somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংসদদের বেতন-ভাতা করমুক্ত

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাংসদেরা দেশের যোগ্য নাগরিকদের আয়কর নির্ধারণ করেন। আয়কর না দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ বলে আইনও করেন। অথচ তাঁরা নিজেদের আয়ের টাকা করমুক্ত রেখে আইন পাস করেন। অর্থাৎ তাঁদের বেতন-ভাতার ওপর কর দিতে হয় না। এ নিয়ে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং সরকার ও বিরোধী দলের সাংসদেরা প্রায় অভিন্ন মতামত দিয়ে বলেছেন, সাংসদদের সব আয় করমুক্ত রাখা ঠিক নয়।
চলতি অর্থবছর এক লাখ ৬২ হাজার টাকার ওপরে আয় (বার্ষিক) করেন, এমন সব নাগরিকের আয়কর দেওয়া বাধ্যতামূলক করে আইন করা হয়েছে। প্রতি অর্থবছর আয়ের এই সীমা পুনর্নির্ধারণ করে তা আদায়ের জন্য নানামুখী তৎপরতা নেয় সরকার।
দেখা যাচ্ছে, ১৯৭৩ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত এই ৩৭ বছরে সাংসদদের বেতন-ভাতা বেড়েছে ১২ দফায়। এর মধ্যে সাতবার যুগপৎভাবে বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে। বাকি সময়ে বিভিন্ন ভাতা বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে সাতবার।
জাতীয় সংসদে ১৯৭৩ সালে সাংসদদের জন্য মাসে এক হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়। ১৯৭৪ সালে সাংসদদের প্রাধিকার আইন সংশোধন করে বেতন আয়করমুক্ত রাখা হয়। সে সময় ভাতা-সম্পর্কিত আয় করমুক্ত ছিল না। সর্বশেষ চলতি বছর (২০১০ সাল) বেতন-ভাতা বাড়িয়ে নেওয়ার সময় ভাতা-সম্পর্কিত আয়ও করমুক্ত করে আইন পাস করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভাতা-সম্পর্কিত আয়ের ওপর যখন কর ছিল, তখন কর দেওয়া হয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। আর এখন তো আইন করেই করমুক্ত রাখা হয়েছে। সুতরাং কর দেওয়ার প্রয়োজনই হচ্ছে না।
জানা যায়, সাংসদের প্রাধিকার আইনে ১৯৭৫ সালে বেতন নির্ধারণ করা হয় দেড় হাজার, ১৯৮৭ সালে তিন হাজার, ১৯৯২ সালে ছয় হাজার, ২০০০ সালে ১০ হাজার, ২০০৫ সালে ১৫ হাজার এবং ২০১০ সালে ২৭ হাজার ৫০০ টাকা।
এর মধ্যে ১৯৯২ সালে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা অবসর ভাতা (পেনশন) পদ্ধতি চালু করে আইন করা হলেও ১৯৯৩ সালে তা বাতিল করা হয়। এ ছাড়া ১৯৮৮ সালে প্রাধিকার আইন সংশোধন করে বেতন শব্দের পরিবর্তে পারিশ্রমিক শব্দ প্রতিস্থাপন করা হয়।
আলোচ্য সময়ে যেসব খাতে ভাতা বাড়ানো হয়েছে, তা হচ্ছে নির্বাচনী এলাকা ভাতা সাড়ে সাত হাজার, ব্যয় নিয়ামক ভাতা তিন হাজার, যানবাহন ভাতা ৪০ হাজার, অফিস ব্যয় ভাতা নয় হাজার, লন্ড্রি ভাতা এক হাজার, বিবিধ ভাতা চার হাজার এবং টেলিফোন ভাতা সাত হাজার ৮০০ টাকা। এ ছাড়া বছরে ভ্রমণ-ভাতা হিসেবে ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন তাঁরা।
হিসাব অনুযায়ী, একজন সাংসদ বছরে পারিশ্রমিক ও ভাতা মিলিয়ে মোট ১১ লাখ ৯৭ হাজার ৬০০ টাকা আয় করছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বর্তমান সংসদে নির্বাচিত ৩০০ সাংসদের মধ্যে ব্যবসায়ী আছেন ১৭০ জন, কৃষিকাজে নিয়োজিত ১৯ জন, চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন ২৪ জন, আইন পেশায় নিয়োজিত ৪৪ জন এবং রাজনীতিকে পেশা হিসেবে ধরে আছেন ৪৩ জন।
ব্যবসা বা অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত সাংসদেরা সবাই আয়কর দেন কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। তবে সাংসদ হিসেবে পাওয়া টাকা অন্য ক্ষেত্র থেকে অর্জিত টাকার সঙ্গে যোগ করে কেউই যে আয়কর দেন না, সেটি নিশ্চিত করেছে এনবিআর।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, একজন সাংসদ সরকারি কর্মচারীর মতো বেতন পান না। তাঁরা পান সম্মানী। সম্মানীর ওপর করের প্রয়োজন নেই। তবে সম্মানীর বাইরেও অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে টাকা দেওয়া হয়। এর ওপর কর থাকা বাঞ্ছনীয়।
সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদদের আয়ের ওপর কর দিতে হয় না, এমন নজির পৃথিবীর কম দেশেই রয়েছে। তাঁর মতে, রাষ্ট্রের সব নাগরিককে যেভাবে করের আওতায় আনা হয়, সেভাবেই সাংসদদেরও করের আওতায় আনা উচিত। প্রয়োজনে বর্তমান আইন সংশোধনের পক্ষে মত দেন তিনি।
প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানান, ভারতে সাংসদেরা যে বেতন পান, তার ওপর আয়কর দিতে হয়। তবে বিভিন্ন ভাতা আয়করমুক্ত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খান এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা দেশের যোগ্য নাগরিকদের আয়কর দিতে আইন করছেন, তাঁরা আবার নিজেদের আয় করমুক্ত রেখে আইন করছেন। এটি দ্বিমুখী নীতি। একই সঙ্গে স্বেচ্ছাধীনভাবে তাঁরা নিজেদের আয় নিজেরাই ঠিক করছেন। উন্নত বিশ্বে একটি কমিশন করে তাঁদের মাধ্যমে এটি করা হয়।
আকবর আলি খান বলেন, রাষ্ট্রে সব নাগরিকের সমান অধিকার। সে ক্ষেত্রে জনগণের করের টাকা গ্রহণ করে রাষ্ট্রকে একটি গোষ্ঠী কর দেবে না, সেটা সবার জন্য সমান অধিকারের পরিপন্থী।
প্রসঙ্গত, প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীর আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। যে পরিমাণ টাকা কর্মচারীরা কর দেন, তা পরে সরকার থেকে পরিশোধ করা হয়।
একজন সাংসদ প্রতি মাসে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন ৯৯ হাজার টাকা। আর সরকারের সচিব বা সমমর্যাদার পদের একজন কর্মকর্তার মাসিক আয় ৬৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে সচিবের বেতন ৪০ হাজার (নির্ধারিত), বাসা ভাড়া ২০ হাজার, চিকিৎসা ভাতা ৭০০, আপ্যায়ন ভাতা এক হাজার এবং কর্মী ভাতা এক হাজার ৩০০ টাকা।
copy from Click This Link

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×