নতুন নতুন মানগাকা প্রতি বছর আত্মপ্রকাশ করছে, স্কুলগুলোতে নিয়মিত মানগা আঁকার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, মডার্ণ আর্ট স্কুলগুলোতে ফ্যাশন জগতে ব্যবহারের জন্য উন্নত মানগা আঁকা শিখছে তরুণ-তরুণীরা- তাদের ভালো কাজের জন্য লোভনীয় পুরস্কারও প্রদান করা হচ্ছে। এ বছর মে মাসে কানাডার টরেন্টো শহরে অনুষ্ঠিত ‘টরেন্টো কমিক আর্ট ফেস্টিভেল (টিসিএএফ) ২০১০’ উৎসবে জাপানি মানগা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, আগ্রহী জাপানি মানগাকাররা অংশগ্রহণ করেছেন। নতুন প্রজন্মের মানগাকাররা নজর রাখছেন সারা বিশ্বের চিত্রশিল্পীদের কমিক্স, কার্টুন এবং ইলাস্ট্রেশনে কী ধরনের প্রবণতা এবং নতুনত্ব উপস্থাপিত হচ্ছে। একজন মানগাকাকে প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশের কমিক্স, ইলাস্ট্রেশন বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হয় কেননা মানগা এখন বিশ্বায়নের যুগে প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে। গত এক দশকেই জাপানি মানগা তার দুটি প্রধান প্রতিযোগী দেশ আমেরিকা ও ফ্রান্সকে ছাড়িয়ে গেছে বহুলাংশে তার থীম, আঙ্গিক, রং এবং উদ্ভাবনীশক্তির বৈচিত্র্যের কারণে বলে গবেষকদের বিশ্বাস। কালো মেঘের ছায়া ফেলেছে ঐ দুদেশের কার্টুন ইন্ডাস্ট্রির ওপর।
জাপানি মানগা ইন্ডাস্ট্রি এতই বিশাল যে, অসংখ্য সিরিজ বই তো আছেই, প্রধান প্রকাশনা সংস্থাগুলো থেকেই প্রকাশিত হচ্ছে নিয়মিত কমপক্ষে ১০টি সাপ্তাহিক মানগা ম্যাগাজিন, অনুরূপ ১০টি পাক্ষিক, একাধিক কাহিনী-সিরিজ। এ ছাড়াও সাধারণ দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীগুলোতে মানগার জন্য পাতা, কলাম বরাদ্দ রয়েছে। এদেশে এখন এমন কোন বিষয় নেই যেখানে মানগার সংশ্লিষ্টতা নেই- ইতিহাস, ভুগোল, সংস্কৃতি, রাজনীতি, প্রশাসন, সরকার, শিক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, পিসি গেমস, কম্পিউটার, মহাকাশ-গবেষণা, সড়ক যোগাযোগ, স্বেচ্ছাসেবা, ধর্ম, ক্রীড়া, ভ্রমণ, আইন-আদালত, পুলিশ, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, পরিবেশ, অবসরজীবন ইত্যাদিতে মানগা ব্যবহৃত হচ্ছে সহজভাষায় গল্পের মাধ্যমে বিষয়কে অনুধাবন ও জনপ্রিয় করে তোলার জন্য। কারণ দৈনন্দিন জীবনে এগুলোর সংস্পর্শে বহু মানুষকে আসতেই হয়। তাছাড়া ক্রমবর্ধমান বয়স্ক সমাজের কথা চিন্তা করলে মানগা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা এখন অনস্বীকার্য। এ কারণেই মানগার ডাইনামিজমটা বহুমাত্রিক মাধ্যম। এই মাধ্যমটি একাধারে বিনোদনমুখী এবং শিক্ষামূলক। মানগার মাধ্যমে সমাজের ন্যায়, অন্যায়, প্রথাবিরোধী এবং সংস্কারযোগ্য বিষয়গুলো ধর্মঘট, মিছিল, রাজপথকে ব্যবহার না করেই নির্বিবাদে বলা যায়। প্রতিবাদেরও একটি গতিশীল মাধ্যম আজকের মানগা। যেমন ১৯৭০ সালে ওসামু তেজুকার অঙ্কিত চিকিৎসা-বিষয়ক মানগা জাপানে জাতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি সংস্কারের ক্ষেত্রে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিল। মানগার জগৎটি সম্ভব-অসম্ভব সব ধরনের কল্পচিন্তার মুক্ত পরীক্ষাকেন্দ্রও বটে।
মানগা থেকে রূপান্তরিত অ্যানিমেশন যে একটি দীর্ঘাযু পারিবারিক আনন্দ-বিনোদন মাধ্যম তার প্রমাণ রয়েছে এদেশে একাধিক যেমন ‘সাজায়েসান’ কিংবা ‘দোরায়েমোন।’ সাজায়েসান মানগা ছিল সাধারণ একটি পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের ওপর অঙ্কিত কাহিনীচিত্র, ১৯৪৬ সালে আঞ্চলিক পত্রিকা ফুকুনিচিশিম্বুনে প্রথম প্রকাশিত হয়, তারপর প্রভাবশালী দৈনিক আসাহিশিম্বুন পত্রিকার অনুরোধে তখনকার প্রথম জাপানি মহিলা মানগাকা হাসেগাওয়া মাচিকো (১৯২০-৯২) সিরিয়াল হিসেবে আঁকেন। তখনই এটা দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৬৯ সালে যখন টিভি অ্যানিমেশন ড্রামা হিসেবে অন্যতম প্রধান টিভি চ্যানেল ফুজিটিভিতে প্রচারিত হয় সমগ্র জাপানব্যাপী ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। আজও প্রতি রবিবার সন্ধ্যায় ‘সাজায়েসান’ সম্প্রচারিত হচ্ছে। এই অ্যানিমেশনে যুদ্ধোত্তর বিধ্বস্ত পরিস্থিতিকে ঠেলে জাপান কিভাবে উন্নত হতে শুরু করে সেই পুরনো স্মৃতিবিধুর সমাজকে অনুভব করা যায়। ‘সাজায়েসান’ নাম্মী জাপানি আদর্শগত (টিপিক্যাল) নায়িকা চরিত্রটি এদেশের সমকালীন সংস্কৃতির একটি প্রতীক। ৪১ বছর ধরে একটি মানগার টিভি অ্যানিমেশন মানুষ নিয়মিত উপভোগ করছে এমন ঘটনা নজিরবিহীনই বটে। অনুরূপ ‘দোরায়েমোনে’র কথাও বলা যায়। দোরায়েমোন একটি বেড়ালমুখো শিশু রোবট এবং তার প্রতিপালক নোবিতা নাম্মী একটি ছেলের কান্ডকারখানা নিয়ে অঙ্কিত মানগাগল্প ১৯৬৯ সালে প্রথম গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৭৩ সালে এনটিভি চ্যানেলে অ্যানিমেশন হিসেবে মাস ছয়েক সম্প্রচারিত হওয়ার পর ১৯৭৯ সাল থেকে আসাহিটিভি চ্যানেলে এখনও পর্যন্ত প্রচারিত হচ্ছে। ‘দোরায়েমোন’ অসম্ভব জনপ্রিয় নার্সারি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। এ রকম আরও বেশ কয়েকটি টিভি অ্যানিমেশন আছে যেমন ‘আনপানমান’, ‘ড্রাগন বল কাই’, ‘মাইনিচি কাআচান’, ‘চিবিমারুকোচান’, ‘কোনান তানতেই’, ‘কুরেঅন শিনচান’ প্রভৃতি। তাছাড়া ‘কোচিরা কাৎসুশিকা-কু কামেআরি কোওয়েন মায়ে হাশুৎসুজে’- মধ্যবয়সী এক পুলিশ অফিসারের কৌতুকবহুল হাস্যকর কর্মকান্ড নিয়ে রচিত ১৯৯৬-২০০৫ সাল পর্যন্ত ফুজিটিভিতে অ্যানিমেশন হিসেবে প্রচারিত হয়েছে। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনুরূপ আরও দুটি জনপ্রিয় টিভি অ্যানিমেশন অবিশ্বাস্যজনক জনপ্রিয় ‘সে-রা-মুন’ (সেইলর মুন) এবং ‘পোকেমোন’ (পকেট মনস্টার)। জাদুভিত্তিক কাল্পনিক ‘সে-রা-মুন’ এর রচয়িতা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মহিলা মানগাকা তাকেউচি নাওকো। মানগা হিসেবে ‘সে-রা-মুন’ চীন, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বের ২৩টি দেশে ভাষান্তরিত হয়েছে। বর্তমান বছরেও বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় মানগা-অ্যানিমেশনের শীর্ষস্থান দখল করে আছে। এটা আসাহিটিভিতে চার দফায় প্রচারিত হয় ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত। ‘পোকেমোন’ মূলত ভিডিও গেমস্ এর জন্য অঙ্কিত মানগা থেকে অ্যানিমেশন এখন বিশ্বব্যাপী শিশুমহলে অদম্য মানগা-কার্টুনাসক্ত এক বিনোদনের নাম। এ পর্যন্ত বিশ্বের ৬৭ দেশে এর ইংরেজি এবং স্থানীয় ভাষায় ভাষান্তর হয়েছে। ‘পোকেমোনে’র মডেল-পুতুলগুলো শিশুদের কাছে খুবই প্রিয় খেলনা বিশেষ। বলা নিষ্পয়োজন যে, উপরোক্ত টিভি অ্যানিমেশনগুলো মুদ্রিত মানগা হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর অ্যানিমেশনে রূপান্তরিত হয়েছে এবং পারিবারিক পরিবেশে উপভোগ করার মতো চমৎকার টিভি-বিনোদন।
সাম্প্রতিককালে জাপানি ‘আকিরা’, ‘ব্ল্যাক জ্যাক’, ‘ওতাকু’ প্রভৃতি মানগাও আন্তর্জাতিকভাবে বিপুল ব্যবসায়িক সাফল্যের পর অ্যানিমেশনের রূপ পরিগ্রহ করেছে। সুতরাং টিভি অ্যানিমেশন অদূর ভবিষ্যতে একটি বিশাল বাজার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে তা বলাই বাহুল্য কিন্তু মানগা ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে থাকবে মূলত সস্তা পুঁজি বা বিনিয়োগের কারণে। যে কারণে এটা প্রতিযোগী হয়ে উঠছে উন্নত-অনুন্নত সব দেশেই। লন্ডনের দি গার্ডিয়ান পত্রিকার সাম্প্রতিক এক তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, জাপানে ২০০৭ সাল নাগাদ কাগজে মুদ্রিত প্রচলিত মানগার বাজার ছিল ৪০০ বিলিয়ন ইয়েন সেটা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে ২০১২ সালে ৭০ বিলিয়ন ইয়েনে উন্নীত হবে বলে ধারণা করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ২০২০ সাল নাগাদ এই বাজার আরও স্ফীত হয়ে ২০-৩০ ট্রিলিয়ন ইয়েনে গিয়ে দাঁড়াবে বলে প্রবল মানগাসক্ত প্রাক্তন জাপানি প্রধানমন্ত্রী আসো তারো (১৯৪০-) এক বক্তব্যে বলেছিলেন। তাঁর এই ধারণা মিথ্যে নয় বলেই প্রতীয়মান হয় তবে সেটা হবে মানগাকে কেন্দ্র করে মুদ্রণ ও ডিজিটাল মাধ্যমে রূপান্তরিত অ্যানিমেশনসহ।
একইসঙ্গে বিশ্ববাজার ধরার জন্যও সরকারিভাবে উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে, যেমন বহির্বিশ্বে বার্ষিক জাপানি উৎসবে মানগার জন্য নির্দিষ্ট স্থান রাখা হচ্ছে। এ বছর প্যারিসে অনুষ্ঠিত উৎসবে জাপানি মানগার চরিত্রগুলোর ফ্যাশন যাকে বলা হয় ‘কস্-প্লে-মুসুমে’ বা ‘কসমেটিক গার্লস’ তাদেরকে অনুসরণ করে ফ্রান্সের কিশোরীরা অনুরূপ বর্ণাঢ্য পোশাক ও সাজে সজ্জিত হয়ে বিশ্বের গণমাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে। তারা মানগা প্রকাশনা ও অ্যানিমেশনের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। সম্প্রতি মানগাকে কেন্দ্র করে ‘কস্-প্লে-মুসুমে রেস্তরাঁ’ও ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এইসব রেস্তরাঁতে হাইস্কুল ছাত্রী, তরুণীরা মানগার পোশাক ও সাজসজ্জায় সেজে কাস্টমারকে আপ্যায়িত করে পার্টটাইম ওয়েট্রেস হিসেবে। এদেশে সাধারণত জনপ্রিয় প্রতিটি মানগা এবং অ্যানিমেশনের ক্যারেক্টারগুলোর প্লাস্টিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুতুল-মডেল বিক্রি হয়ে থাকে। এই পুতুলগুলো এতই সুন্দর আর আকর্ষণীয় যে দৃষ্টিকে বিস্ফারিত করে! শিশুদের অত্যন্ত প্রিয় এগুলো। চাবির রিং বা আনুষঙ্গিক উপকরণ হিসেবে তরুণ প্রজন্ম এমনকি প্রাপ্তবয়স্করাও মানিব্যাগ, হ্যান্ডব্যাগ, মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ক্যামেরা, গেম-মেশিনে বেঁধে রাখতে পছন্দ করেন। এই প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে দু’দশক আগে থেকেই এখন বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়ছে। রুচিশীল ফ্যাশন পণ্যের বাজারে এক নতুন মুখ এই মানগা-পুতুল। এগুলো তৈরির কারখানাও রয়েছে একাধিক। এ রকম প্রচারের কারণে জাপানি মানগা যে ক্রমশ আরও জনপ্রিয় এবং বিবর্তিত হতে থাকবে তাতে আর সন্দেহ কী! প্রায় দু’শ বছরের ইতিহাস বহনকারী মানগার এই অগ্রযাত্রা বিস্ময়কর! তারই উজ্জ্বল প্রমাণ সাম্প্রতিককালে জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ে মানগা বিষয়ক বিভাগ খোলা। বলতে হবে শিক্ষাবিষয় হিসেবে নব্বুই বছর আগের মানগার প্রভাবই এসে পড়েছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই যুগে। বিশ্বের আর কোন দেশে কমিক্স বা কার্টুন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার বিষয় চালু হয়েছে কিনা জানি না। মানগার এই প্রভাব থেকে সম্প্রতি কিয়োতো শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানগা জাদুঘর। বিখ্যাত মেইজি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সমৃদ্ধ মানগা গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে ২০০৯ সালে। রাজধানী টোকিওতে রয়েছে একাধিক অ্যানিমেশন জাদুঘর। মানগাকা-অ্যানিমেটর মিয়াজাকি হাওয়াও’র কর্মস্থল ‘স্টুডিও জুবিলি’ এখন একটি জাদুঘর এবং শিশু-কিশোরদের জন্য এক আনন্দস্বর্গ! এইসব প্রতিষ্ঠানের প্রভাবে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মানগাকা জন্ম নেবে জাপানে পৃথিবী জয়ের লক্ষ্যে।



বিংশ শতকে যেমন জাপানি বিদ্যুতিন পণ্যসামগ্রী ইলেট্রকনিক সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল বিশ্বব্যাপী, এবার ২১ শতকে এসে মানগা সারা বিশ্বব্যাপী রাজ্যবিস্তার করবে আর এর পেছনে প্রচার মাধ্যম হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রাখবে ইন্টারনেট।

জাপান প্রবাসী লেখক.গবেষক
http://www.notundesh.com/shahitta_news2.html
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×