somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাম্প্রদায়িকতা, স্বজাত্যবোধ ও স্বজাতিবিদ্বেষ- ইঞ্জিনিয়ার আবু রামিন সম্পাদিত

১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাম্প্রদায়িকতা:
সমাজের বদলে স্ব স্ব সম্প্রদায়ের প্রতি উগ্র আনুগত্যই হলো সাম্প্রদায়িকতা বা Communalism। অন্য কথায়, যারা অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি অসহিষ্ণু ও বিদ্বেষপরায়ণ তাদেরকেই বলা হয় সাম্প্রদায়িক। ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা যেমন হতে পারে, তেমনি নৃতত্ব বা বর্ণভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতাও হতে পারে।

স্বজাত্যবোধ ও স্বজাতিবিদ্বেষ:
নিজ জাতিকে ভালবাসাই হলো স্বজাত্যবোধ- যা নিন্দনীয় নয় বরং কল্যাণকর। কেবল অন্যায় কাজে নিজ জাতিকে সমর্থন না দিলেই হলো। পক্ষান্তরে, অন্ধভাবে নিজ জাতির প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করাই হলো স্বজাতিবিদ্বেষ; যা একটি ত্রুটি; ভালো গুণ নয়।

মূলত ইসলামের উপরই সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ কেন?
বিশ্বে অনেক ধর্মে বা মতাবলম্বীদের মধ্যেই অন্য ধর্ম বা মতের প্রতি উন্মত্ত অসহিষ্ণুতা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারেকে সাম্প্রদায়িক বা উগ্রপন্থী বলে অভিহিত করা হচ্ছে না। যেমন: উগ্র ইহুদী বা জঙ্গী হিন্দুদের পাশ্চাত্য দুনিয়া তেমন একটা সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করছে না। এতে এটাই বুঝা যায় যে, কেবল মুসলিমদের বিরুদ্ধেই ‘সাম্প্রদায়িক’ শব্দটির অপপ্রয়োগের মূলে রয়েছে আর্থ-রাজনৈতিকসহ নানামুখী স্বার্থপ্রবণতা।
বর্তমান দুনিয়ায় ইসলামের যতো দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে, অন্য কোনো ধর্মের ক্ষেত্রেই তা ঘটছে না। ইসলামের এই পুনর্জাগরণের প্রেক্ষিতে পাশ্চাত্য জগৎ ইসলামের প্রতি দলন ও তোষণ, উভয় প্রকার নীতিই যুগপৎ গ্রহণ করছে। আর এরই অংশ হচ্ছে ইসলামের উপর সাম্প্রদায়িকতার মিথ্যা অভিযোগ আরোপ।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের দাবি হচ্ছে বাংলাদেশের ইসলামী শক্তি মাত্রই সাম্প্রদায়িক। তাহলে এতো সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশে বিরাজ ও সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও শতাব্দীকাল ধরে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকলো কি করে? এ থেকে বরং একথাই কি প্রমাণিত হয় না যে সাম্প্রদায়িক শক্তি বলে যাদেরকে প্রমাণ করার অন্যায় চেষ্টা করা হয় তারা আসলেই সাম্প্রদায়িক নয়?

উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতার শুরু:
বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিল্পপতি ড. মাযহারুল ইসলাম বলেন, “নবজাগ্রত হিন্দু সমাজ মুসলমানকে অপাংক্তেয় ভেবে দূরে সরিয়ে রেখে ইংরেজ প্রভুদের কাছ থেকে সমগ্র সুযোগ-সুবিধা বিচ্ছিন্নভাবে শুধু নিজেরাই ভোগ ষড়যন্ত্রে সক্রিয়ভাবে লিপ্ত ছিলেন।”
জওহরলাল নেহেরু বলেন, ভারতের অন্যান্য সমস্ত প্রদেশের চেয়ে বাংলাদেশেই মুসলমানের সংখ্যা বেশি।.. জমিদার সাধারণত হতো হিন্দু।.. জমিদার এবং বানিয়া প্রজার ঘাড়ে চেপে বসে তার রক্ত শুষে নেবার সুযোগ পেতো। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিতে ছাড়তো না।.. হিন্দু আর মুসলমানের মধ্যে যে বিরোধ তার মূল রয়েছে এখানে। (বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা-৯, পৃষ্ঠা ৩৮১)
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় ভারতে হিন্দু ছিলো ৩০ কোটি আর মুসলিম ছিলো ১০ কোটি। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা সংখ্যালঘু মুসলিমদের সবদিক থেকেই বঞ্চিত করতো। তাদের শোষণ, বঞ্চনা ও অমানুষিক নির্যাতন এদেশের চিরায়ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেয়ালে চেড় ধরার জন্য যে অনেকটা দায়ী তা অনস্বীকার্য।
উচ্চ বর্ণের উগ্র হিন্দুদের মাত্রাহীন যুলুম ও উস্কানী সত্ত্বেও বাংলার মুসলমানেরা তাদের হিন্দু প্রতিবেশীদের সাথে সুদীর্ঘকাল ধরে যে মৈত্রী ও সৌহার্দের সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে তার তুলনা জগতের ইতিহাসে বিরল।

বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িকতার দাবিদারগণ প্রকৃতই কতটা অসাম্প্রদায়িক?
একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি নিশ্চয়ই কোনো ধর্মকে বা ধর্মপালনকারী কোনো গোষ্ঠীকে নিজে তো গালি দেবেনই না উপরন্তু কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কেউ গালি দিলে তারা অবশ্যই তার নিন্দা জানাবেন।
ভারতে গত পঞ্চাশ বছরে গড়ে প্রতিদিন একটিরও বেশি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে, অথচ সাম্প্রদায়িক (?) হওয়ার ভয়ে আমাদের নিরপেক্ষ (?) বুদ্ধিজীবীরা এর প্রতিবাদ করে কোনো প্রবন্ধ লেখেননি। আসাম-কাশ্মীরের মুসলিম নারীদের জীবন ও সম্ভ্রম ভারতীয়দের দ্বারা নষ্ট হয়েছে কিন্তু এদেশের তথাকথিত নারীবাদীরা তার বিরুদ্ধে কোনো আওয়াজ তোলেননি। মায়ানমারে মুসলিম হত্যাযজ্ঞে নাফ নদীর পানি লাল হয়ে গেলেও স্বঘোষিত অসাম্প্রদায়িকরা এই জঘন্য বর্বরতার প্রতিবাদ করেননি। মুসলিমদের বিপর্যয়ের খবর শুনলে তারা পুলকিত হয়, মুসলিমের লাশের গন্ধ পেলে তারা উল্লসিত হয়। স্বাজাতির দু:খে আনন্দিত হবার মতো এমন পৈশাচিকতা জগতের আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না।
বাবরী মসজিদ ভাঙ্গা, আইন করে ভারতের বিভিন্ন শহরে গরু জবাই নিষিদ্ধ করা বা মাইকে আযান নিষিদ্ধ করার মতো কলঙ্কিত ঘটনার পরেও এই স্বঘোষিত অসাম্প্রদায়িক লোকেরা প্রতিবাদে টু শব্দটিও করেনি; বরং কোলকাতার অনুকরণে বাংলাদেশে আযান বন্ধের স্বপ্ন দেখছে কেউ কেউ।

ইসলাম সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী:
১.ইসলাম কেবল মুসলমানের ধর্ম (জীবনবিধান) নয় বরং ইসলাম সমগ্র মানবতার ধর্ম। পবিত্র কুরআনে যেমন মুসলিমদের সম্বোধন করে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তেমনি সমগ্র মানব জাতিকে সম্বোধন করেও আহ্বান রাখা হয়েছে।
২.মুসলিম যদি অন্যায়ভাবে অমুসলিমকে কষ্ট দেয় তাহলে ইসলাম ঐ মুসলিমের (অন্যায়ের) বিরুদ্ধে থাকতে শিক্ষা দেয়।
৩.প্রতিবেশীর অধিকার বিষয়ে ইসলাম অত্যন্ত জোরালো বক্তব্য রেখেছে এবং সেক্ষেত্রে মুসলিম-অমুসলিমের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয়নি।
৪.রাসূল (সা.) বিধর্মীদের দেবদেবতাদের গালি দিতে নিষেধ করেছেন।
৫.রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মযলুম যদি বিধর্মীও হয়, তবু তার দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।” (তরগিব, হাসনে হাসিনা, হাদীসে কুদসী)

ইসলামে মানবতার মুক্তি; কেবল মুসলিমের মুক্তি নয়:
বস্তুত: একটি ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমরা যে সামাজিক নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন, তা অন্য কোনো ব্যবস্থায় কল্পনা করাও সম্ভবপর নয়।

শেষকথা:
‘সাম্প্রদায়িকতা’ শব্দটি ইসলাম বিদ্বেষীদের ব্যবহৃত একটি মারাত্মক ক্ষেপনাস্ত্র যার লক্ষ্য ইসলামের অনিবার্য উত্থানকে বিলম্বিত করা।
শ্রেষ্ঠ জ্ঞান, সেরা আমল, দক্ষ নেতৃত্ব, নিরন্তর সাধনা আর আত্মত্যাগের কোনো বিকল্প নেই। সর্বোপরি, আল্লাহর সাহায্যই হচ্ছে মুমিনের সকল সাফল্যের মূল নিয়ামক।

তথ্যসূত্র:
১.ধর্মনিরপেক্ষতা মৌলবাদ সাম্প্রদায়িকতা ও ইসলাম- হারুনুর রশীদ (চিন্তাবিদ কলামিস্ট)
২.মৌলবাদ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ- মুজাহিদুল ইসলাম, প্রকাশক- মুহাম্মদ আশরাফুল হক, সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিজ, প্রকাশ: ১৮ জুন ১৯৯৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×