somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গত ২৪ ঘন্টায় ভারত উপমহাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সংঘটিত ভূমিকম্প এবং আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বক্তব্য!!!

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২৪ ঘন্টায় ভারত উপমহাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বেশ কিছু ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে।

প্রথমটি হয় গত ১০ই সেপ্টেম্বর গ্রীনিচ মান সময় ১৬ টা ৪০ মিনিটে,বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৪০ মিনিটে, যার মাত্রা ছিল ৪।

পরেরটি হয় একই দিন গ্রীনিচ মান সময় ১৭ টা ২৫ মিনিটে,বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টা ২৫ মিনিটে, যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৮। ১ম ২টির উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের কুমিল্লা।

৩য় টির উৎপত্তিস্থল ভারতের পূর্ব কাশ্মীরে ১১ তারিখ গ্রীনিচ মান সময় ৩ টা ১০ মিনিটে,বাংলাদেশ সময় সকাল ৯ টা ৪০ মিনিটে। মাত্রা ছিল ৪.৮। বাংলাদেশে এর কোন প্রভাব পড়েনি।

চতুর্থটি হয় ভারতের মেঘালয়ায় (আমার মনে হয়,এই ভূমিকম্প হয়ত একটা বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস। এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পোস্টের শেষে দিচ্ছি।) ১১ই সেপ্টেম্বর গ্রীনিচ মান সময় ৭ টা ০৩ মিনিটে,বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ০৩ মিনিটে।মাত্রা ছিল ৪.৬। দেশের প্রধানত উত্তরাঞ্চলে মৃদু কম্পন কম্পন অনুভূত হয়।

৫ম টির উৎপত্তি ইন্দোনেশিয়ায় ১১ ই সেপ্টেম্বর গ্রীনিচ মান সময় ০৭ টা ১২ মিনিটে,বাংলাদেশ দুপুর ০১ টা ১২ মিনিটে।মাত্রা ছিল ৫.৭।

৬ষ্ট টির উৎপত্তিও ইন্দোনেশিয়ায় ১১ ই সেপ্টেম্বর গ্রীনিচ মান সময় ০৮ টা ২৮ মিনিটে,বাংলাদেশ দুপুর ০২ টা ২৮ মিনিটে।মাত্রা ছিল ৪.৭।

৭ম টির উৎপত্তি ভারতের নিকোবার দ্বীপপুঞ্জে ১১ ই সেপ্টেম্বর গ্রীনিচ মান সময় ১১ টা ৪৩ মিনিটে এবং বাংলাদেশ সময় ৫ টা ৪৩ মিনিটে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৪।

এবার আসি অন্য প্রসংগে,আজ সবগুলো টিভি চ্যানেলেই ভূমিকম্প নিয়ে হয়েছে এক বা একাধিক রিপোর্ট। এর মধ্যে কোন একটিতে দেখলাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বক্তব্য। আমার সবচেয়ে খটকা লাগল একটা ব্যাপারে যে সমস্ত ঢাকার মানুষ ২টি , ক্ষেত্রবিশেষে ৩টি ঝাকি অনুভব করল সেখানে এখানকার একজন কর্মকর্তা ডাটা এনালাইসিস করে কিভাবে বলেন যে একটা ভূমিকম্প হয়েছে????!!!! :-/:-/:-/
তারপর সবচেয়ে মজাদার যে বিষয়টা ঘটল যে তারা বলা শুরু করলেন অচিরেই বাংলাদেশে কোন বড় ধরনের ভূমিকম্প হবার সম্ভাবনা নেই!!!! এই পর্যায়ে আমার কাছে তাদের কথাটা ব্যাপক বিনোদনের বস্তু হিসেবে মনে হতে লাগল :D:D:D । আসলে একাডেমিক কারনে আমাকে ভূমিকম্প নিয়ে কিছুটা পড়াশোনা করতে হয়েছে/হচ্ছে। তাই যতটুকুই জানি না কেন আমার কাছে তাদের কথা মিছে সাত্ত্বনা ছাড়া অন্য কিছু মনে হলনা X(X(X( । ব্যাপারটা হল যে আপনারা অনেকেই জানেন যে ভূমিকম্প নিয়ে পূর্বাভাস দেবার কোন প্রযুক্তি এথনও মানুষের কাছে নেই,অদূর ভবিষ্যতেও আসবে বলে আমার জানা নেই(বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আবিস্কার করেছে কিনা তা অবশ্য আমি জানিনা ;););) ) । বিজ্ঞান এথন পর্যন্ত ভূমিকম্পের প্রেডিকশন হিসেবে যা দিতে পেরেছে তার মধ্যে অন্যতম হল টাইম গ্যাপ । সাধারনত কোন ফল্ট জোনে বা প্লেট বাউন্ডারীতে প্লেট মুভমেন্টের কারনে শক্তি জমা হতে থাকে,যা এক সময় নির্গত হবার জন্য ভূমিকম্প হয়।কোন বড় ধরনের ভূমিকম্প হবার সাথে সাথেই ওখানে আবারও শক্তি সঞ্চয় হওয়া শুরু করে। ধারনা করা হয় সক্রিয় সাইসমিক জোনে (ফল্ট জোনে বা প্লেট বাউন্ডারীতে) কোন বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটার প্রায় ১০০ বছর সময়কালের মধ্যে যদি সেটি মোটামুটি নিস্ক্রিয় থাকে তবে ততদিনে সেটিতে আবারও বড় ধরনের শক্তি জমা হয়ে যায় এবং আবারও একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।

এবার চলুন আমরা চলে যাই ১৮৯৭ সালে। ভারতের আসামে জুনের ১২ তারিথে সংঘটিত হয় স্মরনকালের ভয়াবহতম ভূমিকম্প।যার মাত্রা ছিল ৮.১ থেকে ৮.৩ । প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতি হয় ভারত এবং বর্তমান বাংলাদেশে, মারা যায় ১৫০০ এর উপরে মানুষ(চিন্তা করুন সেই আমলে মানুষ ছিলই বা কত?)। এটি পরিচিত আসাম আর্থকোয়াক বা দি গ্রেট বেঙ্গল আর্থকোয়াক নামে। এই ভূমিকম্পটি ঘটে বাংলাদেশের জন্য অন্যতম ঝুকিপূর্ন ফল্টে যা ডাউকি ফল্ট নামে পরিচিত। এরপরের ঘটনা খুবই নিরীহ ডাউকি ফল্টে সেরকম ভূমিকম্প আর হয়নি বললেই চলে...কিন্তু ১১ই সেপ্টেম্বর ২০১০; পার হয়ে গেছে ১১৩ টি বছর...আজ আবার ডাউকি ফল্ট জানান দিল সে হয়ত আবার প্রস্তুত করে ফেলেছে নিজেকে।
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প এবং এই ভূমিকম্পের জিপিএস লোকেশন প্রায় একই জায়গায়।

১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের জিপিএস লোকেশন: 26° N, 91° E
২০১০ সালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের জিপিএস লোকেশন: 25.852°N, 90.811°E





১ম চিত্রে ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।
২য় চিত্রে ২০১০ সালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।

তাই বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হবার সম্ভাবনা নেই বলাটা মনে হয় ঠিক হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:৫১
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নজরুলের চিন্তার কাবা প্রাচ্য নাকি পাশ্চাত্য?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:০৫


কাজী নজরুলের বড় বিপত্তি তিনি, না গোঁড়া ধর্মীয় লোকের কবি আর অতিমাত্রায় বামের কবি, না হোদাই প্রগতিশীলের কবি। তিনি সরাসরি মধ্যপন্থীর। অনেককেই দেখি নজরুলের কিছু কথা উল্লেখ করে বলেন কাফের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিনিদের আত্মদান ধর্মযুদ্ধ নয়; এটি স্বাধীকারের যুদ্ধ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৬ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৬

বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা যেকোন বিষয়কে ধর্মীয় ফ্লেভার দিয়ে উপস্থাপন করে৷ ইসলামের সাথে কতটুকু সম্পৃক্ততা তার ভিত্তিতে কনভারজেন্স নির্ধারিত হয়৷ বাঙালি মুসলমানরা এক্ষেত্রে এক কাঠি ওপরে৷ পক্ষ বিপক্ষ বেছে নেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন

লিখেছেন মীর সাখওয়াত হোসেন, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

নজদী ওহাবীদের সম্পর্কে আলােচনা করার পূর্বে নজদ দেশ সম্পর্কে আলােকপাত করতে চাই। আরবের মক্কা নগরীর সােজা পূর্ব দিকের একটি প্রদেশের নাম নজদ । এখন উক্ত নজদ দেশটি সৌদি আরবের রাজধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×