somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নক্ষত্রের গোধূলি-১৯

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফিরোজ জিজ্ঞেস করলো এবার বল দেখি কি ব্যাপার, হঠাত্ করে চলে এলে, নাকি কোন কাজ আছে?কামরুলের কাছে শুনেছি তুমি তো ভাল চাকরী করতে তারপর আবার বিরাট ব্যাবসা করছিলে।
সে ব্যবসা আর নেই সব শেষ, সেই জন্যই তো আসা। একটা কাজকর্ম কিছু যোগাড় করে দাও। সম্ভব হলে দুজনকেই নয়তো অগত্যা আমার যা হোক একটা কিছু।

সব খুলে বলল। শুনে ফিরোজ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো এই ব্যাপার! আমি তো ভাবতেও পারছি না তোমার এমন হোল কি করে। যোগাযোগ বা দেখা না হলে কি হবে আমি তোমার সব খবরই জানি। তুমি মালেকের বোনকে বিয়ে করেছ এ ও জানি তবে তোমার এই শেষ দিকের কিছু জানার সুযোগ পাইনি।
ঠিক আছে এই অবস্থায় এসেছ যখন কিছুতো একটা করতে হবেই। তবে শুধু তোমার জন্য, ভাবীর জন্য কোন অবস্থাতেই না। সে কিছু দিন বেড়িয়ে দেশে চলে যাক ওখানে তোমার মেয়েরা রয়েছে। যদিও তারা বড় হয়েছে তবুও তাদের মা কাছে থাকা দরকার। তুমি থাক।

এমন সময় শেফালি ভাবীর কাছে ড্রাইভিং শিখছে এমন এক ছাত্রী ফোন করে জানতে চাইল সে কখন যাবে। বাংলাদেশ থেকে মেহমান এসেছে বলে আজ যাবে না জানিয়ে দিল। ফিরোজও সেদিন কাজে গেল না।
ফিরোজের মা এসে বললো যাও ওকে নিয়ে কোথাও বেড়িয়ে এসো।
তারাও এর মধ্যে মনিরার কাছে ওদের আসার উদ্দেশ্য সব শুনেছে।
এসেছ কদিন বেড়িয়ে লন্ডন দেখে নাও, ভাবীকে ও দেখিয়ে দাও তারপর দেখি কি করা যায়।
শুনে ওরা উভয়েই যেন হাতে চাঁদ পেলো।
মনিরা বললো দেখেন ভাই যে করেই হোক ওর যেমন তেমন একটা কিছু না হলে যে আর কোন উপায় নেই।

চিন্তা করবেন না কিছু একটা হয়ে যাবে, এখন চলেন একটু ঘুরে আসি। আপনার ভাবী আবার ফার্স্ট ক্লাস ড্রাইভার।
হ্যা তা তো কালই দেখলাম। তবে আজ না ভাই। শরীর এখনো টলমল করছে। কাল না হয় যাওয়া যাবে, আজ ঘরেই থাকি।
মনি তো বেড়াতে আসেনি। ওর মনে চলছে সেই ঝড় যে ঝড় তাদের এখানে উড়িয়ে নিয়ে এসেছে। তার পাগল আজ ঘর ছাড়া, দেশ ছাড়া দেউলিয়া। কি করে ঋণ শোধ হবে, মেয়েদের মানুষ করবে, তার রাশেদ কি ভাবে একা এখানে থাকবে এই সব চিন্তায় সে জর্জরিত। তার এখন বেড়াবার মত মন নেই। এ কথা কি আর বলা যায়?এ যে তার একান্ত নিজের যন্ত্রণা। সুখ কারো সাথে ভাগ করে নেয়া যায় কিন্তু দুঃখ?সে তো একান্ত আপনার। সে ভাগ কাউকে দেয়া যায় না। আনন্দ করতে হয় সবাইকে নিয়ে কাঁদতে হয় নীরবে।

আজ সারা দিন গল্প গুজব করেই কেটে গেল। ইফতার করে সন্ধ্যার পর রাশেদ সাহেব মনিকে বলল,
আচ্ছা ছোট ভাই বুঝে হোক বা না বুঝেই হোক তার ওখানে যেতে বলেনি। তাই বলে কি আমরা এতো দূর এসে ওদের না দেখে বিশেষ করে মেয়েটাকে না দেখা কি উচিত হবে?
হ্যা আমিও তাই ভাবছি। এদিকে ওদের নীরবতা আবার এতো দূর এসে না দেখা তারপর ওদের জন্য যা আনা হয়েছে সে গুলিও তো দিতে হবে, ব্যাপারটা কেমন হয়।

আমার মনে হয় চল যাই দেখি কি অবস্থা। তেমন মনে হলে এখানে আবার ফিরে আসব।
মনিরা জানতে চাইল, কত দূর?
সে অনেক দূর। কোচ কিংবা ট্রেনে যেতে হবে। প্রায় দুই তিন ঘন্টার পথ।
তুমি চিনে যেতে পারবে?
কি যে বল, পারবো না কেন?
গিয়ে যদি আবার ফিরে আসতে হয়, তাহলে এই শীতের মধ্যে! আমার মনে হয় যাবার আগে এক বার ফোন করে খোজ নিয়ে দেখ।
না ফোনে নয়, একেবারে সশরীরে উপস্থিত হলে ব্যাপারটা অন্য রকম হবে না?দেখ চিন্তা করে।

রাতে ফিরোজের সাথে এ ব্যাপারে আলাপ হোল। ফিরোজের একই কথা।
কোথায় যেন থাকে?
গ্লস্টারের কাছে।
তুমি চিনে নিতে পারবে?
হ্যা, স্ট্রাউড পর্যন্ত গেলে ওখান থেকে আমি চিনতে পারব।
তাহলে চল, আমরাও ওদিকে যাইনি তোমাদের নিয়ে আমরাও ঘুরে আসি। তোমার ভাবী আবার লং ড্রাইভ পছন্দ করে।
কথা বলতে বলতে ফিরোজের ছোট বোন সুইটি ভাইয়ের বন্ধু এসেছে তাদের সাথে দেখা করতে এসেছে।

এসেই সরাসরি বলল ভাবী, ভাই ভাবিকে নিয়ে আমার বাসায় চল। রাশেদের কোন আপত্তি নেই। সুইটির গাড়িতেই চলে গেল সবাই। রাশেদ মনিরাকে খোঁচা দিয়ে কানে কানে বলল নিজের পয়সা খরচ করে বেড়ানোর চেয়ে চল ঘুরেই আসি। সুইটি তার বাড়িতে এনে অনেকক্ষণ গল্প গুজব করে বিশাল আয়োজনের চা নাস্তা খাইয়ে আবার এনে দিয়ে গেল। ওর বাড়িটা আরও সুন্দর।
পরদিন ফিরোজ কি একটা কাজে বাইরে গেল। যাবার আগে বলে গেল

আমার ফিরতে বিকেল হবে, আমি এসেই গ্লস্টার যাব এই ফাকে তোমরা ঘুরে আসতে পার। পাশের টিউব স্টেশন দেখেছ। এই নাও লন্ডনের ম্যাপ। টিউবের ম্যাপ স্টেশনেই পাবে, ওখান থেকে একটা ম্যাপ নিয়ে নিও তাতে কোথায় কোন লাইন চেঞ্জ করতে হবে বুঝতে পারবে আর জোন এক দুইয়ের ডে টিকেট নিবে তাতে ভাড়া কম লাগবে, সারাদিন ভরে এক দুই নম্বর জোনে ঘুরতে পারবে।
ফিরোজ বের হয়ে যাবার পর কায়সার বেয়াইর কথা মনে হোল। সে যেখানে আসবে বলে ফোন নম্বর দিয়েছে সেখানে ফোন করলো। ফোন ধরল বাড়ির কর্তি। রাশেদ সাহেব জানতে চাইল
কায়সার সাহেব এসেছে কি না।
ওপাশ থেকে জবাব এলো, উনি আজ সকালে এসেছেন।

কায়সার সাহেবকে খুঁজছে জেনে নিতান্ত কৌতুহল বসে ভদ্র মহিলা জানতে চাইল ভাই আপনার বাড়ি কোথায়?
মানিকগঞ্জ।
তাই নাকি? আমাদের বাড়িও মানিকগঞ্জ।
এ কথা সে কথায় জানা গেল মনিরা যে স্কুলে পড়েছে এই ভদ্র মহিলাও সেই স্কুলের ছাত্রী।
ভাই তাহলে আমাদের এখানে আসবেন না?
বলেই তার বাড়ির ঠিকানা সহ কোন লাইনের টিউবে কি ভাবে যেতে হবে কোথায় নামতে হবে সব হর হর করে বলে দিল।
আচ্ছা ঠিক আছে দেখি যদি পারি তাহলে আসব তবে আমাদের বিকেলের আগেই ফিরতে হবে, আমরা আবার গ্লস্টার যাবো।
আপনারা আসুন আমি কায়সার ভাইকে বলে রাখছি।
বলবেন আমরা বিকেলে গ্লস্টার যাবো উনি চিনে সে জায়গা, গত বৎসর বেয়াইনকে নিয়ে এসেছিলেন তখন গিয়েছিলেন। আচ্ছা বলবো, আপনারা এখনই চলে আসেন।

ফোন রেখে রাশেদ সাহেব মনিরাকে বললো চল কোথাও থেকে ঘুরে আসি। মনিরাকে চমকে দেয়ার জন্য আসল কথা চেপে গেলেন।
না ভাবীকে ছাড়া আমি কোথাও যাব না, যেতে চাইলে তুমি একা যাও।
আরে আমি তো থাকছি, তুমি চলে যাবে বলে একটু দেখে যাও, না হলে দেশে গিয়ে মেয়েদের বলবে কি?

ভাবী বলল যান না ভাবী, ভাই কি আর আপনাকে হারিয়ে রেখে আসবে?বাব্বা যে টান! এই মানুষ কি আপনাকে বদলিয়ে বিলাতি মেম নিয়ে ফিরতে পারবে?তাহলে ভয় কিসে?যান ঘুরে আসেন। শুনেছি ভাই তো সারা জীবন প্রায় বিদেশেই কাটিয়েছে সে কি আর হারিয়ে যাবে?আপনি নিশ্চিন্তে যান। বিকেলে তো আমি যাচ্ছি, আমাকেই ড্রাইভ করতে হবে সারা পথ, আমার সাথে বের হলে ও ড্রাইভ করতে চায় না। আপনারা যান ঘুরে আসেন আমি রাতের রান্না বান্না দেখি। তারা তারি রেডি হয়ে নেন, বাইরে কিন্তু বেশ ঠান্ডা।

ওরা বের হয়ে কাছের যে টিউব স্টেশন সেটা ফিরোজের বাড়ি থেকে মাত্র দুই মিনিটের পথ, ওখানে যেয়ে ফিরোজের কথা মত দুইটা ডে টিকেট নিয়ে একটা টিউব ম্যাপ নিয়ে সেন্ট্রাল লাইনে চেপে বসল। এই ইস্ট একটন স্টেশনটা টিউব স্টেশন হলেও মাটির উপরে। তবে ট্রেন মিনিট তিন চারেক চলার পরেই সুরঙ্গের মত লাইনে ঢুকে পরে। ওখান থেকে স্টার্টফোর্ট স্টেশনে নেমে জুবিলী লাইন ধরে ক্যানিঙ্টাউন স্টেশনে নেমে উপরে উঠে ভদ্র মহিলার কথামত পূর্ব দিকে কিছুটা যাবার পর ম্যাকডোনাল পার হয়ে চার পাচ মিনিট হেটে বাসা পেল।[চলবে]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×