somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাজেট ভাবনা বাজেট কচড়া।। রেজা ঘটক

১৪ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাজেট কি?
একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে সরকারের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব বিবরণীকেই বলা হয় বাজেট। বাজেটে সরকারের আয়ের বিভিন্ন উৎস এবং ব্যয়ের বিভিন্ন খাত লিপিবদ্ধ থাকে। আর সরকারের একটি নির্দিষ্ট সময়ের আর্থিক পরিকল্পনার সুষ্ঠু প্রতিফলন থাকে বাজেটে। যে কোন দেশের বাজেটের ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম পরিলক্ষিত হয়। আমদের দেশে প্রতি বছর জুন মাসে বাজেট আসে। ১লা জুলাই থেকে সেই বাজেট কার্যকর হয়। আবার পরবর্তী বছরের জুন মাসের ৩০ তারিখ বাজেট শেষ হয়। সাধারণত বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে মাননীয় অর্থমন্ত্রী প্রতি বছর জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশে যারা যখন ক্ষমতায় থাকেন তারাই বাজেট পেশ করেন। আর তারা তখন বলেন, এটি অতিশয় গণমুখী বাজেট। আর যারা বিরোধী দলে থাকেন, তারা তখন বলতে থাকেন যে, এটি শতভাগ গনবিরোধী বাজেট। অর্থনীতির এক রসিক ছাত্রের মতে, বাজেট হচ্ছে এমন একটা বিষয় যা সব সময় ফেল করে। আর রসিক ছাত্রের স্যার বলেন, আরে বোকা বাজেট হচ্ছে, যা সবাই টেবিল থাপড়িয়ে পাশ করে এবং বছর শেষে যা আবার ফেল করে। নম্বর বেশি দিয়ে পরীক্ষায় পাশ করা গেলেও, বাজেটে কাট ছাট করে, সব হিসেব কমিয়ে বছর শেষে আবারো টেবিল থাপড়িয়ে, ফেল করা বাজেট পাস করানো হয়। বাজেট অর্থনীতির জটিল বিষয় হলেও রসিক ছাত্র আর তার স্যারের বক্তব্য অনুযায়ী, আমাদের জাতীয় বাজেটের চরিত্র এমনই হয়ে গেছে। আমাদের দেশে সব বাজেটই ফেল করে। বাজারের বাজেট ফেল। বাড়ির বাজেট ফেল। মার্কেটে গেলে শপিংয়ের বাজেট ফেল। প্রেমিকার জন্য বরাদ্দ বাজেটও সব সময় ফেল করে। তবে ব্যক্তি জীবনে টাকার অভাবে বাজেট ফেল করলেও জাতীয় বাজেটে টাকা খরচ করার জায়গা না পেয়ে বাজেট ফেল করে। আমাদের অনেক রাঘব বোয়াল টাকা খাওয়ার বিশাল সুযোগ পেয়েও খেতে পারেন না। প্রতি বছরই বাজেটে বিভিন্ন বরাদ্দের টাকা খরচ না করার কারণে সেই টাকা ফেরত যায় । এর থেকে কষ্টের আর কী হতে পারে! আমাদের দেশের সম্মানিত শাসকরা টাকা খরচ করাও ঠিকমত শেখেন নাই!
আমাদের জাতীয় বাজেটের সবচেয়ে আলোচিত দিক হচ্ছে বাজেটে পাশের আগেই সকল জিনিসপত্রের দাম বাড়া। অনেকটা যেন সন্তান হওয়ার আগেই পিতা হওয়ার মত ব্যাপার! গত বছর (২০১২) বাজেটের আগে হঠাৎ করেই বাজারে কোনো সিগারেট নাই। সব সিগারেট হাওয়া। দোকানদার বলেন, সাপ্লাই নাই, সিগারেট দেব কোথা থেকে? তবে বাজেটের পরপরই তামাক ক্ষেত থেকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে সিগারেট সোজা দোকানে চলে আসার নিয়ম। কেবল আগের দামের সঙ্গে ওই খুড়ানোর দামটা যোগ হয়। কেবল সিগারেট না। চাল-ডাল-চিনি, আলু-পটল-লাউ, পিঁযাজ-রসুন-আদা, হলুদ-মরিচ-লবন, মাছ-মাংস-সবজি এমন সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসও দাম বাড়ার কবল থেকে বাদ যায় না।
ইকোনমিক্সে প্রদর্শন প্রভাব বা র্যাচেট ইফেক্ট যা, পদার্থবিজ্ঞানে তা হচ্ছে আবেশিত হওয়া। আমাদের দেশের কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে শেয়ার বাজার সব জায়গায় এই সুত্রটা শতভাগ কাজ করে। কোনো কোনো জায়গায় আবার একটু বেশিও করে। যেমন বাজেটে গরুর ওপর কর বসানো না হলেও গরুর মাংসের দাম বাড়ে। বিক্রেতার যুক্তিরও শেষ নাই। ভাই শোনেন নাই বুঝি, নাইলনের দড়ি আর ব্যাটারির ওপর সরকার ট্যাক্স বসাইছে? ফলে বেড়ে গেছে দড়ি আর ব্যাটারির দাম। এর প্রভাবে বাড়ছে গরুর মাংসের দাম। তাদের যুক্তি- গরুর গলায় তো নাইলনের দড়ি লাগিয়েই আনতে হয়। তাছাড়া রাতের আঁধারে বর্ডার পার হওয়ার সময় টর্চ লাইটের প্রয়োজন নিশ্চয়ই কম নয়। দোকানদারের যুক্তি শুনে আপনি শতভাগ অর্থনীতি বুঝে ফেলবেন। আবার বাকরুদ্ধ হলেও কিছু করার নেই। অর্থনীতিতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বলে একটা শব্দ আছে না! আপনি তখন ভোক্তা বা ক্রেতা হিসেবে ব্যাকওয়ার্ড শিফট করবেন।

তো এই চলছে আমদের দেশে। আসলে আমরা কেমন বাজেট চাই সেটাই আমি এই আলোচনায় বলতে চাই। একটি বছরের বাজেট যদিও গণ মানুষের ভাগ্যের কোন আমূল পরিবর্তন আনতে পারবে না। কিন্তু একটি ভাল বাজেট ভবিষ্যতের জন্য পথ প্রদর্শক হতে পারে, এতে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। বাজেট হতে হবে বাস্তব অর্থাৎ এটি হতে হবে বাস্তবায়ন যোগ্য। এমন বাজেট আমরা চাই যা সত্যিকার অর্থে জনকল্যানমুখী হবে। সাধারন মানুষ দেখতে পাবে এর মধ্যে তার জন্যও কিছু বরাদ্দ রয়েছে যাতে, করে সে অনুভব করতে পারে যে, সেও এই বাজেটের একটি অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ। তবেই বাজেট তার সার্থকতা পাবে। বাজটের আগে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এবং বিভিন্ন সংগঠন নানা দাবি পেশ করেন। বাস্তবে তার কতটুকু বাজেটে জায়গা পায় তা হয়ত আমরা জানতে পারি না । কিন্তু এটি যে বাজেট প্রনেতাদের কিছুটা হলেও চিন্তার খোরাক যোগায় তাতে সন্দেহ নাই। যেহেতু এ বছরের বাজেট বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এতে নির্বাচন মুখী কিছু প্রস্তাবনা থাকতে পারে। তবে উচিত হবে যত সম্ভব এটি কম রাখা যায়। জনগণকে সাময়িক খুশী করতে যেয়ে তা যেন ভবিষ্যতের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ না হয়, সেদিকে বাজেট প্রণেতাদের দৃষ্টি দিতে হবে।

আগামী বাজেটে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি বাজেট প্রণেতাদের দূষ্ট আকর্ষণ করছি:
১. বাজেট হতে হবে অবশ্যই গণমুখী। সরকারকে অবশ্যই একটি গরিব-বান্ধব বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। বাজেট হতে হবে অবশ্যই গরিবের জন্য সহনশীল।

২. কৃষক-শ্রমিকবান্ধব বাজেট চাই। যে বাজেটে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে। শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটবে। যে বাজেটে স্বল্প সময়ে কৃষকের জন্য ঝামেলাহীন ও সহজ ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা থাকবে। কৃষি উপকরণ, সার ও কীটনাশক সহজলভ্য ও কম মূল্যে থাকবে। কৃষকের ঘাম ঝরানো উৎপাদিত কৃষিপণ্য যাতে মধ্যস্বত্বভোগী বা ফড়িয়া বা দালালদের কাছে বিক্রি করতে না হয় সে জন্য সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় ক্রয়ের ব্যবস্থা থাকবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তাৎক্ষণিক ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকবে। ঘাম ঝরানো, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ যাতে মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে, সেজন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য কম থাকবে।
এছাড়া বাজেটে শিল্প ও কৃষিতে উত্পাদন বাড়াতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা থাকতে হবে।

৩. আয় বৈষম্য কমিয়ে আনতে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। এছাড়া আঞ্চলিক বৈষম্য কমাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা দলীয় সংর্কীনতার উর্ধ্বে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাজারে সুষ্ঠু নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের খুশিমত পণ্যের দাম আদায় করছে। নজরদারি বাড়াতে বাজেটে বিশেষ অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে।

৪. দরিদ্র জনসাধারণের ওপর ভ্যাটের চাপ কমিয়ে প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। সাধারণভাবে সকল করদাতার জন্যে ন্যূনতম আয়কর সীমা এক লাখ টাকা এবং ন্যূনতম কর ১০ হাজার টাকা করা যেতে পারে। দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে। তাদের জন্য কর রেয়াতের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ভ্যাটের মাধ্যমে তাদের করের আওতায় আনাটা মোটেও গরিব বান্ধব বাজেটের নীতিতে পরার কথা নয়।

৫. সাধারণভাবে করদাতাদের জন্য আয়কর প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে। এবং প্রতি বছর জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ৩১ জুলাই তারিখের মধ্যে সকল করদাতার কর প্রদান বাধ্যতামূলক করা উচিত। যার আয় যতো বেশি তাকে ততোবেশি কর প্রদান করতে হবে। কর আদায়ে সরকারের কোন ধরনের আপোষ ফর্মূলা বিপরীতে পরোক্ষ কর আদায়ে উৎসাহিত করার সামিল। যাদের টাকা বেশি তারা সব সময় সরকারকে কর আদায়ের ব্যাপারে কুপরামর্শই প্রদান করেন এটা এখন বা্স্তবতা।

৬. খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও চিকিত্সা সেবায় ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ, এই তিনটি জিনিসের সঙ্গে গরিব মানুষ সরাসরি জড়িত। কৌশলে এসব পন্যের উপর পরোক্ষ কর চাপানো হলে তা মোটেও গরিব বান্ধব বাজেটের মধ্যে পরবে না। পরোক্ষ করের আওতা কমিয়ে প্রত্যক্ষ করের সীমা বাড়াতে হবে। কারণ, পরোক্ষ করের (ভ্যাট) সবচেয়ে বেশি শিকার হন গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষ। যা গরিব বান্ধব বাজেটের পরিপন্থী।

৭. শিক্ষাখাতে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি গ্রামের অবহেলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রাধান্য দিতে হবে। গ্রামের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় শ্রেণীকক্ষ নেই। প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ নেই। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতা প্রকট। অনেক বিদ্যালয়েই পাঠাগার নেই। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে গবেষণাগারও নেই। উপকরণ সঙ্কটের কারণে সেখানে সারা বছরই শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা কার্যক্রম আরও বাড়াতে বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ দিতে হবে। পাঠাগারে প্রচুর দেশি-বিদেশি জার্নালের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সকল মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ের পাঠাগারে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে।
শিক্ষা হতে হবে অবশ্যই কর্মমুখী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় অধিক অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। শিক্ষাখাতে অপরিকল্পিতভাবে নামমাত্র সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ হবার কারণে শিক্ষাখাতের সেই উন্নয়ন দেশের উন্নয়নে প্রকৃতভাবে কাজে লাগছে না। মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষায় উন্নত করতে হবে। নইলে হাজার হাজার কওমী মাদ্রাসা থেকে বছর শেষে লাখ লাখ ইসলামের হেফাজতী বের হবে। যারা আবার বায়তুল মোকাররমে এসে কোরআন পোড়াবে। ৪২ বছরের প্রায় প্রতিটি বাজেটে শিক্ষাখাতের নামমাত্র সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ যে কতোটা ভয়ংকর বিষফোঁড়ার সৃষ্টি করেছে, যা এখনই আধুনিক ও যুগোপযুগীভাবে ঢেলে না সাজালে ভবিষ্যতে এই হেফাজতীরাই বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানাতে লিপ্ত থাকবে। অতএব সাধু সাবধান।

৮. যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষ করে সড়ক, রেল ও নৌপথকে ঢেলে সাজানোর জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। কেবল একটা পদ্মা সেতুর মূলা ঝুলিয়ে বা একটি ঢাকা-চট্টগ্রাম কমুটার রেলের ধুয়া তুলে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের সকল জেলার সঙ্গে রেলপথ ও রেল যোগাযোগ চালু করতে হবে। আপাতত সেতু মেরামতে জোর না দিয়ে রেলপথ চালুতে মনযোগী হওয়া উচিত। দেশের মানুষ ফরিঘাটের ঝক্কি ঝামেলা আর দেরি সইতে পারবে। কিন্তু দুর্নীতি জালিয়াতি এসবের সীমাহীন কষ্টের ঝক্কি সইতে পারবে না। দেশের সকল যোগাযোগ মাধ্যম যেমন টেলিফোন, ইন্টারনেট, ফ্যাক্স ইত্যাদি আরো সহজলভ্য করতে হবে।

৯. অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের সকল প্রান্তে গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে না পারলে পঞ্চগড়ের মানুষ টিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসবে। আবার বাগেরহাটের মানুষ কর্মের সন্ধানে কক্সবাজারে যাবে। তাই অঞ্চল ভিত্তিক বিশেষায়িত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উপর বাজেটে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বরাদ্দ রাখতে হবে। যা দেশের বিপুল সংখ্যক বেকার ও কর্মহীন মানুষের বেকারত্ব লাঘব করবে। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু বরাদ্দ ও ভর্তুকি না বাড়িয়ে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা বাড়ানো জরুরী। শিল্পের অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মমুখী শিক্ষার প্রচলন, সামাজিক ন্যয়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে বাজেটে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। যুগোপযুগী সেবাখাত সম্প্রসারণে পদক্ষেপ নিতে হবে।

১০. ধনিক শ্রেণীর ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রী, বিশেষ করে সব ধরনের বিলাসবহুল দ্রব্যসামগ্রী যেমর ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার, মাইক্রো ইত্যাদির মূল্য বাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ যারা পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি কেনার ক্ষমতা রাখে, তারা ১০ লাখ টাকায়ও তা কেনার ক্ষমতা রাখে। তাই সকল বিলাসদ্রব্যের দাম এবং পরোক্ষ কর বাজেটে বাড়াতে হবে।

১১. মন্দা মোকাবেলায় আমদানি বিকল্প পণ্য উত্পাদনে জোর দিতে হবে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষি নির্ভর কাঁচামাল সামগ্রী যাতে শিল্পখাতে ব্যবহার করা যায়, বাজেটে তা গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনায় আনতে হবে এবং সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ দিতে হবে। কৃষি নির্ভর শিল্প উৎপাদনে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। লোকসানি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক করতে বাজেটে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

১২. বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। নতুন বাজেটে যেন দ্রব্যমূল্য কমানোর সঠিক পদক্ষেপ থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। বিদ্যুৎ গ্যাস জ্বালানি সঙ্কটের সমাধান খুঁজতে হবে। বিনিয়োগ ছাড়া উত্পাদন বাড়বে না, তাই বিনিয়োগ বান্ধব কৃষি নির্ভর শিল্প চালু করতে হবে। কর্মসংস্থান ব্যাপক পরিকল্পনা বাজেটে থাকতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা উন্নত রাখতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নেও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শুধুমাত্র বছর শেষে কাটছাটের নামমাত্র বাজেট আমরা চাই না।

১৩. জাতীয় উত্পাদনে প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আয়-বৈষম্য কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু রফতানি আয় বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি না দিয়ে আমদানি ব্যয় কমাতে আমদানি বিকল্প পণ্য উত্পাদনে পদক্ষেপ নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত। বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় নতুন করে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া মোটেও উচিত হবে না। বাস্তবায়ন হবে না এমন বাজেট আমরা চাই না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা আগামী বাজেটে সত্যিসত্যিই থাকতে হবে।

১৪. দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে আগামী বাজেটে জাতীয় উত্পাদনের কমপক্ষে সাড়ে তিন শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও সেবাখাতের সম্প্রসারণে বাজেটে বিশেষ প্রাধান্য দেয়া উচিত। তাছাড়া কৃষি উত্পাদন নিশ্চিত করার স্বার্থে কৃষিতে ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। চিকিত্সা সামগ্রীর ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর মূসক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা উচিত। চিকিত্সা ক্ষেত্রে সেবাখাত ও বিশেষ করে ক্লিনিকগুলোর ভ্যাটও প্রত্যাহার করা উচিত। তাছাড়া মেডিকেল শিক্ষায়ও করারোপ করা উচিত নয়। কারণ, এসব খাত থেকে মূসক আদায় করা হলে এর প্রভাব রোগীদের ওপরই পড়ে। তাছাড়া গরিব মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা কোনো কল্যাণকামী রাষ্ট্রের পক্ষে উচিত নয়। দেশে চিকিত্সা পরিস্থিতির উন্নতি হলে চিকিত্সা নিতে কেউ বিদেশ যাবেন না। এতে করে বিদেশি মুদ্রারও সাশ্রয় হবে।

১৫. জাতীয় প্রবৃদ্ধি, বণ্টন ও দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে নতুন বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। রফতানির প্রবৃদ্ধিও নিম্নমুখী। এ অবস্থায় উত্পাদন ও রফতানি বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে প্রথমেই গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রতি বছরই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বিরাট একটা অংশ ব্যয় করা সম্ভব হয় না। তাই বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের আমদানি ব্যয় অবশ্যই কমাতে হবে। এর জন্য বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো সমস্যা সমাধান করা জরুরী। একটা দেশের শিল্প কতটুকু বিকশিত হবে তা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের ওপর নির্ভর করে।

১৬.অবকাঠামো ঠিক না হলে বিনিয়োগ বাড়বে না। আর দুর্নীতি দূর করতে না পারলে লাভের মৌ সুখপিঁপড়ায় খেয়ে ফেলবে। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘাতের পথ পরিহার করে অংশগ্রহণমূলক জনকল্যানমুখী রাজনীতি করতে হবে।

১৭. বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় বাড়াতে হবে। বয়স্ক ভাতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিশেষ তহবিল গঠন করতে হবে। আগামী বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর নের্তৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় শিশু তহবিল গঠন করার প্রস্তাব করছি।

১৮. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে। বিচার বিভাগকে পৃথক ও স্বাধীন করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে নতুন বাজেটে উদ্যোগ থাকতে হবে। বিচার বিভাগ স্বাধীন করার সিদ্ধান্ত হলেও অর্থ বরাদ্দের জন্য এখনো সরকারের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। সুপ্রিম কোর্টে পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। সারাদেশের বিচার প্রার্থীরা সুপ্রিমকোর্টের দিকে চেয়ে থাকেন। সুপ্রিম কোর্টে মামলার স্তূপ পড়ে থাকলেও পর্যাপ্ত বিচারক না থাকায় এসব মামলার সুরাহা হচ্ছে না। উচ্চ আদালতে পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগ দেয়া হলে বিচারপ্রার্থীরা সহজেই সুবিচার পাবেন।

১৯. খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল কমাতে নতুন বাজেটে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। প্রতিনিয়ত ভেজাল খাবার খাওয়ায় জনস্বাস্থ্য এখন হুমকির মুখে দাঁড়িয়েছে। খাদ্যে ভেজালের কারণে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল দূর করতে বিচারিক আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে হবে। এজন্য পর্যাপ্ত অর্থের বরাদ্দ আগামী বাজেটে রাখা প্রয়োজন।

২০. ভর্তুকি দিয়ে হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রণোদনা দেয়ার পরিবর্তে বাজেটে ক্যাপিটাল মেশিনারি উত্পাদনে প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। পোষাক রফতানিতে প্রণোদনা দেয়া হলে তার সুবিধা মালিক পক্ষই কেবল পায়। দরিদ্র শ্রমিকরা এ থেকে কিছুই পায় না। অন্যদিকে মেশিনারি তৈরিতে প্রণোদনা দেয়া হলেও আমাদের আমদানি ব্যয় অনেক কমে যাবে।

২১.জনসাধারণের কাছ থেকে আদায় করা সকল কর ও ভ্যাটের টাকা যেন সরকারের কোষাগারে জমা হয় তা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, আমরা একটি গরিব বান্ধব, কৃষক-শ্রমিক বান্ধব, পরিবেশ বান্ধব যুগোপযুগী বাস্তব সম্মত বাজেট চাই। আসন্ন বাজেট যেনো নির্বাচনী বইতরণী পার হবার বাজেট না হয়ে গণমুখী বাজেট হয় সেই প্রত্যাশা রইল। পাঠক, আপনাদের বাজেট ভাবনা এখানে শেয়ার করতে পারেন। আপনাদের বাজেট ভাবনা জানার ইচ্ছে নিয়ে আপাতত শেষ করছি।


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৩ সকাল ৭:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×