somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই ও ব্লেয়ার: জুতা-ডিম-টমেটো

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুনিয়ার বড় বড় লেখক তাঁদের কোনো কোনো বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পাঠকদের কেনা বইয়ে স্বাক্ষর করেন। তা হয়ে ওঠে লেখক-পাঠকের মিলিত আনন্দঘন অনুষ্ঠান। তবে পৃথিবীর ইতিহাসে একজনই নিজের দেশে নয়, বিদেশ-বিভুঁইয়ে তাঁর একমাত্র বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সই করতে গিয়ে চরম বেইজ্জতি হলেন। তিনি যুদ্ধ করে যেমন ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন, বই লিখেও ইতিহাস সৃষ্টি করলেন এবং তাঁর কারণেই এখন থেকে আর কোনো রাজনীতিক যে নিজের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যাবেন, সে সম্ভাবনা খুবই কম। ঘটনাটি ঘটেছে আলফ্রেড নোবেলের এলাকায়: স্ক্যানডিনেভিয়ার এক মহানগরে। অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতেই পচা টমেটো ও ডিমেই যে তাঁর কাপড় নষ্ট হয়েছে তা-ই নয়, তাঁর কান, চোয়াল ও থুঁতনি ঘেঁষে মিসাইলের মতো ছুটে গেছে ছেঁড়া জুতা। সেই লেখকের নাম টনি ব্লেয়ার—বিগ-লাইয়ার বা মহামিথ্যাবাদী নামেই বিশ্বে তাঁর সুপরিচিতি।
ব্লেয়ার একজন রাজনীতিবিদ। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার চেয়েও তাঁর বড় পরিচয়, তিনি ছিলেন ওয়াকার বুশের হুকুমবর্দার।
আটলান্টিকের ওপার থেকে যে নির্দেশ আসত, তিনি তা ‘জি হুজুর আলমপনা’ বলে শিরোধার্য করতেন। তা করতে গিয়ে তাঁরা দুজন একুশ শতকের প্রথম দশকটিকে কলঙ্কিত করে গেছেন। মানুষের ইতিহাসে হিটলারের পরই যাঁর নাম লেখা হবে, সেই নামের পাশে ব্র্যাকেটে যে নামটি লেখা থাকবে, তা এই জুতা-ডিম-টমেটো খাওয়া লেখকের।
রাজনীতিবিদেরা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা লিখে কেউ কেউ বিখ্যাত হয়েছেন। জওহরলাল নেহরুর আত্মজীবনী আমার প্রিয়পাঠ্য কয়েকটি বইয়ের একটি। অতি সুলিখিত বই। আবর্জনাও নয়, মিথ্যা কথার প্যাকেটও নয়। স্যার উইন্সটন চার্চিলও ছিলেন ব্লেয়ারের মতোই ব্রিটেনের একজন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বহু খণ্ডে লেখা স্মৃতিকথার ঐতিহাসিক ও সাহিত্যমূল্য অসামান্য। চার্চিল শান্তিতেও নোবেল পুরস্কার পেতে পারতেন, কিন্তু পেলেন সাহিত্যে। ১৯৫৩ সালে চার্চিল সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। ওই সময় ইংরেজি ভাষার আরও কয়েকজন ব্রিটিশ ও মার্কিন লেখক পুরস্কার পান। যেমন—১৯৫০ সালে পান বার্ট্রান্ড রাসেল, ’৪৯ সালে উইলিয়াম ফকনার, ’৪৮ সালে টি এস এলিয়ট। চার্চিলের পরের বছরই পান আর্নেস্ট হেমিংওয়ে।
মিস্টার ব্লেয়ার আর কোথাও না গিয়ে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে গিয়েছিলেন নোবেলের দেশে। অবিলম্বে শান্তিতে অথবা সাহিত্যে অথবা দুটোতেই একসঙ্গে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতম প্রার্থী তিনি—সে কথাটি জানাতেই তিনি সেখানে গিয়ে থাকবেন। এখন তিনি একই সঙ্গে শান্তির দূত এবং অবিস্মরণীয় লেখক। এক পুরস্কার একাধিক ব্যক্তিকে যৌথভাবে দেওয়ার প্রথা নোবেল কমিটিরও আছে। দুটো পুরস্কার একজনকে দেওয়ার প্রথা ব্লেয়ারকে দিয়েই তারা শুরু করতে পারে।
শাসক ও রাজনীতিকদের আত্মকথা লেখার অথবা লেখানোর প্রবণতা সম্প্রতি বেড়ে গেছে। ভারতে নরসিমা রাও ও লালকৃষ্ণ আদভানি লিখেছেন তাঁদের রাজনৈতিক জীবনের কথা। কয়েক দিন আগে বেরিয়েছে ভারতের লোকসভার সাবেক স্পিকার সোমনাথ চ্যাটার্জির Keeping the Faith—একজন পার্লামেন্টারিয়ানের স্মৃতিকথা। সিপিএমের নেতা সোমনাথ বাবুর বাবা ছিলেন হিন্দু মহাসভার নেতা। বাংলা ভাগে শ্যামপ্রসাদের পরই তিনি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। চ্যাটার্জি তাঁর স্মৃতিকথায় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাতকে একহাত নিয়েছেন। কারাতের ‘ঔদ্ধত্য ও অসহিষ্ণুতা’কে তীব্র সমালোচনা করেছেন। সেসব নিয়ে এখন বিতর্ক হচ্ছে।
মিস্টার ব্লেয়ারের অ্যা জার্নির কিছু আগে বেরিয়েছে পিটার ম্যান্ডেলসনের দ্য থার্ড ম্যান। নির্বাচনের আগে ব্রিটিশ লেবার পার্টির ভেতরের অনেক কাহিনি তাতে জানা যায়। সোমনাথ বাবু যেমন প্রকাশ বাবুকে ঠুকেছেন, তেমনি ব্লেয়ার তলপেটে ঘুষি মেরেছেন তাঁর সহকর্মী গর্ডন ব্রাউনকে। দুনিয়ার পাঠকদের জন্য এসব কোনো বিষয় নয়। ব্লেয়ারের বইতে তাঁর পায়খানায় যাওয়ার কথা, মদ খাওয়ার কথা কিছু জানা যায়। কারও পায়খানায় যাওয়া নিয়ে কারও কোনো আগ্রহ থাকে কি?
বুশের অদ্বিতীয় বন্ধুটি নোবেলের দেশে যাওয়ার আগে শান্তির দূত হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ‘যুদ্ধাপরাধী’ শব্দটি যারা দিন-রাত ঘরের মধ্যে, গোলটেবিলে ও টিভি টক শোতে আওড়াচ্ছেন, তারাও ভুলে গেলেন পৃথিবীর দুই নম্বর যুদ্ধাপরাধী কে? আমরা অতিথিপরায়ণ জাতি। আমরা অতিথি সৎকার করব, কিন্তু যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে ‘শান্তি’ নিয়ে আলোচনা করলে তা বিশ্বমানবতার সঙ্গে পরিহাসের নামান্তর। সংসদ নেতা ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে তাঁর ‘শান্তিপ্রক্রিয়া’ নিয়ে আলোচনা হয়!
এখন ব্লেয়ার প্রধানমন্ত্রী নন, বিরোধীদলীয় নেতাও নন। সুন্দরী বউ নিয়ে ঘুরছেন আর বইয়ের কথা প্রচার করছেন। তাতে পকেটে পয়সা আসবে। ক্ষমতা ছাড়ার পর তিনি বাংলাদেশে যে সংবর্ধনা পেলেন, তা আর কোনো দেশ তাঁকে দেয়নি। অথচ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে গিয়েই পেলেন জুতা, পচা টমেটো ও ডিম।[/sb
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

সূত্র- প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×