somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কী লিখেছিল ঐশী তার ‘সুইসাইডাল’ নোটে ?

২০ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাবা-মাকে হত্যার আগেই ‘সুইসাইডাল’ নোট
লেখে ঐশী। স্কুলের খাতার ১২
পৃষ্ঠা জুড়ে লেখা সেই নোটে উঠে এসেছে তার
মনের একান্ত কিছু কথা।অসৎ সঙ্গ
বখে যাওয়া ঐশী বাবা-মায়ের
নজরদারী থেকে বাঁচতে আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিল। ঐশীর লেখা সুইসাইডাল
নোটের খাতাটি এখন গোয়েন্দার হাতে।
সেখানেই পাওয়া গেল তার আত্মহত্যার
ইচ্ছা আর বাবা-মায়ের উপর ক্ষোভের কারণ।
তবে চিঠিটি সে নির্দিষ্ট কাউকে উদ্দেশ
করে লেখেনি। ভেবে নিয়েছে নিশ্চয়ই কেউ পড়বে সেটা। যে পড়বে তাকেই উদ্দেশ
করে লিখেছে সে। কী লেখা আছে সেই নোটে? এইমাত্র ডট কমের
পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:-
আমি জানি না এই চিঠি আমি কাকে লিখছি।
তারপরও কাউকে না কাউকে কিছু
একটা বলতে খুব ইচ্ছে করছে।
আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর
আরো কঠিন মনে হচ্ছে। বুক ভেঙে যাচ্ছে।
আত্মহত্যার কারণ
আমি কাউকে বলতে চাইছি না। একজনের দুঃখ
সাধারণত আরেকজন কখনোই মন
থেকে বুঝতে পারে না। আমার আত্মহত্যার কারণ তোমার কাছে খুবই অপ্রয়োজনীয় ও
হাস্যকর মনে হতে পারে। সুতরাং সেই
ঝামেলায়ই গেলাম না। আমার এই
চিঠিটাকে সুইসাইডাল নোট
বলা যেতে পারে। তুমি নিশ্চয় অবাক হচ্ছো,
জীবনের শেষ কথাগুলো আমার আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মাকে না জানিয়ে কোনো অপরিচিত
কাউকে কেন জানাচ্ছি! তারা কোনোদিনও
আমাকে বুঝতে পারেনি। আমার অনেক খারাপ
দিক আছে- সেই খারাপ
দিকগুলো চালাকি করে বুঝে ফেলা ছাড়া ভালো দিকগুলো কখনোই
তারা বোঝার চেষ্টা করেছে কি-না সন্দেহ! আমার এই চিঠিটি তাদের
দেখাতে লজ্জা এবং ঘৃণা লাগে।
কারো প্রতি আমার কোনো রাগ নেই।
মানুষকে দোষ দিয়ে কী লাভ বলো!
প্রত্যেকেরই তো নিজস্ব চিন্তাধারা,
আশা থাকে। প্রত্যেকেই চায় তার ইচ্ছা পূরণ হোক। শুধু যেটা বুঝতে পারে না অন্য মানুষের
যে আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। আনন্দের
একটি নির্দিষ্ট কারণও থাকতে পারে।
আমি জানি তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে।
তাদের ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন তোলার
বা দোষ ধরার ইচ্ছা, রাগ, শক্তি কোনোটাই আমার এখন আর নেই। শুধু একটাই আফসোস
থেকে গেল- জীবনে অনেক স্বপ্ন
ছিলো কোনোটাই পূরণ করতে পারলাম না। এ
পৃথিবীর মানুষ সবাইকে বুকের
মাঝে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম সবই
কেমন যেন ধুয়ে-মুছে গেল, সব শেষ। আচ্ছা সব কিছু এমন হয়ে গেল কেন, বলোতো?
ভাইয়া/আপু
আমিতো মানুষকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম!
পৃথিবীকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম!
মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ ভালো লাগা,
অনুভূতি, প্রেম, সবচেয়ে বড় কথা- মানুষকে ভালোবাসা। পৃথিবীর
নানা জায়গার সৃষ্টি এতো সুন্দর
যে বেহেস্তকেও যেন হার মানায়। কেন শেষ
পর্যন্ত এখানে বাস করে যেতে পারলাম না!
কেন এসব উপভোগ করে যেতে পারলাম না শেষ
সময় পর্যন্ত! আমি জানি, এর উত্তর একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কারো কাছে নেই।
হয়তো বা ঈশ্বরের কাছেও নেই! আমি সবসময়
শুনে আসছি, তুমি যদি মন দিয়ে কোনো কিছু
চেয়ে থাকো তবে অবশ্যই তা পাবে। আমার
স্বপ্ন আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো আমি কী মন
দিয়ে চাইনি! শুধু মন দিয়ে চাওয়া এই স্বপ্নগুলো পূরণ করার জন্য কত কষ্টই
না করলাম। মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে।
শারীরিক কষ্টটা হয়ত অন্যের দৃষ্টিতে এত
বেশি হবে না। আমার জন্য তা অনেক ছিলো।
আহ, ওহ, মানসিক কষ্টের
কথা বলতে গিয়ে আমার হাত কাঁপছে। একটা সময় ছিলো, এমন কোনোদিন যেত
না যে আমি কাঁদতাম না। জীবনের দুইটা বছর
নষ্ট হয়ে গেল। দুইটা বছর
একা একা কাটালাম। এ দুইটা বছর যে কিসের
ভিতর দিয়ে গিয়েছি, আমি আর ঈশ্বর
ছাড়া আর কেউ জানে না। হাজার কষ্টের মধ্যেও একটা জিনিস
চিন্তা করে স্বস্তি পেতাম। অন্তত আর কেউ
না থাকুক ঈশ্বর আমার পাশে থাকবে। আর কেউ
না বুঝুক অন্তত উনি আমার কষ্টটা বুঝবেন।
আমি এখনো জানি তিনি আমার পাশে আছেন।
যা হোক এসব কথাবার্তা বলা এখন অর্থহীন। মনের ভিতর এক
অজানা উল্লাস হচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে,
মৃত্যুর পর আমার পছন্দের জায়গায় চলে যাব।
জায়গাটা পৃথিবীর মতোই হবে। কিন্তু এই
পৃথিবীতে আমার স্বপ্নগুলো এখনো পূরণ হয়নি।
যেগুলো পূরণ করতে হবে। মানুষ কেমন আজব প্রাণী তাই না! আশা (হোপ) মানুষ
ছাড়তে পারে না। মরতেও চাই আশা নিয়ে।
আমি জানি না মৃত্যুর পর কী হবে! দেখা যাক
কী হয়! আসলে হয়তো মৃত্যুর পরের জীবন
বলতে কিছুই নেই! শুধুই মাটির
সঙ্গে মিশে যাবো। তাহলে তো সবই শেষ। যা হোক, মৃত্যুর পর যদি কিছু নাও পাই এই
পৃথিবীতে যতটুকু সময় কাটিয়েছি, আমার এ
ছোট্ট জীবন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
তুমি হয়তো বা মনে করতে পারো, এ
পৃথিবীতে এসে তো কিছুদিন পর আত্মহত্যাই
করলাম। সময় নিশ্চয় ইহকালে ভালো কাটেনি, তাহলে কৃতজ্ঞ
হওয়ার কী আছে? ন্যাকামির আর জায়গা পাই
না! কি জানি!
ভাইয়া/আপু,
কেন জানি ভালো লাগে।
পৃথিবীতে এসে অনেক কষ্ট পেয়েছি ঠিকই, সবচেয়ে বড় কষ্টটা হলো আশা শেষ
হয়ে যাওয়ার কষ্ট। তীব্র হতাশা মাথার
উপর ভেঙ্গে পড়ার কষ্ট। মানুষ
কি আশা ছাড়া বাঁচতে পারে বলো, এই
একটা জিনিসই তো আছে! যা কি-না বহুদিন
পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে রাখা যায়। কিন্তু আমি যদি বলি পৃথিবীতে আমার জীবনের
সময়গুলোতে কোনো সুখ স্মৃতি নেই-
তাহলে তো মিথ্যা বলা হবে। কত ভালো, কত
আনন্দ, কত কি-ই না আছে! কত সুন্দর মানুষের
হাসি, সেই সুখগুলো, কোনো ছেলেকে প্রথম
ভালো লাগা- সেই অনুভূতিগুলো। পছন্দের আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের
সাথে জমিয়ে আড্ডা দেয়ার সেই সময়গুলো,
পৃথিবীর ইতিহাস পড়ে, সুন্দর জায়গার দৃশ্য
দেখে অভিভূত হওয়ার সময়গুলো….কত কি-ই
না আবিষ্কার করলাম! পৃথিবীর ব্যাপারে,
মানুষের জীবনের ব্যাপারে। মানুষের জীবন সম্বন্ধে কত সুন্দর সুন্দর তথ্যই না জানলাম।
এর থেকে সুন্দর জিনিস আর কি-ই
বা হতে পারে! মানুষের তৈরি কত অদ্ভুত-
চমৎকার জিনিসই না দেখার সৌভাগ্য হলো।
ঈশ্বরের বিশাল ও তুলনাহীন
সৃষ্টি দেখতে পারলাম। এই জায়গাটায় না আসলে এসব কীভাবে জানতাম!
কীভাবে দেখতাম! মরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত
নেয়ার পর এখন সবকিছুই সহজ মনে হচ্ছে। এক
ধরনের স্বস্তি বোধ করছি। সবচেয়
বেশি স্বস্তি বোধ করছি জীবন যুদ্ধ আর
আমাকে করতে হবে না। জীবনযুদ্ধে হেরে গেলাম এই কথাটা আগে শুধু
বইতে পড়তাম। তখন অনুভব করতে পারিনি,
এখন
বুঝতে পারছি জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া আসলে কী জিনিস।
আমি সব সময় শুনে এসেছি,
যারা আত্মহত্যা করে তারা নাকি দোজখে যায়। জিনিসটা কেন জানি বিশ্বাস
করতে পারি না। কারণ যে মানুষটা এখন
স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে, তার
ভিতরে কী পরিমাণ হতাশা, কষ্ট, দুঃখ
থাকলেই না জানি সে এমন একটা কিছু করার
সিদ্ধান্ত নিতে পারে! এই জায়গাটাকে আমরা কতই না ভালোবাসি।
হাজার কষ্টের মধ্যেও লড়াই করে যাই
শুধুমাত্র এই জায়গাটাতে টিকে থাকার জন্য,
একটু সুখে থাকার জন্য। একটা মানুষের বুক
কতটা ভেঙ্গে গেলে এই ধরনের, এই সাধের
জীবন, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! তার বুক ভাঙ্গা কষ্টের
কি কোনো দাম নেই। পৃথিবীর
যেখানে আমরা এক টুকরো সুখের জন্য কত কিছুই
না করি, এতো কষ্ট পাওয়ার পরও। ঈশ্বর
কী এতোটাই পাষাণ! কি দোষ করেছিলাম
আমি। জীবনের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমি এমনকি খারাপ কাজ করেছিলাম যে,
কোনো কিছুই সত্যি হতে দেখলাম না।
মাঝখান দিয়ে জীবনে আরো যে যুদ্ধ করে যাব
সেই উপায়টাও শেষ হয়ে গেল। ঈশ্বর
বুঝি আসলেই পাষাণ।
লেখার মতো আরো অনেক কিছুই আছে। কিন্তু আর কিছুই লিখতে পারছি না। জ্বরের জন্য হাত
কাঁপছে। শরীর জ্বলন্ত আগুনের মতো গরম।
চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। এখন
যে কেউ একজন গায়ে হাত রাখবে এমন কেউ
নাই। থেকেও যেন নাই। এই কথাটা সত্যি-
মানুষ পৃথিবীতে আসে একা, চলেও যায় একা। হায়রে পৃথিবী! কত ভালোবাসার, কত সাধের!
আমি ভাবব এক সময় পৃথিবী নামে আমার
পরিচিত একটা ছেলে ছিলো!
ইতি, ঐশী/ডালিয়া
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×