somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাকাত নিয়ে স্বল্প পরিসরে কয়েকটি কথা, হয়তো কারো কাজে লাগতে পারে

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যাকাত একটি ফরজ এবাদাত।
মাহে রমজান আমাদের মাঝ থেকে বিদায়ের পথে। অনেকেই এই মাসে তাদের যাকাত আদায় করে থাকে। জাকাত নিয়ে স্বল্প পরিসরে কয়েকটি কথা, হয়তো কারো কাজে লাগতে পারে

নির্ধারিত পরিমান সম্পদের মালিক হয়ে থাকলে যাকাত ফরজ হয়।কারো নিকট সাড়ে সাত ভরি (৮৫ গ্রাম) স্বর্ণ বা ৫২ তোলা রুপা বা ন্যুনতম তার সম পরিমান অর্থ এক বছর কাল যাবত থাকলে তার উপর যাকাত দেয়া ফরজ। বর্তমান বাজার মুল্যে ৫২ তোলা রুপার সম পরিমান অর্থ আনুমানিক ৩৩০০০ টাকা। অর্থাত এই পরিমান টাকা থাকলে তার উপর যাকাত দেয়া ফরজ। যাকাত যোগ্য সম্পদের উপর 2.5% হারে যাকাত দিতে হয়।

সম্পদের যথাযথ হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। আনুমানিক থোক বরাদ্দের মত আন্দাজে একটি পরিমান নির্ধারন করা ঠিক নয়।

সাড়ে সাত ভরির কম সোনা থাকলে তার উপর কোন যাকাত নাই। সাড়ে সাত ভরির বেশি স্বর্ণ থাকলে পুরো পরিমানের উপর যাকাত দিতে হবে। অর্থাত দশ ভরি স্বর্ণ থাকলে দশ ভরির বিক্রয় মুল্যের উপর শতকরা আড়াই পার্সেন্ট হারে যাকাত দিতে হবে। তেমনি রুপার ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম হবে।

আপনি যেদিন সম্পদের হিসাব করবেন সেদিন আপনার মালিকানাধীন পুরো সম্পদের হিসাব করতে হবে, যদিও কিছু সম্পদের বয়স হিসাবের দিন একবছর পূর্ণ নাও হয়। ধরুন আপনি যেদিন হিসাব করছেন সেদিন আপনার এক লাখ টাকা আছে, এর একটি অংশ হয়ত বিগত ৬ মাসের সঞ্চয়, যার এখনো এক বছর হয় নি। যদি আপনার নিসাব পরিমান অর্থ একবছর থেকে থাকে (৩৩০০০ টাকা) তাহলে পুরো এক লাখ টাকার উপর উপর যাকাত দিতে হবে।

আপনার ব্যাঙ্কে জমানো টাকা, সঞ্চয় পত্র-লাইফ ইন্সুরেন্স-শেয়ারে বিনিয়োগ বা অন্য কোন ব্যাবসায় বিনিয়গ করলে তার উপর যাকাত হিসাব করতে হবে। যাকাত হিসাবের দিন ঐ খাতে ক্যাশযোগ্য টাকা যাকাত যোগ্য সম্পদ হিসাবে গন্য হবে। ধরুন আপনার শেয়ার কেনা আছে, যাকাতের হিসাবের দিন ওই শেয়ারের বিক্রয়মুল্য আপনার যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাবে গণ্য করেতে হবে। তেমনি আপনার ডিপিএস একাউন্ট আছে, যাকাত হিসাবের দিন ঐ একাউন্ট ভাংলে যে টাকা পাওয়া যাবে তা আপনার যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যোগ হবে।

ব্যাবসার উপকরনের উপর কোন যাকাত নাই। তবে বিক্রয়যোগ্য পণ্য বা মজুদ কাঁচামালের মুল্যের যাকাত দিতে হবে। ধরুন আপনার একটি গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রী আছে। এখানে বিল্ডিং করার জন্য, মেশিনারিজ কিনার জন্য যে টাকা খরচ করেছেন তার উপর কোন যাকাত নাই, যদিও এটি এখন আপনার সম্পদ। আপনার কাছে কাপড়/সুতা ইত্যাদি কাচামাল থাকে যা দিয়ে বিক্রয়যোগ্য প্রোডাক্ট তৈরি হবে, তাহলে ওই কাচামালের ক্রয়মুল্য আপনার যাকাত যোগ্য সম্পদ হিসাবে গন্য হবে।

বাড়ি-গাড়ি-জমি-আসবাব পত্র-পোষাক কিম্বা অন্য কোন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রাদির উপর যাকাত নেই।

আয়কর (ইনকাম ট্যাক্স) দিলেও তা যাকাত থেকে বাদ যাবে না। উল্লেখ্য ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয় ইনকামের উপর আর যাকাত দিতে হয় সঞ্ছিত সম্পদের উপর।

আপনি অন্যকে ঋণ দিয়ে থাকলে তা আপনার যাকাত যোগ্য সম্পদের হিসাবে গণ্য হবে। তবে যদি কোন ঋণ মন্দঋণে (অর্থাত টকা না পাবার সম্ভবণা থাকে) পরিণত হয় তা যাকাত যোগ্য সম্পদ থেকে বাদ দিতে পারেন।

আপনার ঋণ থাকলে তা যাকাত যোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে।
প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা যাকাত যোগ্য সম্পদ হিসাবে গণ্য হবে না। যেহেতু এই টাকা আপনার ইচ্ছামত এনক্যাশ করার সুযোগ নেই।

যাকাত বিতরনঃ আলাহ বলেনঃ “ যাকাত হলো কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষন করা প্রয়োজন তাদের, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তের জন্য, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য (যারা সফরে যেয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছে)—এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ-প্রজ্ঞাময়। সুরা তাওবাহ, আয়াত-৬০

এই আয়াতে নির্ধারিত আট টি খাতে যাকাতের টাকা ব্যয় করা যায়।
আপনার কাছের আত্মীয় স্বজন যারা আর্থিক ভাবে দুর্বল তারা আপনার যাকাতের বেশী হকদার।

১০০ জন কে খুচরা টাকা, শাড়ি-লুঙ্গি না দিয়ে একজন কে স্বাবলম্বী হবার মত ব্যাবস্থা করে দিতে পারলে (যেমন একটি দুধের গাভী কিনে দিলেন, দোকান করে দিলেন, অন্য কোন ব্যাবসার পুজি করে দিলেন) তা দারিদ্য বিমোচনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে।

পিতা-মাতা-দাদা-নানা-স্ত্রী-সন্তান এদের কে জাকাত দেয়া যায় না। মসজিদ নির্মানে জাকাত দেয়া যায় না।

জাকাত রমজান মাসেই দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনি আপনার সুবিধামত বছর নির্ধারন করে নিয়ে প্রতি বছর সে ভাবে হিসেব করে যাকাত আদায় করতে পারেন।

আমি যতটকু বুঝি তা লিখলাম, আল্লাহ ভাল জানেন।
আসুন আমরা যাকাত আদায় করি। যাকাত সম্পদ কে পবিত্র করে, সম্পদ বৃদ্ধি করে।পরিকল্পিতভাবে ব্যাবহার করতে পারলে যাকাত দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে।

বিস্তারিত জানতে এই ওয়েব সাইট দেখতে পারেন: http://www.zakatguide.org
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:২৯
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×