সম্ভ্রমহানি ও সম্ভ্রমহানির পর নারী হত্যা বেড়েই চলছে। গত আগস্টে ২২ মেয়েশিশুসহ ৪২ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে মানবাধিকার সংস্থা অধিকার জানিয়েছে। দুই মেয়েশিশুসহ সাত নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন পাঁচ নারী ও দুই মেয়েশিশু। অধিকারের দেয়া এ তথ্য শুধু উদ্বেগজনকই নয়, রীতিমত আতঙ্কের। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অধিকারসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব আসে পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত রিপোর্ট কিংবা থানায় এফআইআর দায়েরের সূত্র থেকে। অথচ এর বাইরেও নারীর সম্ভ্রমহানি ও সম্ভ্রমহানির পর খুনের সংখ্যা অনেক বেশি। নানা সীমাবদ্ধতায় এসব খবর পত্রিকার পাতায় আসছে না। সম্ভ্রমহানির শিকার নারীর পরিবারও লোকলজ্জা ও সামাজিক সম্মানহানির ভয়ে এসব নিয়ে থানা পুলিশ করে না। এছাড়া বিষয়টি পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হোক তা তার অভিভাবক পছন্দ করেন না। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে নারী নির্যাতন সংঘটিত হওয়ায় নির্যাতনের বিষয়গুলো ধামাচাপ পড়ে যায়।
গবেষণা তথ্যমতে, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ নারী এবং গ্রামাঞ্চলে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ নারী কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হন। মহিলা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। শুধু সম্ভ্রমহানি নয়; নারী ও শিশু গৃহপরিচারিকা, গৃহবধূ, কন্যাসন্তান, সরকারি-বেসরকারি অফিসে কর্মরত নারী কর্মী, গার্মেন্টের নারী শ্রমিকদের অধিকাংশই নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। গৃহপরিচারিকার আত্মহত্যা, গৃহপরিচারিকার লাশ উদ্ধার, তরুণী বা যুবতীর লাশ উদ্ধার, রহস্যজনক মৃত্যু—এ ধরনের খবর প্রতিদিনই পত্রিকায় শিরোনাম হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ঘটনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা হচ্ছে। নিয়মতি মামলা হলেও কোনো আসামি গ্রেফতার হচ্ছে না। সম্ভ্রমহানি বা নির্যাতনই নয়; কন্যাসন্তান গর্ভে আসায় গৃহবধূকে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। ৩ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে কন্যাসন্তান গর্ভে ধারণ করায় তসলিমা (৩৮) নামের এক গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা তসলিমার আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে কন্যাসন্তান হওয়ার কথা জানতে পেরে পাষাণ্ড স্বামী সোহেল ও তার পরিবারের লোকজন তসলিমাকে হত্যা করেছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন এমন পর্যায়ে গেছে, খোদ বাবার হাতেই প্রাণ দিতে হচ্ছে মেয়েকে। শুক্রবার নড়াইল জেলার নড়াগাতি থানায় কলাবাড়িয়া গ্রামে হাফিজুর রহমান মিনা নামের এক ব্যক্তি মেয়ে তানিয়াকে ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
ধর্ষণের মতো নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, বর্তমানে নারীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা। আগে এটা তুলনামূলক অনেক কম ছিল। আগে যে ঘটনাগুলো ঘটত, তার মোটামুটি বিচারও হতো। এ বিষয়টিকে তিনি বাংলাদেশের নারীদের জন্য অন্যতম একটি সমস্যা বলে মনে করেন।
অধিকারের হিসাব অনুযায়ী শুধু আগস্টে ৪৯ নারী যৌতুকের জন্য সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ৩২ নারীকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে এবং দুই শিশুও যৌতুকের জন্য সহিংসতার কারণে মারা গেছে। ১১ জন যৌতুকের কারণে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সাত নারী নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা তাদের গত জুলাইয়ের পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে জানায়, ওই মাসে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৬ শিশু ও ২৬ নারী। তাদের পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, যৌতুকের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণ দিতে হয়েছে ৩২ নারীকে। একই কারণে নির্যাতিত হয়েছেন আরও ১০ জন। পারিবারিক কলহ ও পরকীয়ার জের ধরে নির্যাতিত হয়ে নিহত হয়েছেন ৩৬ নারী, আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে চার গৃহকর্মীকে। আহত হয়েছেন সাতজন এবং ফতোয়ার শিকার হয়েছেন চার নারী। এসিড নিক্ষেপে আহত হয়েছেন ১২ নারী, নিহত হয়েছেন একজন। জুলাইয়ে দেশে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে ৩১ কিশোরী। রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছেন ১৮ নারীর।
‘অধিকার’র প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের এপ্রিলে কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যায়। তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এপ্রিলে ৬৩ নারী এবং কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪ নারী এবং ৩৯ কন্যাশিশু। এর আগে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে ৩৯ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে যত কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, সে তুলনায় এপ্রিলে অনেক বেশি হয়েছে। আগের ৩ মাসে যা হয়েছে, এপ্রিলেই হয়েছে তার অর্ধেক। এপ্রিলে ২৪ নারীর মধ্যে ৮ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ১২ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ৩৯ কন্যাশিশুর মধ্যে দু’জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ১০ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এপ্রিলে ঝিনাইদহে অ্যাসিসট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর ওবায়দুল হক এক নারীকে ধর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে। এপ্রিলে কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা আগের যে কোনো মাসের তুলনায় অনেক বেশি।
সংস্থাটি আরও জানায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে ১২২ নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৩ জন প্রাপ্ত বয়স্কা নারী ও ৬৯ কন্যাশিশু। ৫৩ জন প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর মধ্যে ১১ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং ২৬ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ৬৯ কন্যাশিশুর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ৫ জন এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৪ জন। এছাড়া ধর্ষণের পর একজন আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় এএসআই একজন গৃহবধূকে, যশোরে আনসার কর্তৃক এক গৃহবধূকে এবং জয়পুরহাটে ৮ বছরের কন্যাশিশুকে গ্রামপুলিশ ধর্ষণ করে।
অধিকারের প্রতিবেদন মতে, ২০০৯ সালে ২২৬ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এদের মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয় ৭৩ জন এবং ৩১ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। অধিকারের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৫৮০টি ভয়াবহ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ২০৯ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন চারজন। যৌতুকের কারণে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৭৭ নারী এবং এসিড নিক্ষেপের শিকার হন ৯০ জন।
পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনার আলোকে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তৈরি করা এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৯ সালে ২ হাজার ৯০০ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৯ জন ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। মানবাধিকার ও নারী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন গবেষণা থেকেও বেরিয়ে এসেছে নারী নির্যাতনের চিত্র। শনিবার নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা, উবিনীগ ও অধিকার আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে জানানো হয়, বর্তমানে নারী নির্যাতন শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ হারে বেড়ে চলেছে। এ নারী নির্যাতন নারীর অগ্রগতির পথে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
ব্র্যাকের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত যত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩১ ভাগ নারী। ধর্ষণের পর খুন হয়েছে ২৫ ভাগ। এসিড নিক্ষেপ ১৫ ভাগ। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা ১২ ভাগ এবং ধর্ষণের প্রচেষ্টা ৭ ভাগ। এরমধ্যে ধর্ষণের শিকার হওয়া ৮৬ ভাগ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়া ৭০ ভাগ নারী স্বাস্থ্যসেবা পায়নি।
গত ৩ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মাদারগঞ্জ গ্রামের আবু সাঈদের ৫ বছরের কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করে একই গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে সনেট। তার বাবা আবদুল কাদের আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা। ধর্ষিতা শিশুটির বাবা ও মাকে নানাভাবে তারা হুমকি দেয় ঘটনা কাউকে না বলার জন্য। শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেও তাদের হুমিক দেয়া হয়। একপর্যায়ে থানা মামলা না নিতে চাইলে তারা জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির আশ্রয় নেয়। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি এ ঘটনার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট আবেদন দায়ের করে প্রতিকার চায়। ঘটনার শিকার শিশুটির মা বলেন, ধর্ষণকারী সনেটের বাবা এলাকায় অনেক প্রভাবশালী। তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ কারণে এলাকায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর যশোরে দশম শ্রেণীর এক মুসলমান ছাত্রী সিঁদুর পরতে না চাওয়ায় তাকে গণধর্ষণ করা হয়। ওই ঘটনার মূল হোতা ছিল শিশির ঘোষ নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী। গত ২৫ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় পূজামণ্ডপ থেকে ফেরার পথে এক কিশোরীকে অপহরণের পর ছাত্রলীগের ১০ কর্মী পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পর ধর্ষিতার বাবা যাতে আইনগত ব্যবস্থা না নেন সেজন্য দুর্বৃত্তরা ধর্ষিতার পরিবারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা ৩টি সাদা কাগজে ধর্ষিতা ও তার বাবাকে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন।
পিরোজপুরে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের সময় ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়। পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আহসান কবীর মামুন ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের সময় তার বন্ধুদের দিয়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে সেটি সিডি করে বাজারে ছাড়ে। গত ৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার এক নববধূ তার স্বামীকে নিয়ে পাগলার নুরবাগে বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে গেলে স্থানীয় যুবলীগ কর্মী আবদুল হক ওরফে হক্কার নেতৃত্বে শরীফ, আমজাদ, স্বপন, তাজুল ইসলাম, ওসমান মোল্লা ও সুমন তাকে তুলে নিয়ে চান মিয়ার বাড়িতে গণধর্ষণ করে। পুলিশ এ ঘটনায় ৩ ধর্ষক আমজাদ, তাজুল ইসলাম ও ওসমান মোল্লাকে গ্রেফতার করলেও মূল আসামি আবদুল হক ওরফে হক্কাকে গ্রেফতার করেনি। এর আগে গত ১৭ নভেম্বর নোয়াখালী জেলার কবিরহাটে মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে (১২) গণধর্ষণ করে ১২ যুবলীগ কর্মী। গণধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী দীর্ঘদিন নোয়াখালীর স্থানীয় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিল।
নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সভাপতি আয়শা খানম বলেন, বাংলাদেশের নারীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তাদের প্রতি সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, নারীকে মানুষ মনে না করার সংস্কৃতি ইত্যাদি কারণেই তাদের প্রতি নির্যাতন এখনও বন্ধ করা যাচ্ছে না।
নারীনেত্রী ও অর্থনীতিবিদ সালমা খান তার এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, প্রায় ১৫ বছর আগে ১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে (পেইচিং) চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার ইস্যুটি যথেষ্ট দৃশ্যমান ও উদ্বেগপূর্ণ বলে বিবেচিত হলেও নারী নির্যাতনের হার এখনও ঊর্ধ্বমুখী। গবেষণা তথ্যমতে, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে ৩৯.৭ শতাংশ নারী এবং গ্রামাঞ্চলে ৪১.৭ শতাংশ নারী কোনো না কোনো প্রকার নির্যাতনের শিকার হন। মহিলা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে পারিবারিক নির্যাতন ইস্যুটি গুরুত্ব পেয়ে আসছিল। অবশেষে ২০০৮ সালে পারিবারিক নির্যাতন আইন ২০০৮-এর খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়। আইনি অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীর আরেকটি বিশিষ্ট অর্জন সংশোধিত নাগরিক আইন ২০০৯, যার মাধ্যমে নারী বিদেশি স্বামী ও সন্তানকে নাগরিকত্ব বর্তাতে (transmit) পারবে। সামপ্রতিক সময়ের ক্রমবর্ধমান যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞা ও নির্যাতন মোকাবিলায় হাইকোর্ট প্রদত্ত রূপরেখা নারীর মানবাধিকার স্বীকৃতির এক মাইলফলকস্বরূপ। এছাড়া মানবাধিকার কমিশন অ্যাক্ট ২০০৯, তথ্য অধিকার আইন ২০০৯, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, নির্বাচনে নারীর সংরক্ষিত আসন (সংশোধিত) ২০০৫ নারীর মানবাধিকার বাস্তবায়নের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগগুলোর অন্যতম উদাহরণ।
এতসব আইন, নির্দেশনা ও প্রতিবাদ থাকার পরও ধর্ষণ, ধর্ষণের পর খুনসহ নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না, বরং বাড়ছে। এক্ষেত্রে বিশিষ্টজনরা বলছেন, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেই এ ধরনের নারী নির্যাতন বাড়ছে। কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমেই এ থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।